ইতি আমি আবরার । আমেনা তাওসিরাত
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ অক্টোবর ২০১৯, ১:২৪ পূর্বাহ্ণ, | ৪২০৮ বার পঠিত
লিখিতেছি না বলিয়া গভীর ঘুমে আমি লাইফ সাপোর্টে চলিয়া যাইতেছি না। বিশারদরা শিডিউল ধরিয়া নিরলস সাহিত্যযোগ করিতেছেন। পত্রিকায়, ওয়েবে সন্দেশ ছাপিতেছেন সম্পাদকগণ। আমার বিশেষ ঠেকা নাই তাই আমি হার্ট, বেনথাম আর অস্টিন পড়িয়া কনসেপ্ট সংগ্রহেই থাকি। লিখায় কিছুই বদলায় না, সুন্দরবনের তড়িৎ উৎপাদন পূর্ণ উদ্যমে চলিতে থাকে, দুই চারটা মাইনরকে স্যাক্সুয়ালি অ্যাসল্ট না করিলে কিছু পশু নিজেদের পুরুষ ভাবিতে পারে না, জনগণ ঘটনা বুঝিয়া না বুঝিয়া কিছু শুনিবামাত্র অ্যাক্টিভ হইয়া অ্যাইজ, জ্যান্ডার বিবেচনায় না আনিয়া মানুষ হইয়া মানুষ মারিতে থাকে। তাই অভিমানে পাঠক হইয়া বড় বড় পাতার ফিচার পড়িতেছি আমি।
আর বিগত মাস হইতে ক্যাসিনো জয়ের আনন্দ উদযাপন করিতেছিলাম। ভূঁইয়া ম্যানশনের তিন ফটক পার হইবার থ্রিল পড়িয়া সবে এইদিক ওইদিক হইতেই ব্রেকিং নিউজ হইয়া গেলো মাত্র বছর দুই আগে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রেস্টিজিয়াস ইউনিভার্সিটির গবেষণাপ্রিয় এক বিদুষী ছেলে।
তাঁহার জননী জানেন জার্নি ফুরাইলেই সেইফ হওয়া যায় না। তাঁহার পিতা জানেন বিদায় কাহাকে বলে। নীলবর্ণ ব্যথা ব্যাংক, তাঁহার বড় ছেলে বর্ষাকালেও আর বাড়িতে কিংবা কোন ‘সিটে’ শুইবে না। যত ছাদ, যত ছাতা, যত কলাপসিবল, যত নিরাপত্তা, তাঁহার আজ কিছুই লাগিবে না!
একখানা লিখাপত্র, সদ্য ছাপিয়াছিলো। সুকান্ততো সাহসী হইবার লাইসেন্স আঠারোতেই দিয়া গিয়াছেন। একুশ বৎসর বয়সী আবরার তাই কোন ট্রিটির কনসিকোয়েন্স বা কিছু ইন্সিডেন্ট লিখিতেই পারে। হইতে পারে কনটেন্টে ইতিহাসের স্ন্যাপশট আছে, সাবসিডিয়ারি দলের কর্মীগণ তাই গোসা হইয়া যাইবেন? ইহা কি সিক্রেট নথি? নেত্রী কি প্রেস লইয়া প্রকাশ্যে চুক্তি করেন নাই? তাঁহারতো ট্রান্সপারেন্সি ছিলো। তাহা হইলে ইহাদের অত লাগিবে কেনো?
মুন্নী সাহা ‘পলিটিক্স প্লাস’ কি তাঁহাদের চ্যানেল হইতে মাইনাস করিয়া দিলেন কি না ভাবিতেছিলাম। আজ মনে হইলো, আমাদেরতো পলিটিক্স, ফরেইন অ্যাফেয়ার্স লইয়া প্রতিক্রিয়া দেখাইতে নাই। ভেতরের বোধ নাম্ব হইয়া যাক, জাতি শুধু দেখিবে, শোনা বৈকি বলিবে না বা লিখিবে না কিছু। বিদ্যান মানে পোষা প্যারট পাখি। লক্ষ্য মোটা মাইনে, রোবোটিক জনগোষ্ঠী। ফাহাদটা যদি জানিতো এই টিকিয়া থাকার নীতি? ইহা ইউ কে, অ্যামেরিকা না যে, জাতিসংঘে গিয়া গ্রেটা, পুনঃ পুনঃ “তোমাদের এত সাহস” বলিয়া সব কর্পোরেট হেড আর রাষ্ট্রীয় কর্তা ব্যাক্তিদের চুপ করাইয়া দিবে, তদুপরী স্যালুট আর হাততালি লইবে, ইহা বাংলাদেশ। তাই আবরারকে চলিয়া যাইতে হইলো।
পরীক্ষায় আমাদের শিখানো হয় অপিনিয়ন লিখিতে, যে কোন থিওরি বা মতাদর্শের বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনা করিতে, তাহা হইলে এক্সামিনার ডিস্টিংশন মার্ক দিতে পারেন। সাত চুক্তি, আমার পানি, আমার গ্যাস, আমার বন্দর, আমি পক্ষে বিপক্ষে সাতটা লাইন বলিবো না? রোহিঙ্গাদের শেল্টার দিয়া আমার দেশ পৃথিবীতে মহান হইয়া থাকে নাই বুঝি?
তাই যথার্থই শঙ্কা জাগে, ইহারা কাহার আদর্শে অনুপ্রাণিত হইয়া কমিটি করিতে আসিয়াছে? বঙ্গবন্ধুতো স্কুল জীবন হইতে প্রতিবাদ করিতে করিতে বাংলাদেশ আনিয়া ছাড়িলেন। প্রকৃত বিপ্লবী যে তাঁহার আগুনে কী বা ভয়?
পত্রিকা পাঠে জানিলাম, বঙ্গবন্ধুর বুকে মাথা রাখা তদানীন্তন এক ছবি দেখিয়া, বিশ্ববিদ্যালয়কালীন সময়ে হেলাল হাফিজ যাঁহাকে অড্রে হেপবার্ন ডাকিতেন, তিনিতো; ঘাতক, ফোর্স লইয়া ক্ষমতাপ্রাপ্ত সেনা প্রধান, কালো আইন আর রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞায় ভীত হইয়া অ্যাসাইলাম সিকার না হইয়া, পিতার আনা দেশ লইয়া, হাজার গ্রেনেড আর শকুনের ঠিক সামনে উচ্চগ্রীবায় হাঁটিয়া আজ এইখানে মাথা হইয়া দাঁড়াইয়া আছেন। বলি বিসিএল তবে এত ভয় লইল কেনো? ইহারা কি তবে ন্যাচারাল নয়, হাইব্রিড কোন জাত?
মৌলবাদ কন্ট্রোলে ভাবিয়া কতকিছু লইয়া ক্রিটিসাইজ করিতে ইচ্ছা জাগে। তবে আজ জানিলাম, প্রতিবাদ মানে ইতি আমি আবরার। চুক্তি টিকিবে, আবরার মরিবে। মুন্নী সাহা ‘পলিটিক্স প্লাস’ কি তাঁহাদের চ্যানেল হইতে মাইনাস করিয়া দিলেন কি না ভাবিতেছিলাম। আজ মনে হইলো, আমাদেরতো পলিটিক্স, ফরেইন অ্যাফেয়ার্স লইয়া প্রতিক্রিয়া দেখাইতে নাই। ভেতরের বোধ নাম্ব হইয়া যাক, জাতি শুধু দেখিবে, শোনা বৈকি বলিবে না বা লিখিবে না কিছু। বিদ্যান মানে পোষা প্যারট পাখি। লক্ষ্য মোটা মাইনে, রোবোটিক জনগোষ্ঠী। ফাহাদটা যদি জানিতো এই টিকিয়া থাকার নীতি? ইহা ইউ কে, অ্যামেরিকা না যে, জাতিসংঘে গিয়া গ্রেটা, পুনঃ পুনঃ “তোমাদের এত সাহস” বলিয়া সব কর্পোরেট হেড আর রাষ্ট্রীয় কর্তা ব্যাক্তিদের চুপ করাইয়া দিবে, তদুপরী স্যালুট আর হাততালি লইবে, ইহা বাংলাদেশ। তাই আবরারকে চলিয়া যাইতে হইলো। কিন্তু স্বদেশ রাখিয়া দিলো তাঁহার চশমাখানা, ইহাই স্বান্তনা।
যাহাই হউক, ডেঙ্গুতে মৃত্যু মাত্র সাতানব্বই হইলো, এখনো শতক ছাড়ায় নাই! আসুন আমরা মশক মারিতে থাকি, নগরের পিতাদ্বয় আর সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলি তাহাদের টালিখাতা লইয়া বাঁচিয়া থাকুক। লালনও যথার্থই বলিয়া গেছেন, “গৌরের সঙ্গে যাবি দাসী হবি/এইটা মনে কর বাসনা।”
… …