অনুপল (দ্বিতীয় প্রবাহ) । আহমদ মিনহাজ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:২৯ পূর্বাহ্ণ, | ১৬৭২ বার পঠিত
অনুপল–১০১ : এ যুগের কানাই
কানাইকে পেলাম…
শহরের বাহান্ন গলির তিপ্পান্ন নাম্বার মোড়ে
টাংকি মারার তালে রাধিকার অপেক্ষায় আছে।
অনুপল–১০২ : বৃষ্টি
চমকে ঠমকে গমকে গিমিক
দমকা ধামকে
বৃষ্টি নামিছে জাদুর শহরে।
অনুপল–১০৩ : বক্রতা
আলো তার যাত্রাপথে বলের অমোঘ টানে বক্র হয়:
আলোর বক্রতারহস্য ফাঁস করে গেলেন আইনস্টাইন।
কার চাপে তুমি বক্র হও সেটা কিন্তু বোঝা গেল না!
অনুপল–১০৪ : লজ্জাতুন্নেসা
এমনিক লজ্জাতুন্নেসার রয়েছে কৌতূহল
ঘোমটার ফাঁক দিয়ে মানুষ দেখার।
অনুপল–১০৫ : উচ্চতা
বহুতল ভবনের ছাদে উঠলে বুক ভেঙে যায়:
অত উঁচু থেকে সবকিছু ক্ষুদ্র ও তুচ্ছ মনে হয়।
নিচে দাঁড়ালে ক্ষুদ্র বহুতল বিরাট দেখায়।
অনুপল–১০৬ : ওয়াক থু
ওয়াক থু…
নিজেকে উগড়ে দিতে ইচ্ছে হয় মাঝেমধ্যে।
অনুপল–১০৭ : মরহুম
ভাতের প্লেটে কবুতরের মাংস:
এই তো কিছুক্ষণ আগে ডানা ঝাপটাচ্ছিল!
এখন মরহুম।
অনুপল–১০৮ : ঝরা পাতা
কি দোষ করেছে ওই ঝরাপাতা?
কেন তাকে ঝরে যেতে হয়
খুনি বসন্তের আগমনে!
সে এক আশ্চর্য ক্লাউন!
মুখে রংচং, কাপড়ে ডোরাকাটা বাঘ
চোখে তার ঝিকিমিকি অচিন বিষাদ!
অনুপল-১০৯ : জীবনের আয়োজন
কাঁপা কাঁপা ঝিল্লিরবে মুখর বনানী
কম্পিত রবে মানবযান ছুটে দিবানিশি
কাঁপা কাঁপা রব, আসে ভাসি ভেকের কলরব—
জীবনের এইসব আয়োজন করিতে বিকল!
অনুপল–১১০ : পুঁজিবাদ
রূপকথার খোক্কসের সঙ্গে দেখা পার্কে
আনমনে বাদাম চিবাচ্ছিল।
আমায় দেখে বলল, ‘বাদাম খাবে? এই নাও।’
মুখে দিয়ে টের পেলাম,—মানুষের মাংস খাচ্ছি।
অনুপল–১১১ : প্রজাপতি
লাল টুকটুকে প্রজাপতি
ক্ষণে ক্ষণে উড়ে বসছে
ফুকোর মুণ্ডিত মস্তকে।
ক্ষমতা সার্বত্রিক—
ফুকো বচনের মহিমা বোঝাতে।
অনুপল–১১২ : বসন্ত
মড়ার কোকিল তারস্বরে চেঁচায় ‘আজ বসন্ত।’
রাজপথে বৃক্ষসারি ঝরাপাতার দখলে
এখনও আসেনি মুকুল আম্রশাখায়।
অনুপল–১১৩ : আম্মা
আম্মা…
নাম ধরে যখন ডাকি
জোনাক জ্বলে বুকপকেটে।
অনুপল–১১৪ : বাংলাদেশ
তামেশগির তামাশা দেখে
নেপোয় মারে দই।
অনুপল–১১৫ : শহর
সে এক আশ্চর্য ক্লাউন!
মুখে রংচং, কাপড়ে ডোরাকাটা বাঘ
চোখে তার ঝিকিমিকি অচিন বিষাদ!
অনুপল-১১৬ : বারবিকিউ পার্টি
বায়ু বয়ে আনে শীতের সন্দেশ
ঝলসানো সুগন্ধ উড়ে হাওয়ায়।
মাংসভোজীরা আজ গুহামানব:
পোড়া মাংসে মাতোয়াল রাত
গন্ধ-বিভোর প্রাগতৈহাসিক চাঁদ।
অনুপল–১১৭ : মিথোজীবী
আজব খবর বটে!
যোগ্যরা টিকবে ধরাধামে—
নিদান হেঁকেছেন ডারউইন।
রিচার্ড ডকিন্স সহমত ডারউইনে
—বংশানুরা স্বার্থপর যোগ্যতার লড়াইয়ে।
হালে মিলছে নয়া খবর:
বংশানুর স্রষ্টা অনুজীব নহে প্রতিযোগী
আত্মপর জীবের জনক নিছক মিথোজীবী।
অনুপল–১১৮ : মঙ্গলসূত্র
দিপীকা পাডুকোনের গলে বিশ লাখী মঙ্গলসূত্রের ফাঁস:
শস্তা নিকেলে গড়া রক্ষাকবচ হারিয়েছে পথে,
শঙ্কায় বুক দুরুদুরু বিশ্বম্ভরপুরের চন্দা দাস।
মিলাতে অক্ষম মঙ্গলসূত্রের ফাঁস:
কিতাব হাতে গণিতের অধ্যাপক দাঁড়িয়ে নির্বাক।
মহাকাশে গ্যাসের মেঘ থেকে জন্ম নিচ্ছে নতুনী:
অনেকদিন মর্ত্যে কাটল…
ধূলির মেঘ ঠেলে ওপরে উঠছে পুরাতনী।
দুজনের দেখা হওয়া প্রেমের স্বার্থে ভীষণ দরকারি।
অনুপল–১১৯ : বিষ
জিগরি দোস্তকে বলি, ‘বিষ দে, খাই।’
দোস্ত মুখ ভেংচায়—
‘তুই হালা আধমরা এমনেই মরবি,
বিষ দিয়া তোর কাম কি!’
অনুপল–১২০ : ইলেকট্রন–১ : চুমু
একটি ইলেকট্রন এইমাত্র ছুটে গেল তোমার দিকে:
ওর খুব ইচ্ছে ও তোমায় চুমু খাবে।
অনুপল–১২১ : ইলেকট্রন–২ : বয়স
ইলেকট্রনের আজ ভীষণ মন খারাপ!
তোমাকে দেখে জোরকদমে ছুটছিল
মাঝপথে হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে গেল!
ও বুঝতে পারছে ওর বয়স হচ্ছে।
অনুপল–১২২ : ইলেকট্রন–৩ : ফাঁদ
নিজেকে মধুলোভী পতঙ্গ মনে হচ্ছে ওর,
না জেনে ঝাঁপ দিয়েছে মৌচাকে।
টের পায়নি ওটা ফাঁদ…
লাটিম হয়ে ঘুরতে হবে দিনরাত।
অনুপল–১২৩ : ইলেকট্রন–৪ : মুক্তি
ইলেকট্রনের মেজাজ খারাপ!
খবিস লোকটি কিছুতেই মরতে চাইছে না।
ও না মরা পর্যন্ত অপেক্ষা,—মুক্তির।
অনুপল–১২৪ : ইলেকট্রন–৫ : নতুনী ও পুরাতনী
মহাকাশে গ্যাসের মেঘ থেকে জন্ম নিচ্ছে নতুনী:
অনেকদিন মর্ত্যে কাটল…
ধূলির মেঘ ঠেলে ওপরে উঠছে পুরাতনী।
দুজনের দেখা হওয়া প্রেমের স্বার্থে ভীষণ দরকারি।
অনুপল–১২৫ : ইলেকট্রন–৬ : পায়ুকাম
ওর পুরোনো প্রেমিকের নাম ছিল ঈশ্বর
সে ওকে একলা রেখে পালিয়েছে।
ওর নতুন ঈশ্বর পায়ুকামি:
কীসব যন্ত্রে ঢুকিয়ে ঠেলা মারছে
পেছনটা ব্যথায় টনটন করছে।
অনুপল–১২৬ : ইলেকট্রন–৭ : চম্পাকলি
গোলাপ ফুলের পাপড়িতে থাকা ইলেকট্রন
টপাটপ ছিড়ে নিচ্ছে চম্পাকলি আঙুলের ইলেকট্রনরা।
অনুপল–১২৭ : ইলেকট্রন–৮ : ঈশ্বরের খোঁজে
ক্ষুদে ইলেকট্রন ভেবে তাজ্জব:
পায়ুকামী ঈশ্বর কোয়ার্ক, ল্যাপটন কিংবা হিগস-বোসন…
সর্বত্র খুঁজে চলেছে ঈশ্বর!
অনুপল–১২৮ : ইলেকট্রন–৯ : পুষ্পের সৌন্দর্য
ফাইনম্যান বুঝে গেছেন
পুষ্পের সৌন্দর্য বাহিরে নয়,
ওটা বিরাজিত অন্তরে।
অযুত ক্ষুদ্র কণার বল,
তিলে-তিলে পুষ্পকে করেছে মনোহর।
কী যে হচ্ছে এসব! দিনকাল সত্যি খারাপ!
ডুবরির হাওরে মৎস নিধন আর হল না…, উলটো
আমি এখন অভিযুক্ত প্রতিবেশীর খাঁচাবন্দি পাখি নিধনের অভিযোগে।
কী বোকা আমি! ভুলে গেছি ডুবরি হাওর আছে শুধু নামে!
সেখানে এখন মাছের পরিবর্তে খাঁচাবন্দি টিয়ে পাখির বসবাস।
আর, আইন করে পাখিহত্যা নিষেধ করেছেন সরকার।
অনুপল–১২৯ : ইলেকট্রন–১০ : খুনি
উপলখণ্ডের ওপর তুমি বসে আছ
তোমার সৌন্দর্যে মনোরম বেলাভূমি।
তুমি কি টের পাচ্ছ উপলখণ্ড থেকে
একটি খুনি ইলেকট্রন দ্রুত ঢুকে পড়ছে
তোমার নিতম্বের খাঁজে…সেখান থেকে
ও আস্তে করে উঠে যাচ্ছে উন্নত কুচযুগলে!
ওরা তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে:
আর, ও মদির হয়ে আছে—
তোমার সৌন্দর্যে রক্তপাত ঘটাতে।
অনুপল–১৩০ : ইলেকট্রন–১১ : হিটলার
হিটলারের চৌকো গোঁফ থেকে কিছু তেজি ইলেকট্রন বেরিয়ে পড়েছে
ঘুরন্ত পৃথিবীর মধ্যস্থল ঠিক করতে না পেরে ওরা ছড়িয়ে পড়েছে সাগরে।
এখন ওরা ভূমধ্যসাগর, ভারতসাগর ও বঙ্গোপসাগরের ওপর স্থির হয়ে ভাবছে:
ঠিক কোনদিকে গেলে মৃত হিটলারের আত্মা শান্তি ফিরে পাবে।
অনুপল–১৩১ : ইলেকট্রন–১২ : মধু ও মৌচাক
মধু শুকিয়ে এসেছে মৌচাকে!
খবিস লোকটি আনমনে গাইছে—
“জীবন যখন ছিল ফুলের মতো
পাপড়ি তাহার ছিল শত শত…”
মধু শুকিয়ে এসেছে মৌচাকে!
ইলেকট্রনের মন তরঙ্গিত মুক্তির সুখে।
অনুপল–১৩২ : মানুষজন্ম
ঘুম ভেঙে দেখি বিষ পিঁপড়া হাঁটু বেয়ে ওপরে উঠছে
আঙুল দিয়ে ওকে পিষে মারলাম।
বুক হু হু করে উঠল মানুষজন্মের কথা ভেবে।
অনুপল–১৩৩ : আরোহণ ও অবরোহণ
ঘরের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি কোলাব্যাং:
মোবাইল ফোনের টাওয়ার বেয়ে উঠার চেষ্টা করছে।
হে বর্ষার প্রমত্ত ভেক, ওপরে উঠতে চাইছ তুমি?
আর আমি ওপর থেকে নিচে নামার মাটি খুঁজে পাচ্ছি না!
অনুপল–১৩৪ : জীবন
চতুর ব্যাং ঝাঁপ দিল কর্দমাক্ত ডোবায়—
ওটাকে স্বচ্ছতোয়া পুকুর ভেবে।
আমিও ঝাঁপ দিচ্ছি প্রতিদিন, —ডোবায়,
ওটাকে জীবন মনে করে।
অনুপল–১৩৫ : ডুবরির হাওর
ডুবরির হাওরে মাছ ধরব,
নৌকার গুলুইয়ে বসে ছিপ ফেলেছি হাওরের প্রমত্ত জলে।
বড়শির টোপ যে গিলেছে সে কিন্তু মাছ নয়, —অন্যকিছু!
ওটা আমায় মনে করিয়ে দিল
ডুবরির হাওর বলে কিছু নেই এখন—
অনেকদিন হয় হাওর বুজে গেছে অট্টালিকায়!
সত্যি! বিচ্ছিরি ভুল হয়ে গেল!
দশতলা ভবনের জানালা দিয়ে ছিপ ফেলেছি মাছ ধরার আশায়
কাঁচালঙ্কা ভেবে টোপ গিলেছে বিপরীত ফ্ল্যাটের সবুজ টিয়েপাখি।
গলায় টোপ আটকে এখন হাসফাঁস বেচারি!
কী যে হচ্ছে এসব! দিনকাল সত্যি খারাপ!
ডুবরির হাওরে মৎস নিধন আর হল না…, উলটো
আমি এখন অভিযুক্ত প্রতিবেশীর খাঁচাবন্দি পাখি নিধনের অভিযোগে।
কী বোকা আমি! ভুলে গেছি ডুবরি হাওর আছে শুধু নামে!
সেখানে এখন মাছের পরিবর্তে খাঁচাবন্দি টিয়ে পাখির বসবাস।
আর, আইন করে পাখিহত্যা নিষেধ করেছেন সরকার।