আর ইয়ু এলোন? । হুমায়ূন সাধু
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ আগস্ট ২০১৪, ৫:৪৯ অপরাহ্ণ, | ২৭২০ বার পঠিত
অবশেষে জেনেছি…
নদীভাঙ্গনের পর সব যাবার পর ঢাকায় আসছে আজিমরা। কাওরানবাজার পট্টিতে বসে ভাবে, কারে দোষ দিবে? আজিম যে জন্ম নিসে কেন নিসে? কেউ তারে জিগাইসে কই জন্ম নিবে? কেউ জানতে চাইসে জন্ম নিবে কিনা! তাইলে? কারে দোষ দিবে?
উল্টা-পাল্টা চিন্তা আসে। ভাল ছাত্র ছিল, ঐটাই সমস্যা। এখন কই যাবে? ক’দিন না খাওয়া, তারেতো খাইতে হবে। বাচন মানে পুটকি মারা খাওন।
সোনারগাঁ হোটেলটা দেখে।
‘একবার যেতে দে মা আমার ছোট্ট সোনারগাঁয়, যেথায় কোকিল ডাকে কুহু কোয়েল ডাকে মুহুমুহু…”
বড়লোকেরা এসব হোটেলে যায়, খায়, ঘুমায়। কি আরাম! কত্ত সুখ তাদের, কোন টেনশানছাড়া শান্তির জীবন। ধনবানরা যায়। সবরকম মেয়ে নাকি পাওয়া যায়। ঐ সোনারগাঁ বারে একটা কাম পাইলে হইত, সারাদিন মাল খাইতে পারত।
না খাইয়া মানুষ মরে না, সে দেখসে। সে খেতে হবে এই ভয়ে ঘুম থেকে জাগে না। আজকে এতদিন না খাওয়া মরামরির কোন লক্ষন নাই। তীব্র মাথা ব্যথা হয়, ঘুম থেকে উঠে আবার ঘুমায়। দুপুরবেলা ময়লা থেকে লুকিয়ে রুটি নিসিল,
আলোর পোলাটা ছোঁ দিয়া নিয়া গেল।
আজকে ঘটনাটা ঘটাইতে হবে। আজকেই। শরীফ দামি ছুরি, মলম দিয়া গেসে আর কইসে কামটা করতে। লাভ আছে, টাকা আছে। শরীফরা বুঝায়, দেখ বড়লোকদের অনেক আছে, ওখানে তোর আমার হক আছে। কিছু গেলে ওদের কিছু হয়না। তর কিন্তু অনেক কিছু হইয়া যায়। আর কাম না করলে?
আজিমেরর বইন সালমা ফকিরারপুল হোটেলে… আর বাইর হইতে পারব না।
রাত দ্বিপ্রহর
কিছু পুলিশ দেখা গেছে। চ্যানেলের চিপাটার মধ্যে জাহাঙ্গিরকে পাওয়া যায়, গাঞ্জা টানতেসে। এই জিনিসটা সহ্য করতে পারেনা আজিম। তারপরেও বসে, টান দেয়, খিদা যদি মিটে। মুক্তা আসে। মুক্তারে ভাল্লাগে কিন্তু তারে দেখলে সালমার কথা মনে পড়ে। সালমাও এতরাতে কারো লগে… আজিম জোরে জোরে টান দেয়।
আজিমঃ দোস্ত, তুইতো অনেক জানস, অনেক জ্ঞ্যানি গুনি কথা কস… আইচ্ছা, এইযে দুনিয়া, এইটা ঘুরতাসে ক্যা? কই যাইব এইটা?
জাহাঙ্গিরঃ মস্করা করতাসস চুত মারানি!
আজিম ‘বুকে হাত দিয়া কইতাসি’ বইলা মুক্তার বুকে হাত দিয়া দেয়, মুক্তা ঝাট কইরে হাত সরায়।
আজিমঃ সোরি। বুকে হাত দিয়া কই জাহাঙ্গির বাই, আপনি টানটা দিয়া এমন সব কথা কন খুদার কসম! এইগুলা পান কই, আয়ে কেমনে মাথায়!?
জাহাঙ্গিরঃ শোন, কে যে গুরতাসে জানিনা। এই লাগে আমি গুরি, এই লাগে দুইন্যা গুরে, এই লাগে চান-সূয্য গুরে। পাপের টেলায় গুরি, আমগোরে গুরায় আমরা গুরি।
আজিমঃ এই পাপ থেইকা মুক্তির উপায় কি?
জাহাঙ্গিরঃ মুক্তি নাই… তাই যতক্ষন ভুইলা তাকা জায়।
‘হুম’ বলে হাত গোল করে টান দেয় আজিম আর রাস্তায় সতর্ক ক্ষুদ্ধ চোখ। আজকে ক্লায়েন্ট কাইত করতেই হবে।
একটা কিছু হবে এস্পার ওস্পার।
“নিজেরে শেষ কইরে দিলে” আজিম না তাকাই কয়। আমার এই চ্যাটের বালের জীবন, রাখব না। নিজের কষ্ট, সব নষ্ট! সিস্টেমগুলা কি কি?
জাহাঙ্গির বলে আজিম হাত দিয়া গুনে। বাপ্রে, সবডিই ডেঞ্জারাস। সাহসের ব্যাপার। হাসে আজিম, জাহাঙ্গির। কেউ আইসা মাইরা দিয়া যাক, আছি। মাইরালা আমারে মাইরালা।
রাত ২:৪৩ মিনিট
কেউ একজন আসতেছে দেখা যাচ্ছে… সেরা সুযোগ…
সোনারগাঁ হোটেল
আসফাক একটা টেবিলে বসে হুইস্কি টেনেই যাচ্ছে। কল দিয়ে আনিয়েছে কিবরিয়াকে… তার যত আউল ফাউল কথা মাল টেনে সে বলবে কিবরিয়া শুনবে। আসফাকের এত আছে এত আছে, কি নাই। তারপরেও আসফাকের এত প্রবলেম্স, এত টেনশান… রাস্তার ঐ পট্টির লোকটা অনেক ভাল আছে। আসফাকের এগুলা উগ্রে দেবার শেয়ারের উইন্ডোটাও নাই। কাউকে বোঝানোও যায়না। সবাই শত্রু। সবাই বাঁশ নিয়ে খাড়া একটু লিক হলেই…
আসফাকের বৌ রিনির আসফাকের মা’র সাথে বনতনা। অপমান করত। তার মা মারা গেছে। এখন রিনি তাকে সন্দেহ করে। একটার পর একটা। অথচ আসফাক ক্লিয়ার, সৎচরিত্র বলে সুনাম আছে।
যে প্রফেশনের কারণে পরিচয়, প্রেম রিনি সেটা ছাড়তে বলে। আসফাকের টাকা ওড়ায় আসফাক মেনে নেয়। উশৃখংলতা বাড়ে। বাধা দিলে থ্রেট দেয়,
—ডোন্ট ডেয়ার… তোর ফাটাইয়া দিমু। আ’ম গন্না চিচিং ফাক অল অফ ইউর শিট স্টাফ।
আসফাকের বিচি মোবাইল। তার অনেক কিছু রিনির নামে, ভালবেসে বিয়ে করসিল। তারপর বলা নাই কওয়া নাই রিনি আরেকজনের সাথে চলে গেছে ব্যাংকক।
আসফাকঃ মাথা ঘুরায় দোস্ত। আচ্ছা, মাথা ঘুরছে নাকি পৃথিবী ঘুরছে?
কিবরিয়াঃ আপেক্ষিক ব্যাপার। যখন যেটা মনে করছিস সেটাই ঘুরতেসে।
আসফাকঃ সেটাই… সাটাই! দোস্ত, পৃথিবীর খাই দাই কাম নাই খালি ঘুরে কেন?
কিবরিয়াঃ কারণ ছাড়াই ধর। না চাইতেই ঘুরতেসে। তুই যে এই পৃথিবীতে ঘুরছিস, কেন? কাজডা কি জানিস?
আসফাকঃ তুই বুদ্ধিজীবি মানুষ তুই বল। কেন?
কিবরিয়াঃ তুই নিজেও জানস না। আসলে কেউ জানেনা। তোর কাছে জানতে চেয়েছে কার গর্ভে জন্ম নিবি? বা আদৌ জন্ম নিবি কিনা? তুই জানস না, কেউ জানেনা হেহ্! এনে ছেড়ে দিসে। নাচো।
আসফাকঃ তুই এত কিছু কিভাবে জানিস?!
কিবরিয়াঃ জানি কোথায়? জানলেতো উত্তর দিতে পারতাম… কেউ জানে নাই। চিন্তা আসে প্রশ্ন আসে, উত্তর নাই। এইটাই বিপদ! না জানতাম, না চিন্তা না টেনশান আসত…
আসফাকঃ এই ঘুরাঘুরির থেকে মুক্তির উপায় কি?
কিবরিয়াঃ মুক্তি নাই
আসফাকের ফোনে কল আসে। আসফাক রিসিভ করেই বলে,
—মুক্তি নাই মুক্তি নাই।
কে ফোন করসে বোঝা যায়না।
—কি? বড় সুযোগ লই মোস্তফা ভাইকে অপেক্ষা করতে বল। লাইফ পুটকি মারা খাইসে। আমার টাকা কই?
—তুত্তরি তোর পেটের গ্যাস। গ্যাস ভাল, জাতীয় সম্পদ। বলে ফোন কেটে দেয়।
—আজীবন চোদন খেয়েই যেতে হবে? নিঃশাস নিতে পারিনা দোস্ত। এর চেয়ে উঠিয়ে নিলে শান্তি। সবাই আফসোস করবে, ভাল ভাল কথা বলবে। হাসতে হাসতে বলে। নিজেরে নিজে শেষ করে দিলে!?
অক্ষমতার কথা ভেবে নিজেকে… পদ্ধতিগুলা ভাবে। খুব বিশ্রি আর ভয়াবহ লাগে। মান-সন্মান নিয়ে টানাটানি। মানুষ, আত্মীয়, মিডিয়া হাসাহাসি-বলাবলি করবে, তার দোষ, বৌ চলে গেছে। ওষুধ খেয়েছে। ছেঃ! তার চেয়ে ভাল কেউ এসে মেরে দিয়ে যেত!! আজকে ঘটাবে। হয় সে গাড়ি চাপা দিয়ে কাউকে মেরে ফেলবে, নয় নির্জন, রিস্কি রাস্তাগুলা দিয়ে যাবে কেউ এসে মেরে দিবে। আজ ঘটাবেই।
গান গেয়ে ওঠে আসফাক “সোনাবন্ধু তুই আমারে ভোথা দা দিয়া কাইট্টালা, পিরিতির কেথা দিয়া যাইত্যা ধইরা মাইরালা”
রাত ২:৪৩ মিনিট
সোনারগাঁ থেকে বের হয়ে কাওরানবাজার দিয়ে হেঁটে যায় মাতাল আসফাক, জায়গা খোঁজে জলবিয়োগের। মাথা ঘুরছে, ভাল্লাগছে। একটা কচি টাইপ মেয়ে দেখে চিপার ভিতর ঢোকে। মুক্তার সাথে কথা বলে।
‘বেটা মজা লস’ বলে আজিম এট্যাকে যায়। মুতার জন্য জিনিসটা বের করে ধরে, আজিম লাফ দিয়ে আসফাকের পেটে ছুরি ধরে। আসফাক তাকিয়ে থাকে। আজিম আসফাকের স্থির চোখের দিকে তাকায় আর হাতে ধরা ঐটার দিকে তাকায়। আজিম কিছু বলার আগেই আসফাক নায়কের মত বলে,
—মারো। তাকায় আছো কেন? মারো।
আজিম দেখে আসফাক সামদানি। মডেল, নায়ক আসফাক সামদানি।
আজিমঃ স্যার আপনে?
আসফাকঃ কে স্যার?
আজিমঃ স্যার আপনে অভিনেতা আসফাক ভাই না
আসফাকঃ কোন অভিনেতা, কোন আশফাক? না না না আমি কোন অভিনেতা আসফাক না। যা করতে আসছ তাড়াতাড়ি কর। সময় নাই।
আজিমঃ স্যার আপনি নায়ক আসফাক ভাই। আমি আপনারে চিনছি। ‘জ্বালামুখ’-এ গুন্ডারা মৌসুমিরে নিয়া যায় আপনি লাফ দিয়া পইড়া ধুমধাড়াক্কা মাইরা মৌসুমিরে তুইলা আনেন। আমি আপনার ভক্ত স্যার। দুঃখে পড়ে এই পেশায় স্যার, কিছু মনে কইরেন না…
আসফাকঃ স্যার স্যার করতেছ কাকে? আমি কি তোমার মাস্টার… কিছু মনে করবনা। কাজ সারো তাড়াতাড়ি। কেউ চলে আসবে।
আজিম আসফাকের পা জড়িয়ে ধরে। স্যার, মাফ করে দেন স্যার।
এবার আসফাক কেন জানেনা ভয় পেয়ে যায়। এরমধ্যে একজন এসে আসফাককে চার্জ করতে নিলে আজিম চিৎকার করে,
—শরীফ ভাই না, উনি আসফাক ভাই।
ধস্তাধস্তি হয়। পিস্তল বের করে আজিমকে শুট করে শরীফ দ্রুত আসফাকের মোবাইল আর মানিব্যাগ নিয়া দৌড় মারে। মুক্তা অন্ধকারে আবছা দেখে আর আওয়াজ শোনে। চিল্লায় আজিম খুন আজিম খুন। আসফাক হতভম্ব! পুলিশের সাইরেন শোনা যায়। আজিম ধড়পড়াইতে ধড়পড়াইতে থাকে,
স্যার কদিন ধরেই মরতে চাইতেসিলাম, কিন্তু আপনার লগে আলাপ হবার পর এখন আর মরতে মন চাইতেসেনা… আসফাক পিস্তলটা হাতে নিয়া সিনেমার ডায়ালগের মত,
—মরবতো অবশ্যই। কখন মরি না মরি রেডি থাকব না। আসছি অন্যের ইচ্ছায়, চ্যাটের বাল আমার ইচ্ছায় যাব। হোয়াই সো সিরিয়াস!? হাসতে হাসতে যাব ম্যান… হাহাহা
হাসতে হাসতে শুট করে আসফাক। লুটিয়ে পড়ে। আজিমের অক্ষম বিষ্ফোরিত চোখ।
আশফাকঃ চান্স খোদা সবসময় দেয় না। এরককম এক ভক্তের সাথে মরাও সুখরে ভাই!!