হত্যা বিষয়ক দোহাই । রোমেল রহমান
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ নভেম্বর ২০১৯, ১২:০৬ অপরাহ্ণ, | ১৬৪৩ বার পঠিত
একটি নির্মম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করবার পর, হত্যাকারীগণ…
— মহাত্মা, যাহাকে আমরা আজ হত্যা করিয়াছি সে নিশ্চিত ভাবে আমাদের দর্শনের বাইরের আদমি! বিরোধী পক্ষ।
— সে আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা বিষয়ক বিরোধিতা করিয়া থাকে! সে আমাদিগের ডাইরেক্ট শত্রু !
— আমাদেরকে সে বিশুদ্ধ ভাষায় গালাগাল করিয়াছে!
— আমরা তাহাই করিয়াছি যাহা আমাদের এখতিয়ারে আছে বলিয়া আমরা অনুভব করি।
— বুঝিলাম হে আমার শূকর ছানাগণ! এখন বল এরপর কি হওয়া উচিৎ?
— আপনি আমাদেরকে রক্ষা করিবেন!
— আপনি ব্যবস্থা নিবেন যাহাতে আমরা মুক্ত হইতে পারি!
— পুলিশি হুজ্জৎ আপনি সামলাইবেন কেনোনা আমরা আপনার অনুগত এবং আমরা আপনারই সেবা করিয়া থাকি এবং প্রশাসন আপনার নিয়ন্ত্রণে!
— পূর্বেও এমন ঘটনা আমাদের পূর্বসূরিগণেরা ঘটাইয়াছে এবং আপনিই বা আপনার ভ্রাতৃগণ উহাদের রক্ষা করিয়াছেন! বিচার তো প্রহসন মাত্র!
— বুঝিলাম! কিন্তু হে আমার নির্বোধ শূকরছানারা, জনগণ যে ক্ষেপিয়া উঠিয়াছে তোমাদের কৃতকর্মে! এখন কি হইবে?
— কি হইবে তাহার আমরা কি জানি? আপনি ভরসা! আপনি তাহাই যাহা হইতে আমরা শক্তিপ্রাপ্ত!
— আপনি রক্ষাকবচ! আপনি মহা শূকর! আর আমরা আপনারই অনুগামী!
— হা হা হা! ভালোই বলিয়াছ! স্তুতি বিদ্যায় তোমরা শীর্ষে উঠিয়াছ! এই নাও!
— কি ইহা?
— দেখিতে ইহা মিসাইলের মতন!
— নাহ দেখিতে রকেট লান্সারের মতন! কিন্তু আকৃতিতে অতিশয় ক্ষুদ্র!
— হে আমার জারজ শাবকগণ! ইহা প্যারাসিটামল সাপোজিটরি! তোমরা প্রত্যেকে পায়ুপথে একটি করিয়া প্রবেশ করাইয়া দাও!— এইসব আপ্নে কি কহিতেছেন হে পরম?
— যাহা বলিতেছি তোমাদিগের কল্যাণের জন্যেই বলিতেছি!
— তা বলিয়া কল্যাণ পোঙ্গার মইধ্যে ঢুইকাইয়া দিবো?
— কিন্তু কেন দিবো হে পরম?
— কারণ ইহাই নিদান! ইহাতে উপসমের আপাত কৌশল নিহিত! এই ঔষধ তোমাদিগকে কিঞ্চিৎ উপশম দিবে ব্যথা হইতে।— আপনি কি বলিতে চান আমাদিগের গণধোলাই খাইবার চান্স আছে? নাকি পুলিশি ডলা খাইবার আশঙ্কা আছে?
— উভয়ই আছে! কেনোনা তোমরা যেই কাণ্ড সংঘটিত করিয়াছ তাহার বিনিময়ে গণধোলাই দিয়া তোমাদিগকে মারিয়া ফেলাই উত্তম কার্জ!
— এইডা আপ্নে কি কহিতেছেন আব্বা? এদ্দিন হইতেছে আমরা আপনার সংগঠন করি! উত্তম ক্যাডার হিসাবে আমাদের যথেষ্ট নামডাক আছে! আপনি আজ আমাদিগকে কেন এমন ভয়ের মইদ্দ্যে ফেলাইয়া দিতেছেন?
— ঘোঁৎ ঘোঁৎ না করিয়া যাহা বলিতেছি তাহা সম্পাদন করো! আমি যে তোমাদিগকে রক্ষা করিব না তাহা তো বলি নাই! কিন্তু সর্বদা একই নাটক দর্শক খায় না তাই ভিন্ন দৃশ্য অবতারণা করিবার জন্য তোমাদিগকে সাপোজিটরি দিয়াছি!
— বুঝিয়াছি! আমি বুঝিয়াছি হে মহান! আমি এক্ষুনি প্যান্ট খুলিয়া সাপোজিটরি নিতেছি! সামান্য ডলা খাইতে আমার সংকোচ নাই!
— হিসসস! বেশি বুঝিও না। আমি থাকিতে ডলা খাইতে যাইবা কেন? আর তোমাদের ঐ অপদার্থটাকে বুঝাইয়া দাও আমার মর্ম!— হে মহান, এমন কোন সাপোজিটরি কি নাই যাহা দিলে আমরা গায়েব হইয়া যাইতে পারি।
— তুমি কি আমার শালা সম্পর্কের হও?
— জি না নেতা!
— তাহা হইলে এমন রসিকতা কেন দেখাইতেছ? ফাৎরামি করিবার স্থানকাল বুঝিতে হয় হে নিকৃষ্ট শূকরছানা!
— আমি ক্ষমাপ্রার্থী!
— আমাদের সকল গোস্তাখি মাফ করিয়া দিন হে শক্তিমান!
— আমরা গ্যাঁড়াকলে, আর এমন কার্জ সংঘটিত করিব না!
— খামোশ! এমন কার্জ সংঘটিত করিব না বলিতেছ কেন? তাহা হইলে তোমরা কি করিবে? শাখামৃগের ন্যায় কদলী খাইবে?
— নেতা, শাখামৃগ জিনিসটা কি?
— উফফফ! এই অপদার্থ কি করিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে? এই অপদার্থটিকে নিয়মিত নীলডাউন দেয়া উচিৎ! বলিতেছি যে তোমরা যদি এইসব ভয়ের সংস্কৃতির চর্চা না করো তবে কি বাল ছিঁড়িবে? মানে বসিয়া বসিয়া কলা খাইবে বান্দরের ন্যায়?
— ওহ! বুঝিয়াছি হে মহান! শাখামৃগ মানে বাল! শাখামৃগ কঠিন শব্দ, সাইজেও বড়!
— হায়! আমি কাহাদের লইয়া আধিপত্যের সংগঠন রচনা করিয়াছি! কাহাদের দিয়া হাল চালাই আমি এই জমিনে? যা হউক! তোমাদের জ্ঞান লইয়া ভাববার সময় আমার নাই। আমি পূর্বের ন্যায় আবার বলিতেছি যে, তোমরা যাহা করিয়াছ তাহাই তোমরা আজীবন করিবে। ইহাই তোমাদের কাজ! যতদিন আমাদের সাম্রাজ্য কায়েম থাকে। কেনোনা আমরা বিশ্বাস করি একটি ভয়ের রাজ্য নির্মাণে। আমরা বিশ্বাস করি জনগণকে ভীতু করিয়া রাখাই সর্বোত্তম পদ্ধতি উহাদের শোষণ করিবার জন্য। এই হত্যা এবং এই সকল হত্যা তাহাই সৃষ্টি করে যাহা আমরা চাই।
— আপনেরা কি চান লিডার?
— হে নিম্নমানের শূকরছানা তুমি এতকাল যাবৎ সংগঠন করিবার পরেও টের পাও নাই আমাদের পার্টির আকাঙ্ক্ষা? শুধু টেণ্ডারবাজি, দালালি করিয়াই মস্তিষ্কের শক্তি ব্যয় করিয়াছ? আফসোস!
— নেতা আপনি শুধু বলুন আপনি আমাদিগকে রক্ষা করিবেন। আমরা নিশ্চিত হইতে চাই। কেনোনা আমরা সকলে ফাঁপরে! চারদিকের লোকেরা ক্ষেপিয়া আছে এবং মিডিয়া অনবরত আমাদের দ্বারা সংঘটিত হত্যার সংবাদটি সম্প্রচার করিয়া যাইতেছে। এবং ব্যর্থ টকশোবাজেরা লেবু কচলাইয়া তেঁতো বানাইয়া ফেলিতেছে ক্রমান্বয়ে!
— অবশ্যই আমি তোমাদের রক্ষা করিব। তোমাদের পূর্বসুরিদের ন্যায় তোমরাও রক্ষা পাইবে কেনোনা বিচার একটি দীর্ঘমেয়াদি মহানাট্য যাঁহার লেজমাথা নির্ণীত হয় কলাকৌশল দ্বারা!
— আহা! জয় নেতার জয়!
— তাইলে তো আর সাপোজেটরি দেয়া লাগবে না! হে হে!
— এই জানোয়ারটিকে থাপড়াও! এক্ষুনি থাপড়াও! আমার সম্মুখেই থাপরাও! সে কি এখনো টের পাইতেছে না তাহার অণ্ডকোষ ফাঁটা বাঁশে আটকা পড়িয়াছে?
— হে মহান, আমরা তো ভয় দিতে শিখিয়াছি ভয় পাইতে নয়! আপনারাই সেই ক্ষমতা আমাদিগকে দিয়াছেন যেন আমরা সকলকে পদতলে রাখিতে সক্ষম হই!
— যে হত্যাকাণ্ড তোমরা সংঘটিত করিয়াছ তাহার সিসি ক্যামেরা ফুটেজে তোমাদিগের প্রত্যেকের চেহারা স্পষ্ট আছে! তবু তোমরা ভীত নও?
— না হে নেতা! আমরা ভীত নই!
— কেন?
— কারণ আমরা জানি আমাদের মাথার উপরে আপনি আছেন!
— তথাস্তু!
— কি কইলেন নেতা?
— বলিলাম, হে আমার অনুগত বোকাচোদারা এখন এইখান হইতে বাহির হও!
— ওর সংলাপে গোস্তাখি নিবেন না হে নেতা! সে আমাদের সঙ্গে নতুন এবং কিঞ্চিৎ গাড়ল টাইপ!
— যাইহোক দল থাকি দলে পশু থাকিবে, দল থাকিলে দলে বুদ্ধিজীবীও থাকিবে, দল থাকিলে দলে গাড়লও থাকিবে, ইহাই বাস্তবতা! এখন তোমরা যাইতে পারো। এবং যা ঘটিতেছে তাহা ঘটিতে দাও! পুলিশ ধরিলে ধরা দিও, পালাইবার চেষ্টা নিও না! বাকিটা দেখা যাইবে!
— আপনি মহান!
— আমরা আপনার পদচুম্বন করিতে চাই!
— কোন প্রয়োজন নাই! আমার কিঞ্চিৎ সুড়সুড়ি আছে! পদচুম্বন সম্ভব নহে!
— তাইলে বস আপনার হস্ত চুম্বন করি?
— এই গাড়লটাকে গ্লিসারিন সাপোজিটরি চিকিৎসা দেয়া আবশ্যক! উত্তমরূপে তাহাকে হাগাইলে তবে তাহার মাথা পরিষ্কার হইবে! সে বুঝিতেছে না সে একজন ভৃত্যশূকর মাত্র!
— নেতা এইভাবে বলিবেন না! আমরা আছি বলিয়াই কিন্তু আপনারা আছেন। আর আমাদেরকে আপনারাই এই সাহস দিয়াছেন!
— বাহ! বাহাস করিতেছ? নিজেদের সাফাই গাহিতেছ? শরীরে মেদ জমিয়াছে তাই না? তুমি কি ভাবো না যে আমাদের প্রয়োজনেই আমরা তোমাদিগকে সৃষ্টি করিয়াছি? এবং চাইলে আমরা তোমাদিগকে শেষ করিয়া দিতে সক্ষম? এক দুইজন তোমাদিগের ন্যায় কর্মী ক্রসফায়ারে দিয়া আমরা অভ্যস্ত! কেনোনা আমরা জনগণের মুখে সর্বদা ললিপপ দিয়া রাখি শান্তি ও ইনসাফের এবং আমরা সমাজের মধ্যে জনগণকে হত্যা করার পদ্ধতি জ্যান্ত রাখি তাদেরকে সন্ত্রস্ত রাখবার জন্যে! কেনোনা স্থায়ী ক্ষমতায় আসীন থাকবার জন্যে যে লুটপাটতন্ত্র আমরা জারি রাখিয়াছি উহার চালিকাশক্তি ভয় এবং বিস্ময়! মনে রাখিও তোমরা আমাদিগের পালিত শূকর মাত্র জলহস্তী নও!
— আমি ক্ষমাপ্রার্থী!
— যাও তোমরা! বিদায় হও! বিরক্ত করিও না আর। যথাসময়ে তোমাদিগকে আমরা রক্ষা করিবো। পতন ব্যতীত আমাদের সিস্টেম অটল এবং নির্মম! আমরা কাউকে স্বীকার করি না, পছন্দ করি না বিরুদ্ধ মত! ফলে তোমাদিগকে আমরা সৃষ্টি করি সংঘাত জারি রাখতে! মনে রাখিও আমাদের ভয়ের রাজ্যে সকলকেই ভয়ের মধ্যে থাকিতে হইবে!