সীমানার পরের সীমানা: দুই আধুনিক ও দুই উত্তরাধুনিক ফিল্ম । আবু তাহের তারেক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬, ১২:০৪ পূর্বাহ্ণ, | ২১৪৯ বার পঠিত
সত্যজিত রায়ের পথের পাঁচালি আর ত্রুফোর ফৌর হান্ড্রেড ব্লৌউজ কমবেশী সকলের কাছেই পরিচিত। তুলনায়, পেদ্রো কোস্তার ও সাং বা ওয়েস এন্ডারসনের মুনরাইজ কিংডম উল্লিখিত দুই ফিল্মের মত ক্যাননিকাল মর্যাদা পায় নি।
পথের পাঁচালি আর ফৌর হান্ড্রেড ব্লৌজ আধুনিক ধ্রুপদি ফিল্মের সবগুলা খায়েশ পূর্ণ করে। ইসথেটিক্সপ্রধান, ডেলিবারেইটলি স্লো, মুডি এই ফিল্মগুলায় কাহিনীর লগে বাইরের এনভাইরনমেনন্টের ব্যাবহার চোখে পড়ার মত।
উত্তরাধুনিক ফিল্মে, নান্দনিকতার ব্যাবহারের ঢাকঢোল থাকি; কাহিনীর প্রয়োজনের দিকে তাগিদ থাকে বেশী। এর লাগি, এইসব ফিল্ম গায়েগতরে যেমন মেদহীন হয়, তেমন; ধনুকের মত লক্ষভেদী হয়।
ও সাং, বা মুনরাইজ কিংডমের মিল এইখানে যে তারা দুইজনই উত্তরাধুনিক ফিল্ম। দুই ফিল্মই হাল্কা, রিলিভড মুডে আগায়। এই হিসাবে, এদের দেখতে গিয়াও বোরড হইবার চান্স কম থাকে।
পেদ্রো কোস্তার ও সাং দুনিয়ার তাবত যুভেনাইল ফিল্মের এক গন্ডগোল। এইটা না ডকুমেন্টারি, না ফিকশন হইয়া আছে; পেদ্রোর ইউনিক স্টাইলে। তদুপরি, এই ফিল্মে মাইয়ার লগে পোলার ভাবের শুরু হয় তার বাবার লাশ দাফন করার কামে কবর খুঁড়তে গিয়া!
আর কিনা, তখন থাকিই এই মাইয়া; তার ফিমেইল মোটিফ দিয়া, আক্রান্ত করতে থাকে রিডাররে। একে একে মেলতে থাকে পর্তুগিজ এই ললনার মাতৃরূপ।..
এই ফিল্মে আমারার দ্বিতীয় ধাক্কাটা খাওন লাগে বাবার মৃত্যুর আগে, পোলা যখন ঘর পলায়নরত গোস্যা করইন্যা বাবারে জড়াইয়া ধরে। আসলে, বয়সের লগে লগে বাবার লগে আমরার দূরত্বও বাড়ে। রণজিত দাশের এইরকম একটা কবিতা পইড়া, বেদনায় মাইনা নিছিলাম এই দূরত্ব। রোমা উঠা একটা জোয়ান পোলা, বয়স্ক বাপরে বুকে তুইলা নিতেছে; দেখতেও রোমা জাগার অবস্থা তৈয়ার হয়।
যুভেনাইল ফিল্মরে পেদ্র কোস্তা আইডিয়ালিস্টিকালি যুভেনাইল ভাবের মইদ্যে রাখলেন না আর।..
অন্যদিকে, মুনরাইজ কিংডম মানসিকভাবে প্রেশারে পড়া দুই বাইচ্ছার কাহিনী। ওয়েস এন্ডারসন এরে এপিক কইরা তুলছেন- নন এপিক্যাল প্রসেসে, কমিক মশলার ব্যাবহার কইরা। পুর্বোক্ত আধুনিক দুই ফিল্ম যেখানে গম্ভীর, নান্দনিকতা সচেতন, সেখানে মুনরাইজ কিংডম পুরাই উদাম, খোলা। আর্ট বানাইবার কোন ইচ্ছাই যেমন এন্ডারসনের নাই। হেতে আর্টরে টিটকারিই করতেছে, এইরকম লাগে বরং।
বাইচ্ছা মাইয়ারে মানসিক সেন্টারে নিয়া গেলে কি কি প্রসেসের মইদ্য যাইতে হইব, সেন্টারের তত্বাবধায়ক মহিলার বর্ণনায় তার চিত্র আইনা; তিনি বরং প্রতিষ্ঠানরে একহাত নিছেন। স্কাউট দল থাকি বারইয়া, সাইকো ছেলেটাও তো পুরা স্কাউট দলরে ভেবাচেকায় ফালাইয়া দেয়।
আত্মরক্ষার লাগি ছেলের ডিফেন্স মুগ্ধতা তৈরী করে। সাইকো দুই পোলামাইয়ার অজানার প্রতি আগ্রহ আর খামখেয়ালিপনা আমাগোরে আবেশে ফালায়া দেয়।
অসুস্থ, কন্ট্রলড, অরডার্ড সমাজরে থাপ্পড় মাইরা, তথাকথিত সাইকো দুই পোলামাইয়া; আমাগোরে নতুন কোন দিশার দিকে, চিন্তার বিস্তারের দিকে লইয়া যায় নাকি?
পথের পাঁচালি আর ফৌর হান্ড্রেড ব্লৌজে স্থিরতা, পরিমিতি, ইমেজ ইত্যাদির ব্যাবহারের বদলে ও সাংগ’য়ে আমরা দেখি নারীরে মোটিফ বানাইতে, নারীরেই প্রকৃতি কইরা তুলতে। মুনরাইজ কিংডমে দেখি রঙের ব্যাবহার দিয়া আলাদা ইফেক্ট তৈরী করতে।
এই বৈচিত্রইই বরং এদেরকে কাছে আনে। এদেরকে আলাদা কইরা মনে রাখতে হেল্প করে।
আসলে, পরিচিতর লগে অপরিচিতর মিলন, যোগাযোগ যত ঘটবে; আমরার পরিচয়ের পরিধি ততই বাড়বে। না?