তৃতীয় দিন । এমদাদুল হক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুন ২০১৮, ১১:০১ অপরাহ্ণ, | ১৪৮৭ বার পঠিত
গত রাতের মতই আজও ঘুম জেগে দেখি চারটা বাইশ বাজে। সিগারেটে আগুন ধরিয়ে মনে হলো, যাকে ছাড়া এটা সম্ভব ছিলো না, যে ম্যাচ কাঠিটা দিয়ে আগুন জ্বালালাম, সিগারেট ধরিয়ে সেই কাঠিটা কোথায় ছুড়ে ফেলে দিলাম অথচ এমনও সময় পার করেছি, ম্যাচ কাঠির অভাবে সিগারেট ধরাতে পারিনি সারারাত। সিগারেট ফুকতে ফুকতে উঠানে এসে দেখলাম আশে পাশের বাড়ি থেকে আর কোন আলো আসছে না তবে দূরে অনেক দূরে দু একটা বাতি জ্বলে উঠে আবার খানিক পর নিভে যাচ্ছে; এই সময় মনে হয় লোক জন পেশাব করতে জেগে উঠে !
আজ তৃতীয় দিন। আসলে গত দুই-তিন দিন ধরে একই অবস্থা। ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি। তখনই একটা-দুইটা মসজিদ থেকে আযান শোনা যাচ্ছিল এবং রুমে ফিরে যাওয়া উচিত নাকি উঠানে দাড়িয়ে থাকবো এই রকম একটা ভাবনার সমাধান করতে না পেরে ছাদে উঠে গেলাম। দিন থেকে রাত হবার সন্ধিক্ষণে, মানে সন্ধ্যা হবার ঠিক আগ মুহূর্ত; সেই সময়টা আমাকে প্রবল ভাবে নাড়া দেয় আর রাত থেকে দিন হবার সন্ধিক্ষণে যেহেতু প্রায়শই ঘুমিয়ে কাটাই তাই তা আর টের না পেলেও আমার মনে হয় দুইটা সময়ের মধ্যেই কোথায় যেন একটা মিল আছে, দুইটা সময়ই আমাকে প্রবল ভাবে নাড়া দেয়। কোন কিছু হারিয়ে কোন কিছু পাবার, কিংবা এক পর্ব থেকে অপর পর্ব শুরু হবার, হয়তো ত্যাগ আর প্রাপ্তির মাঝখানের সময়ের অনুভূতি। অনুভূতি যাই হোক না কেন, এই সময় ঘরের ভিতর থাকা অসম্ভব এবং এক রকমের অন্যায়। আমি প্রত্যক্ষদর্শী হতে চাই, তা রাস্তার বাস দুর্ঘটনাই হোক আর রাত থেকে দিনের সন্ধিক্ষণই হোক।
ছাদে বসলাম। অদ্ভুত! খেয়াল করলাম ঠিক গত কালের মতই, আযান হলো আর শত শত কাক পালাক্রমে পশ্চিম থেকে পূর্বে যেতে লাগলো। কখনো এক ঝাঁক, কখনো গুটি কয়েক আবার কখনো আকাশ জুড়ে যেন হাতির পাল। বিষয়টা এমনই অদ্ভুত আর গত কালের হুবহু পুনরাবৃত্তি যে, একমুহুর্তে মনে হলো এটা আজ না এটা গত কাল কিংবা পরশু। প্রকৃতি কি পুনরাবৃত্তির মধ্য চলতে থাকে? একই ভাবে কাছাকাছি সময়ে দিন-রাত হয়, বাতাসে গাছ নড়ে, হেলে দুলে উঠে, প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে কুকুর দুইটা ঝগড়া করে আর কাকগুলো খাবার সন্ধানে আকাশে উড়ে পশ্চিম থেকে পূর্ব। ততক্ষণে দ্বিতীয় সিগারেট জ্বলালাম। যেদিন রাতে গরম বেশী হয় সেদিন ভোরে হয়তো দমকা হাওয়া বয়ে যায়; রাতের অশান্তিকে ভুলিয়ে দিতেই হয়তো ভোরে ঠাণ্ডা হাওয়ার এই ব্যবস্থা। আকাশে আরো একটু আলো ফুটতে থাকলে মেঘের ভিতর উড়োজাহাজ চলতে দেখি। দিনের বেলায় কেন যে উড়োজাহাজগুলো হেড লাইট জ্বালিয়ে চলে সেইটা ভাবনায় সমাধান হয় না; আর মেঘের ভিতর হেডলাইট জ্বালিয়ে লাভ কি হয়? কিছুই তো দেখা যায় না এক দল ঘন সাদা মেঘ ছাড়া।
আমি একটা বই এর দোকানে কাজ করি। প্রতিদিন সকাল দশটায় দোকান খুলতে হয়, ঘর ঝাড় দিতে হয় টেবিল পরিষ্কার করতে হয় আর পানির ফিল্টারে পরিষ্কার পানি ভরতে হয়। নিয়ম মাফিক হাগা মুতা শেষ করে লাক্স সাবান দিয়ে গোসল করে ফেললাম। রাস্তায় বের হয়ে তখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি নাই কই যাব? ডাব্লিউ এইট, নুরজাহান রোড থেক এলোমেলো হাটতে হাটতে ব্যাচেলার গুড মর্নিং ব্রেকফাস্ট পয়েন্টের সামনে দাঁড়ালাম রিক্সার খোঁজে; তখনো ব্যাচেলার গুড মর্নিং ব্রেকফাস্ট পয়েন্টে নাস্তা রেডি হয় নাই, হোটেলের বাবুর্চি কেবল ময়দা দলাই মলাই শুরু করছে। রিক্সা নিয়া বেড়িবাঁধে রওনা হইলাম। রায়ের বাজার যাবো।
তুমি যে সাদা কাগজে লিখিত দিলে আমার সাথে কখনো এই জীবনে তোমার প্রেম ছিল না আর প্রেম হবার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই সেই কাগজটা চোখের সামনে যতবার তুলে ধরি আর তোমার লেখা লাইনগুলো পড়ি, ততবারই আমি বিস্মিত হই; তুমি কি করে ভবিষ্যৎ জানো, বলো? তুমি কি তাহলে সাধু-মুনি? আমি তোমার এমন ক্ষমতা টের পাইয়া, আরেকবার তোমার প্রেমে পরে যাই।
রাস্তায় হাটতাছিলাম, আজ হাতে অনেক সময় পেয়ে গেছি। একটা শাখা রাস্তায় মানুষের ভিড় দেখে সামনে আগাইয়া গেলাম, দেখি মানুষ লাইনে দাঁড়াইয়া আছে আর একজন ঝাড়-ফুক মাতা জণ্ডিসকে পানির সাথে বাইর করে দিচ্ছে শরীর থেকে। যেহেতু কোন কাজ নাই তাই কিছুক্ষণ দাড়িয়ে দেখলাম। মহিলাটি আমাকে বললো আপনে ঝাড়াইবেন? আমি না বলে রাস্তায় হাটা দিলাম। রাস্তায় হাটতে হাটতে মনে হলো এখন তো আমার কোন কাজ নাই, এই সময়টায় যদি জণ্ডিস সরাইয়া দেয়া যায় ক্ষতি কি? আমি ফিরা গেলাম। কিন্তু সেই ঝাড়-ফুক মহিলা তখন অন্যদের জণ্ডিস বাইর করতে ব্যস্ত ছিল। আমি দাঁড়াইয়াই রইলাম।
আব্দুল আজিজ, ধরে নিলাম এইটাই তার নাম; আব্দুল আজিজ সেই ঝাড়-ফুক মাতা কে সাহায্য করে বিভিন্ন উপায়ে, তা ক্রাউড কন্ট্রোল থেকে শুরু করে ডাব পড়া দেয়া পর্যন্ত। আব্দুল আজিজ আমার কাছে আইসা জানতে চাইলো আমি কি জণ্ডিস নামাইতে চাই? আমি বললাম আমি তো জানি না আমার জণ্ডিস আছে নাকি? কি করে সিদ্ধান্ত নেই ঝাড়াবো কি না? তিনি বললেন ক্ষতি নাই, না থাকলে নাই, আর থাকলে তো নির্মূল হইলো নাকি? আমি দেখলাম কথায় যুক্তি আছে। আমি রাজি হইয়া গেলাম আর বললাম আমাকে কি করতে হবে? তিনি বললেন আপনার কি মাথা ঝিম ঝিম করে? আমি বললাম হ, করেতো। তারপর বললো মাছ, মাংস তে গন্ধ লাগে? খাইতে পারেন না এমন হয়? আমি বললাম হ, গত কয়েক সপ্তাহ মাঝে মাঝে পানিতে গন্ধ পাইতাছি আর মাছ-মাংস আমি খাই না, খাইতে পারি না। আব্দুল আজিজ শেষ বারের মতো জিগাইলো ঘুম কম হয়? আমি কইলাম হ ওস্তাদ, তইলে কি আমার জণ্ডিস আছে? তিনি বললেন আপনি বসেন এইখানে। বিশ টাকায় একটা ডাব কিনতে হইবো আর জণ্ডিস ঝাড়াইতে বিশ টেকা; আমি ভাইবা দেখলাম, হ এইটা পসিবল।
প্রেগন্যান্ট মহিলা, ছয় বছরের বাচ্চা, নতুন বিবাহিত দম্পতি আর মসজিদের মুয়াজ্জিন সবাই লাইনে খাড়াইয়া আছে। একি কাণ্ড, মাথার মইধ্যে পানি দেয় আর সেই পানি মাথার তালু হইয়া নীচে রাখা সিলভারের বলে পরে আর যখন পানিটা পড়ে, মাথার জণ্ডিস পানির সাথে গুলাইয়া হলুদ হইয়া পড়ে কিংবা সিলভারের বলে পইড়া হলুদ হইয়া যায়। যার পানি যত হলুদ তার জণ্ডিস তত। জণ্ডিস ঝাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে যেহেতু আমার একটু দেরি হইছে ফলে আমি লাইনে সবচেয়ে শেষের রোগী। একজন-দুইজন- তিনজনের পর আমার সিরিয়াল যখন আইলো তখন আজিজ সাহেব ডাব কিনতে বললো, পাশে দাড়িয়ে থাকা ডাব বিক্রেতাই এই সময়ে সবার ভরসা। আমি ছোট আর কচি দেইখা একটা ডাব দিতে কইলাম, কাক্ষিত ডাব হাতে নিয়া যখন বিশ টাকার নোট দিলাম, ডাবওলা কইলো আরো দশ টেকা দেন। আমি কইলাম বিশ টেকা কইরা না? ও কইলো, না; এই ডাবের দাম আছে একেকটা চল্লিশ-পঞ্চাশ টাকা। আমি আর কথা না বাড়াইয়া ত্রিশটাকা দিয়া ডাবটা হাতে নিয়া আবার সিরিয়ালে আসলাম। আজিজ সাহেব ডাবটা আমার হাত থাইকা নিয়া পাশে পার্কিং কইরা রাখা ঠেলা গাড়ির উপরে বইসা কি কি যেন বিড়বিড় করলো আর কয়েকবার ডাবের ফুটার মধ্যে ফু মাইরা দিল। কিছুক্ষণ পর আমার পাশে আইসা কইলো, পড়াইয়া দিছি; এখন না, মাথা ধোয়ার পর এইটা খাইবেন।
ঠিক যেই মুহূর্তে আমার জণ্ডিস ধুইবার কথা, সেই মুহূর্তে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হইলো। আমি ওঝা-মাতাকে বললাম এই বৃষ্টির মধ্যে কাজ হবে, তিনি বললেন কাজের মালিক আল্লা, আপনে বসেন। মানুষ অপর মানুষ দেখে শেখে; আমি ততক্ষণে লাইনে দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া দেখতাছিলাম সবাই কি করে, সেই রকম কইরা বলের পানিতে হাত ধোয়ার ভঙ্গিতে হাত ধুইতেই থাকলাম, ধুইতেই থাকলাম আর এই দিকে ওঝা-মাতা আমার ঘাড়ে আর মাথা এগারো বার টোকা দিয়া তিন বার ফু দিয়া মাথায় পানি ঢালতে থাকলো। হায় হায়, পানিতো পুরা হলুদ হইয়া গেছে। যাইহোক, উপুর্যপুরি জণ্ডিস নিরসনের পর, ওঝা-মাতাকে যখন বিশ টাকা বাড়াইয়া দিলাম তখন তিনি বললেন চল্লিশ টাকা তো! নিজেই বিশ্লেষন করলেন, বললেন ঝাড়ানো বিশ আর ডাব পড়ানো বিশ। আমি আরো বিশ টেকা পকেট থাইকা বাইর কইরা দিলাম। আজিজ সাহেব পাশেই দাঁড়াইয়া ছিল ডাব নিয়া, আমি যখন ডাব নিয়া প্রথম চুমুক মারবো এমন সময় বললো দাঁড়ান। আমারে বললো চোখ খোলা রাখেন, দেখলাম আমার হাত থাইকা ডাব নিয়া সেইটার পানি হাতের তালুতে নিয়া আমার মুখে চোখে ছিটাইয়া মারলো। এমন পর পর দুইবার করার পর বললো এইবার খান। আমি ডাব খাইতে খাইতে বললাম, ভাই চোখ জ্বলে তো! আজিজ ভাই কইলো, এইতো কাজ করতেছে, চোখ জ্বলা ভালো, এতে জণ্ডিস নিবারণ হবে। ডাবের পানি খাইয়া শেষ করার মুহূর্তে আজিজ সাহেব বললো, আজকেই প্রমাণ পাইবেন, এখনই দেখবেন সবকিছু খাইতে কেমন ভালো লাগবে, মুখে রুচি ফিরা আসবো আর মাথা ঝিম ঝিম কইমা যাইবো।
মুখে রুচি ফিরা আসবো শুইনা, আমি পা বাড়াইলাম রশিদের ভাতের হোটেলের দিকে। গুডমর্নিং ব্যাচেলার ব্রেকফাস্ট পয়েন্টে প্রতিদিন সেই একই পরটা আর ডাল-বাজি খেয়ে খেয়ে এইরকম একটা জণ্ডিস বাধানের পর রশিদের ভাতের হোটেলে যাইয়া দেখি রশিদ ভাইও পরটা ভাজতাছে। জণ্ডিসের হাত ভালো কইরা কসকো সাবান দিয়া ধুইয়া হোটেলের পোলাটারে কইলাম ভাত দেও। আমারে ভাত আর আলু ভর্তা দিল, খাইতে শুরু কইরা টের পাইলাম গরম ভাত আর এই মাত্রই বানানো আলু ভর্তা, আলু ভর্তায় ব্যাপক পোড়া মরিচের ঝাল; সাথে ডাল-বাজি নিলাম আর গপ গপ খাওয়া শুরু করলাম। আজিজ ভাই আগেই কইছিলো আজকে খাওয়ার রুচি বাইরা যাবে, রুচি বাড়ার বদৌলতে আরে একটা এক্সট্রা ভাত নিয়া খাইলাম। হোটেল থাইকা বের হওনের সময় দেয়ালে ঝুলানো ক্যাসিও ডিজিটাল ওয়াল ক্লকে দেখলাম তখন সময় সকাল সাতটা বায়ান্ন মিনিট।
এইসময়টা কি করে কাজে লাগাবো ভেবে না পেয়ে গল্প লিখতে শুরু করলাম, গল্প লিখে পাঠিয়ে দিলাম তানিমরে। ঘণ্টা খানেক পর তানিম একটা রিপ্লাই করলো; কইলো, ভাই এইটা কি গল্প লেখছেন? গল্পের মধ্যে ব্যক্তিগত প্রেম নিয়া আসছেন কেন? তাসমিন আবার কে? তাসমিনের পার্টটা বাদ দিয়া দেন। আর কইলো শুধু তাসমিন না, আরো কিছু জায়গা আছে, সংশোধন কইরা কালকে আবার পাঠান দেখি কিছু করা যায় কি না।
প্রকৃতির পুনরাবৃত্তি, একই সময়ে আযান আর কাকের উড়ে যাওয়া মাথায় রেখে আমি আরেকবার গল্পটা লিখতে বসি। প্রতিদিন একই-কাজ আসলে বোরিং না, সাধু-সন্ন্যাসীরাও প্রতিদিন একই সময়ে নিয়ম করে প্রনায়ম করে। আমি আবার এই গল্পটা লিখতে বসি। কোনভাবেই আর গল্প গল্প থাকে না, কোন না কোন একটা ঝামেলা পাকাবেই। তুমি যে সাদা কাগজে লিখিত দিলে আমার সাথে কখনো এই জীবনে তোমার প্রেম ছিল না আর প্রেম হবার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই সেই কাগজটা চোখের সামনে যতবার তুলে ধরি আর তোমার লেখা লাইনগুলো পড়ি, ততবারই আমি বিস্মিত হই; তুমি কি করে ভবিষ্যৎ জানো, বলো? তুমি কি তাহলে সাধু-মুনি? আমি তোমার এমন ক্ষমতা টের পাইয়া, আরেকবার তোমার প্রেমে পরে যাই। আরো বেশী বেশী প্রেম চাই। নিয়ম ছিল এক এক করে তিন দিন জণ্ডিসের ঝাড় নিতে হবে নয়তো জণ্ডিস কোনভাবেই সরবে না, আমার মনে হয় তোমাকে দ্বিতীয় দিনও যদি প্রেম প্রস্তাব দেই নিয়ম করে তাহলে প্রেম হতেও পারে। দেখ কাকগুলো নিয়ম করে প্রতিদিন পূর্ব থেকে পশ্চিমে যায়, প্রতিদিন যায়; আশা করি তুমি বিষয়টা বুঝবে।
তানিম পুরা বিষয়টা ডিসমিস কইরা দিয়া বললো, অনেক হইছে; আপনার মাথায় আর কিছু নাই। বাদ দেন। দেখেন অন্য কিছু করা যায় কি না। আপনে মেয়ে মানুষ ছাড়া গল্প লেখতে পারেন না? আপনার গল্প বোরিং এবং পুনরাবৃত্তিতে ভরপুর।
আমি তৃতীয় দিন আরেকটু চেষ্টা করতে চাই বইলা অনুরোধ করলাম। লাক্স সাবান দিয়া গোসল কইরা এলোমেলো পায়ে হেটে ব্যাচেলার গুডমর্নিং ব্রেকফাস্ট পয়েন্ট এর সামনে দাঁড়াইয়া মনে পড়লো আজ আমার হাতে একদমই সময় নেই, অনেক কাজ। তৃতীয় দিনের জণ্ডিস ঝাড়াইতে হবে। তাসমিনের জন্য দোলনচাঁপা কিনতে হবে। বজলুর রহমান জুলকারনাইন-এর গল্পটা তানিমরে দিতে হবে। রশিদের হোটেলে গরম ভাত আর ঝাল আলু ভর্তা খাইয়া গল্প লিখতে বসছি। গল্প লেখার উত্তেজনায় ফুল কেনার কথা আর মনে ছিল না, অফিসে যে মগ দিয়ে আমি পানি খাই, সেটায় চুমুক দিয়েই পিউর ইট-এর ক্যামিকেলের গন্ধে বমি আসার উদ্বেগ হলে, ওঝা-মাতার কথা মনে পরে। আমি দোলনচাঁপা হাতে নিয়ে জণ্ডিস ঝাড়াতে গেলাম। তৃতীয় দিন দেখলাম আর হলুদ পানি বেরুচ্ছে না, একদম টকটকে লাল পানি বেরুচ্ছে। ওঝা-মাতা আঁতকে উঠলো, আমাকে বললো আরো জোড়েজোড়ে হাত ঘষেন মাথায়, আরো তাড়াতাড়ি। তার উত্তেজনায় আমিও উত্তেজিত হয়ে পড়লাম। এমন একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনাকে মুছে ফেলতে তিনি তিন মগ পানি ব্যাবহার করলেন, তাতে যদি লাল জণ্ডিস ধুয়ে ফেলা যায়; আর আমিও মাথায় জোড়েজোড়ে হাত ঘষতে লাগলাম জণ্ডিস মুছে ফেলার উদ্দেশ্যে। ফলে সেই লাল জণ্ডিস পানির সাথে দ্রবীভূত হয়ে এদিক ওদিক ছিটায়ে পড়তে লাগলো হাতের নাড়াচাড়ায়, আমার জামা প্যান্ট ভিজে গেল। তাসমিনের দোলনচাঁপা ধীরে ধীরে লাল হয়ে গেল সেই পানিতে। পরবর্তীতে, তৃতীয় বারের মতো আমি লাল দোলনচাঁপা নিয়ে রিক্সায় উঠে ছাব্বিশ নাম্বার রওনা করলাম।