বুদ্ধিজীবী প্রকল্প । রোমেল রহমান
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১১:৫৮ অপরাহ্ণ, | ২০০৩ বার পঠিত
আমরা জানতে পাই যে একদিন সকালবেলা দেশের বুদ্ধিজীবীদের সকলের বাড়িতে একটা করে ওয়েস্টবীণ এবং একটা খাম এসে উপস্থিত হয়, ঘুম থেকে জেগে কিংবা ঘুম থেকে জাগিয়ে বুদ্ধিজীবীদের হাতে তুলে দেয়া হয়, একটি ময়লা ফেলার ঝুড়ি আর একটি খাম, স্বভাবতই বুদ্ধিজীবীরা ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে আবর্জনা ফেলার ঝুড়ির দিকে, কেউ কেউ এর নির্মাণ সৌন্দর্য দেখে, কেউ কেউ সন্দেহের চোখে তাকিয়ে থাকে আর কেউ কেউ এর উৎস সন্ধানে নেমে যায়, ফলে আবিস্কৃত হয় আবর্জনা ফেলার বাস্কেটটি বেশ মজবুত, এটা তৈরি হয়েছে দেশের বাইরে এবং এর গায়ে লাগানো কয়েকটা কোম্পানির লোগো থেকে বোঝা যায় মালের সাপ্লাই কোন দিক থেকে, ফলে সকলেই ময়লা ফেলার বাস্কেটটির সঙ্গে আসা খামটি খোলে এবং কাহিনী নতুন রাস্তা নেয়, কেনোনা তারা খাম খুলতেই একটি চিঠি পায় এবং সেখানে লেখা,
শ্রদ্ধেয় বুদ্ধিজীবী,
শুভ সকাল, আজ থেকে আপনার সকল চিন্তা সংগ্রহ করার জন্য একটি আবর্জনার ঝুড়ি পাঠানো হল, আপনার জন্য বিশেষ যে সকল সুবিধার ব্যবস্থা আমরা করেছি সেগুলো হচ্ছে, আপনার চিকিৎসা, যাতায়াত, আবাসন এবং সংসার খরচ বাবদ পর্যাপ্ত মুদ্রা আমরা দান করবো, এর জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের একটি এটিএম কার্ড দেয়া হয়েছে, প্রতি মাসের শুরুতে বিগত মাসে আপনার সমস্ত লেখা ও চিন্তার দলিল বা পাণ্ডুলিপি যেগুলো ঐ ময়লার ঝুড়িতে আপনি জমা করে রাখবেন, সেগুলো আমাদের এজেন্টগণ সংগ্রহ করে আনবে পুড়িয়ে ফেলতে, বিনিময়ে আপনার একাউণ্টে মাসিক টাকা জমা হয়ে যাবে,
আপনাদের প্রতি বিশেষ নির্দেশ হচ্ছে আমাদের সঙ্গে দ্বিমত প্রসন না করার;
আপনার অক্ষত স্বাস্থ্য কামনা করছি
ইতি
পরিচালক
বুদ্ধিজীবী প্রকল্প
আর বেশিরভাগই লাল নম্বরে ডায়াল করে এক চেপে তাদের জন্য বরাদ্দ সুযোগ সুবিধা এবং টক শোর ডেট ফিক্সড করে বসে আছে, এবং একজন সিনিয়র বুদ্ধিজীবী যাকে সবাই মান্য করতো তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি এবার রাষ্ট্রীয় প্রধান পদক পাচ্ছেন সেই নিশ্চয়তায় তার বাড়িতে মিষ্টি খাওয়াখাওয়ি চলছে, ফলে উদ্ভ্রান্ত ত্যাড়া বুদ্ধিজীবী একা হাঁটতে হাঁটতে সাতরাস্তার মোড়ে এসে সিগারেট ধরায়, কোনদিকে যাবে এটা সে ঠিক করতে পারছে না, ফলে একজন ট্রাফিক তার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে, ভালো আছেন স্যর, বুদ্ধিজীবী বলে, না ভালো নেই…
চিঠির নিচে একটা লাল নম্বর দেয়া যেকোনো জটিলতার সমাধান জানার জন্য, ফলে একজন ত্যাড়া বুদ্ধিজীবী ফোন দেয় সেই লাল নম্বরে এবং সেখানে এক পাখিকণ্ঠি মেয়ে মুখস্ত স্বরে বলে যায়;
‘ …নিয়ন্ত্রণবাদের দুনিয়ায় স্বাগতম, আপনার আনুগত্যে আমরা প্রীত, আপনি যদি আপনার চিন্তাকে শতভাগ আমাদের করে দিতে চান সে বিষয়ক সকল সুযোগ সুবিধা এবং পদক বিষয়ে জানতে এক চাপুন…, আপনি যদি আমাদের সঙ্গে দ্বিমত করেন এবং আমাদের সহায়ক হতে রাজি না হন সে ক্ষেত্রে আপনার জন্য অপেক্ষমাণ সকল প্রতিবন্ধকতা ও শাস্তির তীব্রতা জানতে দুই চাপুন,… আপনি যদি আপনার চিন্তাকে আমাদের হাতে তুলে না দিয়ে, মুক্ত করে দিতে চান তবে সে ক্ষেত্রে আপনার অবধারিত মৃত্যু ও মৃত্যু পরবর্তী আপনাকে নিয়ে ছড়ানো কুৎসা বিষয়ে জানতে তিন চাপুন,… ধন্যবাদ অনুগত বুদ্ধিজীবী নিয়ন্ত্রনবাদকে সমর্থন করায়’
ত্যাড়া বুদ্ধিজীবী ভয়ানক মানুষিক চাপের মধ্যে পড়ে যায় ফলে সে তার চিন্তক বন্ধু বান্ধবীদের ফোন দিয়ে ফোন বন্ধ পায় এবং এর কিছুক্ষণের মধ্যে সে টের পায় তার নিজের নম্বরটিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, যখন সে খোঁজ নিতে বাড়ি বাড়ি যায়, সেখানে গিয়ে দেখে, কেউ কেউ আতংকে আবর্জনার বাস্কেটে তাদের এতো দিনের তৈরি পাণ্ডুলিপি জমা করে রেখেছে, কেউ কেউ লিখে লিখে আবর্জনার ঝুড়ি ভরছে, কেউ কেউ বিদেশ চলে যাওয়ার চিন্তা করছে, আর বেশিরভাগই লাল নম্বরে ডায়াল করে এক চেপে তাদের জন্য বরাদ্দ সুযোগ সুবিধা এবং টক শোর ডেট ফিক্সড করে বসে আছে, এবং একজন সিনিয়র বুদ্ধিজীবী যাকে সবাই মান্য করতো তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি এবার রাষ্ট্রীয় প্রধান পদক পাচ্ছেন সেই নিশ্চয়তায় তার বাড়িতে মিষ্টি খাওয়াখাওয়ি চলছে, ফলে উদ্ভ্রান্ত ত্যাড়া বুদ্ধিজীবী একা হাঁটতে হাঁটতে সাতরাস্তার মোড়ে এসে সিগারেট ধরায়, কোনদিকে যাবে এটা সে ঠিক করতে পারছে না, ফলে একজন ট্রাফিক তার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে, ভালো আছেন স্যর, বুদ্ধিজীবী বলে, না ভালো নেই, ট্রাফিক তার মাথার হেলমেট খুলে বলে, আপনার ছাত্র ছিলাম, আমি নিজেও ভালো নেই, একটা রাস্তাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না, সবাই সরকারী দলের লোক;