ফিলিস্তিনি কৈশোরের কবিতা । রোমেল রহমান
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুন ২০১৮, ১১:০৯ পূর্বাহ্ণ, | ১৬৫২ বার পঠিত
ফিলিস্তিনি কৈশোরের কবিতা
শহরটাকে হত্যাপুরী নামেই চেনে সবাই যখন
তুমি তখন স্বপ্ন কেন দেখাও কবি?
কাব্যে তুমি এতো দারুণ স্বপ্ন আঁকো
ইচ্ছা করে যদি আমার অমন দারুণ জীবন হতো?
কিন্তু দেখ, সকাল বিকাল বোমা বারুদ বুলেট এসে
আমার উঠোন ফুলের বাগান পড়ার টেবিল ছাই কোরে যায়।
এখানে ফুল ফোটেও ভীষণ সতর্কতায়
যদি ওরা বিব্রত হয়
আকাশ থেকে বারুদ ফেলে ঝলসে দেবে,
জন্ম থেকে দেখছি শুধু,
এখানে রোদ তারকাটাকে ডিঙিয়ে তবে আছড়ে পড়ে।
মৃত্যু শুধু মৃত্যু নামে সকাল বিকাল এই মাটিতে
তুমি না হয় ফুল ফসলের স্বপ্ন আঁকা বন্ধ কোরে
আমার করুণ কিশোর বেলার কাব্য লিখো?
দোহাই কবি!
— যখন আমি মৃত্যু শুধু মৃত্যু দেখি
রাস্তাঘাটে হেটে বেড়ায়, ডানায় ভেসে উড়ে আসে
তখন আমার পায়ের তলার মাটিকেও পর মনে হয়।
রক্তখেকো মাটি আমার
জন্ম আমার রক্ত দিতে।
আমার শহর ফুলের বাগান নয় তো কবি
হত্যাপুরী বলেই তাকে স্বীকার কোরো?
জন্মে দেখি তারকাটাতে বন্দী আমি, খুনিরা সব নজরবন্দী করে আমায়
হাততালি দেয় যখন তখন আমার জীবন খেলনা নিয়ে ওরা খেলে!
— আমার কোন প্রাপ্য অধিকারের খাতা নেই এখানে
আমার তো নেই কিশোর বেলার ছুটে চলার স্বাধীনতা
মৃত্যু শুধু মৃত্যু আমার কানের পাশে, দৃষ্টি জুড়ে
পায়ে পায়ে গুপ্তচরের মতো চুপি হেটে বেড়ায়।
যখন আমি দেখি আমার এক বয়সী
ওদের কোন শিশু কিশোর আকাশ ভরে স্বপ্ন ওড়ায়
পার্কে মাঠে ছড়িয়ে গিয়ে কাটায় বিকেল।
তখন আমি তারকাঁটাতে বন্দী কোন পশুর মতো তৃষ্ণা নিয়ে তাকিয়ে থাকি।
আমি তো চাই আমরা দুজন একই মাঠে খেলবো একই খেলনা নিয়ে।
কিন্তু আমি আঁতকে উঠি যখন তখন
কখন জানি খুনিরা সব আসবে উড়ে চাকায় চড়ে।
— মৃত্যু শুধু মৃত্যু আমার ভাগ্যলেখা
আমার যারা বন্ধু তারা পঙ্গু এবং অর্ধমৃত
কিংবা যারা গতবছর খুন হয়েছে,
আমি জানি আমারও ঐ একই মালায় ভাগ্যলেখা।
তাই কি আমি মায়ের কানে বলেছিলাম —
অন্ধ খোদা দেখে না এই নৃশংসতা…?
তার আরসে কাঁপে না কি একটি পাতা…?
নাকি তিনি সিংহাসনের ঠুঁটো রাজা…?’
— মৃত্যু শুধু মৃত্যু আমার ভাগ্যলেখা
জন্ম নেওয়ার অপরাধে এখন আমি কুণ্ঠিত হই
যখন দেখি এই পৃথিবী অন্ধ খোদার রাজ্য শুধু।
তুমি কবি আমায় নিয়ে স্বপ্ন আঁকা বন্ধ কোরে
ব্যর্থ আমার… ভীতু আমার…কিশোর বেলার
কিংবা আমার বন্ধু যারা পঙ্গু হয়ে মরছে রোদে
তাদের কথা লিখে যেও?
জন্ম থেকে দেখছি শুধু আমার শহর হত্যাপুরী
জন্ম আমার চিড়িয়াখানায় বন্দী বাঘের
আমার জন্য বরাদ্দ নেই বেঁচে থাকার অবাধ আকাশ
শেকল পায়ে স্বাধীন আমার মাতৃভূমি।