মুলক । দোলনচাঁপা দাশগুপ্ত
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ নভেম্বর ২০২৩, ৩:৫২ পূর্বাহ্ণ, | ২৬৬ বার পঠিত
জিনাত আজ শাহীনবাগের জমায়েতে যাবে কিনা চিন্তা করছে। গত পাঁচদিন ধরে পার্ক সার্কাসে আন্দোলনের জমি কামড়ে পড়ে ছিল। আজ জিনাতের ভয় ঢুকেছে। তবসসুম, জারা দুজনেরই কাল থেকে হালকা কাশি। সাকিরার জ্বর এসেছে কাঁপুনি দিয়ে । ফোন করে জানিয়েছে। জিনাত এদের সবাইকে নিয়ে জোট বেঁধে গেছিল শাহীনবাগের সমর্থনে।
যাবে নাই বা কেন? এ দেশ তো তাদের। জন্ম জন্ম ধরে মা ,চাচি ,নানিদের দেখে আসছে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে। যতোই হজ করতে মক্বায় যাও আর যাই করো নিজের মাথার ছাদ, চার দেওয়াল, পায়ের মাটির মতো পবিত্র আর কিচ্ছু নেই। যেখানেই দাঁড়িয়ে আল্লাকে ডাকা যায় আল্লা সেখানেই নেমে আসেন। কাজেই এন আর সির নামে রাগে গা জ্বলে গেছিল।কেন আলাদা করে পরিচয় দেখাতে হবে?
জিনাত এ ক’দিন দর্জির কাজ বন্ধ রেখেছে। তিলজলার বেশিরভাগ মেয়ে ,বউ তার কাছেই ব্লাউজ বানায়। হেব্বি হেব্বি কাটের ব্লাউজ বানাতে শিখেছে জিনাত। সবই আবদুল ভাইয়ের থেকে। মুম্বাইতে পাঁচ বছর টেলারিং করে আবদুল ভাই এখন নিউ মার্কেটে ছেলেদের স্যুট বানায়। আর মেয়েদের ব্লাউজ, কুর্তি বানানো হাতে ধরে শিখিয়েছে জিনাতকে। লোকাট, রেখাগলা, বোটনেক, স্লিভলেস, সব্যসাচী কাট , আরও কতো কী! হালফিল চলছে স্প্যাগেটি স্ট্র্যাপ ও হল্টার নেক ব্লাউজ। রমরমা বাজার। এসব ছেড়ে শাহীনবাগে গেছিল শুধু নিজেদের অধিকার আদায় করতে।
আলালের ঘরের দুলাল ঐ ছেলেটাই যতো নষ্টের গোঁড়া। বাঁদর ছেলে! কে বলেছিল তোকে রোগ লুকিয়ে সবাইকে ছড়িয়ে দিতে? মেরে পাট পাট করতে হয় বড়লোকের ব্যাটাদের।সফিকুল বলছিল, যতো সমস্যা করছে পয়সাওলারা। বাইরে থেকে রোগটাকে নিয়েও আসছে ওরা। জিনাতের মাথা গরম হয়ে যায় এগুলো শুনলে। কিন্তু মিছে কথা বা গল্প নয়। সত্যিই স্পেশাল প্লেনে চড়িয়ে যাদের ফেরত আনা হল ইন্ডিয়ায় তারাই তো রোগটা ছড়াচ্ছে। কতোজনের ভিতরে লুকিয়ে ছিল গুপ্ত , ফালতুস্য ফালতু ফিরিঙ্গি রোগটা! সফিকুল বলল, বাইরে থেকে যারা বিমানে করে এল, তারাই ইবলিশ।
তবসসুম কাশতে কাশতে ঘরের বাইরে এসেছে। জিনাত দূরে দাঁড়িয়ে কল থেকে জল ভরছে বালতিতে। কর্পোরেশনের টাইম কলের জল। এখন না ধরলে আবার সেই দুপুরে আসবে। দেরি হয়ে যাবে। ঘরের রান্নাবান্না, কাচা- ধোওয়া, বাসন মাজা কিছুই হবেনা।কাল টিভিতে শুনেছে , হতচ্ছাড়া বিলেতফেরত ছেলেটা নাকি বাড়ি ফিরেই পুরো শহরটা চষেছে। এসেছিস বেশ বাপু, চোদ্দদিন ঘরের কোনায় বসে থাক। তা না বাবুর ফুর্তিফার্তা না করলে চলবে কেন! নবাবী দেখিয়ে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মল, প্লাজা ঘুরে বেরিয়েছে। রোগটাও ছড়িয়ে দিয়েছে হু হু করে। ইস, এই একটা ছেলেকে যদি আটকানো যেত…
জিনাত আফসোসে হাতের বালতি কাত করে ফেলল। জলভর্তি বালতি ছলাৎ করে উঠে জল চলকে পড়ল। তবসসুম কাশতে কাশতে মুখে হাত চাপা দিল। শরমিন বানু সামনে দাঁড়িয়ে জলের লাইনে। খিঁচিয়ে উঠল, বুরবকের মতো জল ফেলচিস কেন?
শয়তান ছেলেটাকে চোদ্দদিন আটকালেই বিমারি ছড়াত না চাচী!
কে বলল তোকে বিমারি আমাদের ঘরে ঢুকেছে? সব বড়লোকদের থেকে এসচে প্লেনে চেপে । ওদেরই হচ্ছে। আমাদের হবেনা ওসব। আমরা কি প্লেনে চেপে এসচি?
জিনাত ঝটিতি তবসসুমের দিকে তাকাল। তবসসুম ঘরে গেছে। কাশির আওয়াজ আসছেনা ।
তুলসীর ছুঁড়ে দেওয়া মাস্ক নিজের মুখে বেঁধে নিতে নিতে জিনাত বুঝল, শাহীনবাগ হোক কী রামনবমী, জমায়েত এখন তাদের জন্য হারাম! রোগটা যে শুধু বড়লোকরা এনেছে তা নয়। আরব, দুবাই,ইরানে যে হাজার হাজার গরীব লোক রাজমিস্তিরি, প্লাম্বার, ছুতোর, কামার, স্যাকরার কাজ করতে যায় তারা তো হামাগুড়ি দিয়ে ইন্ডিয়ায় ঢোকেনি! বিমানে চড়েই কাজ করতে গেছিল আবার কাজের সূত্রে বিমানেই ফেরত এসেছে। তাহলে?
নাহ শরমিন বানু একদম ঠিক বলেনি। বোরখা ইয়া ঘোমটা নয় , এই একটুকরো চৌকো কাপড়ই এখন দেশটাকে বাঁচাতে পারে।
বিলকুল ঠিক বলেছে শরমিন চাচি। শাহীনবাগে জমায়েতে যাচ্ছে বলে কদিন ধরেই বুকের মধ্যে চাপা ভয় গুবগুবিয়ে উঠছিল। টিভিতেও চ্যানেলে চ্যানেলে বলছে- জটলা না করতে, মাস্ক পরতে। কিন্তু আসল সত্যিটা হল, আমিরদের থেকে রোগটা আমিরদেরই ছড়াচ্ছে।
জিনাত কুচো চিংড়ি দিয়ে পটলের তরকারি কষাতে কষাতে ভাবল জারাকে একবার ঝট করে দেখে আসবে কিনা। জ্বর না থাকলে জারাকে নিয়ে শাহীনবাগ যাবে। ব্লাউজগুলো কাস্টমারদের ডেলিভারি দিয়ে এলে ভাল হতো। হাতে হাতে টাকা মিলত। এখন তো কাস্টমাররা কেউ তিলজলার ঘুপচি দোকানে আসবেনা। একরত্তি ভাইরাসের ভয়েএখন যে যার নিজের ঘরে বসে।
মুসুরির ডাল আর আলু-পটলের তরকারি দিয়ে ভাত খেয়ে বেরিয়ে পড়েছে জিনাত। জারার ধুম জ্বর। ও মেয়েটা চুলবুলে, চটপটা । কসবার বাইরে সায়েন্স সিটির আশেপাশে ফ্ল্যাটবাড়িগুলো সব চেনে।নখদর্পণে।
জিনাত ভেবেছিল শাহীনবাগ হয়ে ফেরার পথে ব্লাউজগুলো ডেলিভারি দিয়ে চলে যাবে। কড়কড়ে টাকাগুলো হাতে পেলে খুব ভাল হতো। আবদুল ভাইয়ের নিউ মার্কেটের দোকান বন্ধ । সফিকুল বলছিল, কার্ফু না কী একটা ডাকবে সরকার। সব সব বন্ধ করে দেবে। পেট চলবে কীভাবে এক হপ্তা টানা কাজ বন্ধ থাকলে! জিনাত বোরখা পরে নিল। মাস্ক কেনার টাকা নেই। শরমিন চাচি চেঁচিয়ে বলছে, বোরখা পরলেই হবে। মাস্কের বাবা। কোনও বিমারি বোরখার ঘেঁষবেনা।
রাস্তা পার হওয়ার সময় চমকে গেল জিনাত। কোনও গাড়িই নেই বললে চলে। দু একটা হলুদ ট্যাক্সি, সাদা চারচাকা উবের। গাড়ি নিয়ে না বেরোলে যাদের পেট চলবেনা , তারা ছাড়া কিছু ভ্যান, রিক্সা, বাইক আর সাইকেল। শাহীনবাগের জমায়েতেও আজ লোক কম। দূর থেকেই দেখতে পেল জিনাত।
কী করবে বুঝতে না পেরে ব্লাউজগুলো ব্যাগের থেকে বার করল। তবে কী ফিরে যাবে? বরং এখন বেলা থাকতে থাকতে এগুলো খরিদ্দারদের হাতে দিয়ে আসতে পারলে …ওহ এখন তো কেউ হাতেও ছোঁবেনা জিনিসগুলো। তাহলে? জিনাত চিন্তিত হল।
খরিদ্দারদের নাম-ঠিকানা লেখা বিলবইটা সঙ্গে করে এনেছে। মোবাইল নম্বরও আছে। কিন্তু তার ফোনে অতো ব্যালেন্স নেই ধরে ধরে ফোন করার।
সামনে হনুমান মন্দির। আজ ঘন্টা , কাঁসি বাজছে না, শাঁখের আওয়াজও আসছেনা। মন্দিরের দরজা বন্ধ। আজ নিশ্চয়ই পূজারীআসেনি।চারদিক শুনশান।জিনাতের কীরকম ভয় ভয় করছে! এইসব চেনা রাস্তাঘাট যেন অচেনা হয়ে গিয়েছে রাতারাতি।
মন্দির লাগোয়া পাশের বাড়িতে একটা বাচ্চা মেয়েকে প্রায়ই খেলতে দেখেছে জিনাত।তিন বছরের সেই অবোধ শিশু গুটি গুটি পায়ে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছে, দেখল জিনাত। সারা গায়ে কালিঝুলি মাখা।নাক দিয়ে শিকনি পড়ছে।ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। জিনাত এগিয়ে এল বাচ্চাটার কাছে।
মা কই বেবি?
বাচ্চাটার দৃষ্টিতে শূন্যতা।যেখান থেকে বেরিয়ে এল সেদিকে এগোল জিনাত। দরজা হাট করে খোলা। বাড়ির লোকজন গেল কোথায়?
মুখ তুলতেই দেখতে পেল জিনাত, আশেপাশের বাড়িগুলো থেকে সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকে দেখছে লোকজন।
তার মানে পাড়াপ্রতিবেশী সবাই আছে!মজা দেখছে , কিন্তু ঘরের বাইরে পা বাড়াচ্ছেনা।
কৌতূহলের সঙ্গে সঙ্গে একটা আশঙ্কাও হচ্ছে জিনাতের।
বাচ্চাটা খোলা নর্দমার পাশে দাঁড়িয়ে। ড্রেনের মধ্যে যে কোনও মুহূর্তে পড়ে যেতে পারে।
মন্দিরসংলগ্ন বাড়িটার ভিতরে জিনাত কোনওদিন ঢোকেনি।কিছুক্ষণ ইতস্তত করে ঘুলঘুলি দিয়ে উঁকি দিল।
ঘরের মধ্যে চৌকির উপর পড়ে এক প্রৌঢা। ঘোমটা দেওয়া একটা বউও শুয়ে আছে। পরনের কাপড় আলুথালু। বউটাকে আগে দেখেছে জিনাত। মেটে সিঁদুর পরা, নাকে নথ বউটা মন্দিরে বসে কাঁসর ঘন্টা বাজায়।
জিনাত কী করবে বুঝতে না পেরে জোরে বলে উঠল, কা আপলোগ ইতনা ছোটে বাচ্চেকো ছোড় দিয়া?
প্রায়ান্ধকার ঘরেও দেখতে পেল জিনাত, বউটা কোনওরকমে পাশ ফিরে উঠে বসল।
শরীর মোচড়াচ্ছে । নিশ্চয় কিছু হয়েছে বউটার।
ঘোমটা খসে পড়েছে।
তুলসির গায়ে এত ব্যথা যে উঠে বসবার শক্তিও নেই। তিনদিন ধরে শাশুড়ি আর তার জ্বর।
জিনাত ভাবল এক দৌড়ে পালিয়ে যায়! সাংঘাতিক!এ কী সেই রোগ? হায় আল্লা, তাকেও যদি ধরে ফেলে!
তুলসী ইনিয়ে বিনিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করছে। ঘোমটা খসে পড়েছে। মুখ সাদা। ঠোঁটে কষ। তুলসি ফুঁপিয়ে কেঁদে বলছে, পাড়ার বেশিরভাগ মরদেরা চলে গিয়েছে আসন্ন রামনবমীর মেলায়।উত্তরপ্রদেশে। শ্বশুর এবং বরও তাদের সঙ্গে গিয়েছে।
আর যাবে নাই বা কেন ! একশ বছর ধরে চলে আসছে ত্রেতাযুগের ভগবান রামচন্দ্রের জন্মতিথির এই মেলা। ২৫ তারিখ বিরাট মূর্তি বসবে রামচন্দ্রর। দেশের সেই পবিত্রভূমি অযোধ্যায়, পুণ্যলগ্নে না গেলে চলে?
কিন্তু মুশকিল হয়েছে তাদের দুই ঔরতের। তুলসী আর তার শাশুড়ি দুজনেরই ঘুষঘুষে জ্বর। কাশি। শাশুড়ির হাঁপ ধরছে।বসতে পারছেনা। উপুড় হয়ে ঘুমাচ্ছে।
আজ দুদিন রান্না করতে পারেনি তুলসি। গা তুলতেই পারছেনা।টলে পড়ে যাচ্ছে। প্রতিবেশী লোকজন কিছু ফলমূল পাঠিয়ে দিয়েছিল কাল। কিন্তু রোটি অওর ভাত না খেয়ে কদ্দিন থাকা যায়? ইলাজ করার জন্যও তো হাসপাতালে যেতে হবে। সেটাই বা হচ্ছে কোথায়?
তুলসির দুই চোখ দিয়ে এবার দরদর করে জল পড়ছে।
জয় শিয়ারাম, বলতে বলতে তুলসি হাতদুটো জড়ো করে বুকের কাছে ঠেকাল।
হামার বিটিয়াকে কুছু খিলাবে?
জিনাত চেঁচিয়ে বলল , হামি মুসলমান আছে। চলবে?
তুলসি কাঁদছে।কাচের চুড়ি পরা হাতদুটোকে জোড়া করে নিজের মাথায় নিল।
তোমাকে পাঠিয়েছে ভগবান রামচন্দ্র । ওদের বাবা আসার আগে যদি কিছু হয়ে যায় আমার, বিটিয়াকে দেখো বহেন। কেউ নিচ্ছেনা ওকে বিমারির ভয়ে।
বাচ্চাটা চুপ করে দাঁড়িয়ে। মায়ের কান্নায় ঘাবড়ে গিয়েছে সম্ভবত।
মাথার বালিশের তলা থেকে দুটো নতুন মাস্ক বার করে দিল তুলসী।
জিনাত ব্লাউজের প্যাকেট ফের ব্যাগে ঢুকিয়ে নিল। এখন সবার আগে দরকার বাচ্চাটাকে এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া। এক প্যাকেট বিস্কুট কিনতে হবে বাচ্চাটার জন্য। দুদিন কিছু খায়নি অবোধ শিশু। শুধু কেঁদেই চলেছে।
তুলসীর ছুঁড়ে দেওয়া মাস্ক নিজের মুখে বেঁধে নিতে নিতে জিনাত বুঝল, শাহীনবাগ হোক কী রামনবমী, জমায়েত এখন তাদের জন্য হারাম! রোগটা যে শুধু বড়লোকরা এনেছে তা নয়। আরব, দুবাই,ইরানে যে হাজার হাজার গরীব লোক রাজমিস্তিরি, প্লাম্বার, ছুতোর, কামার, স্যাকরার কাজ করতে যায় তারা তো হামাগুড়ি দিয়ে ইন্ডিয়ায় ঢোকেনি! বিমানে চড়েই কাজ করতে গেছিল আবার কাজের সূত্রে বিমানেই ফেরত এসেছে। তাহলে?
নাহ শরমিন বানু একদম ঠিক বলেনি। বোরখা ইয়া ঘোমটা নয় , এই একটুকরো চৌকো কাপড়ই এখন দেশটাকে বাঁচাতে পারে।
জিনাত ভাবল, সে তো দর্জি। টুকরো টুকরো কাপড় দিয়ে মাস্ক বানাতে পারবেনা ? ব্লাউজ না হয় পরে বানানো যাবে। এখন বাচ্চাটাকে বাঁচানো দরকার। জিনাত মোবাইল বার করে ফোন করল ।
সফিকুল আসবি সাইকেলটা নিয়ে? রান্নাঘরের আড়ার তাকে ডেকচিশুদ্ধ ভাত, ডাল আর পটলের তরকারি রাখা আছে। নিয়ে চলে আয়।
তুলসীকে হাত নেড়ে আশ্বস্ত করে জিনাত।
সব ঠিক হো যায়গি। চিন্তা মত করো।
ওদিকে, শাশুড়িকে নিস্পন্দ দেখে তুলসির বুক ধড়াস ধড়াস করে।
অগর শাশু মা গুজর গয়ি তো! তুলসি শীৎকার দিয়ে ওঠে। ম্যায় কেয়া করু?
জিনাত তুলসির উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে বলে, বিসমিল্লাহ রহম করো। তুম রামজীকো ইয়াদ করো বহেন। কুছ নেহি হোগি। ইয়ে মুলক ছোড়কে কহি নেহী যাওগে তুম।তুমহারি বিটিয়া হ্যায় না?
মুখে বললেও জিনাতের বুক ধড়ফড় করে। এই একফোঁটা বাচ্চামেয়েটাকে এখানে কার জিম্মায় দিয়ে সে তিলজলার বসতিতে ফিরবে?
তুলসি ক্ষীণকন্ঠে বলে ওঠে রাম রাম! জয় শিয়ারাম!জিনাত জোরগলায় বলে আলহামদুলিল্লাহ… বাচ্চাটাকে বরং আমিই নিয়ে যাচ্ছি কদিনের জন্য। তুমি ভাল হলেই দিয়ে যাব।
মহানগরে সন্ধ্যা নামে। কিন্তু অন্ধকার ঘনায় না। কাছের গির্জায় ক্রুশবিদ্ধ যিশুর মুখে প্রশান্তি নেমে আসে। প্রার্থনা করতে গিয়ে মোমের আবছা আলোয় দেখতে পান সিস্টার মেরি ম্যাগদালিন।