অলৌকিক আকাঙ্ক্ষা । রাজিয়া নাজমী
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ নভেম্বর ২০২৩, ৩:১৭ অপরাহ্ণ, | ৩১১ বার পঠিত
নিউ ইয়র্ক সিটি হল পার্ক যে উদ্দেশেই তৈরি হোক না কেন, চারদিকের আকাশ ছোঁয়া অট্টালিকা,ব্যস্ত রাস্তার মাঝে এই পার্ক নীরব থাকে না। কোন না কোন কার্জক্রম চলতেই থাকে। পার্কটি মেয়র অফিস সংলগ্ন বলেই এখানে বেশির ভাগ সময় প্রতিবাদমূলক জমায়েত হয়। তবে প্রতিবাদ শান্তিপূর্ণভাবে হয়। সরকারের কাছে ন্যায্যতার দাবির পাশাপাশি আগামী ইলেকশনে সরকারি পদ পাবার ক্যাম্পেইনের জন্যও জমায়েত হয়। ভোট পাবার জন্য তাঁরা বলে যা আমরা শুনতে চাই।
পার্কে বসে আমি সভার তফাৎ দেখি। হতাশার ভিতরে অফিসে ঢোকার আগে কিছুক্ষণ বসে থাকি। এক ব্লক দূরে ফেডারেল প্লাজা আদালতের ফাইলে চাপা পড়ে থাকা মানুষের জীবনের বাস্তব দৃশ্য চোখে ভাসে- সেই অসহায় অবস্থায় পদপ্রার্থীর মনভোলানো কথা শুনে মন যখন অন্যমনস্ক হয়ে যায় তখন যদি কানে আসে স্টেট অব ইজরায়েল মাস্ট গো— অন্যমনস্ক মন সম্পূর্ণ মনোযোগী হয়ে ওঠে। চোখ বন্ধ করে এমন স্লোগান কানে আসলে ধরেই নিতাম— কোন ইসলামিক দলের বৃথা চেষ্টা- প্যালেস্টাইনীদের জন্য।
গতবছর সেদিনের এই জমায়েত ছিল একদল হেসিটিক ইহুদির। হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখা ‘জায়নবাদ বিরোধী অর্থ সেমিটিজম বিরোধী নয়। মাইকে ওরা বলছে, প্যালেস্টাইনের জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের চুপ থাকা উচিৎ নয়। যখন একজন ভুক্তভোগী তার জমি দখল মেনে নিতে অস্বীকার করে, এটা তাকে ইহুদি-বিরোধী করে না।’
ওদের এই জমায়েত ছিলো নির্যাতিত প্যালেস্টাইনের পক্ষে সক্রিয়তা বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া হিসাবে। অতীত ও বর্তমান ইসরায়েলি যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কে সচেতনতা এবং ন্যায়বিচার আনার এই প্রচেষ্টা যে ইহুদিদের জন্য মোটেও হুমকি নয় তা প্রচার করা।
আমি ওদের দলের প্রধানকে জিজ্ঞেস করলাম, কেনো চাইছেন না ইসরায়েল রাষ্ট্র হিসাবে টিকে থাকুক?
আমাকে পাশে বসিয়ে বলল, আমাদের পবিত্র গ্রন্থ তাওরাত অনুসারে ইহুদি রাষ্ট্র থাকা যেমন হারাম, তেমনি অন্য লোকদের উপর জুলুম করা, দখল করা নিষিদ্ধ। তাওরাতের আদেশগুলি উপেক্ষা করে ইসরায়েল রাষ্ট্র সৃষ্টি করার ফলে হাজার হাজার আরব ও ইহুদির জীবনে মর্মান্তিক ক্ষতি হয়েছে। পবিত্র ভূমিতে সংঘাতের আগুনের ইন্ধন ইসরায়েলি সরকারের চলমান অপরাধ। যারা সমস্ত ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের ইসরায়েলের সমর্থক হিসাবে চিত্রিত করে এবং এমনভাবে দাবি করে যে, প্যালেস্টাইনপন্থী অ্যাক্টিভিস্টরা ইহুদিদের বিরুদ্ধে, তারা ইহুদি বিরোধিতাকে উস্কে দিচ্ছে। এভাবে সমস্ত ইহুদিদের একটি সংঘাতে টেনে আনা অন্যায়। তারা ইহুদি ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে, ধর্মের নামকে অপমান করছে। আমরা সিটি কাউন্সিলের সদস্যদের কাছে দাবি করতে এসেছি, তারা যেন জায়নিজমের সাথে জুডাইজমের সংমিশ্রণ না করে। কারণ, তা হবে প্যালেস্টাইনপন্থীদের জন্য একটি অন্যায্য অপমান এবং ইহুদিদের জন্য মারাত্মক রকমের ক্ষতিকারক।
আমার অনুজপ্রতিম ফিলিস্তিনি বন্ধু বাসমা একদিন বলেছিলো আমেরিকান লেখক জেমস বাল্ডউইন ১৯৭৯ সালে তাঁর প্রবন্ধে একটি বাস্তবতাকে যথাযথভাবে তুলে ধরে লিখেছিলেন— ইসরায়েল রাষ্ট্র ইহুদিদের পরিত্রাণের জন্য তৈরি করা হয়নি; এটি পশ্চিমা স্বার্থের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। ফিলিস্তিনরা ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতি এবং ইউরোপের দুষিত খ্রিস্টান বিবেকের জন্য মূল্য পরিশোধ করে আসছে।
নির্বাসিত আমাকে ফিরে যেতে হবে। যেখানে অপেক্ষা করে আছে আমার স্ত্রী, ছেলে। আমাকে চেষ্টা করতে হবে ওদের জন্য অনুমতি বের করতে। আমার ছেলেকে শেকড়ের সৌন্দর্য নিজের চোখে দেখতে হবে। একদিন সে আনঅকুপাইড গাজাতে তাঁর ছেলেকে নিয়ে আসবে— মুক্ত প্যালেস্টাইনে।
বাসমা অ্যামেরিকায় বসবাস করছে বহু বছরে ধরে। ইজরাইলি পাসপোর্ট নিয়ে প্রায় বছরেই পরিবারের কাছে বেড়াতে যায় জেরুজালেমের একটি শহরে যেখানে ওর পরিবার থাকে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে অ্যামেরিকা যখন শরৎ কালের সৌন্দর্যে মুগ্ধ সেই সময় লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনীদের মতো, বাসমা প্রতিদিন যে দুঃস্বপ্নের মধ্যে পার করছে। বিশ্ব তার শিরোনাম দিয়েছে— an escalation of the Palestinian-Israeli conflict।
বাসমার পরিবার এখনও ভালো আছে। তবু ও রোজ ফোন করে মা’কে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আত্মীয়দের খোঁজ নেয়। খোঁজ নেয় গাজাতে শ্বশুর বাড়ির লোকদের। যাদেরকে বাসমা দেখলেও ওর স্বামী ইসমাইল কখনও দেখেনি।
বাসমা মায়ের কাছে থেকে শোনা খবর থেকে এখনও বেঁচে থাকার খবরটুকুই ওর আশি বছরের শ্বশুরকে জানিয়ে দেয়। বাকি কথা নিজের কাছেই রাখে। বাড়িঘর ছেড়ে ইজরাইল সরকারের হুকুম মত যেখানে যেতে বলা হয়েছে সেখানেই চলে গেছে ওরা দল বেঁধে। তবে যেতে যেতে দলটা ছোট হয়েছে। খাবারের অভাবে,পানির অভাবে—পর্যাপ্ত গোলাগুলির কারণে অনেকেই শেষ পর্যন্ত জীবন বাঁচাতে পারে নাই। বাসমা এসব খবর শুনেও অস্থির হয়, না জানলেও অস্থির হয়। আধা ঘুমে সে দেখে বোমাবর্ষণে গুঁড়িয়ে দেওয়া একটি বাড়ির স্তূপের ভিতর থেকে একটি হাত বের হয়ে আছে। হাতের তালুতে একটুকরো রুটি— পাঁচ বছরের ছেলেটি সিমেন্ট বালুতে মাখামাখি মুখে মায়ের হাত থেকে রুটি ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে। একটু আগেই তো মা খাবার হাতে নিয়ে তাকে খাওয়াতে আসছিলো। বোঝে না সে মা কেন বের হয়ে আসছে না?
দুজন ইসরাইলি সেনা কাঁধে বন্ধুক নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে- ছেলেটি ওদের কাছে দৌড়ে যায়। আরবিতে বলে, আমার মা’কে বের করে আনো। আমাকে আরেকটা রুটি দিতে বলো। একজন সেনা কাঁধের বন্ধুক নামিয়ে ছেলেটির দিকে তাক করতেই অন্য সেনা বন্ধুক নামিয়ে দিয়ে বলে, ছেড়ে দাও। ও হয় না খেয়ে মরবে, নয় আবার বোমাবর্ষণে। থাক দুই-একদিন বেঁচে।
এই দুঃস্বপ্ন দেখার পর থেকে বাসমা প্যালেস্টাইনে নিজের জনগণের সাথে সারারাত জেগে থাকে।
বাসমার শ্বশুর ইব্রাহিম, ১৯৬২ সালে তাঁর বাবামায়ের ইচ্ছা পূরণ করতে মিশরে গিয়েছিল পড়াশোনা করতে। ফিরে আর যাওয়া হয়নি।
নিজের মাটি ছেড়ে চলে আসার দুইযুগ পরে অনুমতি নিয়ে সে একবারই যেতে পেরেছিল— প্যালেস্টাইনে— গাজা’তে।
ইজিপ্টে আসার তিন বছর পরে, ১৯৬৭ সালে কলেজ থেকে অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে দেখে দরোজার সামনে রোদে পোড়া মুখ, ধূলোবালিতে মাখামাখি কাপড়ে তার কয়েকজন বন্ধু দেয়ালে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে। আলিঙ্গনের আবেগী কষ্টে কেঁদে ফেলে বলে, হেরে গেলাম। ছয়দিনের সেই যুদ্ধে ইজরাইলের বিজয়, নিজেদের পরাজয় নিয়ে ওরা একটি কথাই বলেছে– আমরা যুদ্ধ করতে পারিনি। আমাদের অস্ত্র ছিলো না। ওরা আমাদের তাড়া করেছে শুরুতেই। আমরা পালিয়ে এসেছি।
ইব্রাহিম গ্রাজুয়েশন করে। হাতে সার্টিফিকেট নিয়ে মায়ের হাত অনুভব করে। সে তার রুমে গিয়ে সার্টিফিকেট ঝোলাবার জন্য যে দেয়াল সে খোঁজে, সেই দেয়াল সে দেখে না। আজ যে তার গাজা’র বাড়িতে উৎসব হবার কথা ছিলো। তার মা সার্টিফিকেট হাতে নিয়ে সবাইকে দেখাবার আনন্দে মেতে উঠত।
জীবন বাঁচাতে পায়ে হেঁটে হাজার হাজার ফিলিস্তিনী পালিয়েছে পাশের দেশে— বেশিরভাগ জর্ডানে। ইব্রাহিমের মা গুলিবিদ্ধ এক সন্তানকে বাবার পাশে কবর দিয়ে জীবিত দুই সন্তানকে নিয়ে রিফুজিদের মিছিলের সাথে হেঁটেহেঁটে চলে গেছে আম্মানে। ইব্রাহিমের সার্টিফিকেট বাড়ির দেয়ালে ঝোলাবার জন্য মা নেই। দেয়ালও নেই।
সেই যুদ্ধের পরে যারা বাইরে ছিলো তারা নিজেদের ভূমিতে ফিরে যাবার চেষ্টা করেছে নানা ভাবে। এমনকি রেডক্রসের সাহায্যের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে। যদিও তাদের ভূমির অনেক অংশ তখন ‘অকুপাইড’ হয়ে গেছে। ইজরাইল সরকার শতশত বয়স্কদের ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিলেও সহস্র যুবকদের ফিরে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পৃথিবীতে তাঁদের জন্য একটি শব্দ তৈরি হয়— DISPLACED- স্থানচ্যুত। এই শব্দটির অর্থ আসলে মৃতের মত বেঁচে থাকা। ৬৭ সাল থেকে বদলে যাওয়া পরিচয়ে ইব্রাহিমের নিজেকে অন্য কেউ মনে হতো। তাঁকে আশ্রিত দেশে থাকার জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয় ফর্ম পূরণ করতে। প্রমাণপত্র সঙ্গে রাখতে হয়। শৈশবের কথা বলতে না পারার শ্বাসকষ্ট নিয়ে জন্ম কোথায় সেই প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। সে জানে তার আর ফিরে যাওয়া হবে না। একজন অতিথি হিসাবেই হয়তো কোনদিন যেতে পারবে। নিজের দেশের নাগরিক হিসাবে নয়।
যুগ পার করে অনুমতি নিয়ে ইব্রাহিম প্যালেস্টাইনে গিয়েছে। সে দেখে মাটি তেমন করেই বুক পেতে শুয়ে আছে— উপুড় হয়নি। সেই বুকে কেটে অকুপাইড লেখা। তাকে ওরা মাটি দেখার অনুমতি দিয়েছে,স্থান পাবার জন্য নয়।
যে আলেনবাই সেতু পার হয়ে গিয়েছিলো ইজিপ্টে,আজ দুইযুগ পরে ইজরাইল চেকপোস্টের ক্লিয়ারেন্সের জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে সেই সেতু পার হয়ে ওপারে যাওয়ার জন্য। যেখানে অপেক্ষায় আছে তার স্বজন। যেখানে কবরে শুয়ে আছে তার বাবা, দাদা -তার পূর্বপুরুষ।
তার মনে পড়ে, ছেলেবেলার বন্ধুদের কথা। যেতে দেবে কী ওরা আরেকবার হেঁটে বেড়াতে তার জন্মস্থানে? মাটির ঘ্রাণ নিতে ? কীভাবে সে মাটিতে পা রাখবে? একজন অতিথি? দর্শনার্থী? উদ্বাস্তু? নাগরিক!
সারাদিন পরে ইব্রাহিম অনুমতি পেলো। সেতুতে পা রেখে সে কাঁদে। তার চোখের জল সে ফেলতে চায় মাটির বুকে। লিখে দিতে চায়— আমি তোমারই একজন। নির্বাসিত আমি আমার মাতৃভূমিতে হাঁটছি। আমার মাতৃভূমি— ওয়েস্ট ব্যাংক, গাজা- প্যালেস্টাইন।
বাসমা ওর আশি বছরের শ্বশুরের পাশে বসে আলজাজিরা অন করলে, সে বলে, অ্যামেরিকার কোন নিউজেই কী সত্য বলছে না? আজ কতদিন হলো? কী বলেছে ওরা, সত্যি ছয়দিনে ৬০০০ বোমা ফেলছে? ১০০০ শিশুকে মেরেছে? ৩ হাজারের বেশি নিহত হয়েছে, কিন্তু ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে আছে যারা তাদের বের করবে কারা?
ইসমাইল বাবার কাছে বসে বলে, আমাদের অধিকার পুনর্নিশ্চিত করার জন্য জাতিসংঘের অগুণতি রেজোলিউশন— প্রতিরোধ করা, দখলমুক্ত করা, আমাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়া— এসব কী এতটা কঠিন পড়া? পঁচাত্তর বছর হয়ে গেলো!
ওদের কথার মাঝে আঠারো বছরের হাশিম ঘরে ঢুকে বলে, আজকের অনেক ছবি থেকে একটি দেখে আমাকে বলো, হামাস কী তৈরি ছিলো ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধ করতে? কী হলো এখন? গেলো তো গাজা? দেখো, একটা শিশুর সারা শরীর পড়ে আছে ইটের স্তূপের নিচে। শুধু ওর গলা থেকে মুখটা বাইরে। চিৎকার করে কাঁদছে।
টেলিভিশন বন্ধ করে বৃদ্ধ দাদার পাশে শুয়ে পড়ে হাশিম মা’কে কাছে টেনে নেয়। পঁচাত্তর বছর ধরে নিজেদের ভূমির অধিকারের প্রশ্নে তিন জেনারেশনের ওরা পাশাপাশি শুয়ে ভাবছে— অন্য সব দেশের মতই একটি জমিন- তাহলে কেন? এই জমিন এত বিশেষ হবার কারণ কী?
ইব্রাহিমের মনে পড়ে, তাঁর স্ত্রীর কথা। পারেনি সে যেতে নিজের জন্মস্থানে। ইব্রাহিমের মনে পড়ে শেষ দেখা গাজা।
নাতির মাথায় হাত রেখে সে বলে,গাজায় আমার শেষ রাত ছিলো তোমার পূর্বপুরুষের ছোট একটি ঘরে। সেই রাতে আমি ঘুমাইনি। ঘুম আমার জন্য আসেনি। নিদ্রাহীন চোখে আমি ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে চেয়েছিলাম। গভীর অন্ধকার ঘরের ছাদ কেড়ে নিয়েছিলো। আমি জানালা দিয়ে ডুবে যাওয়া চাঁদের সামান্য যে আলো ছিলো তাতে অগণিত প্রশ্নের মাঝে আমার জন্য একটি উত্তর খুঁজেছি।
আমার অতীতকে সামনে দাঁড় করিয়ে আমার জন্য এতদিন যে সেতু নিষিদ্ধ ছিল সেই সেতু পার হয়ে এই যে আমার মাটিতে ফিরে এসেছি, পথে পথে অকারণে স্পর্শ করেছি অনেককিছু, আবার অকারণে অবহেলা করেছি। কেন?
যেমন আমি সারাজীবন নিজের সাথে কথা বলি, অন্যরা ভাবে আমি নীরব হয়ে আছি। তেমনই কেউ দেখেনি আমি নিষিদ্ধ সেতু পার হতে হতে কতবার নিচু হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কতকিছু হাতে তুলে নিয়েছি। কেন তা বুঝবে না যেই সেনা আজ আমার থাকার মেয়াদ দেখে বলবে— যাও এবার।
রাত ভেঙে সূর্য ওঠে। আমি বিদায়ের জন্য তৈরি হই। সেতুর বুকের মাঝে দাঁড়িয়ে আমি শেষবারের মত পিছে তাকাই। না ওরা আমাকে অত সময়ে দেয়নি। বরং দ্রুত পার হবার জন্য ইশারা দেয়। আমার কোন অধিকার নেই এই এখানে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার।
নির্বাসিত আমাকে ফিরে যেতে হবে। যেখানে অপেক্ষা করে আছে আমার স্ত্রী, ছেলে। আমাকে চেষ্টা করতে হবে ওদের জন্য অনুমতি বের করতে। আমার ছেলেকে শেকড়ের সৌন্দর্য নিজের চোখে দেখতে হবে। একদিন সে আনঅকুপাইড গাজাতে তাঁর ছেলেকে নিয়ে আসবে— মুক্ত প্যালেস্টাইনে।
আমার শেষরাতে জানলার বাইরের আলো আঁধারিতে যে প্রশ্ন ছিলো যার উত্তর আমাকে দিনের আলো দিতে পারে নাই। তোমাদের আমি সেই প্রশ্নই করবো— যে প্রশ্ন আমার প্রিয় কবি মওরিদ বারগৌতি করে গেছেন।
প্রাণের রেহেল থেকে ছোঁ মেরে
কে তুলে নেয় রুহের অঙ্কুর?
ওই জালিম ছাড়া আর কে—
দখলদার বাহিনীর বন্দুকের গুলি ছাড়া আর কে?
** মওরিদ বারগৌতির কবিতাংশ ভাষান্তর : বদরুজ্জামান আলমগীর।