পাণ্ডুলিপি থেকে । মোহাম্মদ রফিক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:২০ অপরাহ্ণ, | ১৩৬৬ বার পঠিত
অন্তিম উত্থান
তুমি নেই, চলে গেলে,
অন্ধকার নয়, দেখি আলো,
চতুর্দিকে বিচ্ছুরিত আলো
জীবনের আলো, মরণের আলো,
শেষ বিকেলের আলো
খেলা করে চোখে-মুখে
এই আলোতেই ঘটে বিপদ্ভঞ্জন,
মৃত্যু তবে শেষ নয়, শুরু,
আলোতেই হোক তবে অন্তিম উত্থান।
৭ নভেম্বর, ২০১৪
জোনাকি
অন্ধকারে আলোর ফুল
পাপড়ি খুলছে, পরক্ষণে বুজিয়ে ফেলছে
যেন আগুনের স্ফুলিক্সগ
ঘনবদ্ধ পাতার ভিড়ে;
ওরা বলে, জোনাকি,
আমি বলি, স্বপ্ন।
৭ নভেম্বর, ২০১৪
নদী
নাও বইছে চাঁদের কিনার বেয়ে
একজন ধরে আছে হাল
অন্যজন বাইছে বইঠা
একটু পরে তারা নেমে এল ভুঁয়ে
দুজনে দুতীর ঘেষে দুই নায়ে
নদী কিন্তু চুপচাপ যেন চিত্রার্পিত,
উত্তরের দিকে বহমান।
৮ নভেম্বর, ২০১৪
গুবরে পোকা
গুবরে পোকা, বহু কষ্টে
আঁধার গহ্বর থেকে
পা-টেনে বেরিয়ে এসে
দাঁড়ায় প্রান্তরে, মুখ তুলে
বাতাসের শব্দ শোনে
স্পর্শ পায় রোদ্দুরের;
চতুর্দিকে ঝলমলে দিন,
গুবরে পোকা, আলোর অতিথি তুমি
কবিরও অতিথি।
৯ নভেম্বর, ২০১৪
ফড়িং
ফড়িং এসেছে ভুলে
জগতের মাঝে,
মেঘ রোদ্দুরের তপস্যার ধন
স্নেহধন্য ফুল ও পাপড়ির
কী আনন্দ, পাতার ওপরে বসে
নাড়ায় শরীর রমণীয় যেন
জয় করে নিল পুরো গ্রহ
মাটি ও মানুষ,
আমি তাকে ভুল করে
ভালোবেসে
দু-হাত বাড়াই!
১০ নভেম্বর, ২০১৪
নক্ষত্রের চোখ মোছা জল
কুয়াশায় ভিজে যায় পথিকের মুখ
আমি বলি, নক্ষত্রের চোখ মোছা জল,
ধানের খেতের শীর্ষ ছুঁয়ে
কুয়াশার আস্তরণ জমে ওঠে,
স্রোতের মাথায় কুয়াশার ধোঁয়া
যেন কেউ শ্বাস ফেলছে অবিরল,
ঘোর ছায়া মেদুরতা স্মৃতি ভারাতুর
আমি বলি, এই শীতে মানুষের প্রসব বেদনা।
১০ নভেম্বর, ২০১৪
লাশ
লাশ নামানো হচ্ছে গোরে
ঠিক সেই মুহূর্তে একটি প্রজাপতি
কোত্থেকে, ঝোপঝাড় ডিঙিয়ে উড়ে
এসে বসল লাশের বুকের ওপর,
প্রজাপতিটি নাড়াচ্ছে পাখনা;
আনন্দে না বেদনায়
কে বলবে!
১১ নভেম্বর, ২০১৪
শিশু
খোঁড়া হচ্ছিল কবর
দৃশ্যটি দেখে শিশু জিজ্ঞাসা করে,
—আব্বা কী হচ্ছে ওখানে?
—কবর খোঁড়া হচ্ছে।
—কেন?
—তোমার দাদাকে মাটি দেয়া হবে।
—কেন?
—স্বর্গে যাবেন তাই।
—স্বর্গে গেলে কী হবে
—পাপপুণ্যের বিচার হবে
—আব্বা, আমি স্বর্গে যাব কবে?
—বৃদ্ধ হলে।
চিন্তায় পড়ে গেল শিশু।
হঠাৎ সে বলে উঠল কাঁদো কাঁদো স্বরে,
—আব্বা আমি স্বর্গে যাব না
দাদাও যাবে না
ওদের করব খোঁড়া বন্ধ করতে বলো।
হতভম্ব পিতা শিশুটির মুখের দিকে তাকিয়ে রইল!
১১ নভেম্বর, ২০১৪