‘অশেষ প্রস্তর যুগ’— সভ্যতার পথ পরিক্রমা । এহসান হায়দার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ৮:২৪ অপরাহ্ণ, | ৪৩৭ বার পঠিত
[শুরুর কথা— এ লেখা কবির সাথে কবিতার— কবিতার সাথে পাঠকের যে সম্পর্ক ও সংশ্লেষন তৈরি করেছে তার অতরঙ্গ অনুভবের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছে— অভ্যস্ত কবি ও কবিতার বিশদযাত্রা। গবেষকের যাবতীয় ছুরি কাঁচি-তত্ত্ব-তালাশের কাছ থেকে সচেতনভাবেই এই লেখাকে দূরে রাখা হয়েছে— কেননা, প্রবন্ধকার মনে করেন কবিতার প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন-ই পাঠকের নিকট সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ ও মুখ্য কর্তব্য। আর লেখাটিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কবিতার প্রস্তুতিপর্বের সমসাময়িক ঘটনা, কবির চিন্তা ও কাঠামোকে।]
‘আমাকে শোনায় কোনো মৃত্যুর গল্প
কিংবা প্রাচীন কোনো সম্রাজ্ঞীর কথা।’
১.
বহুদূর থেকে হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত পা জোড়া অ-ধীর রাতের শেষ দেখতে কোন সে সূর্য প্রতীক্ষায় বসে থাকা, অনতিদূরের সিংহল সমুদ্রের থেকে উঠে আসা শত শত লক্ষ কোটি বছরের চিরন্তন মানুষ, যেন শিল্পাচার্য— স্বপ্ন সে।
চোখজুড়ে আলো দেখার অপেক্ষা এক নিত্যকার বাসনা। ফেণা ওঠা সমুদ্রের ঢেউয়ের তালে তালে সমতল ভূমিতে এসে যাওয়া কোনো আখ্যান নয় যেন— সভ্যতার কাল পরিক্রমা। সমাজ দর্পণে তার এক কালিক রেখা টেনে দাঁড়ানো দ্রোণ— কবি, ‘অশেষ প্রস্তর যুগ’-এ আঁকা সে ইলোরা অজন্তার গুহাচিত্র ভেসে ওঠা শোয়েব শাদাবের তূণ।
এইরকম দৃশ্যের ভেতর দিয়ে মানব সভ্যতার কলাবিদদের এগিয়ে চলতে চলতে দাঁড়াতে হয়েছে, চলতে হয়েছে— চলছে এখনও সে যাত্রা। স্থিরতা যেন মৃত্যুসম— ইতিহাস যে স্থিরতাকে রাখেনি মনে, সভ্যতার বিলুপ্তি হয়তো এইসকল কারণ-ই দায়ী।
বিপর্যস্ত যুগ বিপর্যস্ত কবিতা বিপর্যস্ত চেতনা বিপর্যস্ত সময় বিপর্যস্ত কলা এবং ব্লাকহোলগামি সময়-সভ্যতা।
‘কোথায় উত্তীর্ণ রাত্রি
মেরুভালুকের পিছন পিছন।’
মৃত্যুগন্ধীফুলগুলো ঝরে পড়ে, মৃত্যুকে ছুঁয়ে আসে, ছড়ায় গন্ধ সে গন্ধ তাবৎ দুনিয়াতে। ‘নৃত্যরত বরফ’ ধোয়া তুলে গেয়ে যায় নতুন দিনের আখ্যানের যূঁথচারীতা। মাটির বুকের ভেতর এক হাড়খোর এসে জমা হয়, একদল হাড়খোর সবুজ বনানীর স্মৃতিচিহ্ন খুঁজে পায় বীজ, জলের আগ্রহে তা চারা হয়ে বেড়ে ওঠে উন্মোচিত হয়— চিন্তার ইতিহাস। সেইসকল চিন্তার ক্রম গীত এক একটি কবিতা, সুর, স্বর ও মানুষের মন।
সবুজ পৃথিবীর সত্য বসত ছিল পাহাড়ে, গুহায় এবং বনাঞ্চলে, সেইসমস্ত বনাঞ্চল কেটেকুটে হয়েছে সাফ। যেন পৃথিবী চলেছে আধুনিকতার সীমান্ত রক্ষার দায় নিয়ে—কিন্তু ‘ঠিকানাবিহীন সুড়ঙ্গের’ দিকে যাওয়া-আসা এতে উত্তোরণ কতখানি? না গল্পের উদ্ধার হয়, না হয় কাব্যজগতের কোনো নয়া উন্মোচন! তবে পাথর কেটে পথ তৈরিই তো শেষ কথা নয়, আদিম মানুষের গায়ে পশুর চামড়া, বৃষ্কছাল সেই-ই কী উত্তম নয়? কাঁটা-কম্পাসে জুয়াড়ি কলাম্বাসের সাম্রাজ্যবাদি চিন্তাকে ধারণ করে মানুষ এগোলো কতটা?
‘চিতাকাঠ’—এ বুকের অজানা আবছানো এক দুরন্ত সাহস ভর করে চলে, শিল্পের দৌড়ে সে সাহস কতটা দুঃসাহসী তা বুঝে নিতে হয়— তাবৎ আশির নতুন নতুন চকমকি শব্দের খোল থেকে; ‘বিদ্বেষ’ আর ‘পাপ’ —এ দুইয়ের সমন্বয়ে যাঁরা স্বপ্ন বুনতে চায় ‘তস্ত্র’-এ, তারা কী স্বপ্নের দ্বারে পৌঁছুতে পারে? নাকি রাক্ষসের মতো কেবলই গিলে খায় মরুর ‘জন্ম—জন্মান্তের’ পথ? বিস্তর পথ হেঁটে হেঁটে সত্যি এই পাথরের সভ্যতা রক্ষা হয়নি— শ্রম আর সাধনার পর পাওয়া যায় কেবল পথের নতুনত্ব যা পৌঁছে দেয় নতুন সূর্যের কাছে, যেখানে কেবল আলোর খেলা, যেখানে রয়েছে— ঊষর পথ মাড়ানো আরও কিছু নতুন গানের খোঁজ, সে গানের খোঁজ— কবির কবিতার ভেতর হরদম খেলে চলে ‘ভেনাসের দীপ্ত স্তন’ যা শিল্পের ভার বহন করে চলেছে আজও। তা সারা বিশ্বের সৌন্দর্য্যকে তুলে ধরে নতুনভাবে—নারীর রূপের মাধুর্যে—কখনও তা যেমন সন্তানের পানযোগ্য, তেমনি তা প্রিয়’র কামোত্তজনায় উন্মত্ত করে তোলে আর শিল্পীর চোখে তা হয়ে ওঠে আরও দীপ্ত। যুগান্তরের এইসব সত্য নিরিখ ক’রে ক’রে কবিতার বন্দীত্ব থেকে মুক্ত করে চলেন কবি শাদাব। শব্দের ছুঁরি-কাচির বাহাদুরি বড্ড সেকেলে ব্যাপার যেন কবির কবিতার মেপেচেপেজুপে প্রকারে তা প্রকাশিত হয়! কতখানি সেই সত্যভাষণ—যা আশিকে বদলে দিয়ে নতুন ভাবনায় প্রবেশ করাতে চেয়ে চেয়ে পুরাতনীর বন্ধনে ফের এনে তুলেছে আমাদের ভাষা ও ভাবনার জগতে, তবে নতুনত্বের ডাক কী এ কবিরও ছিল না? নব্বই-এ এসে তবে কেন ফের দেখতে পাই—সেই ছন্দজগদ্দল পাথরের মতোন উঠে বসে আমাদের কবিতার পাঠক ও মস্তিষ্কের গর্তে? কবিতার সোনাঝরা দিনের কথা বলতে গিয়ে নিজেই কেন কবির—‘সোনালী মাছের লোভ’ নাই জেনেও ‘নদী গেলার’ কথা বলতে শুনি? এইসকল কী কেবলই কবিতার ভ্রম—নাকি ভাষার রাজ্যে মানুষের পদচিহ্ন আঁকবার নবতর পদ্ধতি?
…নক্ষত্রের মতো বিষাক্ত লাভা ঝরে নীল দৃষ্টিতে
২.
শতত ডানার পাখি যে উড়ে উড়ে আসে আমাদের বেদনা ও আশার দ্বীপে, মানুষ সেখানে খোঁজে ‘অজস্র পিঁপড়ের সমাধি’—সে সমাধি ঘিরে রচিত হয় পরিবেশবাদীদের নয়া উত্থান। সবুজ পৃথিবীর সত্য বসত ছিল পাহাড়ে, গুহায় এবং বনাঞ্চলে, সেইসমস্ত বনাঞ্চল কেটেকুটে হয়েছে সাফ। যেন পৃথিবী চলেছে আধুনিকতার সীমান্ত রক্ষার দায় নিয়ে—কিন্তু ‘ঠিকানাবিহীন সুড়ঙ্গের’ দিকে যাওয়া-আসা এতে উত্তোরণ কতখানি? না গল্পের উদ্ধার হয়, না হয় কাব্যজগতের কোনো নয়া উন্মোচন! তবে পাথর কেটে পথ তৈরিই তো শেষ কথা নয়, আদিম মানুষের গায়ে পশুর চামড়া, বৃষ্কছাল সেই-ই কী উত্তম নয়? কাঁটা-কম্পাসে জুয়াড়ি কলাম্বাসের সাম্রাজ্যবাদি চিন্তাকে ধারণ করে মানুষ এগোলো কতটা?
আনন্দ-উত্তেজনার ’পরে ভর করে সভ্যতা তৈরি হয় তা কথিত, সভ্যতার নির্মান রক্তের ইতিহাস—হাড়খোর, গোরখোর কিংবা রক্তপিপাসু হায়েনা রাষ্ট্র কবির মস্তিষ্কের ভাবনার নিয়ন্ত্রণ করে, সত্যবক্তারা দারুণ বিপাকের পর তা কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখে না—ফলে কবির দল পিঁপড়ের দলের মতোন হয়ে যায়—আত্মকল্যাণমুখি। রাজকোষের অর্থায়নে তৈরি হয় ছাপোষা কবি। যে কবি কখনও বলে না—মানুষের মুক্তি কথা, মানুষের মন আর মানবিক বিকাশের কথা, যাদের দ্বারা ঘটে না সমাজের বোধের উন্মেষ—মানুষের চিন্তা কেবলই সেখানে বন্দি থাকে সূক্ষ্ম শেকলে। সেই শেকল কেবলই দৌড় করায়—অর্থ আর বিত্তের পিছু পিছু। শিক্ষার উদ্দেশ্য যেখানে মনের মুক্তি সেখানে শিক্ষাই হয়ে ওঠে অর্থ আয়ের জন্য প্রধান মাধ্যম। কবির কাব্যে সেইসমস্ত বিবরণ দেখা মেলা দুষ্কর হয়ে থাকে পৃষ্ঠপোষকতার জন্য। রাজতন্ত্রের গুণগান যেন কবির মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে তখন।
জাগতিক এইসকল মোহকে অতিক্রম করে কবিতার যাত্রায় দেখা মেলে আশির দশকের তারুণ্যদীপ্ত কবি শোয়েব শাদাবের, যেখানে শাদাব শিল্পের বিধানের কোনো লিপিকার নিয়ম না মেনেই হেঁটে হেঁটে সাঁকো পাড়ি দেওয়ার প্রচেষ্টায় রত। কী করতে চান চিনি কবিতায়—এ সকলের একটি বিন্যস্ত রূপ পাঠসমুখে হাজির করেন তিনি ‘অশেষ প্রস্তর যুগ’ কাব্যের স্বল্পায়তনে।
অস্তিত্ব-অনস্তিত্ব তাকে জিজ্ঞাস্য করে তুলেছিল কবিত্বে। কাব্যে তিনি শব্দের মারপ্যাঁচের ভেল্কিতে চোবানো কোনো ঝংকারমুখর চিত্র নয়—সাধারনীর মতোন গেয়ে ওঠেন সভ্যতার কথা বলতে বলতে—লালন সাঁইয়ের বাড়ির পাশের আরশি নগরে যাত্রা না হওয়ার মতো করেই। এখানে দেখা মেলে তাঁর কবিতার স্বাতন্ত্র্য এবং নিজস্ব স্বরের। ধারনা করা যায়—কবির সে স্বরের বৈশিষ্ঠ্য ভিন্ন, নতুনত্বের দিকে যাত্রা নিরন্তর।
আহত পাখির ডানা ঝাঁপটানোর গল্প শুনে শুনে ছেলেবেলার দিন গোঁজরানো সময় ছিল মধ্যআশি। মধ্যআশির তরুণেরা সদ্য স্বাধীনতম ভূ-খণ্ড’র বাংলা কবিতার দিক বদলের ব্রতী হয়েছিলেন—ইশতেহার কিংবা ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে নয়া উদ্যোগে নামেন, কিন্তু এতে সফলতার দ্বার উন্মুক্ত হয়নি। ছোটকাগজ ‘গাণ্ডিব’ সংশ্লিষ্ট কবিদের ছিল এ প্রচেষ্টা। শাদাবও ছিলেন এই গাণ্ডিব চক্রের তারুণ্যদীপ্ত এক প্রান। কবিতার ভুবন যাকে গিলে খাচ্ছিল ‘হা’ করে বহুদিন ধরে। শহুরে নাগরিকজীবনে সেই কবিতার ‘হা’ যেন আরও বড় হয়ে এলো, তরুণ শোয়েব শাদাব কবিতার মুখগহব্বরে বন্দি হলেন। নব্য কলেজজীবনের উন্মাতাল দিনের ঢাকার ফুটপাথ হয়ে উঠলো সরগরম, বাংলা কবিতার দ্রোণাদল হাজির হয়েছিল সেই ফুটপথে। নতুন দিনে কবিতার উদ্দেশে তারা যেন উন্মুখ।
নতুন দিনের জন্য তারা যাত্রা করলেন—কিন্তু পৌঁছুলেন সভ্যতার শুরুতে আদম-ইভ’র সেই গল্পে, যেখানে ‘বোধিবৃক্ষের ফল খেয়ে হলে স্বর্গ তাড়িত’। তারপর দীর্ঘ যাপন বিচ্ছেদ—বনে বনে হন্টনরত, সভ্যতার সূর্যের দিকে। পাথরে পাথরে তা খোদিত হয়ে রইলো—প্রিয় ‘কাঠের ঘোড়া’।
নষ্ট দ্রাঘিমায় এসে গেছি দেবদূত
৩.
‘প্রাগৈতিহাসিক’ অন্ধকূপ থেকে বের হতে পারিনি আজও সমাজ সভ্যতা, চিত্র এবং প্রান-প্রকৃতি। নদীতীর ধরে বহুপথ হেঁটে এসে দেখেছি সেই যাত্রার শুরুর জায়গাটিই, তবে কী হেঁটেছি আদেও নাকি প্রচল ভাঙার সে গান গেয়ে ওঠা সম্ভবপর হয়নি আমাদের সম্মিলিত! নতুন কবিতার যাত্রাও ঠিক যেন তেমনি এক ঘোরাক্রান্ত বৃত্ত। একই বৃত্তে ঘোরার বাসনা মনের অন্যখানে অথচ চলেছি ভিন্ন কোনো বৃত্ত খোঁজবার আশায়—ষাট পূর্ববর্তী সময়ে পঞ্চপান্ডবদের তান্ডব—তারপর কোলকাতায় শক্তি-সুনীল আর অধুনা পূর্ববঙ্গের রাহমান-মাহমুদ-কাদরী’দের পদ্য প্রভাবী ভাষায় যেন বিলকুল মাতাল স্বভাবী বাঙালমুল্লুক। সেখানে ক্ষীণ দ্যুতির আভাস দিচ্ছিলেন জনা দুয়েক কবি—যাঁরা অচ্ছুৎ ও সমাজবিচ্চুৎ একলাবাসেই নিরন্তর বোঝাপড়ার সাধনা তাদের—এঁরা যথাক্রমে উৎপল ও বিনয়। এই অনতিক্রম্য কাব্যভূগোলের বাইরের দুনিয়ায় এসে অন্য ভুবনের স্বপ্নে ‘ইশতেহার’। কবিতার বাঁক বদলের চেষ্টা। সে চেষ্টার তৎপরতায় পঠিত শোয়েব শাদাবের চমৎকারিত্ব সন্নিবেশ করা চলে—মানবেতিহাসের আদিম চিত্রকলা, গুহাচিত্র, বাংলার লোকজ সৌন্দর্য্য নিয়ে। ঈশ্বরের সঙ্গে দেন-দরবারে বড্ড বেশি একগুঁয়ে ফলে তিনি অগ্নির প্রতি দরদ দেখান। অস্তিত্ব-অনস্তিত্ব তাকে জিজ্ঞাস্য করে তুলেছিল কবিত্বে। কাব্যে তিনি শব্দের মারপ্যাঁচের ভেল্কিতে চোবানো কোনো ঝংকারমুখর চিত্র নয়—সাধারনীর মতোন গেয়ে ওঠেন সভ্যতার কথা বলতে বলতে—লালন সাঁইয়ের বাড়ির পাশের আরশি নগরে যাত্রা না হওয়ার মতো করেই। এখানে দেখা মেলে তাঁর কবিতার স্বাতন্ত্র্য এবং নিজস্ব স্বরের। ধারনা করা যায়—কবির সে স্বরের বৈশিষ্ঠ্য ভিন্ন, নতুনত্বের দিকে যাত্রা নিরন্তর।
শব্দের কুহকবেদনা তাঁকে ভাবিয়ে ভাবিয়ে যেন লিখিয়ে নেন—এক একটি পঙক্তি। সেখানে কিছু শব্দের শরীরে চিত্রেরা খেলা করে—‘সমুদ্রমৎস’, ‘আত্মঘাতি অন্ধকার’, ‘বাঁশিভাঙা ধুতুরা’, ‘বেড়ালের স্বপ্ন’, ‘প্রজ্ঞাই আহার্য’, ‘পোতাশ্রয়’, ‘মুখচ্ছবিতে কুষ্ঠ দাগ’, ‘নীল ঈগলের ডানা’, ‘রৌরব নরককুণ্ড’, ‘আযোনীপৃথিবী’র ভেতর দিয়ে তার রূপ নিরূপন করা যায়। কবিতার পথিক এখনও হাঁটেন—হেমলক জর্জরিত হয়ে, শেকলবন্দী কবি ‘অশেষ প্রস্তরযুগ’ আজ-ও তাঁর চারপাশ ঘিরে নৃত্যরত—যেখানে তিনি নির্মান করেছেন—সরল ভাষার শরীরের ভেতর দিয়ে নিরন্তর বাঁকের ভেতর এক নতুন কাব্যভঙ্গির, কালের নিরিখে তা পাঠসমুখেই তৃপ্তি পেয়ে পাঠক নিশ্চয়-ই খুঁজে ফিরবেন—কবির নীড়—বিষ্ণুপুর গ্রাম, সুঁতিয়া খাল এবং সাঁকো পেরিয়ে বাঁশ বনের ছায়ার পথ মাড়িয়ে অনিরুদ্ধ কামারের বাড়ির নিকটের চিতাকাঠের মতোন করে শুয়ে থাকা আরও এক সভ্যতার দূত—শোয়েব শাদাবের জন্মান্তরের মাটির ঘর। যেখানে তিনি স্বপ্ন দেখে যান পরিক্রমণরত সভ্যতার—
‘বিপুল হিংস্রতা ঝরে সিংহের কেশরে,
কালো পাখির পুচ্ছ নক্ষত্রে নাচে।’