বিজ্ঞানবাদ, এপোক্যালিপ্টো ফিল্ম ও বাঁচার কুশিশ । আবু তাহের তারেক
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ ডিসেম্বর ২০১৬, ২:৫৬ অপরাহ্ণ, | ৫৭৮৪ বার পঠিত
এপোক্যালিপ্টোর মত জাত ফিল্ম বিজ্ঞানবাদের প্রভুর দেশে হইল কেমনে, এইটাই ভাবি।
এপোক্যালিপ্টো ফিল্ম নিয়া, এই ফিল্ম দেখার প্রায় দশ বছর পর যখন লেখতে বসলাম; এখন, এই ফিল্মের কিছুই তো মনেই নাই প্রায়; টুকরা টুকরা স্মৃতি জমা আছে মাত্র। বাট, স্মৃতিই তো সার; না?
আমরা ভার্সিটিতে এমন কইরা পড়তে অভ্যস্ত না অবশ্য। উপন্যাসের গল্প মনে রাখা লাগে আমাগো। কবিতায় কবি কী বললেন, সেইটা খুঁইজা বাইর করন লাগে। ফলে, কোন ঘটনারে স্মৃতিতে আলাদা কইরা জমাইতে পারি না আমরা..
এপোক্যালিপ্টো ফিল্মে, উপনিবেশবাদীদেরকে; নেটিভরা নিজেদের ফর্মুলা দিয়াই হঠাইছিল। না? এই ফর্মুলা নেটিভদের কালচার, তাগো যাপনপ্রণালী বা কালচার থাকিই উইঠা আসছিল।
তো, কালচার তৈরী হয় কেমনে? একটা গোত্রের মাইনষের জীবনবীক্ষা থাকি। কেমনে তারা বাঁচবে, কেমনে অপর জাতিরে ঠেকাইবে; এইসব, কোড হইয়া কালচারে থাকে।
তো, কালচারে সব ভাল থাকে সবসময়? মানে, অপর কালচাররে, আপনি অপরের চোখ নিয়া দেখলে; চোখ অনেকটা গোলাইবই তো আপনার।
আমরা ছোটথাকি শিইখা আইছি, হিন্দুর পেটে দাঁত। মলাউন গাইলও শুনছি। এমনকি, সিলেটি হিসেবে, সিলেটের বাইরের তাবত লোকরে আমরা নন সিলেটি এবং আবাদি/নট বইলাও ডাকি সামটাইমস।
তো, হিন্দুদেরও; হিন্দুদের কালচারে, মুসলমানদেরকে গাইল্লাইবার নিজস্ব তরীকা আছে। আর, সিলেটের বাইরের লোকরা যে সিলেটিদের গালি না দেয়, তেমনও না।
তো, এই গালি দিয়াও কিন্তু আমরা আমাগো বাঁচার প্রণালী কোডেড করি; অনেকসময়। সিলেটের বাইরের লোকদের নন-সিলেটি বলার মইদ্যে যত নোংরামি আপনি আপাত দেখতে পাইতেছেন, আমি; এই গালি তৈরী হইবার পেছনে, তত সিলেটিদের একতা; সিলেটিদের কালচারাল ইন্টেগ্রিটি দেখতে পাইতেছি।
হিন্দুর লাগি অত গালি যে মুসলমানে বানাইলো, বা হিন্দুয় মুসলমানের লাগি; এতে হিন্দু-মুসসলমানের; মারামারি ছাড়াই বাইচা থাকায় প্রব্লেম হয় না। নন সিলেটিদের লাগি বিচিত্র গাইল আবিস্কার কইরাও, সিলেটি-নন সিলেটি তে আগুনও জ্বলে না, এইসব গাইলের লাগি।
কুসংস্কারের কথাই বলি। কারো কুসংস্কার বিজ্ঞানের দা কুড়াল লইয়া ভাংতে গেলে, হিতে বিপরীত হয়। পরিবর্তনরে নিজ থাকি ঘটাইতে দিবার মত মঙ্গল চিন্তা আমরা কইরা উঠবার পারি নাই আসলে।
গালি, কুসংস্কার বিচিত্র সাংস্কৃতিক প্যাটার্ণ নিয়া আমরা এতকাল বাইচা আসছি। এখন, আমাদের এই বাঁচার আনন্দ কাইড়া নিবার দায় বিজ্ঞানের কেন?
বিজ্ঞান দিয়া কালচার মাপার যুক্তি বিজ্ঞানসম্মত কি না, অথবা বিজ্ঞানসম্মত লাইফ আমরা নিমু কিনা, তা ভাবার লগে লগে, আরো কিছু চিন্তাও তো করা যায়।
বিজ্ঞানবাদ ঠিক কারা চাপাই দিবার চায়? এই শক্তির ইতিহাস কেমন? এরা ঠিক কী চায়?
আমাগো ছোট কালচারের মইদ্যে যা ব্যাত্যয় তারা দেখে, তাগো কালচারে তেমন ব্যাত্যয় তারা দেখে কি? এছাড়া, বিজ্ঞানের ঘোড়ায় চড়িয়া আমরা কোথায় যাইমু?
থার্ড ওয়ার্ল্ডে থাইকা আমরা ফার্স্ট ওয়ার্ল্ডের চিন্তার, মতবাদের, মতলবের কোনটারে কেমনে লইমু, এইসব ভাবার আগেই; মতবাদের, প্রযুক্তির অনস্ললট আমরারে ধাঁধাইয়া দেয়।
তো বিজ্ঞানবাদ যেমন ইউটোপিয়ান সমাজের খোয়াব দেখায় আমাগো, মাইনষের ইতিহাসেই; তেমন কোন ভেদাভেদহীন একক সমাজ আছিল না।
বিজ্ঞানবাদ আমরারে বিজ্ঞান চর্চায় ব্রতী না কইরা, বিজ্ঞান ধর্মে দীক্ষিত কইরা, আমরার যাপনপ্রণালীরে আউলাইয়া দিয়া; আমরারে আরো নির্ভরশীল, আরো শোষণযোগ্য করবার চায় কি না?
এপোক্যালিপ্টো ফিল্ম থাকি, আমরা কিছু কি নিতে পারি?
বিজ্ঞানবাদসহ, অমুক তমুক মতবাদের চাপায় খাবি খাইতে খাইতে; আমাগো দম যখন উজাড় প্রায়, তখন; কোন বিষ দিয়া পুঁজিবাদি, শক্তিমত্ত, জ্ঞানপাপী ঘোড়ারে আমরা থামাইমু? কোন বিষ আছে আমাগো?