ল্যু রীড সাক্ষাৎকার । শফিউল জয়
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ এপ্রিল ২০১৭, ১২:০২ পূর্বাহ্ণ, | ২৭৩৭ বার পঠিত
লেইট সিক্সটিজে প্রকাশিত ভেলভেট আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ডের ‘দ্য ভেলভেট আন্ডারগ্রাউন্ড অ্যান্ড নিকো’ সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে — “যে-ত্রিশহাজার কপি বিক্রি হইসিল অ্যালবামটা, সেই ত্রিশহাজার লোকের সবাই নিজেদের ব্যান্ড শুরু করসে।” উইকি থেকে শুরু করে যে-কোনো সন্দিগ্ধ আলোচনা বা আড্ডায় ভেলভেট আন্ডারগ্রাউন্ড বা ল্যু রীডের বহুমাত্রিক মিউজিক বর্ণনা করার জন্যে উক্তিটা বহুল প্রচলনে জীর্ণ। কিন্তু যা আসলে ল্যু রীড সম্পর্কে বলা হয় না, তা হলো তার রক্যানরোল পোয়েট্রি, তার মিউজিক্যাল লাইফের ত্যাছড়া উজ্জ্বলতা। ষাটের আরেক মহারথী বব ডিল্যান যে-অন্ধকারগুলাতে নীরব, ল্যু রীড সম্ভবত সেই অলিগলিচিপা হাতড়ে বেড়াইসেন তার পোয়েটিক্যাল আর মিউজিক্যাল জার্নিতে, ন্যুইয়র্কের রাস্তায় রাস্তায়। এবং বব ডিল্যানের মহাকাশসম জনপ্রিয়তা থেকে শুরু করে নোবেলপ্রাপ্তির ঘটনা যত ধরনের আলোচনাই উস্কে দেয় না কেন কবিতা ও সাহিত্য বিষয়ক — খানিকটা দূরত্ব নিয়ে কিন্তু লক্ষ করা যায় ষাট মানে শুধু বব ডিল্যান না, বব ডিল্যানের গান তথা কবিতাই শুধু রিপ্রেজেন্ট করে না সম্পূর্ণ সাংগীতিক আবহটাকে। বরং আলোচনা করা যায়, বব ডিল্যানে যা ছিল না তা আর কোথায় ছিল পপুলার গানে? এবং কী ছিল অনুপস্থিত?
সেইখান থেকেই ল্যু রীড! যদিও এই ধরনের ফিল-ইন্-দ্য-ব্ল্যাঙ্কসমার্কা প্রশ্ন ঠিকঠাকভাবে রীডের লিগ্যাসিকে তুলে ধরতে পারে না, তবুও সমাজ ও বুদ্ধিজীবীঘটিত বাস্তবতায় কেউ কেউ দাবিটার ভেতরে এক ধরনের দম্ভ আঁচ করতে পারেন। তবে, সংগীতের ভেতর দিয়ে যা প্রকাশিত — তাহার সত্যতা নিরূপণ করার উদ্দেশ্যে এই ভূমিকাটা লিখতে বসা না। গানে-গানেই তার ফয়সালা, সুরহীন বাক্যসমষ্টি সেইখানে অশিষ্টতা। তাই ভূমিকা লেখার ইস্তফা দিলাম এইখানেই।
সাক্ষাৎকারটাতে ল্যু রীডের সাথে আলোচনা হয়েছে অ্যান্ডি ওয়ারহোলকে নিয়ে, তার কবিতা নিয়ে, ‘ন্যুইয়র্ক’ অ্যালবাম নিয়ে, সংগীতজীবন নিয়ে, বর্তমান সংগীতভাবনা নিয়ে। অ্যান্ডি ওয়ারহোলের সাথে ল্যু রীডের সম্পৃক্ততা সম্ভবত ষাটের আমেরিকার আলোচিত বিষয়গুলার অন্যতম। সেই ব্যাপারে কথা বলসেন বেশিরভাগ সময়ে। বাকি আলাপগুলা তার গানবিষয়ক, রক্যানরোলবিষয়ক।
সাক্ষাৎকারগ্রহণে : ডেভিড ফ্রিক । প্রকাশস্থান : রোলিং স্টোন ম্যাগাজিন । প্রকাশকাল : ১৯৮৯ । ভূমিকাভাষ্য ও অনুবাদ : শফিউল জয়
প্রশ্ন : কিছুদিন আগে ডিওনকে রক্যানরোল হল অফ ফেমে ইন্ডাক্ট করানোর সময় বলতেছিলা ছোটবেলায় মানে পঞ্চাশের দশকে তুমি প্যারাগন, ডায়াব্লস, জেস্টারের গান শুনতে শুনতে নাকি জ্যামিতি করতা! মানুষজন তোমাকে বা তোমার গানকে এদের সাথে ঠিক মিলাইতে পারে না।
রীড : সেই কাতারে ফেইলা দেখলে তো জ্যামিতি বা আমারে কোনোটাকেই মিলাইতে পারবা না। কিন্তু ‘হ্যালোইন প্যারেড’-এর শেষের অংশটা শুইনো। ইঞ্জিনিয়ার জেফরি লেসার ফলসেটোটা করসিলো। আমার সব ব্যাকগ্রাউন্ড ভোকাল পার্ট মিউজিকের ওই এলাকা থেকেই আসছে।
প্রশ্ন : ওয়াক অন দ্যা ওয়াইল্ড সাইডের ‘অ্যান্ড দ্যা কালার্ড গার্লস গো ডু ডু ডু ডু ডু’-ও কি এ-রকম?
রীড : অবশ্যই। চৌদ্দ বছরে আমার প্রথম রেকর্ড বের হইসিলো, যেটা শুনলে বুঝতে পারবা কেন এইটা বলতেছি। ‘দেয়ার ইজ নো টাইম’ গানটা ওইটারই হাইপড একটা ভার্শন।
প্রশ্ন : কিন্তু ভেলভেট আন্ডারগ্রাউন্ডের গান আর সাউন্ডে আরঅ্যান্ডবিটা কই ছিল?
রীড : সবসময়ই ছিল কোথাও-না-কোথাও। মুদ্রার দুইটা পিঠের মতো। একপাশে আরঅ্যান্ডবি, ডু-উপ, রক্যাবিলি। আরেকদিকে কোলম্যান, ডন চেরি, আর্চি শেপ। কলেজে থাকতে একটা জ্যাজ রেডিও শো হইতো। গ্রামের কোথাও অর্নেট কোলম্যান বাজাইলে সেইখানে গিয়ে হাজির হইতাম। একটা গান ছিল ‘লোনলি উম্যান’ নামের। গানটায় চার্লস হ্যাডেনের বেইজটা এখনো কানে বাজে।
ওইসময় আরেকটা গান খুব ভালো লাগতো, এডি অ্যান্ড এর্নির ‘আউটকাস্ট’ — সবসময়ের প্রিয় গান। জাস্ট মাইরা ফালাইসিলো গানটা। ভেলভেট আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকতে আমি এইটা বাজায়া সবাইকে বলতাম, “বেইজ পার্টটা শুনো। বিস্ময়কর!”
প্রশ্ন : ‘ভেলভেট আন্ডারগ্রাউন্ড অ্যান্ড নিকো’ অ্যালবামের ‘দেয়ার শি গোউজ এগেইন’ গানটার শুরুতে মার্ভিন গ্যে-র একটা গিটার কোট রাখসিলা তোমরা।
রীড : জিনিশটা স্টার্টিং হিশাবে সুন্দর ছিল না? প্রথমদিকে আমাদের ব্যান্ডে একটা নিয়ম বানাইসিলাম যে, কেউ কোনো ব্লুজ লিক বাজাইলে তাকে জরিমানা করা হবে। অতি অবশ্যই আমাদের টাকা ছিল না তখন জরিমানা দেয়ার, তারপরেও নিয়মটা করসিলাম। কারণ চারপাশে এত্ত এত্ত ব্লুজ ঘরানার ব্যান্ড, একেকটা যেন আরেকটার কপি — আলাদা করার কোনো উপায় নাই। সবসময় নিজের মতো করে গাইতে চাইতাম, এভাবে গাওয়াটা আসতো না। পুরা অ্যারেঞ্জমেন্ট, আরঅ্যান্ডবি সবকিছু ভেতরে ভেতরে ছিল, ফলে বের হয়ে আসছে। মানে ডিওনের ইন্ডাকশনে যা বলসিলাম। একটা শাদা চামড়ার মানুষ সেইভাবে গাইতেছে, তাও আবার ন্যুয়র্কের। মুগ্ধ করসিলো ব্যাপারটা।
প্রশ্ন : অ্যান্ডি ওয়ারহল কীভাবে তোমাদের প্রথম অ্যালবামের প্রযোজক হইলো? মানে কাহিনিটা কী?
রীড : ও মানুষজনকে আমাদের থেকে দূরে রাখসিলো, তাতে সবাই মনে করতো ও-ই প্রযোজক। কেউ আর আমাদের সাথে চুক্তিতে আসে নাই তাই। অ্যান্ডির জন্যেই চুক্তিটা হইসিলো, সহ্য করসিলো সবকিছু। অ্যান্ডি বইসা থাকতো আমাদের সাথে আর আমরা বলতাম, ‘ও আমাদের প্রযোজক’।
প্রশ্ন : প্রযোজক হিশাবে ও ক্যামন ছিল? মানে নিছক লেজবিশিষ্ট মার্জিত প্রযোজক?
রীড : আমাদের যা করার ছিল তা-ই করসি আমরা। অ্যান্ডি সেগুলা শুনে বলতো, ‘জোস হইসে’ ‘এইটা এইভাবেই রাখো’ ‘শিট! এইটা তো চরম’ … । ভেলভেট আন্ডারগ্রাউন্ডের আগেও শস্তামতন ট্রেন্ডি গান রেকর্ড করসি, গাইসি। নব্বই সেন্টে বিক্রি করা হইতো সেগুলা। পরে এমজিএম বলসিলো তারা একজন আসল প্রযোজক দিবে, এন্ডি উইলসন নাম তার। অগোছালো সব নিয়াই ওপেনিং ট্র্যাক ‘সান্ডে মর্নিং’ হইসিলো, যেটার প্রযোজক ছিল উইলসন। ওর পক্ষে নতুন করে কিছু করা আর সম্ভব হয় নাই প্রথম রেকর্ডিংটা বাদ দিয়ে।
প্রশ্ন : তোমাদের প্রথম অ্যালবামে এমন কোনো গান ছিল যেটা করাই হইসিলো হিট হওয়ার কথা মাথায় রাইখা?
রীড : কয়েকটা তো ছিলই। অন্য কোনোটার কথা মনে নাই, তবে ‘হেরোইন’ গানটার নাম মনে পড়ে।
প্রশ্ন : এই দোলাচলটা ক্যামন লাগতো? মানে হিট গান লিখতে গিয়ে সিজোফ্রেনিক লাগে নাই?
রীড : অ্যান্ডি কিন্তু কমার্শিয়াল আর্টের সাথে সাথে নিজের কাজও করতো। ও ‘দ্য এক্সপ্লোডিং প্ল্যাস্টিক ইনিভিটেবল শো’-টা চালায়া যাইতে পারসিলো ওর কমার্শিয়াল আর্টের জোরেই। সবার কি ধারণা যে সবকিছু চালানোর টাকা আমরা কই পাইসি? বাপ-দাদারা তো অঢেল টাকা রাইখা গেসিলো না। অ্যান্ডি টিভি গাইড কাভার করে চালাইতো সব। তাই সিজোফ্রেনিক লাগার কোনো কারণ নাই। নিছক স্যংরাইটার হিশাবে নিজের কাজটা করসি। ঠ্যাকার কাজ। কেউ আইসা আমাদের একটা বিষয় নিয়া লিখা দিতে বলতো, আমরা তুরন্ত কাজটা নামায়া ফেলতাম। ভালো লাগে এই ধরনের কাজ করতে। এখনো কেউ যদি আইসা আমাকে একটা সাব্জেক্ট দিয়া বলে এই বিষয়ে গান লাগবে — হাসিমুখে করে দিবো। সবচেয়ে ভালো হয় কেউ যদি মনোভাবটা ক্যামন হবে সেটাও বলে দেয়। এইসব কাজের সময় নিজের থেকে নিজেরে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারি আমি। অ্যান্ডি একটা কথা বলতো সবসময়। ওর ফরমায়েশি কাজে কেউ যদি কাটাছেঁড়া করতো তাহলে নাকি ওর সেটা ভাল্লাগতো। কারণ ব্যাপারটা নিয়ে ওর কোনো অনুভূতি ছিল না। সম্পূর্ণ অনুভূতিহীনভাবে করা কাজগুলাকে যেহেতু কেউ যত্ন নিয়া ঠিকঠাক করতেসে, তার মানে তারাই ঠিক।
প্রশ্ন : অ্যান্ডি কি তোমাকে লেখার জন্যে বিষয় ঠিক করে দিত?
রীড : অবশ্যই। সে হয়তো বলতো, ‘ভিশাস নামের একটা গান লিখো না ক্যান?’ আমি বলতাম, ‘আচ্ছা, কিন্তু কি ধরনের?’ ‘ধরো আমি তোমাকে ফুল দিয়ে আঘাত করতেছি।’ এবং লিখে ফেলতাম আসলেই। কবিতা লেখার জন্যে সাথে নোটবুক রাখতাম। কবিতা মানে লোকজন যাকে কবিতা বলে আর কী! ‘লাস্ট গ্রেইট অ্যামেরিকান হোয়েইল’-এর কিছু লাইন এইভাবে টুকছিলাম মধ্যপশ্চিমের কোনো-এক জায়গা থেকে শুনে। জন মেলেনক্যাম্পের কাছ থেকে শুনে একটু চেইঞ্জ করে নিসিলাম লাইনগুলা।
তো ভিশাস লেখার পর লোকজন আমাকে আইসা জিজ্ঞেস করতো — “Vicious / You hit me with a flower / You do it every hour / Oh baby you’re so vicious — এটার মানে কী?” উত্তর দিতাম, ‘অ্যান্ডিকে গিয়া জিজ্ঞেস করো।’ এ-রকম করে অনেক গান লেখা হইছে।
প্রশ্ন : অ্যান্ডি তাহলে গুঁতাগুঁতি করতো তোমাদের। মানে পুতুল নাচায় যে, খানিকটা ত্যামন।
রীড : ও বিচ্ছিন্ন জিনিশগুলাকে একত্রিত করার দায়িত্ব পালনকারী অনুঘটকের কাজ করতো। সবসময় যে ব্যাপারটা ভালো লাগতো তাও না। নিকোকে আমাদের অ্যালবামে ঢুকানোর কারণ অ্যান্ডি-ই। ওকে বলসিলাম, অ্যান্ডি একটু থামি, আর চলতেছে না। যে-রকমের চাপের ভিতর দিয়ে যাচ্ছিলাম সময়টায়। অমানবিক।
প্রশ্ন : অ্যান্ডি তো ১৯৬৭ সালে ভেলভেট আন্ডারগ্রাউন্ডের সাথে সম্পর্ক চুকায়া ফ্যালে।
রীড : এইভাবে বলা ঠিক হবে না। অ্যান্ডিও নানাকিছুর ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলো, আমরাও। একদিন ও আমাকে ডেকে বললো, ‘তোমাদের এখন ঠিক করতে হবে যে তোমরা কি শুধু আর্ট ফেস্টিভ্যাল আর মিউজিয়ামেই শো করে বেড়াবা, নাকি অন্য সুযোগগুলাও দেখার চেষ্টা করবা? এসব নিয়ে তো ভাবার সময় এটা।’’ তো এর উত্তরে ওকে বের করে দিলাম। মনে হইসিলো, যদি অন্যকিছু করার চিন্তাভাবনা করি তাহলে যে-কাজগুলা করতে হবে, সেটার মধ্যে ওকে বাদ দেয়াও সেই লিস্টে আছে।
প্রশ্ন : অ্যান্ডির প্রতিক্রিয়া ক্যামন ছিল?
রীড : প্রচণ্ড খেপে গেসিলো, কখনোই ওকে এত ক্ষেপতে দেখি নাই সেদিন যেমন দেখসিলাম। আমাকে ইঁদুর বলে গালি দিসিলো। এর থেকে বাজে কিছু ও বলতে পারতো না।
প্রশ্ন : ‘ভেলভেট আন্ডারগ্রাউন্ড’-কে নিয়ে বর্তমান উপলব্ধি কী? এমন মনে হয় না যে চারবছরে পাঁচটা অ্যালবাম ছাড়াও অনেককিছু করার ছিল যেগুলা করা হয় নাই?
রীড : জনের মতে (ভেলভেট আন্ডারগ্রাউন্ড মেম্বার) আমরা ওই সময়ের মধ্যে যা করতে পারতাম সেটা করেই ব্যান্ডটা ভেঙে গেসে। আমার মতে, ওর কথাটা ঠিক। আমার রেকর্ডগুলা আমার মতো, জনেরগুলা জনের মতো। মরিন টাকারের ড্রামিংও অন্য কাউকে দিয়ে সম্ভব ছিল না। ‘লোডেড’ অ্যালবামে মরিন নাই, কিন্তু অনেকের মতে এটা তাদের প্রিয় ভেলভেট আন্ডারগ্রাউন্ড অ্যালবাম। তাই ভেলভেট আন্ডারগ্রাউন্ড থাকলে কী হইতো এসব রহস্য নিয়ে এত ভাবাভাবির কিছু নাই।
প্রশ্ন : কিন্তু রহস্যটা তো সর্বত্র সমাদৃত। ভেলভেট আন্ডারগ্রাউন্ডের প্রভাব নিয়ে কী শুনো?
রীড : ইদানীং কিছু কিছু জিনিশ শুনে ভাবি, ‘আরে, এটা তো ভেলভেট আন্ডারগ্রাউন্ডের সাউন্ডের মতো!’ অথবা আমার কিংবা মরিনের মতো। কিন্তু এই সবগুলাকে একত্রে পাওয়া অসম্ভব। অন্যভাবে বললে, ভেলভেট আন্ডারগ্রাউন্ড অনেককিছুই অনেক ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে হয়তো করতে পারতো। বেসুরা হইতে পারতো, সুন্দর হইতে পারতো। বেশিরভাগই দুই তিন কর্ডের গান, বিশেষ করে আমার অ্যালবামগুলা। নতুন ব্যান্ডের জন্যে আমার গান তুলনামূলকভাবে উপযোগী, অনেক বেশি কর্ডও নাই। সিমপ্লিসিটি আছে এক-ধরনের। হয়তো এজন্যেই মানুষজন পছন্দ করে।
প্রশ্ন : ১৯৭০ সালে ব্যান্ড ছাড়ার পর তোমার বাবার সাথে কিছুদিন কাজ করসিলা।
রীড : টাইপিস্ট হিশাবে। বাবা চাইতো পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেই, তার কোম্পানির দেখভাল করি। আমার পক্ষে সেটা অসম্ভব ছিল শতভাগ, কিন্তু ব্যান্ড ছাড়ার পরে আমাকে করতেই হলো। মা হাইস্কুলে থাকতে বলত, ‘টাইপিংটা শিখো। বিপদের সময় কাজে দিবে।’ সে-ই ঠিক।
প্রশ্ন : আরসিএ থেকে ল্যু রীডের জীবনী বের হইছে যেইখানে তোমার হাতে লেখা কিছু কমেন্টও আছে। ভেলভেট আন্ডারগ্রাউন্ড ছাড়ার পর তুমি কিছুদিন ‘নির্বাসন এবং ভাবনাচিন্তা’-র পিরিয়ড কাটাইসো। কী নিয়ে ভাবনাচিন্তা?
রীড : ভবিষ্যতে কী করা যায়, ব্যান্ড নিয়ে চিন্তাভাবনা … এসব। ভাবসিলাম স্টেইজে না উঠে কী শুধু গানই লিখে যাবো? আমি সম্ভবত পৃথিবীর শেষ ব্যক্তি যে ভাবসে স্টেইজে উঠার কোনো দরকার আছে কি না। লোকজন তাদের উপরে স্পটলাইট পছন্দ করে, যেটা নিজের ক্ষেত্রে আমার ভাল্লাগে না। গান ভালো লাগে, যারা গান ভালোবাসে তাদের জন্যে গাইতে ভালো লাগে।
রক্যানরোল থেকে বের হতে চাই। আসলেই, যদিও একটু দেরি হয়ে গেসে। এসবের পরিণতি দেখতে ভালো লাগে না। তারপরেও স্টেইজে নিজের গান গাইতেছি। নিজের গান গাওয়ার বড় কারণ ছিল আমার গান অন্য কেউ গাইতে রাজি হইতো না। এখনো তাই ভাবি। নিজের গানটা আমি ভালোই গাই।
প্রশ্ন : ‘ওয়াক অন দ্য ওয়াইল্ড সাইড’-এর সাফল্যের পরে এক-ধরনের নতুন আগ্রহ লক্ষ করা গেসিলো ভেলভেট আন্ডারগ্রাউন্ড নিয়ে। এবং তুমি হুট করে সেই মানুষটা হিশাবে পরিচিত হওয়া শুরু করলা যে ড্রাগ অ্যাডিকশন, সেক্সুয়াল ডেভিয়্যান্সের মতো সামাজিক ট্যাবুগুলাকে গানের মধ্যে নিয়ে আসার সাহস দেখাইছে …
রীড : ট্যাবুটা ছিল শুধু গানের ক্ষেত্রে — এটা কিন্তু মনে রাইখো। ম্যুভিতে, নাটকে, বইয়ে — বাকি সব জায়গায়ই এসবের প্রতিফলন ছিল। গিন্সবার্গ পড়ো, বারৌজ পড়ো, হুবার্ট সেলবি সব-জায়গাতেই আছে। তুমি যদি আসলেই যৌনতা, ড্রাগ অ্যাডিকশনের মতো ব্যাপারগুলা শিল্পের প্রকাশের বিষয়বস্তু হিসেবে উচ্চতর কোনো জায়গা থেকে বিচার করতে চাও, তাহলে শুধু গানের সাথে তুলনা দিয়ে কোনো ফায়দা নাই। ব্রেখট, ওয়েলকে দ্যাখো।
প্রশ্ন : ‘ল্যু রীডের গান’ নামে যে-পরিচিতিটা দাঁড়ায়া গেসে, এটা নিয়ে কখনো চাপ অনুভব করসো? মানে একইভাবে লিখে যেতে হবে?
রীড : মাঝেমধ্যে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়েই ল্যু রীডের মতো গান লেখার ইচ্ছাটা ফিল করসি। আমার বোঝা উচিত ছিল ল্যু রীডের গান মানে আমি যা লিখতে চাই তাই-ই।
প্রশ্ন : সত্তরের দশকে তুমি কিন্তু শিল্প আর জীবনে সেগুলা নিয়ে শুধু লিখেই ক্ষান্ত হও নাই, সেইটা যাপনও করসো।
রীড : বাস্তব জীবন এলোপাথাড়ি। অবশ্যই, তবে সম্ভবত আমি পরে বিকশিত হইছি। এমনই ধরে নিও। যা করসি তার কোনোকিছুর জন্যে আফসোস নাই। কারণ তখনের সবকিছু করা হইসে তখনকার বোঝাপড়া আর আবেগ থেকেই। এখন যেটা হইসে তা হইলো সেইসব আর কখনো হইতে দিতে চাই না। ব্ব্যাস।
প্রশ্ন : ১৯৮৯ সালের ল্যু রীডের সাথে তখনকার ল্যু রীডকে কীভাবে মিলাও?
রীড : পিছনে ফিরা তো তাকাই না। এটা নিয়ে গান লিখসিলাম একটা। গানটা ছিল, ‘Growing up in public / With your pants down’। পুরা ব্যাপারটা এ-রকমই, সারাংশটা। বড় বড় ভুলগুলা প্রকাশ্যেই করা হইসে। অনেক উপন্যাসিক সেগুলা নিজের বইয়ের উপাদান হিশাবে নিসে। নরম্যান মেইলারের বিজ্ঞাপনও হয়ে গেসে আমার দ্বারা।
প্রশ্ন : তোমার বর্ণিল ইতিহাস আর জনপ্রিয়তার লক্ষণীয় ঘাটতি কিন্তু রিমার্কেবল একটা ব্যাপার। বর্তমান সময়েও তোমার ‘বিজ্ঞাপন’ পাইতে পারো কোনো বড় রেকর্ড লেবেলের সাথে চুক্তি করে।
রীড : অদ্ভুত, তাই না? জানি না আমার সাথে মানুষ ক্যান চুক্তি করে। অন্তত টাকাটা উঠে আসে এর জন্যেই মেবি। কিছু টাকাও পায়। আমি তো কাল্ট ফিগার, আবার কিছু রেকর্ডও বিক্রি করতে পারি।
প্রশ্ন : ১৯৮৯ সালের ঘটনাটা মনে আছে, যখন তুমি ন্যুইয়র্কের একটা শোতে ক্লাইভ ডেভিস নামের এক রেকর্ড কোম্পানির প্রেসিডেন্টকে ভরা মজলিশে আঙুল তুইলা বলসিলা, ‘টাকা কই, ক্লাইভ?’
রীড : ঘটনাটার জন্যে বরাবরই অনুতপ্ত। ড্রাঙ্ক হয়ে কাণ্ডটা করসিলাম। কিন্তু এও সত্য, কিছু প্রমোশনাল ডিসপ্লে হওয়ার কথা ছিল শহরে, মনে হইতেসিলো অযথা এগুলা সব। তবে যা করসিলাম সেটা ঠিক হয় নাই। তুমি আমাকে গুতাইলে আমিও গুতাবো। ক্লাইভকে দেখে মনে হয় নাই সে কোনো অনিষ্ট করতে চাইসিলো, কিন্তু আমি হতাশ ছিলাম অনেক। অনেক আফসোস করি ঘটনাটার জন্যে।
আবার, সেইটাই কিন্তু আসলে ল্যু (অট্টহাসি)।
প্রশ্ন : তোমার সম্পর্কে প্রচলিত সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা কোনটা?
রীড : এই মুহূর্তে তো বলতে পারবো না। শুনতে হবে।
প্রশ্ন : ধরো, অনেকেই বলে তুমি দুর্বোধ্য।
রীড : সত্য বললে আমি কিন্তু খুবই ভালো মানুষ। আসলেই। আসল ভালো মানুষ, যদিও মেজাজি কিছুটা। আজকে নিজেরে নিয়ে কথা বলতেসি, আমার ধারণা সেটা ভালোই পারি। কিন্তু মেজাজিটাকে মাঝে মাঝে দুর্বোধ্যতা হিশাবে ধরে নেয়া হয়।
ধরো, কেউ আমার সাক্ষাৎকার নিলে ভালো লাগে না। ভালো লাগার কী আছে? তুমি কি জায়গাটা উল্টায়া আমাকে তোমার সম্পর্কে প্রশ্ন করতে দিবা? ধরো তোমাকে যদি জিজ্ঞাস করি, ‘ডেভিড, তোমার বাইশ বছর বয়সের ব্যর্থতা নিয়ে ক্যামন লাগে তোমার?’ ইগোটিস্ট না হইলে ভালো লাগার কোনো কারণ নাই নিজেরে নিয়ে আলাপ করতে। আমি করি না কারণ নিজেকে কিছুটা চিনি এখন। আমার ধারণা সে চমৎকার একজন মানুষ।
আগে অনেক দুর্বোধ্য ছিলাম, বদমেজাজিও। ভেতরে ভেতরে এলোমেলো ছিলাম, সম্পূর্ণ আমিটা একত্রিত হওয়ার ব্যাপারটা অনুপস্থিত ছিল। জিনিশটা এখন ভিন্ন। বয়স বাড়ছে। বয়স বাড়লে আগে থেকে কিছুটা জিনিশ বোঝা যায়, তা নইলে তুমি তো মৃত। এটাই। কয়েকটা ব্যাপার অন্যদের থেকে ভালো বুঝতে পারি এবং সেগুলার জন্যে লড়াই করবো। এর মানে এই না যে তুমি দুর্বোধ্য। জাস্ট নিজের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সত্য থাকা। ক্লিশে শোনা গেলেও এমনই।
প্রশ্ন : ‘ডার্টি বিএলভিডি’ যখন সিঙ্গেল হিশাবে রেডিওতে রিলিজ করা হয়, তখন ‘পিস’ আর ‘সাক’ শব্দগুলা তো উহ্য রাখা হইসিলো। ক্যামন লাগসিলো?
রীড : আমিই করসিলাম সেটা। প্রোমোর পিছনে যারা ছিল তাদের হতাশ করতে চাই নাই। বব লুডউইগ (মাস্টারিং ইঞ্জিনিয়ার) আমাকে বলসিল, ‘তোমার যদি মনে হয় শব্দ দুইটা ওদের সমস্যা করতে পারে, তাহলে জিনিশটা নিয়ে অন্যভাবে ভাবতে পারো। ওই শব্দগুলার জায়গায় গিটার বসায়া দেও’। এরপর কোম্পানিকে গিয়ে বললাম, ‘শব্দগুলা উহ্য রাখলে কি তোমাদের সুবিধা হবে?’ ওরা বলল, ওরাও আসলে চাচ্ছিল না শব্দগুলা।
প্রশ্ন : এ-রকম কম্প্রোমাইজ করতে গায়ে লাগে নাই?
রীড : গায়ে লাগতো যদি অন্য ভার্শনটা না থাকতো। মনে হইসিলো গানটা অ্যালবামকে রিপ্রেজেন্ট করে, ফলে সবার জন্যে ব্যাপারটা যাতে সহজ হয় সেটা ভাবনায় রাখসিলাম। ওই দুইটা শব্দের জন্যে আজাইরা কোনো তর্কে যাইতে চাই নাই। মানুষজন বুঝছে আমার সবকিছু কই থেকে আসছে।
প্রশ্ন : ন্যুইয়র্ক-প্রতিভূ রীড! ভেলভেট আন্ডারগ্রাউন্ডের শুরু থেকে এই নগর আর নগরের লোকজন তোমার কলকাঠির মূল উপজীব্য।
রীড : ফকনারের ছিল সাউথ, জয়েসের ডাবলিন। আমি ন্যুইয়র্ক আর এর আবেষ্টনকে পাইসি। এটা জাস্ট একটা মহানগর। আমার মনে হয় না অ্যালবামটার প্রাসঙ্গিকতা এইখানেই সীমাবদ্ধ, কারণ আমি অনেক ঘুরে বেড়াই। মানুষের সাথে কথা বলি, সব জায়গায় একই গল্প। ভিন্ন নাম, একই পরিস্থিতি।
প্রশ্ন : কিন্তু প্রেক্ষাপটের ভিন্নতা তো আছে। একটা ক্রোধ আর অত্যাবশ্যকতা লক্ষণীয় অ্যালবামটায়। অন্যদিকে তোমার ভেলভেটের গানগুলার মধ্যে তুমি অনেকটা পর্যবেক্ষক, একজন ভাবোদ্দীপক সাংবাদিক।
রীড : আসলে বলতে পারতেসি না ক্রোধটা কই।
প্রশ্ন : আর অত্যাবশ্যকতা?
রীড : এটা ক্রোধ থেকে আলাদা।
প্রশ্ন : কিন্তু চোখের বদলে চোখ, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার বোধটা লক্ষ করা যায়।
রীড : লেখার দিক থেকে দেখলে যে-টেক্নিকগুলা আমি ব্যবহার করসি সেটা ইন্ট্রেস্টিং। ধারাটা জরুরি। যখনই কোনো গান তোমার ভেতরে সাড়া দেয়, সেটার আগেই আসলে তুমি আরও কিছু গান দ্বারা আচ্ছাদিত হইসো। এসব অন্য জিনিশগুলোও তোমাকে প্রস্তুত করে গানটার জন্যে, গানটা আসলে কী বলবে সেটার জন্য। নানা বিষয় নিয়েই গানগুলা লেখা হইসে। ধরো একটা গান নিয়ে কেউ কথা বলতেসে, তার আগেই তুমি আগের আরও পাঁচটা গানের ভেতর দিয়ে প্রস্তুত হয়ে আসছো। একটার সাথে আরেকটা সম্পর্কিত কোনোভাবে।
প্রশ্ন : সাম্প্রতিক সময়ে তুমি বেনিফিট কনসার্টে গান গাইসো, ‘সান সিটি’-তে গেসো এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে ট্যুরেও গেসিলা। অভিজ্ঞতাগুলা কি কোনোভাবে ন্যুইয়র্ক সিটির মনোভাব এবং বিষয়বস্তুর ওপরে তোমার কোন ধরনের প্রভাব ফেলসে বা অনুপ্রাণিত হইসো?
রীড : ধরো, টেবিল নিয়ে অনেককিছুই লেখা সম্ভব। কে টেবিলে বসছে, টেবিল আমার কাছে কী মিন করে, এটা খুবই পুরানা টেবিল, দাগটা দ্যাখো ওইখানে — যে-কোনোকিছু লিখতে পারো। কিন্তু যা লিখতেসি সেটাই শুধু থাকে। উপরন্তু, ব্যক্তিগতভাবে অনেক মানুষের সাথে কথা বলছি বর্তমান হালচাল নিয়ে। লেখক হিসেবে এই জিনিশটা সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করসে আমাকে। সম্ভবত একটা পার্টিস্যং করবো। কিন্তু যে-ধরনের পার্টিস্যঙে অভ্যস্ত না সবাই সে-রকম কিছু-একটা। এটা কোনো পপ অ্যালবাম না। আমার মনেও হয় না আমি আর কোনোভাবে রক্যানরোলের অংশীদার। ‘ল্যু রীড ’ মিউজিকের সে-রকম স্থানটা নাই আর। শেষ।
প্রশ্ন: তোমার সমসাময়িকদের নিয়ে কথা বলা যাক। শুরুতেই বব ডিল্যান। ও-তো মধ্যষাটে ওয়ারহোলের ফ্যাক্টরিতে যাওয়া-আসা করতো। সেই সময়টায় তো ও রক্যানরোল স্যংরাইটিংকে একটা রূপান্তরের ভেতর দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল।
রীড : ডিল্যানের সব লেটেস্ট অ্যালবাম সংগ্রহে রাখি। ডিল্যান যে-কোনো ফ্রেইজকে বদলে দিতে পারে, আর কী বলবো! ওর শেষ অ্যালবামের ‘Going ninety miles an hour down a dead-end street’ — সবকিছুর বিনিময়েও যদি এ-রকম কিছু লিখতে পারতাম! অথবা ‘Rank Strangers to Me’-এর মতো। এইখানে আসল শব্দটা হচ্ছে ‘র্যাঙ্ক’, শব্দটা খেয়াল করো।
এ-রকম যে-কোনোকিছু শুনে যেতে পারি। বাকিসব হচ্ছে পপ, যেটার প্রতি আগ্রহ শূন্যের কোঠায়। কিন্তু ডিল্যান সবসময় আমাকে ধাক্কা দেয়। ওর ‘Brwonsville Girl’ নিয়ে ও বলসিলো, ‘Even the SWAT teams around here are getting pretty corrupt’। নিজের গান নিয়ে আমার সিমিলার সমালোচনা ছিল কিছু। ডিল্যান হচ্ছে একমাত্র ব্যক্তি যে আমার হয়ে সেই কাজটা করে দিতে পারে।
প্রশ্ন : জন লেনন? তোমার মতো ও-ও তো নিজের জীবনযাপন নিয়ে খোলাখুলি কথাবার্তা বলসে।
রীড : ওর ‘মাদার’ গানটা ভাল্লাগসিলো। ‘জেলাস গাই’ গানটাও ভালো ছিল। বিটলসের বাইরের ওর কাজগুলো ভালো লাগতো, জাস্ট নিজের পছন্দ বলতেছি। কিন্তু যে-ধরনের শব্দ আমাকে ধাক্কা দেয় সেটা ছিল ডিল্যানের। ডিলানের ভাষায় এখনও খুন হয়ে যাই।
প্রশ্ন : ব্রুস স্প্রিংস্টেন?
রীড : কনসার্টে তাকে ভালো লাগে, সে তুখোড় লাইভ পারফর্মার। যে স্পোকেন ইন্ট্রোডাকশনগুলা দিতো, অসাধারণ!
প্রশ্ন : তোমার ‘স্ট্রিট হ্যাসল’ গানটায় ওর আবৃত্তির কাহিনিটা কী?
রীড : ওইটা যদি আমি করতাম, তাহলে হাস্যকর শোনাইতো। আর ও করসে দেখে জিনিশটা প্রাণবন্ত হইসে। ও আর আমি দুইজনেই তখন রেকর্ড প্ল্যান্ট স্টুডিওতে কাজ করতেসি। আমাকে দিয়ে হচ্ছিল না ব্যাপারটা কয়েকবার চেষ্টা করার পর। পরে ইঞ্জিনিয়ার বললো, “ব্রুসকে বলো না এইটুকু অংশ করে দিতে? ব্রুসকে বললাম, ও সামান্য বদলায়া কাজটা করে দিলো।
প্রশ্ন : ওর প্যাসেজের শেষ অংশটায় অন্যরকম টেইক-অফ আছে ‘বর্ন টু রান’-এর। ‘There are tramps like us / Who were born to pay’ — এটা ব্রুসের করা?
রীড : নাহ। এটা আমারই লেখা। যখন লেখা হইসিলো ওর কথা ভেবেই লিখসিলাম। জাস্ট টাইটেলটা করসিলাম আমি।
প্রশ্ন : অ্যান্ডি ওয়ারহোলের সেলেব্রিটি সার্কাসের টপ একজন হিশাবে ন্যুইয়র্কের এখনকার ‘সেলেব্যুটান্ট’ পার্টি সিন নিয়ে তোমার কী মতামত?
রীড : এসবে সাথে যোগাযোগ নাই। আমি ক্লাবে যাই না, কনসার্টে যাই না। অ্যান্ডির সাথে দফারফা হওয়ার পর এ-রকম কিছুতেই আর যাওয়া হয় নাই। চায়না ক্লাবে যাই না, এমকেতেও না। সবজায়গা থেকে আমাকে কার্ড পাঠায়, কিন্তু আগ্রহ নাই কোনো। অনেক ম্যান্দামার্কা, হাহ?
প্রশ্ন : এখনকার কোনো পপ মিউজিকে কি তোমার আগ্রহ আছে?
রীড : শোনা হয় না সেভাবে। রেডিও শোনা হয় না, কী বের হইলো নতুন খোঁজখবরও রাখি না। আমার ওয়াইফ সিলভিয়া ওয়াটারবয়েস শুনতেছে ইদানীং। সেইসূত্রে ওয়াটারবয়েস শোনা হয়। কিন্তু অবশ্যই লিরিক্সে আগ্রহী। অনেকেই আছে যারা কিছু একটা করার যোগ্যতা রাখে।
প্রশ্ন : কলেজ থেকে বের হওয়ার পর তুমি কি কখনো গান লেখা বাদে সিরিয়াসলি কবিতা, গদ্য লেখার চেষ্টা করসিলা?
রীড : কবিতা পুরষ্কার পাইসিলাম একটা। অ্যান্ডির ফ্যাক্ট্রিতে থাকার সময় জেরার্ড মালাঙ্গা (অ্যান্ডির সহকর্মী এবং ভেলভেটের জীবনীলেখক) একটা কবিতা একটা লিটল ম্যাগাজিনে দিসিলো। লিটল ম্যাগাজিনে আমার কবিতা ছাপানো হইতো তখন। ইউজেন ম্যাককার্থি পুরষ্কার দেয়ার সময় বলসিলো, ‘লিটল ম্যাগাজিনের শ্রেষ্ঠ পাঁচজন কবিদের একজন’। জেরার্ড যখন কবিতাটা সাবমিট করসিলো, খুব ক্ষেপসিলাম ওর উপর। কারণ যে-কবিতাটা দিসিলো সেটা খুব একটা পছন্দের ছিল না। অন্য কেউ যদি কবিতাটাকে ভালোও বলে তাতে কিছু আসে যায় না। আমি জানি ভালো ছিল না। আমার মতে ওই কবিতাটার থেকে আমার লিরিক্স অনেক ভালো।
প্রশ্ন : তুমি সবসময় বলে আসছো তোমার গান নাকি তোমার ভার্শনের গ্রেইট অ্যামেরিকান উপন্যাস।
রীড : হ্যাঁ, যখন তুমি সবগুলা একসাথে শোনো। তোমার যদি ধৈর্য থাকে আর-কী সেইভাবে শোনার।
প্রশ্ন : তোমার কী মনে হয় না রক্যানরোলের থেকে কবিতা বা গদ্যে লিখলে ‘উপন্যাস’ লেখাটা আরও সম্ভবপর ছিল?
রীড : তাহলে তো ড্রাম থাকতো না। গিটার থাকতো না। সেই শারীরিকতা থাকতো না যেটা গানের ক্ষেত্রে ভালোবাসি।
প্রশ্ন : শ্লেষাত্মকভাবে, দেশের ক্রমাগত প্রতিক্রিয়াশীল প্রবণতার মধ্যে তোমার কাজ আরও তীব্র, অকাট্য হয়ে উঠতেছে তোমার দশ-পনেরো অথবা বিশ বছর আগের কাজের থেকেও।
রীড : কেনেডির হত্যা, নিক্সনের ক্ষমা ইত্যাদি ঘটনার মধ্যে দিয়ে লোকজনের আশা-ভরসা শেষ হয়ে গেছে। তারা এখন বলে, ‘এটা যে বুলশিট ছিল আমরা আগে জানতাম না। অবশ্যই এখন জানি সব বুলশিট। চোদার টাইম নাই। যার যার তার তার …।” কারো মাথা-ঘামানোর টাইম নাই আর এসব নিয়ে। তারা জানেই যে মারা খাইতেসে সবাই। সো অন্য কারো কথা ভাবার টাইম নাই।
প্রশ্ন : কিন্তু ‘ন্যুইয়র্ক’ অ্যালবামটাতে তো তুমি নিজের তরিকায় বলসো যে তুমি এখনো বিচলিত হও এইসব বালছাল নিয়ে।
রীড : হ্যাঁ। যে-ভাষাতে বলসি সেটাও মুখ্য। এর জন্যেই বলি এ-রকম আশা করা ঠিক না যে রক্যানরোলের ভাষাতেই এগুলা বলে যাবো। অনেকদিন ধরে তো ছিলাম সেইখানে। কী করতেছি, কী করতে চাইতেছি, কাদের নিয়ে করতে চাইতেছি — এসব নিয়ে এখন একটু থামা দরকার।
ব্যাপারটা একদিক থেকে দেখলে সহজ। যারা ভালোবাসবে তারা আমার সাথেই আগাবে। এবং যারা পছন্দ করবে না তারা বলবে রদ্দিমার্কা। শক্তিশালী বেশি তারাই, যারা আমাকে চায় না। আমিও তাদের নিয়ে আগ্রহী না। ঠিকাছে (হাসি)। তাতে কোনো সমস্যা নাই।
Lou Reed – New York (Full Album)