পাণ্ডুলিপি থেকে । খালেদ উদ-দীন
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:৩৬ পূর্বাহ্ণ, | ১২১৯ বার পঠিত
২০১৯ সালের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে খালেদ উদ-দীন এর কবিতার বই হাওয়াবাড়ির জানালাগুলি। প্রচ্ছদ ও বিন্যাস : নির্ঝর নৈঃশব্দ্য। প্রকাশিত হচ্ছে নাগরী প্রকাশনী থেকে। মূল্য : ১৬৫ টাকা।
আলালদীনের ভবিষ্যৎ
আলালদীন ভবিষ্যৎ দেখে—
চোখের সামনে ভবিষ্যৎ, চোখের আড়ালে ভবিষ্যৎ
আলালদীন দিব্যি ভবিষ্যৎ দেখতে পায়।
আলালদীনের ভবিষ্যৎ তার চেনা, সাজানো পালক্সেকর মতো!
আর আমাদের ভবিষ্যৎ? আলালদীন তাও জানে
সেও তো দীর্ঘজীবী পুরুষ। আমাদের হাহাকার তারও মনে আছে।
ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা আলালদীনের সাথে, আসুন পরিচিত হয়ে নিই—
‘এখানে অন্ধরা ভবিষ্যৎ রচনা করে
এখানে বধিরের কিলিবিলি ভালো লাগে না
অন্ধ খোঁড়া আর বধিরেরা মিলে স্বাদের ভবিষ্যৎ
সাজায় যতনে।’
আলালদীনের কথাগুলো আর ভালোলাগে না
আলালদীনের ভাষায়—
আমাদের ভবিষ্যৎ নাকি আমাদের নিয়ে যাবে অতলগহ্বরে…।
ইউবিন
প্রকৃতির অমোঘ বিধানে সে ধেয়ে চলে নিরন্তর
নশ্বর ভুবনে আলোকিত হৃদয়। যেখানে যেমন এবং স্বাধীন
নীলাম্বরি শাড়িতে আধুনিকা—
আড়ালে মেঘনার ঢেউ রাশির মতোন ছলছল করে ওর শরীর
কী পরিপূর্ণতা…; ঠোটেঁর পাতলা পাপঁড়িতে একচিলতে হাসি—
কুয়াশার জালে বন্দি যুবক ওই নতুন সূর্যের আলোয় চমকে ওঠে
ইউবিন! ইউবিন!! ই-উ-বি-ন…!
প্রণাম!
সূর্যের আলোয় নয়, আমি তোমাতেই ভোর দেখেছি
মাথার উপর উড়ছে শালিক পাখির পালক, কী অপূর্ব
অতঃপর স্বাভাবিক; সময় এবং সময়ের পুরনো ইতিহাস
থাকে শুধু হাহাকার—স্বপ্নে রাঙা নতুন সংসার।
ফানুস
ইতিহাসের পাতা থেকে খসে পড়ে
জমিদার রাজা ও তাদের সরাইখানা
অথচ একদিন সেখানে কত সহজেই
বালিকারা গর্ভবতী হতো; মা হতো
সভ্যতার পুরোনো পিরামিড টিকে আছে
কবি মিশে আছে শরাব ও নারীর গক্সগায়
এখন সুনামির ঢেউয়ে ভেসে যাচ্ছে দীর্ঘতম স্বপ্ন।
রঙের বড়াই
ইদানীং সবকিছুতেই শুধু রঙের ছড়াছড়ি
রং লেগেছে মাছে দেশিবিদেশি আনাজে
এখনকার ফ্যাশন গাঢ়রঙে ঝলমলে উজ্জ্বল
কালো চুলে লাল বাদামি ঢেউয়ের খেলা চলছে—
শুধু রং লাগেনি মনে, পুড়ে যাচ্ছে অন্তঃপুর
ভালো আছ দেশ? রঙে রাঙানো তোমার কেশ।
রঙিন মোড়কে সাদা কালো
আড়ালে সবকিছুই মনে হয় দস্তুরমতো
উত্তরাধুনিক বোধ খেলা করে করুণ হাহাকারে
এখানে কেবলই রাত হয়ে যায়
আঁধারের কালো রঙে আড়ালে লুকাই
শীতল শরীরে খেলা করে আরাম, হেঁটে যাই—
আর ভেতরে ভেতরে ছাই হয়ে যাচ্ছে সকল বাস্তবিক।
ডানাহীন পাখি
মুক্ত আকাশে উড়ে চলা পাখি খুব সহজেই
চরে বেড়ায়
এদেশ
ওদেশ
একটা খবর পাঠাই তারে—
আমি ভালো নেই
ভালো থেকো তুমি
পাখিরা নাকি একা থাকতে পারে না
পাখিদের ভাষা বুঝতেন নবি সোলায়মান।
ও আকাশ, ডানাহীন পাখিদের উড়তে দিও তোমার কোলে—
দোহাই নবি সোলায়মানের।
আমি ও মহাকাল
স্বপ্ন শুয়েছিল স্রোতময় নদীর ভাসমান কচুরিপনার ওপর। ভাসছিল সে দূরে যাবে বলে—অচেনা নগরে। অচেনা নগরে কোনও নদী ছিল না। স্বপ্ন নিমজ্জিত হল সাগরে—উথালপাতাল ঢেউয়ে সে মিশে গিয়েছিল।
একটা পাখি উপর থেকে এই খেলা দেখছিল আর হাসছিল।