নৃত্যানত নয়নতারা । আলফ্রেড আমিন
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ আগস্ট ২০১৬, ১০:৩৬ অপরাহ্ণ, | ১৭৯৮ বার পঠিত
মহাপৃথিবীর মাঠ ফুটে আছে প্রভাতকুসুমে
অনুজ্জ্বল অন্ধকার জমেছে শিশিরে। যেন বহুদিন পর
আমার হৃদয় এক আশ্চর্য সকাল নিয়ে ভাবছে এখন,
প্রথম সূর্যকে নিয়ে মানুষের প্রথম সকাল ―
সহস্র শতাব্দী এই শেষ হলো মহাপৃথিবীর, অন্তিম প্রবালদেহে
ভেসে এল দু’শো মহাদেশ
বাতাসে বিনম্র গান, যেন তারা অবরুদ্ধ জল
অতল করোটি ভেঙে উড়ে এল আকাশের দিকে
. নক্ষত্রনির্দেশ ―
অনুজ্জ্বল অন্ধকারে জমেছে শিশির। প্রথম সূর্যের গানে
মহাপৃথিবীর মাঠ ফুটে আছে প্রভাতকুসুমে।
সুইসাইড নোট
সাক্ষী হিজলফুল, সন্ধ্যা-সমুদ্রতীর, ইকারুস তোমার আকাশ
আত্মহত্যার আগে যেন কার করুণ আঙুল
একটি সকালরেখা এঁকেছিল নম্র বালুতীরে
শতাব্দীপ্রহার শেষে অকস্মাৎ আমার হৃদয়
সূর্য-হতে-নেমে-আসা সোনার মাছির কথা ভাবে,
শুনতে পায়, ক্ষীণস্বরে, অশ্রুগাথা সকালসংগীত
দূরাগত কাল ভেঙে স্মৃতির হীরক এসে বলে :
তবে কি তুমিই সেই অসমাপ্ত গানের অপেক্ষা
তরঙ্গবিভোর জলে ছড়িয়েছ, ঝিনুকে ঝিনুকে
রেখেছ বিষের পলি, যন্ত্রণায় আর্ত ভায়োলিন
নম্র বালুতীরে আঁকা অসম্ভব প্রভাতপ্রস্তুতি …
উন্মাদ সমুদ্রবক্ষে দুলে ওঠে চাঁদ
মৃত নক্ষত্রের পাশে কেঁদে ওঠে বেদনার ভ্রুণ।
ভূমধ্যসাগর হয়ে জেগে ওঠো, নয়নের তারা
ওভাবে ডাকতে নেই, স্বপ্ন ভাঙে, বদহজম হয় ―
বলে সে আলতো করে ঘুরালো কম্পাস।
সমুদ্রসঙ্গমে এসে, সফোক্লেস, বহুদিন পর
পর্বতশিখরে বসে সূর্যাস্ত দেখার কথা ভাবি, ―
প্রভাতপ্রান্তের চাকা চক্রাবর্তে কালো হয়ে এলে
সমাধিপ্রস্তরে গিয়ে ভুলে যাই আত্মজের নাম
প্রতিটি কবরে যেন আমি একা, ধুলোমাটিজলে
বিছিয়ে গানের পাতা, ধরে রাখি পদাঘাতগুলি,
ছিন্নপল্লবে প্রেম, আন্তিগোনে ― বুকের বাঁ-পাশ
কথা বলো, কথা বলো, মুহূর্তবিচূর্ণ পথরেখা
যে-মুখ আড়াল করে চক্রবর্তী রাজার পর্বত
ভূমধ্যসাগর হয়ে জেগে ওঠো, নয়নের তারা
উন্নতি
কাঠধর্মে নির্বাসিত, পেয়ে গেছি শিমুলের তুলা
অদূরে, ইষ্পাতশব্দে জয় নিয়ো, বুঝে নিয়ো তোমার উন্নতি।
নিরাশাকরোজ্জ্বল দেশ, তরুকল্প, জাগ্রত ছায়া ―
নদীসংগীতে তুমি স্নান শেষে, প্রভাতপ্রান্তে চলে যাও
আমি কারো বিক্ষত শরীর থেকে স্মৃতি তুলে দেখি
সমাধিভূমির পাশে জেগে আছে একটি ডালিম,
তার পাশে, তোমার পায়ের দাগ, সকরুণ ঘাসে
শিশির ঝরিয়ে গেছে সূর্যালোক, অবিশ্বাস্য দিন
রাত্রিগুলি ―
অদূরে, ইষ্পাতশব্দে জয় নিও, বুঝে নিয়ো তোমার উন্নতি।
অতিক্রম ব্যর্থ হয়ে আসে
পাথুরে দেয়াল ঘেঁষে, অন্ধ হয়ে মরেছে যে-ঘোড়া
. তার কালো কেশরে ও ক্ষুরে
. সূর্যাস্তের মেঘ ঝরে পড়ে
ভূমিতে খোদিত মুখ, তুমি কার আড়ালে যে গেছো
. মুছে যায় মাটির এ দাগ
. অন্ধকারে সন্ধ্যারাজা নাচে
সমুদ্রে জেগেছি আমি, নীল ঢেউ ছুঁয়েছে যে-গান
. পাখি জানে সীমানা ও ঘর
. পৃথিবীকে দেশ বলে জানে
প্রকৃত সন্ধান জানো? তুমি কোন দিগন্তে যে যাও
. স্বরজ্ঞানে আলাদা এ দেহ?
. অতিক্রম ব্যর্থ হয়ে আসে
কৃষিস্বপ্নে দৌড়ে আসে শিশুগুলি
যা-কিছু ভুলেছি আমি, তার স্মৃতি মাটিতে মিশেছে
এখন উদ্ভিদ হয়, লতা হয় ― দেখি
ফুলগুলো দারুণ সাহসে ফুটেছে
. ডাল থেকে ডালে
ফলভারানত গান, গন্ধঢেউ ― হরিৎ পালক
সূর্যের সোনার রঙে মিশিয়েছে কোমল শরীর
তোমার সহাস্য মুখ নিঃশর্তে আনন্দ দিয়ে যায়
একদিন তুমিও তো ছিলে। বলেছিলে আগুনের দিন ―
ক্ষুধা আর কৃষিস্বপ্নে বৃষ্টি এনে দেবে
তোমার অন্তিম গান ঝরে পড়ে মাঠে। তুমি নেই
তোমার স্বপ্ন থেকে দৌড়ে আসে শিশুগুলি। মাঠ
ভরে যায়। ভেজা মাঠ, মাঠশিশু ― যেন তুমি
আমাকে ডাকছো। আমি দেখছি তোমার উদ্বেগ,
. চিন্তিত মুখরেখাগুলি
নদীর চরের মতো মানুষের উত্থান-পতন