ধ্রুপদী রাত । মনিকা আহমেদ
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১:০৬ পূর্বাহ্ণ, | ১৬৯৮ বার পঠিত
বড় অস্থির আর তৃষ্ণাতুর ঘোর লাগা অনুভুতি নিয়ে করিডোর পার হয়ে লেখার ঘরে ঢুকে কাচের স্লাইডিং জানালাটা খুলে দিলাম । ভারী পর্দাটা সরিয়ে দিতেই রাতের স্নিগ্ধ আকাশটা চোখের সামনে খুলে গেলো । মধ্য রাতের ঠান্ডা হাওয়ায় চুল উড়ছে । ছাদবাগান থেকে ফুলের গন্ধ উড়ে আসছে বাতাসে ।
নীচে কাব্যগন্ধী নদী । জ্যোৎস্না স্নাত রাত। চাঁদটা পূর্ব দিকে। গুমোট মেঘগুলো লাজুক ভঙিতে চাঁদের পাশে পাশেই উড়েছে .. যেন, চাঁদ না উঠলে মেঘকুমারীর রূপ খোলে না । নদীর থৈ থৈ জলে নৌকো গুলো অলস বসে আছে । অপেক্ষমান মাঝি সারি সারি নৌকো ভাসাবে ভোরের আলো আকাশ ছুঁলেই । চাঁদের আলোয় অনেক গুলো মানুষ নিজের ঠিকানা খুঁজে নেবে । চাঁদ আর মেঘের প্রণয় রাতভর । হঠাৎ বন্ধ চোখ খুলে যায় দেখি আকাশে একটা ঈগল উড়ছে, কেমন বিহ্বল ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে আমাাা এদিকটার জানালায়, অনেকক্ষণ । ঈগলের চাহনি কেমন ঠেকলো, পর্দা টেনে মিশিয়ে দেই ।
নাগরিক ল্যাপটপের জীবন ওষ্ঠাগত । বার বার জানান দিচ্ছে, মনিকা… মনিকা… আমি নিভে যাবো যে কোন সময়, ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে — চোখ টিপ বলি, আমিও..। সব কিছুরই ক্রান্তিকাল আসে । রাতের অন্ধকার সবার মতো আমার চোখেও ঘুমের ফুল ফোটায় । ভোঁ — কাট্টা ঘুড়ি বলে, নাটাইটা রেখে দাও, আমি তো কোথাও যাই না । ঘুমোও এবার মেয়ে, সর্বস্ব পোড়াতে নেই । ঘুম নেমে আসে চোখে…
চেয়ারে হেলান দিয়ে চুপচাপ বসে অনেকক্ষণ: মৌন মন্ত্রপাঠে ডুবে গেলাম । এখন আমার ‘নিঃসঙ্গতার ১০০ বছর’… তেমনই স্মৃতি কাতরতা । ধ্রুপদী শব্দরা ঘুমুতে দেয় না । কী-ই বা সাধ্যি আমার ! দারুচিনির দ্বীপে গাঙচিল উড়ে যাওয়া দেখিনি কখনো । যাওয়া হয়নি আইসল্যান্ডের সমুদ্র জলে কিংবা বরফ গলা ঠাণ্ডা স্রোতের দেশে অথবা পাখির ঠোঁটে দিনের রঙ মেখে মর্ত্যের প্রশান্তি ছুঁয়ে ঘুমে ডুব ডুব খেলা হয় নি। ওরা যখন নায়গ্রায় পূর্ণিমার ধবল রাত দেখে, জলের ধুপ সঙ্গমে উচ্ছ্বাসে মাতে, তখন বদ্ধ ঘরে টেনে আনি চাঁদ। চাঁদের বুকে আলোর জলপ্রপাত দেখি । শাদা ঢেউ ঢেউ ফুল ফোটায় নক্ষত্ররা। অলৌকিক সব গুপ্তধন, রহস্যোপন্যাস রচিত হয়ে যায় । গুহার সিন্দুক খুলে শব্দের মুক্তজল রেখে দেই, এখানে সোনালী শোলোক পুড়ে খাঁটি হোক ।
নাগরিক ল্যাপটপের জীবন ওষ্ঠাগত । বার বার জানান দিচ্ছে, মনিকা… মনিকা… আমি নিভে যাবো যে কোন সময়, ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে — চোখ টিপ বলি, আমিও..। সব কিছুরই ক্রান্তিকাল আসে । রাতের অন্ধকার সবার মতো আমার চোখেও ঘুমের ফুল ফোটায় । ভোঁ — কাট্টা ঘুড়ি বলে, নাটাইটা রেখে দাও, আমি তো কোথাও যাই না । ঘুমোও এবার মেয়ে, সর্বস্ব পোড়াতে নেই । ঘুম নেমে আসে চোখে…
এখন আর পান্ডুর রাত্রিগুলো ক্রান্তিতে ফেলে না । চোখ বুজলেই সব পাখি নীড়ে ফিরে যায় । এমন কোমল হৃদয়ে জানালা গলে মেঘ এলে, শিশুর মতো খামচে ধরি। জ্যোৎস্নায় বারান্দা ভেসে গেলে উচ্ছ্বসিত চিৎকারে ভেঙে ফেলি রাতের বর্ণমালা । সমস্ত শেকল ভেঙে, চুম্বনে চুম্বনে অমৃত পান করি, চুমু দেই রাতের শরীরে । তখন শব্দে, বর্ণে, ভাষায়, সোনালী ঘুঙুর বাজে । আসে একেকটা ধ্রুপদী রাত ।