পাণ্ডুলিপি থেকে । ঋতো আহমেদ
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:২৯ অপরাহ্ণ, | ১৪২৬ বার পঠিত
ওঃ প্লাবন
(অ)
পায়ের উপর পড়ে যাওয়া মুখ
দু’হাতে জড়িয়ে
তুলি
এক হাত শংকর নারায়ণ
আর এক হাত
আমি
বাকিটা তুমি যা বোঝো—হে অগ্নি
(আ)
মাঝ থেকে একটা পাতা ঝরে গেছে
একটা পৃষ্ঠা ছিঁড়ে গেছে
বুকের
সেখানে সেই মুখ—সেইসব হাত তুলে নিয়ে রাখি—
লিখে রাখি সংযোজন
তোমার
যতোটা অসম্ভব জানি ততোটাই অগ্নি—হে অগ্নি—হে অগ্নি
জলের পাতাল
একটু আগেই বৃষ্টির ভেতর দিয়ে এগিয়ে এসছে এই পথ
ভেজা শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে
বুনো গন্ধটাও
আমি বললাম কোথায় যাও—
কোথাও কি যাবার আছে আরও
আমার ঝাপসা দৃষ্টি তার শিরদাঁড়ায় ঠান্ডা শিহরণ বসায়
সে থমকে যায়
টায়ার এবং পিচের আকস্মিক বোঝাপড়ায়
একটুখানি বিজ্ঞান আজ অমানুষ হয়ে উঠতে পারে—এইটুকু
লিখে
আমি তাকে শুঁকি
তার শরীরের গঠন আর তার ঘ্রাণের মতোই মাদকলতা
আমাকে পেঁচিয়ে ধরে
আমি ডুবি এবং ডুবতে থাকি
তারপর একসময় সমস্ত জল শুষে নেয়া শেষ হলে
আমার পর্যুদস্ত পৌরুষ
পড়ে থাকে
জলেরই পাতালে
জলের দাগ
জল নেমে গেলে
মনের প্রান্তরে খোলা পড়ে থাকে
দাগ
জল নেমে গেলে
হাওয়া এসে ঘুরে যায়
আমাদের পথ—পথে পথে রেখে যায় নোনতা স্বাদের রাত
জল নেমে গেলে পথের দু’পাশে দাঁড়াই
তাকাই মুখোমুখি
পড়ে থাকা দাগে ও রেখায় দেখি
শতছিন্ন মন-চিত্র তোমার
জল নেমে গেলে নামে—কী এক জলের হাহাকার!
নিরুদ্দিষ্ট আমি
নিরুদ্দিষ্ট আমি আর আমার মহাকাল—
হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে এসছি। পেছনে, অনেক আগের হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর মুখ সমুদ্রে ডুবে আছে। আর আমি দেখতে পাচ্ছি তার চোখ মাছের চোখের মতোই নিথর চিহ্ন বিশিষ্ট হয়ে গেছে। পরনে নীল নোনতা জল।
আমি তাকে ডাকি। হাত নাড়িয়ে ইশারা পাঠাই। বিনিময়ে ভেসে ওঠে একটি হাস্যোজ্জ্বল ইমো। আর,—
জলের পাতাল থেকে শুরু হয় গভীর জলের শব্দ। সন্তরণ।।
ও আমার মা,, এই জন্ম শেষ হলে, পরজন্মে আমার নাম রেখো সমুদ্দুর.. নাম রেখো মরণ
মাটি জল বায়ু
মরে গেলে শুনেছি মানুষ নাকি আকাশে উঠে যায়। অনন্ত রাত্রির বুকে জ্বলজ্বলে তারার মতন চেয়ে থাকে। অথচ আমি—আমি তো আকাশ থেকে অবতীর্ণ হইনি। আমার উত্থান পাতাল থেকে। আমার মা গূঢ় একটি মহাকাল তার রক্তের ভেতর আগলে রাখেন নয় মাস। তাঁর পেটের ভেতর গহিন পাতালে আমার ডুবা আর ভেসে উঠার গান হচ্ছে পৃথিবীতে মানুষের আয়ুর উৎসার। তাহলে কেন..কেন আমি উঠে যাবো আকাশে! আমার বোধগম্য হয় না।
এই মাটি—
এই জল—
এই বায়ু—
আমার মা—আমার বাবার প্রেম—আমার শৈশব কৈশোর জীবন যৌবন—সব। এইখানে
এইসব শস্যের শিকড়ে আমার রক্তের দোসর আজ ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে এই—জলের পাতাল থেকে বেরিয়ে সমগ্র মাটি ও পাথরে। আমার মৃত্যুর পর অনন্ত রাত্রির বুকে জ্বলজ্বলে তারার মতন চেয়ে থাকবার এই চোখ আমি সমর্পণ করছি তোমাদের চোখে। দেখো তুমি। তোমরা দেখো
মরে গেলে মহাকাল আসলে কোথায় যায়।
এই বায়ু
এই জল
এই মাটি ছাড়া আর কে আছে তার!