দেবদূত ও এলিয়েনের প্রণয়োপাখ্যান । আলমগীর নিষাদ
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ নভেম্বর ২০১৮, ৮:২৫ অপরাহ্ণ, | ১৯৮১ বার পঠিত
সম্পর্কশাস্ত্র
মুসলমান আর সেকুলারের পরিণতিটা দেখেন একইরকম।
মানব সম্প্রদায়ের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পর্কশাস্ত্র হয়ে আসা ইসলাম- নারী জাতির অবমাননা করেছে। মডার্ন স্টেট আর মানুষের সাথে সম্পর্ক নির্ণয় করতেও ব্যর্থ হয়েছে। সম্পর্ক সংযোগের বদলে শৃঙ্খলে পরিণত হয়েছে। আর একনিষ্ঠতা হয়ে গেছে সম্পর্কের মৃত্যু।
আর সেকুলারিজম। সকল ভাবের সম্মিলন ও মানুষের সম্পর্ক-মুক্তির কথা বলে, প্রথমেই নারীকে বহুগামীতায় অ্যাবিউজ করেছে। বলেছে তুমি মিয়া খলিফা হও, সেক্সকোহলিক। ধর্মকে বিদায় করতে প্রেম ও পরমবোধ হত্যা করেছে। মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগের বদলে রচনা করেছে দূরত্ব, মানব সম্প্রদায়কে দিয়েছে ভয়ঙ্কর ‘ঈশ্বরের অসুখ’।
দেখেন, আমরা তাহলে ‘নির্ভুলভাবে সম্পর্ক স্থাপন করা’র পদ্ধতি এখনো খুঁজতে পারি! আমরা সেক্সের বাইরে সম্পর্ক না খুঁজলেও পারতাম। যেহেতু ভালবাসা-ছাড়া শরীরেও অপূর্ব আনন্দ পাওয়া যায়। আবার দেখেন, এই এলাকায় মানুষের সম্পর্ক আসে মৃত্যৃ পরোয়ানার মতো। এরপরেও আমরা কেন অধিকতর কোনো সত্য আছে কিনা খুঁজতে চাইলাম!
মানুষের পঙ্গুত্ব জেনে আমরা দুই দার্শনিক ফানা হয়ে গেলাম।
মায়াবী পর্দা দুলে ওঠার পরে
সেকুলার কারিকুলাম আমাকে বাঙালি মুসলমান সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। এখান থেকে সেই কওমের আর্তনাদ শোনা যায় না।
কার্ল মার্কসের ডিক্লাসড ছাড়া আমার আর কোনো ভাষা নাই! এবে আমি ভাষানিঃস্ব। এখন কোন নামে আমি তাঁর জিকির করি!
সাফওয়া মারওয়ার মাঝখানে আমি দৌড়াদৌড়ি করি। আছর নামাজের পর আজ কোথাও গাস্ত বের হয় না। দাওয়াতিরা বৈঠক করতে গেছেন সদরে। ঈদের পর আর কাকে কাকে অমুসলিম ঘোষণা করা যায়?
তোমার রজ্জু আমি কীভাবে ধরি! পাঁচবার জমায়েতে ঠটোস্ত করেছি বিচ্ছিন্নতার পাঠ।
মায়াবী পর্দা দুলে ওঠার পর আমার মনে হলো। মুসলমানদের হাত থেকেও ইসলামকে রক্ষা করা দরকার। এখন, কোন ভাবে আমি এই জিহাদ করি!
রিটার্ন অব দ্য রিপ্রেসড
একাত্তরের ত্রিশ লাখ শহীদ নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে। আমাদের মুরব্বিরা প্রথমে তাদের শনাক্ত করলো। এরপর যুবকেরা গিয়ে সম্ভাষণ জানালো। তাদের পিঙ্গল শরীরে বুলেটের দাগ এবং ধর্ষিতের গলদেশে কালশিটে এখনো অবিকৃত আছে।
মফস্বলের পাড়ায় পাড়ায় ছেলে-মেয়েরা দলবেঁধে নতুন কাপড় আর ওষুধ সংগ্রহ করলো। শাহবাগে বরণমিছিল করলো হেফাজতে ইসলাম ও গণজাগরণ মঞ্চ। দেশের মানুষ দু’হাত তুলে শুকরিয়া জানালো। আর, তাদের ফিরে আসায় মুষ্টিমেয় যে লোকেরা বিরোধিতা করলো, তারা রাজাকার হয়ে গেলো।
প্যাসিভ রেভুলেশন
পৃথিবীর ইতিহাস শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাস নয়। পৃথিবীর ইতিহাস বেহাত বিপ্লবের ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বদলে মুজিববাদ। কার্ল মার্কসের চিন্তাধারার বদলে স্তালিনবাদ। হযরত মুহম্মদের ইসলামের বদলে উমাইয়্যিজম। এই ইতিহাস গোটা দুনিয়ার ইতিহাস।
আষাঢ়স্য
ভাইয়া, গত তিনদিন হলো ডাউন ট্রেনের মতো মেঘলা আকাশ এসে থেমে আছে মোহাম্মাদপুরে। আমার এখন মেঘদূত পড়ার কথা, কামসূত্রে ডুবে যাওয়ার কথা। অথচ এ ঘোর বর্ষণে আমি টিফিন ক্যারিয়ার ছাতা নিয়ে বেরিয়েছি আপিস ধরতে। বাইশজন যাত্রী নিয়ে একটা ছুটন্ত কবরস্থান বনানী ফ্লাইওভার পার হয়। ঢাকার আকাশ সবচেয়ে নিচে নেমে আসে। আমি উপুর হয়ে দুই টাকার সাদা কয়েন খুঁজি রিকশা ভাড়ার জন্য।
খালেদ ভাই, এই রাষ্ট্রসংঘ মানবজীবনের কী নিদারুণ অপচয়!
প্রিয় ট্রায়াঙ্গল
ফ্রিডরিখ নিৎসে, কহলিল জিবরান ও মুজিব পরদেশী; এই তিনজন আমার প্রিয় কবি। নিৎসের ইগো, জিবরানের রুহানি আর মুজিবের সারল্য। এই ট্রায়াঙ্গলে আমি রোজ জন্মাই, বেঘোরে মরে যাই।
মৃত্যু
সঙ্গমের পর পুরুষটির মৃত্যু হলো।
ঈশ্বরহীন চরাচরে নিঃসঙ্গ নারীটি
অন্ধ ডুবুরির মতো এখনো খুঁজে চলেছে সেই নুন।তোমার দেহ ঈশ্বরের পানশালা, আমি রোজ যাই, অথচ ইবাদত শিখি নাই।
দেবদূত ও এলিয়েনের প্রণয়োপাখ্যান
তোমাকে দেখে আমি মোল্লা হয়ে গেলাম!
এখন সতের কাপড়ে তোমাকে মুড়ে রাখবো
ইন্ডাস্ট্রির লেন্স তোমার ছায়া দেখতে পাবে না।ক্যামেরার সামনে কুত্তা আসনে আমি আর পারছি না
চলো মোরা একঘেয়ে জীবনই কাটাই, স্বেচ্ছায়।
নেশা
এ কী মুশকিল খোদা! আগে নিষাদ মদ খেয়ে বেহুশ হতো
মাল ছাড়ার পর এখন তার প্রতিটা মুহূর্ত মাতাল!
জাদুকর
আমার দুই হাতে, জামার পকেটে, মানিব্যাগে ভর্তি নতুন জীবন
আমি এখন এক গোপন জাদুকরহরেক জীবনের প্যাকেজ নিয়ে এই মাঠের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি।