অরিত্র ও অনান্য কবিতা । অমলেন্দু বিশ্বাস
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:০৪ অপরাহ্ণ, | ৪২৮ বার পঠিত
অবলীন
আঙুলে আঙুল রেখে,হাত ধরাধরি করে
কতো মাস হাঁটিনি এ’পথে।
রাস্তার অনতিদূরে দেবদারু বীথি
এইসব জেনে গেলে, তোমার শরমমাখা মুখ
লুকোবে কোথায়! অসময় ফরমান জারি হলে
দূরত্ব বজায় রেখে চলা তামাটে উপলবৃত্তে
নিজেকে নিক্ষেপ করে বৈপরীত্যে হাঁটা
যেভাবে এমন হাঁটে; তথাগত জানে!
শেষ কবে ছুঁয়েছিল আঙুলে আঙুল
কোমল পেলব রঙ, অনুভূতির গহন গৃহে!
গোলাপ কামিনী ফুল গূঢ় হুলে
হৃদয়ে গরল গলে মদির আচ্ছন্ন
নতুন শব্দের গন্ধে বিমোহিত হৃৎ।
ফের তোমারই ঘ্রানে অবলীন গাহিত মরম!
কিন্নর কাহন
শীতের সকাল থেকে এনেছি কুড়িয়ে
তাজা সবজির মতো গাঢ় সবুজতা
তোমাকে সাজাতে গিয়ে ভোর অক্ষরেখা
ধেয়ে আসে লক্ষ্য করে হৃদয় সকাশে।
হে হৃদয়,ভোর নাম— ইষ্ট নাম জপো
তপটুকু মনে মনে তুলে রাখো ঘরে।
ঘরের আঙিনাটুকু ঝাড়পোছ হলে
গোঁসা ছেড়ে ধনদেবী রাখবে কন্দরে।
তবে এই শাদা পথে ডাকলে ভোরপাখি
মহাশ্বেতা মহাগান বীণার ব্যঞ্জনে
সুরধ্বনি চিত্ররূপ রান্না করে হলে
নূতন গানের দিকে কিন্নর কাহনে।
ভোরের সবুজ খেত মরমে তোমার
পূর্ন হবে শূন্য থালা নৈবেদ্য আহার!
অরিত্র
অরিত্র বলেছে বুঝি কমে এলে সেই নদী জল
নাব্যতা অবতরণ থেকে দূরে গেলে
ফেরানো যাবেই ফের ঊর্মিময় বুদবুদ
পুরোনো মাছের উল্লসিত জলকেলি।
অরিত্র জানে কী এই পোড়া জাঙাল প্রদেহে
অবকীর্ণ জলাপথ কিভাবে শাসায়!
চেনা গতিপথ ঘুরপাকে থাকে ঘূর্ণি মনোপথ।
বৈরি বৈঠা যদি বিপ্রতীপ চোরা স্রোত
ঠেলে ঠুলে আসতে পারে মাঝ জলপথে।
তাহলে তুমিও হয়ে ওঠো অপ্রতিম
দুর্বিনীত স্রোতপথ কাছে টেনে এনে
সুহৃদ স্বজন করো মহুয়া সম্ভাষে।
দ্যাখো, ঘূর্ণন মোহনা পথ থেমে গিয়ে
তোমার বৈঠার কাছে জানু পেতে
জলজ সঙ্গীত যাচে।
বিলাসপুর জংশন
শার্দুলের ঘ্রাণ পেলে দলবদ্ধ এভাবে দাঁড়ায়।
নির্জন অরণ্য নয়, তবে বিলাসপুর জংশন
যেন একঝাঁক তণ্বী হরিণীর ডাগর নয়ন
সলাজ— ভয়ার্ত নয়।নীল চক্রাকারে ঘিরে থাকা
সেলফি তোলার ঝাঁঝ মুহুর্মুহু,আমিও অবাক।
দেখেছি মধ্যমণিতে গোধূলি স্ফুরণ— তেড়ে ফুঁড়ে—
নেমে আসা দেবীমুখ— খুঁজেছে পটুয়া অবিরল
অথচ এখানে তুমি। ফেরাতে পারিনা কিছুতেই
সমস্ত রূপের উৎস রয়েছে নিহিত
পোশাকের কুহুকতা নেই বলে চিনে ফেলি
মর্ত্যধামে আছে এই নিসর্গ-প্রেমিক কাঙাল এ কবি।