তিনটি অণুগল্প । এহসান হায়দার
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ৯:৪৪ অপরাহ্ণ, | ৩৩১ বার পঠিত
ব্যাগ
শহরে লোকটা নতুন এসেছে। গত চার-পাঁচদিন তাকে লঞ্চঘাটের পাশেই দেখা যাচ্ছে। চেহারাটা ঠিক বোঝা যায় না। পিঠে একটা ব্যাগ, ময়লা একটা ট্রাউজার আর ছেঁড়া শার্ট পরে শুয়ে থাকে রাত-দিন প্লাটফর্মে।
: কে এই লোকটা? চা দোকানী শমসের ব্যাপারীকে বলল।
: ব্যাপারী সাব আমি চিনি না, কয়দিন ধৈরা শুইয়া থাকে প্লাটফর্মে। মাঝে মাঝে আমার দোকানের সামনে আইসা খাঁড়াইয়া চাইয়া থাকে। শ্যাষে আমি না পাইরা একখান রুটি দিই, এক কাপ চা দিই। এই-ই লোকটা খায়, ওই পাশে বইয়া। তারপর আবার চুপচাপ গিয়া শুইয়া থাহে।
: ওহ্, তাইলে পাগল-টাগল হবে রে। কথাগুলো বলে যায় সমশের ব্যাপারী।
এর দিনকয়েক পর শমসের ব্যাপারী খুন হয়। মস্তকবিহীন শরীর পড়ে আছে তার বাড়ির সামনের মাঠে। পুলিশ আর গোয়েন্দা বাহিনীর লোকজনে ভরে আছে জায়গাটা। কারণ একটাই, ব্যাপারী সরকারি দলের এমপির শ্বশুর।
এদিকে লঞ্চঘাটে লোকটাকে আর দেখা যায়নি, কেবল পড়ে রয়েছে তার ব্যাগ। চা দোকানী ব্যাগটা পেলো, চেইনটা খুলতেই দেখে রক্তাক্ত ব্যাপারীর মণ্ডু…
বেড়াল
দীনা ঘুমোতে পারে না রাতে। হল ছাড়ার পর তার বাসায় এলে ঘুম হয় না। গতরাত থেকে একটুও ঘুমোয়নি সে। রাতে কী করে ঘুমোবে, দুইটা ডানাঅলা বেড়াল এসে চোখ পাকিয়ে চলে গেছে।
তারপর ভোরের দিকে একবার ঘুমোনোর চেষ্টা করলো স্লিপিং পিল খেয়ে, ঘটলো উল্টো ঘটনা।
ঘুম তো এলোই না, বরং এবারে তিনটা বেড়াল ঘোরাফেরা করছিল তার শরীরের ওপর দিয়ে। সেই থেকে দীনা আর ঘুমোয়নি।
স্নানে গিয়ে জল গায়ে ঢালতেই বুকের কাছটায় জ্বলতে শুরু করলো হঠাৎ। জল ঢালা বন্ধ করে আয়নার সামনে গিয়ে দেখলো তাকিয়ে-তার স্তনবিভাজিকায় বেড়ালের আঁচড়, যেন সদ্য মেরে রেখেছে আঁচড়টা।
কাক
সাতদিন যাবৎ কাকগুলো আর কবি সাহেবের বেলকনিতে বসে না। আগে ঠিক বসতো। হঠাৎ কাকগুলো না আসায় কবি সাহেবের মন খারাপ। কারণ একটাই, কবি সাহেব রোজ ভোরে ওদের কবিতা শোনান। কাকগুলো না থাকায় বড্ড কষ্ট হচ্ছিল কবি সাহেবের। এমন সময় ঘরে ঢুকলেন একজন জ্যোতিষি। তিনি বললেন— কাকেরা দল বেঁধে সব অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কবি সাহেব চিন্তিত হলেন না, জ্যোতিষিকে বললেন— দুটো ফোটা হোমিও খেলেই সব ঠিক হবে রে…