রুকি । ইউসুফ হিরণ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুন ২০১৮, ১২:২১ অপরাহ্ণ, | ১৬৭৬ বার পঠিত
ঘিঞ্জি বাসে চড়ার নিয়মঃ
আলফাজ আলীর মনটা উদাস হয়ে যায়। তার সামনে, পিছে, ডানে, বামে বসে থাকা দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের সন্দেহের চোখে তাকিয়ে পকেটে হাত দিয়ে সে দেখে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না। জমানা বেশি সুবিধার না। এই এক বাসে তার চারপাশের মানুষগুলোর প্রকৃতি সম্পর্কে সন্দেহ যে আসবে তা বিচিত্র কি? কোনটা চোর, কোনটা ডাকাত, কোনটা মাস্তান, কোনটা বেশ্যার দালাল তা কি আর চেহারা দেখে বলা যায়? পকেটে সবকিছু ঠিকঠাক মতই আছে তার। উৎকট রোদের তাপ বাসের ধাতব শরীর যতটুকু শোষণ করে তা আবার যত্ন করে যাত্রীদের গায়ে ছড়িয়ে দেয়। বাসের যাত্রীরা এই যত্ন মাত্রাতিরিক্ত বিধায় হাঁসফাঁস করতে করতে কেউ শার্টের একটা বোতাম খুলে, কেউ হাতের পত্রিকা মুখের সামনে নেড়ে, কেউ ঠান্ডা এনার্জি ড্রিংকের বোতলের মুখ খুলে সারাবাসে গন্ধ ছড়িয়ে শিথিল হবার চেষ্টা করে। বাস চলতে থাকে ধীরে, বাইরে গাছের পাতাও নড়ে না, বাতাস যেটুকু জানালা ভেদ করে প্রবেশ করে তাকে আর যাই হোক শীতল বলা যায় না।মানুষে গিজগিজ করতে থাকা হাঁসফাঁস পরিবেশে বাসে দাঁড়িয়ে বিরক্ত হওয়া যায়, দুশ্চিন্তা করা যায়, অস্থির হওয়া যায়, ঝিমানো যায়। উদাস হওয়াটা মোটেই মানানসই না। কিন্তু আলফাজ আলী উদাস। যেতে যেতে বাসটা ধর্মতলা, শেরাম বাজার, দেউসাগরসহ আরো নানান বাস স্ট্যান্ডে থামে। আলফাজ আলী তার কোনটাতেই নামে না। তার গন্তব্য শেষ স্টপেজ, নিশাপুর। সারাদিনে নিশাপুরের দিকে দুইটা বাস ছাড়ে সাকুল্যে। যেতে যেতে বাস থেকে অনেক যাত্রীই নামে, তারপরও বাসে পা ফেলার অবস্থা থাকে না।
ছয় বছর আগে আলফাজ আলী যখন নিশাপুর ছেড়ে চলে যায় তখন রাস্তাটা যে হালতে দেখে গিয়েছিল, ছয় বছর পরে ফিরে এসে রাস্তাটাকে ঠিক সে হাকিকতেই ফিরে পায়। আগের চেয়ে ভালো না আবার খারাপও না, ঠিক একইরকম। রাস্তার সংস্কার বলতে পুরানো চেহারা ধরে রাখতে যতটুকু প্রয়োজন। তাতে অবশ্য খারাপ লাগে না তার। দেশের কিছুই বদলায় নাই ভেবে তার একটু শান্তি শান্তি লাগে। তবে দেশে তার বন্ধুদের অনেকের শরীরে স্বচ্ছলতার মেদ জমেছে, চেহারায় একটা চাকচিক্য ধরা পড়ে। অথচ জিজ্ঞেস করলে বলে কি না কোনরকমে খেয়ে পড়ে আছি। সবার দশা এক না, অনেক বন্ধুদের অবস্থা তার চেয়েও বেহাল। মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ্ বলে শোকর জ্ঞাপনের পাশাপাশি একটা চিকন বেদনা অনুভব করে সে আরো উদাস হয়ে পড়ে।
দুবাই ফেরত আলফাজ আলী উদাসীনতা ভেঙ্গে জবান খুলে, “দুবাইয়ের রাস্তার মত রাস্তা নাই।”
“দুবাই গেছিলা তুমি? বাড়ি কই তোমার?” আলফাজ আলীর সামনে বসে থাকা যাত্রী জিজ্ঞেস করে।
“হ, আমিরাতে থাকলাম অনেক বছর। নিশাপুর বাড়ি।”
“তইলে তো দুনিয়ার জিনিসপত্র দিয়া ঘর ভরাইয়া ফেলাইছ। আমরার গ্রামের রইছুদ্দিন বিদেশ গিয়া সদরে বাড়ি বানাইল, এখন তো আর গ্রামে থাকে না। তুমি গ্রামে পইড়া আছো কি মনে কইরা?”
আলফাজ আলী জবাব দেয় না। ঘিঞ্জি বাসে বিরক্ত হওয়া যায়, দুশ্চিন্তা করা যায়, বিড়ি ফুঁকা যায়, কিন্তু উদাস হওয়ার নিয়ম নাই। আলফাজ আলী নিয়ম ভেঙ্গে আবার উদাস হয়।
আট বছরের মেয়ে রুকি আর স্ত্রী মোমিনার পিছুটান নিয়ে আলফাজ আলী নিশাপুর ছাড়ে। পৈতৃক সম্পত্তি বলতে আধাপাকা একটা বাড়ি, মা-বাপ কোনটা বেঁচে নাই বলে রক্ষা। চার ভাইবোনের মধ্যে সে একমাত্র ভাই বিধায় সেখানেও একটু রক্ষা হলো, বোনদের পৈতৃক ভিটার অংশ তাকে দিতে হয় নাই। তবে শ্বশুর বাড়ির সহায়তায় সেই ছেড়ে যাওয়াটা তার কাছে বড্ড বোকামি মনে হয় অথবা একবারে ছেড়ে যাওয়াটা বোধ হয় ভালো ছিল। কিন্তু ভাবনা যেভাবে কাজ করে আর ঘটনা যেভাবে ঘটে তার মধ্যে আসমান-জমিন ফারাক। ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যায়, সঞ্চয় তার খুব একটা হয় নাই। ভালো কিছু করতে গিয়ে তার সবকিছু আরো জটিলরকমের খারাপের দিকে মোড় নেয়। পকেট থেকে ছোট পলিথিনে বেঁধে রাখা খেজুর বের করে একটা সে মুখে দেয়, আরেকটা এগিয়ে দেয় সামনে বসে থাকা যাত্রীর দিকে।
খেজুর মুখে দিয়ে যাত্রী জিজ্ঞেস করে, “তো মিয়া, বিবি বাচ্চার লাইগা কি লইয়া আইলা? দুবাইয়ে তো ভালো সোনার গয়না বানায়। আমার ভাতিজা আতর লইয়া আইছিল একটা আমার লাইগা। যে সুন্দর ঘ্রাণ, একবার লাগাইলে গোসলের বাদেও শরীরে লাইগা থাকে।” সে হাতে মাখিয়ে রাখা আতরের ঘ্রাণ নাকে টেনে সুখে চোখ বুজে।
আলফাজ আলীর উদাসীনতায় ছেদ ঘটে। তার বুকে খরস্রোতা লহরেরা সবকিছু ভেঙ্গে নিয়ে যেতে চায়। কোথায়? তা সে জানে না। চিকন বেদনা আরো চিকন হয়ে পেটের ভিতর সুড়সুড়ি দেয়। ভেতর থেকে কিছু একটা ডুকরে উঠে, দুখী কিছু। আলফাজ আলী ঘড়ঘড় করে সামনের যাত্রীর উপর বমি করে দেয়, জিভে অনুভব করে টক স্বাদ।
ক্লান্তিতে তার বড্ড ঘুম পায়। ঘুমিয়ে যেতে যেতে আলফাজ আলী দেখে যে বিরাট বিমানের উপরে বসে পাঞ্জাবী পাজামা গায়ে আতর মাখিয়ে সে উড়ছে। তার চারপাশেটুকরো মেঘেরা উড়ে যায়। সে বিকট হা করে হাওয়াই মিঠাইয়ের মত মেঘ খাওয়ার চেষ্টা করে, মেঘের টুকরোরা তার মুখে ঢুকে পেটে গিয়ে সুড়সুড়ি দেয়। সে ঘড়ঘড় করে আবারো বমি করে।তার শীত শীত লাগে। বাসের এক যাত্রী নাক হাত দিয়ে চেপে ধরে বলে, “হালা মাল খাইছে।”
বেহেশতের দুনিয়া ভ্রমণঃ
আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে দেখে আপ্লুত রুকি যখন ভাবে তাকে বানিয়েছে যে খোদা সে নিজেকে দেখে আপ্লুত হয় কি না, অথবা প্রথম সৃষ্টির পর নিজের সক্ষমতায় বিস্মিত হয়ে নিজেই নিজেকে ভালোবেসে ফেলেছিল কি না, ঠিক তখনই মোমিনা কোমড়ের চারপাশে শাড়ি পেঁচ খুলে পেটিকোটের গিঁটে হাত দেয়। আলফাজ আলী সিগারেটে সুখটান দিয়ে থলথলে পেটের দিকে তাকিয়ে নানান কল্পনা জুড়ে দিয়ে একটু উত্তেজিত হবার চেষ্টায় লুঙ্গির নিচে হাত দেয়। মোমিনার গা থেকে গুমোট ভোঁতা গন্ধ বেরোয়, টানা কয়েকদিনের আধোয়া শাড়ির গন্ধটার মতই, যেটা মোমিনা ছুঁড়ে ফেলে খাটের এক কোণায়। নারী শরীরের উষ্ণতায় চমৎকার একটা সন্ধ্যার আকাঙ্ক্ষায় আলফাজ আলী জোর করেই রান্না ঘর থেকে মোমিনাকে নিয়ে আসে। দু চারটা প্রেমালাপের ছলে শরীরকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করে। মোমিনার শরীরে তখন ঘামের গুমোট ভোঁতা গন্ধের সাথে লাউয়ের তরকারির গন্ধ মিশে থাকে। সেই গন্ধ্বের ভেতর থেকে শরীর জাগানিয়া গন্ধের সন্ধানে আলফাজ আলী হন্যে হয়ে যায়।
হাজার বছর আগে মৃত তারার আলোয় আশ্বস্ত আলফাজ আলীর শরীরের শোকের ছায়া নেমে আসে। ঘাম আর লাউয়ের তরকারির মিশ্রিত গন্ধের ভিতর থেকে ব্যর্থ হয়ে আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে বলে, “শরীরে যদি একটু সেন্ট না দেও, এসব আনলাম কেন?”
মোমিনা পেটিকোটের গিঁট বেঁধে কোমড়ের চারপাশে সেই গুমোট ভোঁতা গন্ধের শাড়ি পেঁচিয়ে নিতে নিতে বলে, “মুরুদ নাই সোয়ামির ঘ্রাণের দোষ। তোমার শরীরে কোন ফুলের সুবাস লাইগা আছে? শরীর দিয়া ভুড়ভুড় কইরা উল্টাপাল্টা জিনিসের গন্ধ বাইর হয়।”
পৃথিবীর সমস্ত হাসি যেন তাচ্ছিল্যের সুরে আলফাজ আলীর দিকে তেড়ে আসে, “তর্ক করা শিখা গেছস এই কয় বছরে। আর কোন হাইয়ের ভাত খাছ?”
“খাই তো। এতবছর নইলে সংসার চলে কেমনে?”
সন্ধ্যা তখন তার কাপড় বদলে রাতের প্রস্তুতি নেয়। ক্রান্তির এই সময়টুকুতে নিঃশব্দের এক আসর বসে যায় মোমিনার শোবার ঘরে। সেই আসরের আমেজ ভেঙ্গে আলফাজ আলী বিছানা থেকে উঠে এসে মোমিনার মুখে একের পর এক থাপ্পর মারতে থাকে।
থাপ্পড়ের আওয়াজ শুনতে শুনতে পাপময় চিন্তাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে কালো টিপটা জায়গামত জুড়তে মনোযোগ দেয় রুকি। কাল স্কুলে যেতে শিপন তার হাতে যে চিরকুটটা গছিয়ে দেয় সেটা মনে পড়তেই তার শ্যামল গাল রাঙা হয়ে উঠে। গোটা গোটা হরফে শিপন লিখেছে, প্রেম টেম করতে পারব না, সরাসরি তোমার সাথে ঘর করব। ভাবতেই রুকির ভালো লাগে। তাছাড়া ঘরে থাকাটা তার পক্ষে অসহনীয়। বাপটা বরং বিদেশ থাকলেই ভালো ছিল, অন্তত নিয়ম করে সন্ধ্যা রাতের বিবাদ থেকে একটু শান্তি পাওয়া যেত।
কপালের টিপটা জায়গামত জুড়ে দিয়ে রুকি বুক উঁচু করে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে, স্তনের অস্তিস্ত্বের আভাটুকু শুধু বোঝা যায়। চেহারায় কৈশোরের যে ছাপ সেটা শত সাজে কোনভাবেই লোপ পায় না। রাগে আপ্লুত দৃষ্টিতে জল আসে। এত সময় ধরে করা সাজগোজ পুরোটাই বৃথা। কপালের টিপ খুলে আয়নায় বসিয়ে মুখ ধুতে সে চলে যায় ভাঙ্গা বেসিনের সামনে।
শোবার ঘরের দরজা খোলা রেখে আলফাজ আলী চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। সদরে গিয়ে বাঙলা মদগিলে বাসায় ফিরে এভাবে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকতে তার ভালো লাগে, শাহেনশাহি একটা আমেজ শরীরে ভর করে। পৃথিবীর সমস্ত ঝামেলা থেকে সে মুক্ত, সিগারেটের প্রতিটা টানে পৃথিবীর সেরা সুখ যেন হাজির থাকে। বেসিনে মুখ ধুতে থাকা মেয়ের দিকে তাকিয়ে সুখের আমেজের ভিতরে কিছুটা দুশ্চিন্তা চুপিসারে ঢুকে পড়ে। সেই দুশ্চিন্তাও তার ভালো লাগে। মেয়েটার একটা ব্যবস্থা অন্তত করে যেতে হবে ভেবে তার সুখ হয়। মেয়েকে ডেকে আলফাজ আলী বিছানায় তার সামনে বসায়, “আম্মাজান, তোমারে তো সুন্দরই লাগতেছিল। মুখ ধুইলা কেন?”
রুকির কাছ থেকে কোন জবাব আসে না।
“ধুইয়া ফেলছ ভালো করছ। বেগানা মাইনসের সামনে রূপ খুইলা ধরতে নাই।”
মোমিনা চাল বাছতে বাছতে চোখ মুছে বলে, “বেকার ঘরে বইসা থাইকা এখন আলেম হইছে। বিদেশে আকাম কইরা টাকা নষ্ট করবার বেলা এগুলা মনে ছিল না। ঐ ছেমড়ি, তুই পড়তে যা। সন্ধ্যা রাইতে সাজগোজ কিসের?”
আলফাজ আলীর চিৎ হয়ে থাকায় ব্যাঘাত ঘটে, “মাগীর বেটি, তোর আর আক্কেল হইল না। মুখে যা আইব সবাইরে শুনাইয়া কওয়া লাগব?”
“মাগীর বেটির পয়সা দিয়াই তো বিদেশে ফুর্তি করলা।”
“মাইয়াটা না থাকলে তোরে আজকাই ছাইড়া দিতাম।”
“ধইরা রাখনের মত কিছু আছে তোমার?”
আলফাজ আলী বিক্ষুব্ধ ষাঁড়ের মত তেড়ে এসে মোমিনার শরীরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। নির্বিকারভাবে রুকি দৃশ্যপট থেকে সরে যায়।
সকল মেয়েদের ভিড়ে আশেপাশে কোথাও রুকিকে দেখা যায় না। ভিড় ঠেলে বের হয়ে তারা তন্ন তন্ন করে খোঁজে রুকিকে। ব্যাপার কিছুটা আঁচ করতে পেরে কম্পাউন্ড সুপারকে জানায় যে সকাল থেকে রুকি গায়েব। রুকির রুমমেটদের জিজ্ঞেস করে কম্পাউন্ড সুপার নিশ্চিত হয়, রুকি রাতের বেলা তার রুমে ফেরেনি।
বিস্মৃতিঃ
রুকি বোধ হয় অনেকক্ষণ ধরে তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিল। চোখ মেলতেই শেষ বিকেলের রঙের ছটা তার চোখে এসে খেলে যায়। সূর্যের যে তাপ ভূমিকে উত্তপ্ত করে রেখেছিল তা ফিরে যায় কোথাও। কিছুক্ষণ বাদেই রাতের তারারা দৃশ্যমান হবে, হয়ত চাঁদও, রুকি সেসবের হিসাব রাখে না। রুকির মনে হয় তার সারা শরীর পাথরের বিশাল একটুকরা, হাত-পা কিছুতেই নাড়াতে পারে না। কানের ভিতরটা যেন পানিতে ভরপুর, তাছাড়া সারা শরীর ও কাপড় পানিতে ভিজে জপজপ। পানির এই রহস্য সম্পর্কে সে ওয়াকিবহল না। হলদেটে আকাশের অনেক নীচ দিয়ে বালিহাঁসের একটা দল উড়ে যায়। এসব পাখিদের বাসা কোথায় ভেবে সে একটু বিপাকে পড়ে, অথবা বাসা জিনিসটা আদৌ তাদের থাকে কি না। বালিহাঁসের উড়ে যাওয়া দেখতে দেখতে তার খেয়াল হয় যে তাকে বাসায় যেতে হবে। আর তখনই সে আরো বিপাকে পড়ে যায়। তার বাসা কোথায় সে মনে করতে পারে না, এমনকি তার নাম ছাড়া আর কিছু সে কিছুতেই মনে করতে পারে না। হঠাৎ রুকি আরেকটু ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে যে সে একা নয়। তার চারপাশে গোল হয়ে অপরিচিত অনেক মুখ দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টিহীন কটকটে শুকনো রাস্তায় ভেজা পাথরের মত তার পড়ে থাকা উৎসুক মুখেদের চোখে প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে দেয়। তাদের থেকে কেউ একজন বলে, “মলম পার্টির খপ্পরে পড়ছে মনে হয়।” রুকির ভেজা শরীরটা যেন কেউ আঠা দিয়ে রাস্তায় সাঁটিয়ে রাখে। তার মাথার ভিতরে ভোঁ ভোঁ একটা শব্দ অনেকক্ষণ ধরে বাজে। সারা শরীর জুড়ে অনেক ক্লান্তি। ইতোমধ্যে কেউ একজন এসে একটা গ্লাসে করে কিছু পানি তার মুখে দেয়। পানিটা মুখে পড়তেই পেটে অসম্ভব ক্ষুধার অনুভূতি হয়। অজানা কোন পরিশ্রমের একটা ক্লান্তি রুকির চোখে ঘুমের পর্দা নামিয়ে দেয়।
অচেতন রুকির চারপাশে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অপরিচিত মুখেরা সেদিন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে যখন নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে পাঠানো হয় তখন সে বিমূঢ় হয়ে থাকে, পরিবার আর ঠিকানা সম্পর্কে কিছু বলতে অক্ষম। তার অক্ষমতায় আপাতত উপায় না দেখে থানা কর্তৃপক্ষ তাকে হস্তান্তর করে নতুন ঠিকানায়।
বিমূঢ় রুকিকে নিয়ে পুলিশের কিছু সদস্য কম্পাউন্ডের গেইটের ভিতরে ঢুকে। কম্পাউন্ডের ভিতরে শ্যাওলা ধরা হলদেটে দালানের জায়গায় জায়গায় পলেস্তার খসে পড়েছে। দূর থেকে দেখে রুকির মনে হয় শত বছরের পরিত্যাক্ত ঐ দালান জ্বিনদের দখলে। সাহস করে কেউ যদি এক রাত কাটাবার কথা ভাবে, নিশ্চিত মৃত্যু। ভাগ্য খুব ভালো হলে জ্ঞান ফিরে আসার পর গেইটের বাইরে সকালে নিজেকে সে আবিষ্কার করবে। গেইটের কাছাকাছি আসার পর অবশ্য সেই ভ্রম নিমিষে কেটে যায়। কম্পাউন্ডের ভেতরে মেয়েদের হৈ হুল্লোড় গেইটের বাইরে থেকে শোনা যায়। দালানের সামনে বিশাল মাঠটায় চার পাঁচজন অন্তত অবেলায়ও দেখা যাবে।
সবাক আয়নাঃ
কম্পাউন্ডের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা শিলকড়ই এর সারিতে ঘিরে রাখা মাঠের এক পাশে শবনম আর জ্যোতি বসে আছে। উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটতে থাকা রুকিকে একটু দেখে মুখ ঘুড়িয়ে লম্বা ঘাসের ডগা ছিঁড়ে মুখে পুড়ে তারা চিবোয়। রুকি যদি ব্যাপারটা খেয়াল করে অঘটন একটা ঘটেই যাবে তাতে সন্দেহ কি। প্রথম দিন রুকিকে দেখে ভাব জমাতেই না হয় রুকির চুল ধরে টান দিয়ে নামটা জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিল। তাতে যে দৃষ্টির সম্মুখীন তারা হয় সেটা ভাবতেই শরীরের কাঁপুনি আসে। কোন কথা না বলে তারা হনহন চলে গিয়ে কোনরকমে পালিয়ে বাঁচে।
শব্দের সাথে রুকির অলিখিত একটা দুশমনি তো আছেই, নিতান্ত বাধ্য না হলে হুম বলেই কাজ চালিয়ে নেয়।
“নাম কি?”
“হুম?”
“রুকি?”
“হুম।”
“বাড়ি কোথায়?”
“হুম?”
“জানো না?”
“হুম।“
“কোন সমস্যা হলে সোজা আমাকে জানাবে।”
“হুম।”
আর আচার আচরণেই কি উদ্ভট দেখো! ছোট একটা আয়না হাতে থাকবেই। তাতে তাকিয়ে একা একা বিড় বিড় করে, অথচ দশ কথার একটারও জবাব দিবে না।
রুকি এই কম্পাউন্ডে নতুন, দিন পনের হলো এসেছে। নিতান্ত দুঃস্থ, পিতৃ মাতৃহীন না হলে এই কম্পাউন্ডে কেউ কি আসে, অথবা পথ ভুলে? আসতেই পারে, অন্তত শবনম ও জ্যোতির তাই ধারণা। এরকম বেশ কয়েকজনকে তারা দেখেছে, কথা বার্তায় মোটেও গরীবি সুরত নাই। তারা দুইজন রুকিকে কিছুটা ভয় পায় ঠিক, আবার তার কাছেও ঘেষতে চায়। কেননা কম্পাউন্ডে নতুন কোন মেয়ে আসলে শিকদার ভাই সেটার সুযোগ নিবে না তা কি আর হয়? সুযোগ পেলেই গায়ে হাত দেবে। শবনমের বুকে হাত দিয়েছিল একবার, কম্পাউন্ড সুপারের কাছে নালিশ দিতে গিয়েও দিতে পারে নাই, মুখ ফুটে কথাটা বলতে যেন পেটে নাড়িভুঁড়ির গিট্টু লেগে যায় । রুকির ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে নাই, সাক্ষী খোদ শবনম ও জ্যোতি। তারা দূর থেকে খেয়াল করে শিকদার ভাই দাঁত কেলিয়ে হাত নেড়ে কিসব জানি বলছে, রুকির ইশারায় শিকদার ভাই মাথা একটু নিচু করে মুখের কাছে কান এগিয়ে দেয়। আর তাতেই একটু বাদে এদিক সেদিক তাকিয়ে শিকদার ভাই উল্টো পথে হাঁটা ধরেছিল। ঐদিনের পর থেকে তারা খেয়াল করে যে শিকদার ভাই রুকির ছায়ার সাথে দূরত্ব মেপে চলে, কোন প্রয়োজনে কথা হলেও সেটা ছায়ার বাইরে দাঁড়িয়ে।
এই গোপন সূত্র জানতে শবনম ও জ্যোতির মনে উশখুশ চলে, কিন্তু ভয়টা তো আর অমূলক না। কোন ঝামেলা নিশ্চয়ই আছে। হতে পারে রুকির পরিচিত মহল অনেক ক্ষমতাবান। তবে সে সম্ভাবনা কম। ক্ষমতাবান হলে এখানে আসার কথা না, আবার হতেও পারে, কত কিছুই তো সম্ভব। হতে পারে রুকির গায়ে জ্বিন পরীর আছর আছে, নয়ত কেউ কি সারাক্ষণ একা একা আয়নায় তাকিয়ে বিড়বিড় করে? সকালে যখন এসেম্বলি হয় তখনও তারা খেয়াল করে যে রুকি আয়না হাতে বিড়বিড় করে কার সাথে জানি কথা বলে। এমনও হতে পারে যে রূপকথার ডাইনির মত নানা অশরীরীর সাধনায় মন্ত্র পাঠ করে সেসবকে আয়নায় হাজির করে সে। জ্যোতি শবনমকে বলে, “কোরআন শরীফ উলটা কইরা পড়লেই জাদুটোনা করা যায়। ঐ ছেমড়ি কুফুরি জানে লেইখা রাখ।”
চেয়ারে উবু হয়ে বসে ডাইনিং টেবিলে তরকারির বাটিতে রাখা পাতলা ঝোলে উঁকি দেয়া সাদা সেদ্ধ ডিমের দিকে রুকি তাকিয়ে। টেবিলের অপর পাশের চেয়ারে বসে শবনম ও জ্যোতি রুকি কি দেখে তা বোঝার চেষ্টা করে। ডিমে যদি মন্ত্র টন্ত্র পাঠ করে ফুঁ দেয় তাহলে যে কার কপালে খারাপি দেখা দিবে কে জানে। পাতলা ঝোলের সাদা ডিমের দিকে উবু হয়ে বসে তাকিয়ে থাকা রুকি হঠাৎ তাদের দুজনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়।
“ঐ তোদের সমস্যা কি? আমারে সারাদিন দেখা ছাড়া আর কোন কাম কাজ নাই?”
শবনম আর জ্যোতির গলা শুকিয়ে কাঠ। আমতা আমতা করে শবনম বলে, “ডিমের বাটিটা এদিক দিবা? সামনে নিয়া চাইয়া থাকলে খামু কেমনে?”
রুকি ডিমের বাটিটা এগিয়ে দিয়ে ডাল মাখা ভাতের দুই তিন লোকমা মুখে দিয়ে উঠে যায়। জ্যোতি শবনমের হাতে চিমটি দিয়ে বলে, “অতটুক ভাত খাইয়া মানুষ বাঁচে? বাটির সব ডিমের ভিতর যা কিছু আছে চাইয়া থাইকাই খাইয়া নিছে। এই ডিম খাওন যাইব না, লেইখা রাখ।” তারা বাটি বদল করে অন্য বাটি থেকে ডিম তুলে খাবারে মনোযোগ দেয়।
গায়েব হবার পূর্বাপরঃ
দিন ছয় বাদে টুথপেস্টের বদলে ছাই দিয়ে দাঁত মাজে শিকদার ভাই। সারাদিন পান চিবিয়ে দাঁত তার কালচে। দাঁত মেজে আয়নার সামনে কতক্ষণ হা করে দাঁত সব পরীক্ষা করে কিছুটা সন্তুষ্ট হয়ে মুখের সামনে হাত মেলে তাতে মুখ নিঃসৃত বাতাস ঢেলে নাকে টেনে মুখে দুর্গন্ধের মাত্রা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। যেদিন শিকদার ভাইয়ের কনফিডেন্সটা বেড়ে যায় ঐদিনই ছাই দিয়ে সে সকালে দাঁত মাজে। শুধু ছাই দিয়ে দাঁত মেজেই সে ক্ষান্ত হয় না, মুখের ভিতর সারাদিন মিন্ট লজেন্স পুরে রাখে। এমনিতে পান খেয়ে ঠোঁট জিভ লাল করে রাখার নেশা থাকলেও ঐদিন তার নেশা কেটে যায়, সারাদিনে একটা পানও মুখে দেয় না। আজ একটা বিশেষ দিন বলে কথা। শিকদার ভাই রুকির পিছু আজ ছাড়বে না বলে মনঃস্থির। এত সহজে সে হার মানতেও নারাজ। ঐদিন এই মেয়ে কি না কি বলেছে তাতেই যদি সে এতোটা ঘাবড়ে যায় তাহলে হবে কি করে? পুরুষ মানুষ হয়ে জন্মানো তো একটা রহমত। পুরুষ মানুষের এতোটা ভয় চলে?
সকাল থেকেই শিকদার ভাই রুকিকে চোখে চোখে রাখে। সময় সুবিধা মত একটু উত্তেজিত করে দিতে পারলেই যেকোন মেয়ে তার বিছানায় সুড়সুড় করে চলে আসবে, তার আরো ধারণা যে অনেক মেয়েই জোরজুলুম পছন্দ করে। রুকিকে দ্বিতীয় ক্যাটেগরিতে ফেলতে তার ভালো লাগে। রুকির উপর সারাদিন নজর রাখতে রাখতে তার আকাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত এসেও যায় সন্ধ্যার আগে আগে, যখন মেয়েরা বেশিরভাগই যার যার রুমে ফিরে যায়। যারা একা একা এদিক সেদিক বিচ্ছিন্ন হেঁটে বেড়ায় শিকদার ভাইয়ের ভাবনায় তারাও তার মত তৃষ্ণার্ত, শুধু মুখ ফুটে বলতে পারে না। রুকিকে সন্ধ্যায় কম্পাউন্ডের সামনে ইটে বাঁধানো রাস্তায় একা একা হাঁটতে দেখে তার শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায়। দ্রুত পায়ে হেঁটে রুকির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে একটা মিন্ট লজেন্স মুখে পুরে।
“ঐ ছেমড়ি, তোর কি একটুও শখ আহ্লাদ নাই? পাঁচ দশ মিনিটের ব্যাপার। তোরে কথা দিলাম কেউ জানব না। আমি জানি তুইও মনে মনে আমার কাছে আইতে চাস, মুখ খুইলা কইতে পারস না।” বলেই রুকির বুকে শিকদার ভাই হাত দেয়।
পৃথিবীর চামড়ায় মানুষের অস্তিত্ব একটা মহা পাগলের কারিগরি ছাড়া আর কি।শিউরে উঠে রুকি, নরকের যন্ত্রণা যেন মানুষের হাতে ভর করে তার শরীরে চড়ে। সেই হাস্যকর কারিগরির বিতৃষ্ণা রুকির চোখেমুখে ছেয়ে যায়। সাথে সাথে আর কিছু না ভেবে বেশ কিছুদিনে বড় হয়ে উঠা নখ শিকদার ভাইয়ের হাতে বসিয়ে সেখান থেকে দৌড়ে পালায় সে। শিকদার ভাইয়ের কেলিয়ে থাকা দাঁত আরো কেলিয়ে যায়, প্রতিরোধের ভাষাটা তার কাছে আরো ইতিবাচকভাবে ধরা দেয়। নখের খামচিতে বসে যাওয়া জখম জিভ দিয়ে চেটে সে আরেকটা মিন্ট লজেন্স মুখে পুরে এদিক সেদিক তাকিয়ে হাসিমুখে এগিয়ে যায়। তেজি মেয়ে তার বরাবরই পছন্দ।
“লাশ পাই নাই স্যার। মাইয়া আমার সাঁতার জানত না। মরার আগে বাপেরেও মাইরা রাইখা গেছিল।” বলেই ডুকরে কেঁদে উঠে মোমিনা।
পরদিন কম্পাউন্ডেরভোরের আকাশ লালচে গোলাপী আভা ধারণ করে, প্রত্যেকটা জানালায় যেন লালচে আগুন ধরে যায়। মেয়েরা সবাই ঘুম থেকে উঠে আস্তে আস্তে মাঠের কোণে কড়ই গাছের নিচে জড়ো হয়। সেদিন আর এসেমব্লি হয় নাই।খবর শুনে কম্পাউন্ড সুপার রাতের রুটিনে বাসি হয়ে যাওয়া লুঙ্গি গেঞ্জি গায়ে চলে আসে। কম্পাউন্ড সুপার মাইকে মেয়েদের নির্দেশ দেয় যার যার রুমে ফিরে যেতে, মেয়েদের ভিড় কমে না। কম্পাউন্ডের ইতিহাসে এমন ঘটনা আর ঘটে নাই। কিছুক্ষণ বাদে পুলিশে খবর চলে যায়, যেকোন মুহূর্তে পুলিশ স্পটে চলে আসবে। কম্পাউন্ড সুপারের দুশ্চিন্তার আর সীমা থাকে না। তার চাকরি জীবনে এমন বিপদের কথা সে কখনো ভাবে নাই।
চোখের মণি প্রায় বের হয়ে আসা ভয়াবহ আতঙ্কগ্রস্ত হা হয়ে থাকা মুখের ভিতর মাছি যাওয়া আসা করে। শিকদার ভাইয়ের লাশ পড়ে আছে কড়ই গাছটার তলায়। শবনম আর জ্যোতির আনন্দ ধরেও ধরে না! শবনম তো অসংখ্যবার কল্পনায় শিকদার ভাইকে খুন করেছে, কখনো ধীরে ধীরে শরীর থেকে চামড়া ছাড়িয়ে, কখনো তার সারা শরীরে ধীরে ধীরে পেরেক বসিয়ে। কল্পনায় প্রত্যেকটি মৃত্যু তার ধীর গতির। শিকদার ভাইয়ের শরীরে জখমের কোন চিহ্ন না থাকায় পুরোপুরি তুষ্ট হতে সে পারে না, মৃত্যুর কারণটা অনিশ্চিত।
সকল মেয়েদের ভিড়ে আশেপাশে কোথাও রুকিকে দেখা যায় না। ভিড় ঠেলে বের হয়ে তারা তন্ন তন্ন করে খোঁজে রুকিকে। ব্যাপার কিছুটা আঁচ করতে পেরে কম্পাউন্ড সুপারকে জানায় যে সকাল থেকে রুকি গায়েব। রুকির রুমমেটদের জিজ্ঞেস করে কম্পাউন্ড সুপার নিশ্চিত হয়, রুকি রাতের বেলা তার রুমে ফেরেনি।
বেশ কয়েকদিন পরের কথা। শ্যাওলা ধরা দালানের চেহারা বদলায় না। নিয়ম করে নতুন নতুন মেয়েরা সেখানে আশ্রয়ে আসে, আবার নিয়ম করে চলেও যায় কাগুজে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে। কম্পাউন্ড সুপারের অফিস রুমের সামনে শবনম জ্যোতিরা জটলা পাকায়। দারোয়ান এসে তাদের তাড়িয়ে দেয়, পোকার ঝাঁকের মত আবার তারা সেখানে গিজগিজ করে দাঁড়িয়ে রুমের ভিতরে উঁকি দেয়ার চেষ্টা করে। রুমের ভিতরের আলাপ কান পেতে শুনতে তারা একে অপরকে টু শব্দটি না করার যে নিষেধাজ্ঞা জারি করে, সে নিষেধাজ্ঞার জবান প্রত্যেকের মুখে মুখে প্রতিধ্বনিত হয়ে গুঞ্জনটা আরো বাড়িয়ে তোলে। রুকির মা মোমিনা কম্পাউন্ড সুপারের সামনে বসে আছে আর তার সাথে পুলিশের থানা ইনচার্জ। ভ্রু কুঁচকে একটা কাগজে অনেকক্ষণ ধরে এলোমেলো আঁকাঝোঁকা করে একটা আকৃতি দাঁড় করানোর চেষ্টা করতে করতে কম্পাউন্ড সুপার জিজ্ঞেস করে, “পুকুরে ডুবে মরার পর রুকির লাশ কি পাওয়া গিয়েছিল?”
“লাশ পাই নাই স্যার। মাইয়া আমার সাঁতার জানত না। মরার আগে বাপেরেও মাইরা রাইখা গেছিল।” বলেই ডুকরে কেঁদে উঠে মোমিনা।