ধোলা মাটিলো গুবকোয়া (সাদা মৃত্তিকার সংলাপ) । অদিতি ফাল্গুনী
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২:৩৬ পূর্বাহ্ণ, | ১৮৪০ বার পঠিত

`ময় তিমাট— ময় তিমাট লা মর্ম বোঝে— একরা তিমাটলা ইজ্জত যাবা লাগিছে। ময় তিমাটলা রক্ষা করিব (আমি নিজে নারী- তাই আর এক নারীর কষ্ট বুঝি। একটি মেয়ের সম্মান নষ্ট হতে চলেছে। আমি ওর সম্মান রক্ষা করবো)।‘
…এ কথা বলেই না একটি বিশাল রাম দা হাতে নিয়ে ছুটে গেছিল বৃটিশের গোরা পুলিশের দিকে রাশিমণি মাসী? যখন তারা বহেরাতলি গ্রামের সদ্য বিবাহিতা ষোঢ়শী নববধূ কুমুদিনীকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল? রাশিমণি মাসী, দিস্তামণি পিসী, চিত্রামণি কাকী, বাসন্তী দিদি, প্রভাবতী বৌদি…তারা হাজং পুরুষেরা যখন বৃটিশ পুলিশের অতর্কিত আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল… মেয়েরাই ছুটে গেছিলো সবার সামনে। আর লুটিয়ে পড়েছিলো তারা যেমন শীতের দিনে গারো পাহাড়ে আর সোমেশ্বরী নদীতে বহু বহু দূরের ভিন দেশ থেকে আসা বালি হাঁস বা বক পাখিরা জমিদার বাড়ির ছেলেদের শৌখিন রাইফেলের গুলিতে লুটিয়ে পড়ে! সেই রক্তমাখা, গুলিবিদ্ধ মাতৃ বা ভগিনী মূর্তিরা আজ মহেন্দ্র হাজংয়ের শেষ রাতের স্বপ্নে কেন ভর করে? ওরা মিলিয়ে যেতেই দেখা দেয় লেঙুরা বাজারে সাথিদের উপর জোতদার আর বৃটিশের গুলি আর সব শেষে দেখা গেল একটি সাদা ঘোড়ায় চেপে জমিদারের ভাগ্নে মনি সিং মেঘালয় পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ছুটে আসছে তাদের গোবিন্দপুর গ্রামে। একদম সেই প্রথম দিনটি মনি সিং যখন এসেছিল তেমনি সব কিছু। মহেন্দ্র তখন বারোর বালক। মনি সিং আর সাথে তার আরো তিনজনা বন্ধু বাবা-জ্যাঠাদের সাথে কি কি জানি বলছে। দেখতে দেখতে পুরো গ্রামে খবর ছড়িয়ে পড়েছিলো, `জমিদারলো ভাগ্নে মণি সিং ওয় ওলা দুই তিন জন হোমাস নিয়ৗ আহিবান (জমিদারের ভাগ্নে মণি সিং তার দু’তিন জন বন্ধু নিয়ে এসেছে)! আর তারা ছোট ছেলে-মেয়ের দল ধূলো উড়িয়ে হুমড়ি খেয়ে ছুটলো সবাই । কিন্ত না…মনি সিং ত’ প্রথম যেবার এসেছিল সেবার ঘোড়া নিয়ে আসে নি। ঘোড়া নিয়ে আসত সে পরে। টঙ্কের লড়াইয়ের বছরগুলোয়। অথবা সে ঘোড়া নিয়ে কোনদিনই আসে নি? শুধু মানুষের মুখে মুখে গল্প ছড়িয়েছে যে ঐ ত’ মনি সিং বৃটিশের গোরা পুলিশ কি তারওপরে মুসলিম লীগ সরকারের পুলিশের চোখে ধূলো দিয়ে এই হাজং গ্রাম থেকে মুসলমান চাষীদের গ্রাম হয়ে গারোদের পাড়া থেকে আবার হিন্দুদের গ্রামে ছুটছে। কিসে ছোটে সে? সাদা ঘোড়ায়! সাদা ঘোড়া কি দেখেছে মহেন্দ্র?
মেয়ে রতেœশ্বরী বাবার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। রতেœশ্বরীর বয়স ষাট পেরিয়েছে। মহেন্দ্রর প্রায় নব্বই। এখনো হাঁটতে পারে। তবে একটা ক্রাচ লাগে। রতেœশ্বরীর বলীরেখা কুঞ্চিত মুখের দিকে তাকিয়ে ঘুম ভেঙ্গে মাটির দাওয়ায় পাতা কাঁথা থেকে কোনমতে দেহটা তুলে উঠে বসে মহেন্দ্র। তার বুড়িটা মানে রতেœশ্বরীর মা মরেছে আজ কুড়ি বছর। এই মেয়েকেই তার দশ মাস বয়সে জেল থেকে ফিরে যখন কোলে নিয়েছিল মহেন্দ্র…কি ফুটফুটে দেখতে ছিল সে! ঘুম থেকে উঠতেই টের পায় পরনের হাফপ্যান্ট খানা তার ভিজে গেছে। বুড়ো বয়সে মানুষ ছেলেবেলার বয়সে ফিরে যায়। তাতে মহেন্দ্র বাত-ব্যথায় পঙ্গু। বছর পাঁচেক হয় ক্রাচ ছাড়া চলতে পারে না। এখন উঠানে টিউবওয়েল পর্যন্ত গিয়ে পরিচ্ছন্ন হওয়াও লজ্জা। নাতি-নাতনীরা আর তাদের ঘরের ছেলে-মেয়েরা পর্যন্ত মুখ টিপে হাসবে। মেয়ের জামাইও মরেছে কবে। আর সবার উপরে মনটা ব্যথায় ভার। স্বপ্নটা কেমন গোলমেলে ছিল! সেখানে শুরুতে সাদা ঘোড়ায় চড়ে জমিদারের ভাগ্নে মনি সিং এলেও তারপরপরই সে দেখলো লেঙ্গুরা বাজারে পুলিশের গুলিতে মরে যাওয়া সাথিদের লাশ, ময়মনসিংহ সদর জেলখানায় কয়েদির পোশাক পরা যুবক বয়সের নিজেকে ও সাথি সুরেশ্বরকে…এতদিন পর কেন এসব দেখলো সে? সেই লড়াই কি আর আছে? লড়াইয়ের সাথিরাই কি আছে? গোটা তল্লাটে টঙ্কের লড়াইয়ের সময়ের তারা দু’জন মাত্র আজো বেঁচে। তবু আজ সকালে এই ক্রাচ ঠুকে ঠুকে তাকে যেতেই হবে সুরেশ্বরের কাছে। মন যে অস্থির। বয়সের সাথে সাথে মন সব ভোলে। যৌবনের প্রেম, বাসনা, ফসলের ক্ষুধা, সন্তানের প্রতি অপত্য…সবই ঘোলাটে হয়েও এলে টঙ্কের দিনগুলি আজো বায়োস্কোপের সার সার দৃশ্যের মত মাঝে মাঝেই তার সাদা চুল ভরা মাথাটায় হামলা করে। সে হামলা তার জীবনের দেখা যুদ্ধে উড়ো জাহাজ থেকে ছোঁড়া গোলা আর আগুনের চেয়েও ভয়াবহ।
- কি হুছে বাবা? তোলা কি গাওরা নিথা লাগে? কিকাই কেনে (কি হয়েছে বাবা? শরীর খারাপ? গোঙাচ্ছিলে কেন)?
মেয়ে রতেœশ্বরীর উদ্বিগ্ন, ঝুঁকে পড়া মুখ দেখে মহেন্দ্র হাজং বোঝে এতক্ষণ তবে সে স্বপ্নই দেখছিল।
- তান্তে নিথা হপন দেখিছে মা (খুব খারাপ স্বপ্ন দেখলাম মা)!
- কি নিথা হপন (কি খারাপ স্বপ্ন)!
- নিথা আবার ভালাও। দিখিলা ময় মণি সিং এংরা ধোলা ঘোড়ানি উত্থিয়া আইছে আমলা গেরাম বাই। টঙ্কো আন্দোলন লা হোমাসগুলাকে দিখিলাম (খারাপ মানে আবার ভালও। দেখলাম মনি সিং একটা সাদা ঘোড়ায় চেপে এসেছে আমাদের গ্রামে। টঙ্ক লড়াইয়ের সাথিদের দেখলাম)!
- টঙ্ক টঙ্ক করেই তয় মুরিলে। আমলাও শেষ কুরিলে। টঙ্কোলা বাদেন আজিকো হাজং লা ই হাল (টঙ্ক টঙ্ক করেই তুমি মরলে। আমাদেরও শেষ করলে। টঙ্কের জন্যই আজ হাজংদের এই দশা)!
- কি কুলে? টঙ্কোলা বাদেন আমলা ই হাল (কি বললি তুই? টঙ্কের জন্য আমাদের এই হাল)!
- তা নয় কি? টঙ্কো আন্দোলন কোরবা গে যাইয়া পুলিশ-বৃটিশ-পাকিস্থানী সরকার-মুসলিম লীগ হুবায় ক্ষিপ্পে যাচ্ছে আমলা উপর। তোরা জেল খাটিছে। বাখার হাজং মুরিচে। টঙ্ক না হুলে ইজাত হুলে হয় (নয় ত’ কি? টঙ্ক আন্দোলন করতে যেয়েই পুলিশ-বৃটিশ-পাকিস্থানী সরকার-মুসলিম লীগ সবাই আমাদের উপর ক্রুদ্ধ হয়েছে। তোমরা জেল খেটেছো। অনেক হাজং মারা গেছে। টঙ্ক না হলে এসব হতো না)!
- না রে মা- টঙ্কো আমলা ক্ষতি নি চায়। মণি সিং আমলা ভালাই চাছে। হয়তো অয় নি পায় (না রে মা- টঙ্ক আন্দোলন আমাদের কোন ক্ষতি চায় নি। মণি সিং আমাদের ভালই চেয়েছেন। হয়তো পারেন নি)।
- যা বাবা- ইলা হাত মুখ ধুইয়ো খেয়ে নাও (যাও বাবা- এবার হাত-মুখ ধুয়ে খেয়ে নাও)!
২. -টঙ্কোলা রীতি না মানে আমরা (টঙ্ক প্রথার উচ্ছেদ চাই)!
- টঙ্কো জুমিন লা ধান চাই আমরা (টঙ্ক জমির ফসলের সত্ব চাই)!
- জুমিদারলা শাসন না মানে আমরা (জমিদারের আইন মানি না)!
—বৃটিশ গিলালৗ শাসন না মানে আমরা (বৃটিশ আইন মানি না)!
লেঙ্গুরা বাজারে সার সার পোস্টার পড়েছিল। মহেন্দ্র ত’ লেখা-পড়া তখনো কিছুই শেখে নি। সুরেশ্বর তা-ও একটু আধটু বাংলা পড়তে পারত। সে-ই বাংলায় লেখা পোস্টারগুলো মহেন্দ্রকে হাজং ভাষায় তর্জমা করে শোনাচ্ছিল। পরে সুরেশ্বরের হাত ধরেই মহেন্দ্র বাঙালী বাবুদের ছেলেরা যারা নিজেরা বাবুঘরের ছেলে হয়ে এই হাজং তল্লাটে এসে টঙ্কের আগুন ক্ষেপিয়ে তুলেছিল…তাদের গড়া স্কুলে ভর্তি হয়। অ-আ-ক-খ আর কিছু যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ শেখে। নামতা পড়া। সেই সুরেশ্বর আজ একদমই শয্যাবন্দী।
—সুরেশ্বর! সুরেশ্বর!
সুরেশ্বর বিছানা ছেড়েই উঠতে পারে না। বড়জোর বসে থাকতে পারে। তার বাড়ির মানুষজন তার শৌচ কার্য করায়। প্রতি তিন দিনে একবার ¯œন। তবু মাথা এখনো সাফ সুরেশ্বরের। কথা বলে বেশ। লড়াইয়ের সময়কার অনেক ঘটনা মহেন্দ্র ভুলে গেলেও সুরেশ্বর দেখি ভোলে না।
—মনে আছে তোলা মনি সিং যিদিনো পুইলো আমলা গাওনি আহে, সুরেশ্বর (তোর মনে আছে মনি সিং যেদিন প্রথম আমাদের গ্রামে এসেছিলো, সুরেশ্বর)?
- কেনে মনে না থাকিব মহেন্দ্র? মনি সিং ওয় ওলা দুই তিন জন হোমাস নিয়ৗ আহিবান। উবলা আমরো বাখার হুতু। আমলা বাপ মাওগুলৗন পুইলা উমাগে বিশ্বাস নি করে। ওরা এমনিতেই বাঙাল, আবার জমিদারলো ভাগ্নে আর জাতিতে ব্রাক্ষণ। উবেলাও ওরা আমলা হাতিনি পানি না খাবান (মনে থাকবে না কেন? মনি সিং ওর দু/তিন জন বন্ধু নিয়ে এসেছিলো। আমরা তখনো কিশোর। আমাদের বাবা-জ্যাঠারা প্রথমে ওদের বিশ্বাস করে নাই। একে বাঙালী, তাতে জমিদারের ভাগ্নে আর ব্রাক্ষণ। তখনো ওরা আমাদের হাতে জল খেত না
- সুরেশ্বর, আমলা বাপ দেথোগুলৌন হুত কুরিসে তোরা কি আমলা হাত নি পানি না খাব (আমাদের বাবা জেঠারা তাদের জিজ্ঞাসাও করেছে যে তোমরা কি আমাদের হাতে পানি খাবে?)
- মণি সিং আরো ওলা হোমাসগুলা কুসে এতদিন যে আমরো তুমলো হাতনি পানি নি খায় ইদো আমলা অন্যায়। অবশ্যই আমরৗ তুমলা হাত নি পানি খাব। আরো ভাতও খাব। তোলা মনে আছে মহেন্দ্র (মণি সিং আর তার বন্ধুরা বললো- এতদিন যে আমরা তোমাদের হাতে জল খাই নি সেটাই আমাদের পাপ। বড় অন্যায়। অবশ্যই তোমাদেওর হাতে জল খাব। ভাতও খাব। মনে পড়ে তোর সুরেশ্বর?)?
- মনে না থাকিব মহেন্দ্র? উই রাতিতেই আমলা মাওগুলৗন ভাত আরো মাছ নারিয় আনিছে। জমিদারলো ভাগ্নে মণি সিং আরো ওলা হোমাসগুলো সুত্যি সুত্যি উমলো ভাত আরো মাছ খাছে। আমলা হাতনি ওরা পানিও খাছে (মনে থাকবে না? সেই রাতেই আমাদের মায়েরা ভাত আর মাছ রান্না করলো ওদের জন্য আর ওরা তা’ খেলও। আমাদের হাতে ওরা জলও খেল)!
—ওরা আমলা ঘর নি ভাত খাছে। আরো রাতিনি থাকিছে। তবু গাওনা মনগিলৗ বিশ্বাস নি করে। ধাঙর মনগিলাগৈ বিশ্বাস করা এত সহজ নোহায়? (ওরা আমাদের ঘরে ভাত খেয়েছে। রাতে থেকেছেও। তবু গ্রামের মানুষ সহজে কিন্তÍ ওদের বিশ্বাস করে নি। বড়লোকদের বিশ্বাস করা কি এত সহজ?
—দিখিতে দিখিতে টঙ্কোলা আন্দোলন শুরু হছে। আমরাও আস্তে আস্তে ধাঙর হোবা লাগিছে (দেখতে দেখতে টঙ্কের আন্দোলন শুরু হলো। আমরাও মাথায় বড় হচ্ছি)!
—পুইলা আমলা মাও-বাপগুলো বিশ্বাসই নি করে যি জুমিদারগুলাগে জুমিনলো খাজনা দিবাগে না লাগিবো। জমিদার গিলাগৈ ওরা মহারাজকে ডাকিবান। মহারাজ যিটা চায় উটাই আমাগে করিবা লাগিবে। মহারাজলা মঙ্গল মানে আমলা মঙ্গল। আমরা যদি মহারাজলা ভালা করে, মহারাজলা আমলা ভালা করিব (শুরুতে আমাদের মা-বাবারা ত’ বিশ্বাসই করে নি যে জমিদারদের খাজনা না দিয়ে পারা যায়। জমিদারকে তারা মহারাজ ডাকতো। মহারাজ যা চায় তাই আমাদের করতে হয় বলে সবাই ভাবতো। মহারাজের মঙ্গল মানে আমাদেরও মঙ্গল। আমরা জমিদারের ভাল করলে জমিদারও আমাদের ভাল করবে)!
—কিন্ত মনি সিং জমিদারলা আপন ভাগ্নে হইয়াও বুজালো আমলা কৃষকগুলা যি ফসল ফলাই ওলা ভাগ জুমিদারকে দেওয়া ঠিক নোহায়। জুমিনলো ধান লা উপর ভাগ শুধু আমলাই (কিন্ত মনি সিং জমিদারের আপন ভাগ্নে হয়েও বোঝালো যে আমরা কৃষকরা যে ফসল ফলাই তার উপর শুধু আমাদের অধিকার। সেই অধিকার জমিদারকে দেওয়া ঠিক নয়)।
—পুইলা মুসলমান চাষীগিল্য ওরা মানিবেগো নি চায়। ওরাও মনে করিবান ভগবান লা পরে মহারাজ। জুমিদারগো টঙ্কোলা ধান দেওয়া মানে ভগবানগো ধান দেওয়া। আস্তে আস্তে ওরাও বুঝিছে (প্রথমে মুসলিম চাষীরাও মানতে চায় নি। ওরা মনে করতো আল্লাহর পরেই জমিদার। জমিদারকে ধান দেওয়া মানে আল্লাহকে ধান দেওয়া। পরে ধীরে ধীরে বুঝেছে)!
—বিশ্বাস না হয় মোলা ময়মনসিংহ শহরনি সারা ভারতলা কৃষকগিলাল্য মহা সমাবেশ ডাকাছে। আমরা হাজং গিলাল্য পক্ষ থিকৗ একশ পঁচিশ জন সাহিয্য করিবা যাছে। ললিত হাজং ধাঙর মড়ল হইয়েও আমালা মিটিং নি আহিছে (বিশ্বাস হয় না যে ময়মনসিংহ শহরে সারা ভারতের কৃষকদের মিটিং হয়েছে। আমরা হাজংদের পক্ষ থেকে একশ পঁচিশ জন ভলান্টিয়ার সাহায্য করতে গেলাম। ললিত হাজং বড় মোড়ল হয়েও আমাদের মিটিংয়ে এলো!
—কিন্ত দিখিতে দিখিতে পাকিস্থান হইয়া যাছে। মুসলিম লীগলো মনগিলৗ মুসুলমান চাষীগিলৗগে বুঝাছে ইদেশ যা পাকিস্থান হুলে মুসুলমানগিলাগৗ জমিন লা খাজনা দিবাগে না লাগিব। আরো অন্যান্য জুমিদারসহ হিন্দু গিলৗ দেশ ছেড়ে ই-িয়া চলিয়া যাব (কিন্ত দেখতে দেখতে পাকিস্থান হয়ে গেলো। মুসলিম লীগ মুসলিম চাষীদের বুঝালো পাকিস্থান হলে তাদের আর জমিদারকে খাজনা দিতে হবে না। জমিদার হিন্দু। পাকিস্থান হলে জমিদার আর সাথে আরো অনেক হিন্দু দেশ ছেড়ে চলে যাবে)!
—তবু কয়েকজন মুসুলমান চাষীগিলৗ মণি সিং লগন থাকিবান (তবু কিছু মুসলিম চাষী মণি সিংয়ের সাথে থেকেছে)!
—আমলা তিমতমনগিলৗও…দিস্তামণি হাজং, চিত্রামণি হাজং, বাসন্তী দেবী, প্রভাবতী… আমা লগন থাকিবান। মনে আছে যিদিন বৃটিশগিলাল্য পুলিশ আহিও কুমুদিনীগে চড়বে নিয়ে যাছে উবিলা আমলা তিমতলা নিত্রী রাশিমণি ওলা দলবল নিয়া বহেরাতলিলো সড়কনি বৃটিশ পুলিশগে আটকাছে? আরো কুছে কি: ময় তিমাট— ময় তিমাট লা মর্ম বোঝে— একরা তিমাটলা ইজ্জত যাবা লাগিছে। ময় তিমটলা রক্ষা করিব (আমাদের মেয়েরাও আমাদের সাথে লড়াইয়ে ছিল? দিস্তামণি হাজং, চিত্রামণি হাজং, বাসন্তী দেবী, প্রভাবতী…সবাই আমাদের সাথে ছিল। মনে আছে যেদিন বৃটিশ পুলিশ এসে আমাদের কুমুদিনীকে নিয়ে যাচ্ছিলো? রাশিমণি তখন বহেরাতলি সড়কে বৃটিশ পুলিশকে পথ অবরোধ করে বললো: আমি নারী— অন্য নারীর দু:খ বুঝি। একটি মেয়ের ইজ্জত শেষ হতে চলেছে। আমি ওকে বাঁচাবোই)!
—আজিগো ময় ভুলিবে গে না পায় লিঙ্গুরা বাজারনি যিদিনো পুইলো বৃটিশ গিলালৗ পুলিশ আমলা হাজং গিলালৗ উপর নি আরো কুমিনিসগিলালৗ উপরনি গুলি চালায় (আজো ভুলতে পারি না যেদিন প্রথম বৃটিশ পুলিশ আমাদের হাজং আর কমিউনিস্টদের উপর গুলি চালায়)!
—উই তঙ্কো লা সংগ্রামনি আমলা হোমাসগুলা এক এক কুরে হুবোই মুরিয়া যাছে। খালি ইলাও বাঁচিয়া আছে ই গাওনি তয় আরো ময়। এলা মোরো লাথি ধুরিও বিরাবাগে লাগে। তোলা গাওরাও তো বিশি ভাল না হয়। তয় বিছানা থেকে উঠিবেগেই না পায় (সংগ্রামে আমাদের সাথের সব বন্ধুরা একে একে মারা যাচ্ছে। এই গ্রামে বেঁচে আছি শুধু তুই আর আমি। তোর শরীর ত’ বেশি ভাল নেই। তুই বিছানা থেকে র্উঠতেই পারছিস না।)!
—এলা আমলা যাওনা সময় আহিবে। ভগবান আমাগে যেন ভালাভালিহক তুলিয়া নেয় (আমাদের চলে যাবার সময় এসেছে। ভগবান যেন আমাদের ভালয় ভালয় তুলে নেয়)!