৩টি কবিতা । লালন নূর
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ নভেম্বর ২০২৩, ৩:৫০ অপরাহ্ণ, | ৩৯৭ বার পঠিত
ইশতেহার
ভয় ও বিভ্রান্তি নিয়ে কাটে প্রতিটি মুহূর্ত—
পৃথিবীর কান্না ভোলাতে নিজেকে সহসা কর্ণহীন ভাবি।ভাবছি তোমার কাছে গিয়ে নিভৃতবাসের ছলনা করবো। আশ্রয়ের কিছুদিন পর মালিক হিসাবে আমি দোল খেতে থাকবো তোমার চোখের নদীতে। উঠানে তোমার ছেলে-মেয়েদের রঙিন দিনগুলো, তোমার মা-বোন-স্ত্রীর ফুটন্ত কান্নাগুলো দুলতে দুলতে ডুবে যাবে সূর্যোদয়ের ভঙ্গিমায়। দেখতে দেখতে তুমি উল্টাতে ভুলে যাবে শোক ও কান্নার ক্যালেন্ডার। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ভাষা বানের পানির মতো উদাসীন হয়ে যাবে। লাউ শাকের পাতায় ছড়িয়ে থাকা বিবর্ণ রোদের ভিড়ে আমাকে শোনাতে তুমি তুলে আনতে চাইবে আরব্য রজনীর গল্প; অথচ ফিলিস্তিন ছাড়া আর কোন গল্প তোমার মনে থাকবে না— আলিফ লায়লা ওয়া লায়লা।
তোমাকে ডাকছি আজো ফিরতি ডাকের গাড়ি
ঝাঁকে ঝাঁকে লাশের পাহাড়। ব্যবসায়িক মুনাফার লালা ভেঙে ঝরে পড়ে সাগু ও বার্লির পথ্য। তোমার দুচোখে হাসে সাদা হাসপাতাল। জীবন ও মরণের ব্যবসায়িক সাঁকো। শুশ্রূষায় গলে যায় মৃত মানুষের নিরাময়। ধর্মের প্রেমকাঁটা গিলে খায় আশ্রয়ের বাগান। কবরস্থানে গাছ নয়, বাড়ে শোকের পাহাড়। তাতেই মর্মার্থ ভুলে বেড়ে ওঠে গাছ। রক্তাক্ত বাতাসে তোমার নিভৃতচারী গর্জন। লাশের ব্যবসায় অসম্ভব লাভ খুঁজে পেতে তুমি জেগে আছো মুখস্ত বিষাদ। ব্যবসায়িক মাখনের আখের গোছাতে গিয়ে তোমাকেই গোছাতে থাকি – ওগো, কারবালা, ও আমার মর্সিয়া।
তুমি শুধু হাতের রক্ত লুকাতে গুটিয়ে নিয়েছো নিষ্ঠুর আস্তিন। ফিরতি ডাকের গাড়ি, তোমাকে ডাকছি আজো – তুমুল ফিলিস্তিন!
বুদ্ধিমানের কৌতুকমহিমা
নিবিড় শুশ্রূষা জাগে শোষিত রক্তের রঙে। মানুষ ও রাজনীতির মাঝখানে দূরভিসন্ধির রক্ত মাপে ব্যবসায় নীতির বুদ্ধিমান পারদর্শিতা। যুদ্ধমত্তার রক্তসমগ্র নিয়ে অধর্ম নীতির কাছে বসে আছি! নগর পুড়িছে, তবু স্থির দেবালয়!
আকাশদেয়ালে পড়ে আছে উৎকীর্ণ পালকের রক্তাক্ত উড়াল। অদৃশ্য বাঁশের আগায় ঘাই মারে রাজনীতির সুবিশাল ঐতিহ্য। জানালার পর্দা সরালে রোদ নয়, ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়ে গাঢ় বিশ্বাসের রক্তনগরীর রঙ। দিগন্তের মাঝখানে ঝাঁকে ঝাঁকে লাশের পাখি, উবে যাচ্ছে নিঝুম শিশুর অঙ্কিত ঘুমের দৃশ্য।
এই লাশের বন্যার পাশে বসে নিজেকেই ভূনা করে খাই; আর তুমি পৌরাণিক বিমানে করে শুশ্রূষার বাহানায় কৌতুকমহিমার মৃত্যু হয়ে উড়ে আসো গাজায় ও ফিলিস্তিনে।