কাশেম বিন আবু বকর, হুমায়ুন আহমেদ ও নয়া মধ্যবিত্তের রুচির গন্ডগোল । আবু তাহের তারেক
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জানুয়ারি ২০১৭, ১০:২৫ পূর্বাহ্ণ, | ৬৯৯২ বার পঠিত
হুমায়ুন আহমেদের নাম শোনার বহুত আগেই কাশেম বিন আবু ববকর, এম ডি মুরাদ, ইমদাদুল হক মিলনেদের বই আমাদের দূর গ্রামের এমনকি ক্লাস ফাইভ পড়ুয়া ছেলে মেয়ের হাতে পৌঁছে গিয়েছিল। হুমায়ুনরে ভার্সিটির মাস্টার, মিডিয়া, আমি, তুমি সকলে ঠেলাইতে থাকলেও, কাশেম, মুরাদ বা মিলনের জনপ্রিয়তার তুলনায় তিনি ম্রিয়মানই ।
ভার্সিসিটির মাস্টাররা আর শয়তান মিডিয়া একদিকে যেমন হুময়ুনরে উপ্রে তুলছে, অন্যদিকে কাশেমদের ছাইচাপা দিয়া ঢাকছে। কাশেমদের পপুলারিটিরে ভেটো দিছে। কাশেমদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছে।
পপুলার সাহিত্যরে পপুলারের হিসাবেই দেখতে হয়।
সমালোচকরা শাহেদ আলীর মত পপুলারিস্ট লেখকরে নাই কইরা দিছে আমাদের সামন থাকি। আল মাহমুদ ঠিইকা গেছে কোনরকমে।
পপুলার সাহিত্যের কাম কারবারই হইল মাস পিপলরে নিয়া। মাস পিপলের তথাকথিত আর্ট ফার্টে তত আগ্রহ থাকে না। কাশেমরা মাস পিপলের কথাই কইছেন। দেশের মুসলমানদের জবুথবু জীবনরে, মুসলমান পোলামাইয়ার স্বপ্নরে- তাদের ইতরতা, তাগো নোংরামি সহ তুইলা আনছেন। ফলে তাবত উঠতি মধ্যবিত্ত, এমনকি কৃষকের পোলামাইয়াও পাগলের মত পড়ছে তাদেরকে। এইসব বইয়ের আদান-প্রদান কইরা, হইছে ভূরি ভূরি প্রেম।
হুমায়ুন জনতার এই রুচিরে আছাড় মারল। মেরুদন্ডহীন এক ছিনাল মধ্যবিত্তরে নিয়া আইল। আর ক্রিটকরা হুমায়ুনরে বাইছা নিল। কারণ হুমায়ুন ঠাকুরের মত পূত পবিত্র। বিপরীতে, কাশেমদের রুচি’রে করল ঠাট্রা। ফলে, আমরা পপুলার সাহিত্যের সম্ভাবনারে আপাতত আটকাইলাম।
এমন হইছে আমাগো ফিল্মেও। সুস্থ আর অসুস্থ ধারা ইত্যাদি বানাইয়া, তারেক মাসুদরা আইলেন তথাকথিত বিকল্প ধারা লইয়া। ফলে, এখন একটা দুইটা নারীবাদী ফিল্ম পাইতেছি আমরা, আর আর্ট ফিল্মের নামে পশ্চিমা আর্ট ফিল্মের চর্বিত চর্বন পাইতেছি।
হুমায়ুন, ইমদাদুল এরা সকলেই পপুলার সাহিত্যিক। হুমায়ুনের সাহিত্যভ্যালু ইমদাদুল থাকি খুব একটা যে সরস এমন না। বাট মাস্টাররা হুমায়ুনরেই বাঁচল, কারণ হুমায়ুন পশ্চিমা রীতির। হুমায়ুন রেডিমেইড। হুমায়ুনরে ক্রিটিক করা সহজ।
অন্যদিকে, কাশেমরা তো জটিলই। এরা উপন্যাসের প্রচলিত ফর্ম, লজিক, ইত্যাদি কিছু লইয়াই ভাবিত না। ফলে উনারা বরং আমাগো নিজস্ব ধারার উপন্যাস বানাইছেন। লোকাল কালারে রাঙাইছেন তাগো ফিকশনরে। লোকাল মাইনষের আকুতিরে, মাস পিপলের স্বপ্নরে, জীবনরে আনছেন তাগো কাহিনীতে। শাহেদ আলীর জীবরাইলের ডানা সহজ, করুণ আর লোকাল কালারে ভরপুর। অথচ শাহেদ আলীর মত অসধারণ গল্পকাররে আমরা নাই করছি। আসলে, তিনি আমাগো সাহিত্য ঐতিহ্যে এত আনকোরা, এত প্রাতিস্বীক যে ক্রিটিকরা উনারে নিতে পারে নাই। উনারে কেমনে তাদের মুখস্থ করা পশ্চিমা ক্যাননে ফালাইব, এইটা ওরা খুঁইজাই পায় নাই।
অন্যদিকে, মুসলমানের লাইফ নিয়া গল্প হইলে তো বোরকা আইব, নামাজ-রোজা আইব, মুসলমান চাষার ভাষা আইব। ভার্সিটির মাস্টার আর ক্রিটিকদের কাছে তো এইগুলা খ্যাত ব্যাপারই। তাই শাহেদ আলি, মিলন, কাশেমরা খ্যাতই থাকলেন।
কাশেমদের সাফল্য হইল- উনারা মিডিয়ার, ক্রিটিকদের কোনরকম গ্রীন সিগন্যাল ছাড়াই; পুরা বাংলার অন্দরে অন্দরে ঢুইকা যাইতে পারছিলেন।
বস্থুত, পপুলার সাহিত্যরে পিপলের রুচিমত সাজাইতে হয়। মাস কি চায় তা জানতে হয়। সে হিসাবে কাশেম, ইমদাদুলরা জনগণের ভাষা, ইচ্ছা, যাপনরে চিনতে পারছিল। ধরতে পারছিল। এই জায়গায় এরা সফল। এবং উনারাই আমাগো ফিউচার সাহিত্যের আদি নির্মাতা।
হিন্দি সিনেমা, পুরা পশ্চিমা সিনেমার রীতিরে খাইয়া; নিজেগো মত আগাইছে। জনতার ড্রীম, জনতার যাপনরে নিয়া আইছে তাগো ফিল্মে। ইউরোপ তাগো ফিল্ম পুছে নাই। ইন্ডিয়াও ইউরোপরে পুছে নাইক্কা।
ঠিক এইখানে আমরা হীনমন্য। ঠিক এই জায়গায় আমরা রুচির ব্যাপারী।
আমরা মাটির ময়না নিয়া যত আলাপাইছি, তত মনপুরা নিয়া আলাপাইনাই। আমরা মমতাজের মত সুপারস্টার শিল্পীরে ফোক সম্রাজ্ঞী বানাইয়া অপাংক্তেয় কইরা রাখছি। আমরা কাশেমদের, মিলনদের লেখা কাহিনীর মানুষদের অদ্ভুত, রুচিহীন বানাইয়া ফালাইছি। অথচ এইসবই আমগো মাস। আমরা এইরকমই।
আমরা যেরকম আছি, সেরকম আমাগোরে প্রকাশ আমরা কেন করতে পারব না?
যতদিন আমরা মাস রুচিরে ডিনাই করব, ততদিন আমাগো ফিল্ম, গান, সাহিত্য কিচ্ছু হইব না।