খানসাহেবের খণ্ডজীবন – পর্ব ২ । সিরাজুদ দাহার খান
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ আগস্ট ২০১৬, ১২:১৬ পূর্বাহ্ণ, | ২৪২৫ বার পঠিত
পূ্র্বসন্ধ্যায় খানসাহেব
আজ গোধূলিলগ্নে হাতে একগোছা ফুল নিয়ে পাড়ার গলিতে ঢুকতেই খানসাহেবের খুদে বন্ধুরা তাঁকে জেরা শুরু করলো —
: আঙ্কেল, হাতে কী ফুল?
: দোলনচাঁপা
: কার জন্য? আন্টির?
খানসাহেব কোনো জবাব দেয়ার আগেই আরেকজনের কৌতূহল —
: কার হ্যাপি বার্থডে? আপু না ভাইয়ার?
: তোমাদের আন্টির…
কথা শেষ হওয়ার আগেই কথা কেড়ে নেয় ওরা —
: ও, আন্টির হ্যাপি বার্থডে? তাই তো আপনাকে আজকে বেশি খুশি খুশি লাগছে!
: না, তোমাদের আন্টির হ্যাপি বার্থডে না।
: তাহলে কার? আপুর?
: না।
: ভা্ইয়ার?
: না।
: তাহলে কার? আপনার? হ্যাপি বার্থডে, ডিয়ার আঙ্কেল!’ — বলে সবাই খানসাহেবকে জড়িযে ধরে।
খানসাহেব কিছুটা হতবিহ্বল হন। তিনি মুখ-ফসকে বলে ফেলেন —
: না না! কালকে তোমাদের আন্টির ম্যারেজ ডে।
: ও, আন্টির ম্যারেজ ডে! তাহলে আপনার ম্যারেজ ডে কবে?
: কালকে।একই দিনে। একসাথে!
: বাহ! দারুণ তো! দুজনের একই দিনে!
: আপনি খুব লাকি। আন্টির হ্যাপি ম্যারেজ ডে-তেই অপনার ম্যারেজ ডে!
খানসাহেব ওদের হাত থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত ঘরমুখো হন।
টোয়েন্টি-এইট ইয়ার্স টুগেদার!
সময় গেলে …
যেখানেই যান, সেখানেই কারো-না-কারো সাথে খানসাহেবের সখ্য-বন্ধুত্ব-খাতির হয়ে যায়। মোহাম্মদপুর কৃষিমার্কেটেও এ-রকম বেশকিছু বিক্রেতার সাথে তার বেশ সখ্য। এর মধ্যে একজনের সাথে তার রীতিমতো দহরম-মহরম! খানসাহেব তার নাম দিয়েছেন — ‘ইংলিশ পেয়ারা’। দেখা হলেই সে স্মার্টলি হ্যান্ডশেক করবে —
: হাউ আর ইউ আঙ্কেল? হা্উ ইজ ইয়োর হেল্থ? তারপর বুকে জড়িয়ে ধরে উইশ করবে, অলমাইটি আল্লা ব্লেস ইউ! হাউ ইজ ম্যাডাম?
ভালো ইলিশ থাকলে দাবি নিয়ে দিবে; বলবে —
: খেয়ে দাম দিবেন …
বা, বলবে —
: দাম লাগবে না; …
না-থাকলে চোখের ইশারায় চলে যেতে বলবে।
খানসাহেব দু-একদিন সত্যিসত্যিই মাছ খেয়ে যাচাই করে পরে দাম দিয়েছেন।
রিপোর্ট খারাপ হওয়ায় একদিন সে দামই নেয়নি; অনেক জোর করার পর ৫০% দাম রাখল।
আবার কোনো-কোনোদিন দাম নিয়ে বার্গেইন করলে চাপাস্বরে মৃদু ঝাঁকুনি দেয় —
: কিপ কোয়াইট, কিপ কোয়াইট!
তার মানে, সে অন্যের চাইতে খানসাহেবরে কাছে বেশ কম দাম নিচ্ছে।
ঈদের দু-একদিন আগে দেখা হলে বলবে —
: গুড মর্নিং স্যার! ঈদ মুবারক!
তারপর মাছ কেনা শেষ হলে —
: আই রিয়্যালি লাভ ইউ স্যার!
খানসাহেব গদগদ হয়ে বলেন —
: মি ট্যু!
পেয়ারা বুকে হাত দিয়ে খাসা উচ্চারণে বলবে —
: ইটস মাই প্লেজার স্যার!
তারপর বিদায়ের সময় চমকে দিয়ে বলবে —
: ঈদ মুবারক ওয়ান্স অ্যাগেইন!
দু-একদিন জোর করে মাছ দিতে চাইলে খানসাহেব তাকে জ্ঞানের কথা শোনান —
: আপ রুচি খানা, পর রুচি পহর্না। মানে, খাওয়া নিজের রুচিতে আর পোশাক পরা পরের রুচিতে!
পেযারা দু’বার শুনে খুশি মনে আত্মস্থ করে নেয় কথাটা —
: থ্যাংস্ অ্যা লট আঙ্কেল!
যা-হোক, একদিন মাছ কিনে ডানহাতে অন্য-একটা্ ভারি ব্যাগ ধরতেই খানসাহেব অস্ফুটে বলে ওঠেন —
: উহ!
মাস-চারেক আগে ক্রিকেট খেলার চোটে ব্যথা-পাওয়া তার ডানহাতের কব্জিতে একটু টান লাগে আবার। তিনি ওই অবস্থায়ই চলে যেতে নেন। কিন্তু বন্ধু পেয়ারা তার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে তাকে আটকে দেয় —
: ওয়ট অ্যা বিট স্যার! প্লিজ রিমেম্বার ওয়ান থিং, ‘সময় গেলে …
খানসাহেব বিজ্ঞের মতো কথা কেড়ে নেন —
: সাধন হবে না।
পেয়ারা কিঞ্চিৎ অধৈর্য্য হয় —
: আঙ্কেল, লেট মি ফিনিশ ফার্স্ট; দ্যেন্ ইউ উইল স্যে হোয়াটএভার ইউ লাইক।
সে আবার শুরু করে —
: একটা কথা মনে রাখবেন, ‘সময় গেলে …
খানসাহেব আবার কথা কেড়ে নেন —
: সাধন হবে না।
এবার সে বিরক্ত হয় —
: ওহ আঙ্কেল, সামটাইমস ইউ টক ট্যু মাচ। লেট মি ফিনিশ ফার্স্ট।
খানসাহেব এবার ভড়কে গিয়ে থমকে যান।
পেয়ারা আবার শুরু করে —
: সময় গেলে, আরও সময় পাবেন; বন্ধু গেলে বন্ধু পাবেন। কিন্তু হাত গেলে হাত, আর জীবন গেলে জীবন ফিরে পাবেন না। জীবন একটাই!
কী কইছি আঙ্কেল? সময় গেলে …
খানসাহেব বলেন —
: সময় গেলে সময় পাবো; কিন্তু হাত গেলে হাত, আর জীবন গেলে জীবন ফিরে পাবো না।
পেয়ারা এবার হৃষ্টচিত্তে খানসাহেবকে বিদায় দেয় —
: সো! বি কেয়ারফ্যুল্, বি কশাস্ অ্যাবাউট ইয়োর হেল্থ অ্যান্ড লাইফ! মে অলমাইটি আল্লা ব্লেস ইউ!!