গুচ্ছ একশৃঙ্গি ঘোড়া ও অন্যান্য অণুগল্প : রায়হান রাইন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুন ২০১৮, ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ, | ১৩৩৯ বার পঠিত

এনরিকে আন্দেরসন ইমবের্ত
অনুবাদ: রায়হান রাইন
নিয়তি
পাহারাদার দেবদূত ঘাড়ের পেছন থেকে ফিসফিস করে ফাবিয়ানকে বলল, ‘সাবধান, ফাবিয়ান! এটা লিখিত আছে যে, তোমার মৃত্যু হবে যদি সানহোলোতিনো কথাটা উচ্চারণ করো’
‘সানহোলোতিনো?’ ফাবিয়ান হতচকিত হয়ে জিগ্যেস করলো।
এবং নিহত হলো।
একশৃঙ্গি ঘোড়া
মেয়েটিকে সে আক্রমণ করল। তার দুটি শিং। দেহ সেরকম না হলেও, আক্রমণটি ছিল ঠিক ষাঁড়ের মতো।
‘আমি তোমাকে চিনি,’ মেয়েটি হাসতে হাসতে বলল। ‘তুমি কি ভেবেছ আমি এতটাই বোকা যে খপ করে তোমার শিং ধরে ফেলব? তোমার একটা শিং অলীক। তুমি একটা রূপক।’
তারপর একশৃঙ্গি ঘোড়া, তাকে চিনে ফেলেছে দেখে, হাঁটু গেড়ে বসল মেয়েটির সামনে।
সর্পিল
বাড়ি পৌঁছালাম কাকভোরে। জেগে থাকতে গিয়ে ঘুমের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছিলাম। যখন বাড়িতে ঢুকছি, সবকিছু তখনো আঁধারে মোড়া। কারো ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটিয়ে আমি পা টিপে টিপে সর্পিল সিঁড়িটা পর্যন্ত গেলাম যেটি আমার ঘরের দিকে গেছে। সেখানে পা ফেলতে না ফেলতেই আমার সন্দেহ হলো, এটা কি আসলেই আমার বাড়ি, নাকি বাড়িটা স্রেফ আমার বাড়ির মতো দেখতে। যখন সিঁড়ি বেয়ে উঠছিলাম, আমার আশঙ্কা হলো বিছানায় আমার মতো দেখতে কাউকে ঘুমাতে দেখব, এবং সে হয়তো স্বপ্ন দেখছে, সে এই সর্পিল সিঁড়ি বেয়ে উঠছে। শেষ পাক ঘুরে, আমি ঘরে ঢুকলাম, এবং নিমেষহীন চোখে তাকে দেখলাম – কিংবা আমাকে দেখলাম – চাঁদের উজ্জ্বল আলোয়, বিছানার পাশে বসে। আমরা সেখানে এক মুহূর্ত দাঁড়ালাম। তাকালাম পরস্পরের দিকে। দুজনেই মৃদু হাসলাম। আমি অনুভব করলাম তার হাসি আমার হাসির মতো। যখন কেউ আয়নার দিকে দেখে, দুজনের একজন হয় মিথ্যা। ‘কে কাকে স্বপ্ন দেখছে?’ আমাদের একজন অবাক হলো, কিংবা হয়তো একসঙ্গে আমরা দুজনেই। তারপর আমরা শব্দ পেলাম সর্পিল সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে কেউ। আমরা দ্রুত পরস্পরের ভেতরে মিশে গেলাম, শুয়ে পড়লাম বিছানায়, এবং স্বপ্ন দেখতে থাকলাম – আমি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসছি আবার।
সূর্য
সৃষ্টিকর্তা লীলাসুখ উপভোগ করবেন ভেবে সৃষ্টি করলেন তাদের। কিন্তু তাদেরকে চেতনা সমেত সৃষ্টি করে তিনি তার প্রথম ভুলটা করলেন। এই চেতনা দিয়ে ঊনমানুষেরা তাদের নিজেদের জগৎ গড়ে তুলল। সৃষ্টিকর্তা যখন খেলায় ক্লান্ত এবং মনস্থ করলেন এসব সৃষ্টিকে বাতিল করবেন, তখনও তারা অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখল এবং তাদের জগৎটাকে একনিষ্ঠভাবে আগলে রাখল। অতঃপর তিনি ভাবলেন, তাদেরকে যদি একসঙ্গে বিভ্রান্ত করতে পারা যায়, তাহলে এসব অস্তিত্বের অবশিষ্ট যোগসূত্রকে ছিন্ন করা সহজ হবে। যাহোক, অনেকটা দেরী হয়ে গেছিল। কারণ সৃষ্টিকর্তা তাদেরকে একটা গোলাকার গ্রহে সৃষ্টি করে তার দ্বিতীয় ভুলটা করেছিলেন। গোলাকার গ্রহটি আকাশে নক্ষত্রদের ভেতর দিয়ে ঘুরছিল। এবং একটা নক্ষত্র ঊনমানুষদের রক্ষা করল। গ্রহটির যেদিকটা সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে, সেদিকে সর্বদা তার ভাইয়েরা পাহারায় থাকে এবং সব সময় থাকে সতর্ক: যখন কেউ ঘুমের সময় তাদের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়, অন্যেরা তখন দৃষ্টি সজাগ রাখে এবং প্রস্তুত থাকে প্রতিহত করতে। ঘটনাক্রমে, এই ঊনমানুষেরা দার্শনিকীকরণের ভেতর দিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে করে তুলল তাদের দাস।