জবা । হুমায়ূন সাধু
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ নভেম্বর ২০১৪, ৫:৪৬ অপরাহ্ণ, | ২০৫৪ বার পঠিত
. প্রিয় লেখককে মনে করে নৈবেদ্য
রঙ্গীপাড়ার মানুষ এখন যেকোন সমস্যা নিয়ে আরজু ডাক্তারের কাছে এসে পড়ে। হয়তো সেটা তার কাজ না, হয়তো ব্যারামই না। ‘মন খারাপ, গা চাবায়’ থেকে শুরু করে সংসারে অশান্তি, মন নাই… দুইন্যার আখামা আরজি নিয়ে নারীরাও আসে। রাতে জ্বিনে ধরে, মাসিকের সাথে স্বর্ণের কণা যায়।
তাতে সে কি করবে!‘ সেতো ‘মুস্কিল আসান’ বাবা না। কিন্তু আরজু ডাক্তার কাউকে ফেরায় না। এটা পুরান নিয়ম। কেউ ফেরেনা খালি হাতে বাবার দরবারে।
আজকে জাফর আসছে কৃমিরোগ নিয়ে। তার গুইটালিতে বিরক্ত হয়ে সবাই বলত তার সুতা কির্মি আছে। এখন দেখা যাচ্ছে সত্যিই আছে। জাফর কেস্কেস করতেছে… ডাক্তার অন্য ভাবনায়।
এগুলার সাথে রেয়ার কিছু কেস আসতেসে।
কেসগুলা হ্যান্ডেল করতে গিয়ে বুঝতেসে তার একজন এসিস্ট্যান্ট দরকার। মেয়ে হলে ভাল হয়। একজন ছিল। তার ওষুধ, প্রেসার মাপার যন্ত্র আর টাকা-পয়সা আছে মনে করে তার বালিশ নিয়ে ধাইসে। এসিস্ট্যান্ট চেয়ে ফেসবুকে একটা সার্কুলার দিয়ে দিবে নাকি!? ফ্রি করে দেবার পর মোবাইলে ফেসবুকে বেশ সময় কাটতেসে।
একটা রোগী আসছে শাহ পরান নাম, তার পিছনে(পাছার দিকটায়) লেজের মত কিছু গজাচ্ছে।
বলে, ভাই রাতে বিবি লগে ঘুমায় না, সকালে উঠে যদি দেখে গরু হয়ে গেছি এই ভয়ে।
শাহ্ পরান নিজেরও ধারণা সে আস্তে আস্তে গরু হয়ে যাচ্ছে। তারপর আশপাশ তাকিয়ে খুব সতর্কভাবে কানের কাছে ফিসফিস করে যা বলল তা অডিয়েন্স শোনে না। শুধু ডাক্তার ১১হাজার ভোল্টেজের শক্ড খাবার মত পিছনের দিকে কাচি, ছুরির উপর গিয়া পড়ে।
-গাভীরে…!?
শাহ্ পরানঃ ভাইরে, গাভীর পাও ধরে মাফ চাইসি।
মোদ্দা কথা, সে বিশাল এক পাপ করসে, তার গরুত্বলাভ এক গাভীর অভিশাপে।
জিনিস্টা গোপন রাখার জন্য অন্যকোন ডাক্তার, কবিরাজ বা হুজুরের কাছে যায় নাই। তার বিবি ছাড়া কেউ জানেনা। তারপরও কিভাবে কিভাবে এই নিউজ ছড়াতে শুরু করসে।
এটা congenital disorder(malformation) থেকে Spina bifida হতে পারে (the rare meningocele category)।
পরানই একমাত্র না এমন রোগী পৃথিবীতে আরো পাওয়া গেসে। কিন্তু খুব রেয়ার। সবার জানা উচিত। ওয়ার্ল্ডকে জানাতে হবে। ডাক্তার ভাবে নিজেই লিখে ফেলবে। ডাক্তার ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নেয়। তার কিছু করার উপায় থাকলে সে করত। যন্ত্রপাতি, ইক্যুপমেন্ট কিছু নাই। সে নোট নেয়া লেজের আকার, ধরণ, আচরণের ভিত্তিতে নাতিদীর্ঘ লেখা লিখে। তাতে সম্ভাব্য কারণ, ইতিহাস, প্রতিকার, চিকিতসা নিয়ে আলোচনা থাকে। কাকে দিবে, কোথায় দিবে চিন্তা করে স্থানীয় দৈনিক সুপ্রভাতের অফিসে যায়। সম্পাদক বিশিষ্ট ভদ্রলোক মিজানুর রাহমান কাজ করতে করতে ‘কত আজিব কিসিমের পাব্লিক যে আছে দুনিয়ায়’ এমন একটা লুক দিচ্ছেন মাঝে মাঝে। ডাক্তার হাসি হাসি মুখটা ধরে রাখে, লেখাটা পড়তে দেয়না।
সম্পাদকঃ আপনি ডাক্তার…
ডাক্তারঃ ডাক্তার আরজু খন্দকার
সম্পাদকঃ তা ডাক্তারি ছেড়ে (পুরোপুরি) গল্প লেখায় মনোযোগ দিয়েছেন
ডাক্তার (খুব দ্রুত মাথা ঝাঁকিয়ে)ঃ না না, গল্প না, মানে এমন হয় মানে হতে পারে… পারেনা? সে বিষয়েতো আমাদের জানা উচিত
সম্পাদক কিছুটা সন্দেহের ভিত্তিতেঃ তা এমন কেউ আছে? এমন কেউ হলে বলেন আমরা প্রতিবেদন করি।
শাহ্ পরানের গোপন-ব্যাক্তিগত ব্যাপারটা শেয়ার করা মানা। ছোট হলেও তার একটা সামাজিক ইজ্জত আছে।
মৌনতা, দ্বিধা দেখে এবার সম্পাদক জোর দিয়ে বলেন, দেখেন এতে আপনার আমার সমাজের লাভ। খরচাপাতি দিব।
ডাক্তারঃ আমার আসলে এ বিষয়ে জানাশোনা আছে, ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে বা পেপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করে… করা যাবে?
সম্পাদকঃ সব যাবে… আপনি আমাদের হেল্প করেন…
ডাক্তার ঝাঁ ঝাঁ গরম মাথা নিয়ে ঝাঁ ঝাঁ রোদে গরম চা খেতে বসেন। কি করবেন কি করা উচিত এই তালে তালে চা খেয়ে যাচ্ছেন।
পাড়ায় ঢুকে দেখেন শাহ্ পরান একটা ডিবার উপর মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। আশেপাশে বিচ্ছিন্ন উৎসুক পোলাপান।
ডাক্তার আরজু ‘দূর’ ‘দূর’ করে দৌড়ায়। হট্টগোল শুনে আরো জুটে, ভীড় বাড়ে।
ডাক্তারঃ এরা কি দেখে?
শাহ্ পরানঃ লেজ লেজ আমার লেজ। আর কইয়েন না, কুথাও যা’তে পারিনা…
ডাক্তারঃ আরে, লেজতো দেখা যায়না, ভিতরে। কেউ দেখসে?
শাহ্ পরানঃ দেখে নাই। যদি দেখা যায়, যদি বারাইয়া পরে এই আশায়… কিছু একটা করেন গো ডাক্তার।
. চলবে