সিনেমার দস্তইয়েভস্কি । আবু তাহের তারেক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১০:১৭ পূর্বাহ্ণ, | ২৭৫৩ বার পঠিত
হিচকক দস্তইয়েভস্কির অপরাধ ও শাস্তি প্রকাশের অনেক আগেই ভার্টিগো সিনেমা করছেন। আর হিচককই দস্তইয়েভস্কিরে পশ্চিমে ফেমাস করবার কারিগর। তবু, হিচককরে সিনেমার দস্তইয়েভস্কি ই বানাইলাম আমরা!
অপরাধ ও শাস্তি যেমন খুন লইয়া আমরার চিন্তারে নাড়াইয়া দিছিল, ভার্টিগো সিনেমা তেমনি, অপরাধ ও শাস্তিরও আগে; খুন লইয়া ডিল করে, আরও বিস্তৃত পরিসরে। দস্তইয়েভস্কি খুনের প্রকাশ্য কারণ হিসেবে টেকাটুকার জরুরত দেখাইছেন। তো, ভার্টিগোতে আমরা এইরকম প্রকাশ্য কারণ কিছু পাই না। একটু ভাইবা, বলতে পারি- প্রেম/শরীল।
স্কটি যদি মেডেলিনের প্রেমে না পড়ত, তাইলে তো মেডেলিন মরত না। কিন্তু দ্বিতীয় খুন? মেডেলিন না তো, জুড পড়ছিল স্কটির প্রেমে। বাস্তবে, স্কটির লগে তো জীবিতাবস্থায় মেডেলিনের দেখাই হয়নি। জুড টাকার বিনিময়ে মেডেলিনের অভিনয় করছে। আর প্রক্সি অভিনয় করতে গিয়া, স্কটির প্রেমে পইড়া গেছে। এখন, জুড স্কটির প্রেমে না পড়লে তো জুডরে মরতে হইত না।
রিরংসাই কি তাইলে খুনের দিকে লইয়া যায় আমরারে? যেমনটা কিম কি দুকের স্প্রিং সামার উইন্টার ফল স্প্রিং সিনেমায় দেখি আমরা
হিচকক খুন লইয়া কারবারের লোক না খালি। গিল্ট, যেইটা আমরার নৈতিকতার ভিত্তর থাকি আয়, তারেও তিনি নাইড়া চাইড়া দেখেন।
মাইনষের নৈতিকতার পরিসররে এক্সপ্লোর করেন ইংমার বার্গম্যানও, তাঁর সিনেমায়; আমরা জানি। হিচককে বার্গম্যানের মত ডেলিবারেটলি নৈতিকতার প্রকোপ নাই। কিন্তু হিচকক আমরার, মাইনষের; নৈতিকতা বিষয়ক ভাবনার বা দুর্ভাবনার জায়গারে কি অপরিসীম বাঙময় কইরা তোলেন!
হিচককে বার্গম্যান বা অন্য যে কারো মত শিল্প করবার তাড়া নাই। অথচ শিল্পের বড় বড় প্রশ্নগুলোর এক্সপ্লোর করবার খাত আছে তাঁর সিনেমায়।
তো, সেক্সচুয়ালিটি, হত্যা, গিল্ট এইসব কি একই সূতায় গাঁথা মালা, যাতে একটারে টান মারলেই আরেকটা আইসা যায় অটো?
কিন্তু, হিচককের সাইকো সিনেমায় খুনের পর খুনের কোনো কার্যকরণগত ক্লু ই তো পাই না আমরা। এইখানে, দেবেশ রায়ের মানুষ খুন করে কেন উপন্যাসরে স্মরণ করা যায়।
আচ্ছা, রিরংসা, অর্থ ছাড়াও কি কিছু আছে, যা মানুষরে ড্রাইভ করে? যেমন জীবনানন্দ বলছেন- প্রেম না, বিত্তও না; আমরার অন্তর্গত রক্তের ভিত্রে নাকি কোন এক বিপন্ন বিস্ময় খেলা করে।
কী সেই বিস্ময়, যা সাইকো ফিল্মের প্রোপাগান্ডিস্টরে খুন করতে উছলায়?
মানব নিয়তির এমন করুণ, বিপন্ন, অর্থহীন উদ্ভাস আমরা হিচককে পাই, এমন কঠিন অবস্থায় হিচকক আমরারে রাখেন নিয়া, যেইখান থাকি উদ্ধারের কোন ক্লু নাই। মাইনষের ভিত্রের, অথবা ছাইচাপা ঘটনার এমন উদ্ভাসের মুখোমুখি হই আমরা হিচককের সিনেমায়, যারে ডিল করার তাকত আমরা এখনতরি পাই নাই।