কেমুসাস বইমেলা ২০১৬ শেষ হয়েছে
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ এপ্রিল ২০১৬, ১০:৪৩ অপরাহ্ণ, | ১৮৫৯ বার পঠিত
মাহি রহমান : কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ, সংক্ষেপে ‘কেমুসাস’, সিলেটের স্থানীয় ঐতিহ্যের অংশ হয়ে ওঠা একটি প্রতিষ্ঠান। সম্পূর্ণ জনউদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানের পথচলা আশি বছরেরও অধিক কাল ধরে অব্যাহত রয়েছে। এর অন্তর্ভুক্ত বছরজোড়া কার্যক্রমগুলোর মধ্যে দেশের অন্যতম সুবৃহৎ সংগ্রহের গ্রন্থাগারসেবা ছাড়াও রয়েছে ত্রৈমাসিক সাহিত্যপত্রিকা ‘আল-ইসলাহ’ নিয়মিত প্রকাশ, সৃজন-ও-মননশীল সাহিত্যের সাপ্তাহিক পাঠচক্র আয়োজন, বরেণ্য গুণীজনদের নিয়ে এবং গুণ-অনুসন্ধিৎসু সভা ও সেমিনার সঞ্চালন প্রভৃতি। সিলেটের জনপরিমণ্ডলে, বৃহদার্থে দেশের জনপরিমণ্ডলে, ‘কেমুসাস’ প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি এবং অনবচ্ছিন্ন অবদান।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারেও হয়ে গেল ‘কেমুসাস বইমেলা’ আয়োজন। গত ২০ মার্চ শুরু হয়েছিল মেলা, ২৯ মার্চে নেমেছে মেলাশেষের পর্দা। আগের যে-কোনো আয়োজনের তুলনায় এবারকার ‘কেমুসাস বইমেলা’ নানা কারণবিচারেই ছিল বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ও ভিন্নতাবাহী। পূর্বেকার ৭ দিনের মেয়াদে মেলার পরিবর্তে এবারে ব্যাপ্তি বাড়িয়ে মেলার আয়োজন ছিল ১০ দিনের। সব মিলিয়ে প্রায় ৩৫টি স্টল বরাদ্দ হয়েছিল বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসার জন্য। গ্রন্থমণ্ডপগুলোর আধিকারিক তথা স্টল-কর্ণধার বইবিক্রেতারাও খুশি বিক্রিবাট্টা নিয়ে। মেলায় আগত দর্শনার্থী ও বইবিহারী পাঠকেরাও বইমেলার মেয়াদবৃদ্ধি ও সার্বিক আয়োজন নিয়ে সদর্থক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
গত বছর থেকে কেমুসাস বইমেলায় একটি ভিন্নতর উদ্যোগ সমাগত দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে। একটানা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ‘বইমেলা প্রতিদিন’ শীর্ষক একটি ব্যুলেটিন্ প্রকাশিত হয়ে আসছে, এবারেও সেই ধারাবাহিকতার ব্যত্যয় হয়নি। বইমেলা উপজীব্য করে এই দৈনিকী প্রকাশের উদ্যোগ সপ্রশংস সমাদৃত হয়েছে জেলার বইপিপাসু মহলগুলোতে। সেমি-ট্যাবলয়েড ধাঁচের ডিমাই-সাইজ্ অফসেট কাগজে চারপৃষ্ঠার রঙিন দৈনিকীটিতে সাহিত্যস্পর্শী নিবন্ধ-গল্প-কবিতা ছাড়াও বইবিষয়ক ফিচার-রিপোর্টাজ্, নতুন বেরোনো বইয়ের খবরাখবর, সন্ধ্যায় আয়োজিত অনুষ্ঠানাদির সংবাদবিবরণী ইত্যাদি সচিত্র পরিবেশিত হয়েছে। এ-বছর প্রকাশিত মোটমাট দশটি ব্যুলেটিন্ সংগ্রহে রেখেছেন সমাগত ও বইমেলাপ্রত্যাগত অনেকেই।
দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী সম্পাদিত ‘বইমেলা প্রতিদিন’ সিটি অফসেট প্রেস্ থেকে মুদ্রিত হয়ে ‘সিলেট লেখক পরিষদ’ কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে। এ-বছরের দশটি ব্যুলেটিনের একত্র সংগ্রহ পেতে ইচ্ছুক পাঠক-ক্রেতাদেরকে সিটি অফসেট প্রেসের বারুতখানা কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানানো হয়েছে।
সম্ভাব্য পত্রিকাপাঠক, সংগ্রাহক ও ক্রেতা-সাধারণ যেন প্রভাবিত না হন তাই রিভিয়্যুরিপোর্টের শেষে এসে এহেন অস্বস্তিকর একটা পর্যবেক্ষণ পেশ করা যাক। অবশ্য এড়িয়ে গেলেও হয়। কিন্তু আলোচ্য পত্রিকাটি বছর ঘুরে ফের প্রকাশিত হবে এবং বইমেলাঋতুতে এর প্রকাশ নিয়মিত ভিত্তি পাবে যেহেতু, পত্রিকার উন্নয়নের স্বার্থেই কিছু অসংগত দিক নিয়ে এই অনুচ্ছেদে কথা বলা হচ্ছে। এই ব্যুলেটিনগুলো নজর বুলাতে যেয়ে যে-কেউ চোখ কুঁচকে ব্যাপারটা ঠাহর করবেন নিশ্চয় যে, এর চারপৃষ্ঠাব্যাপী স্থিরচিত্রাবলিতে একগুচ্ছ মনুষ্যমুখের পুনঃপুনঃ প্রত্যাবর্তন। পৌনপুনিকভাবে একই এবং অভিন্ন ব্যক্তিবর্গ পত্রিকাস্থ প্রত্যেকটি প্রতিবেদনের সঙ্গেই বিভিন্ন ভঙ্গিমায় স্থিরচিত্রার্পিত। সংখ্যায় সেই মুখগুলো বড়জোর ৫ থেকে ৭ জনের। ঘুরেফিরে, বিন্যাস ও সমাবেশের ক্যাল্কুলাস্ গণিতের নিয়মানুসারে, একটামাত্র ফোটোগ্রাফেরই যেন অল্প অদলবদলপূর্বক প্রদর্শনী। নির্বিকারভাবে একটানা ১০ দিন প্রোক্তসংখ্যক ব্যক্তিবৃন্দের মুখপ্রদর্শনী নগরীর বইপ্রিয় মহলগুলোতে কৌতুকের যোগান দিয়েছে ব্যাপকভাবে। এমনিতে এহেন ঘটনা কোনো বণিকগোষ্ঠীর বার্ষিকী পত্রিকায় ঘটলে যেমনটা স্বাভাবিক ছিল, বইমেলার মুখপত্র দাবি করা এই দৈনিকীটির বেলায় ব্যাপারটা বেমানান ও অত্যন্ত অসমঞ্জস। পত্রিকা দেখে কেউ যদি ২০১৬ কেমুসাস বইমেলার লোকসমাগম সম্পর্কে আইডিয়া নিতে চায়, দেখা যাবে মেলায় গুটিকয়ের বেশি কারো হদিস করা যায়নি এমনকি পত্রিকায় ছাপানোর মতো নতুন মুখেরও খোঁজ মেলে নাই দশদিনের মেলায়! কিন্তু অস্বাভাবিক নয় কি বিষয়টা? তাছাড়া লেখক-প্রতিবেদকদের তালিকাও যুগান্তকারী হ্রস্ব। ওই ঘুরেফিরে বারেবারে ১/২ জনেরই নিবন্ধ-প্রবন্ধ-রম্য কর্মকাণ্ড। বলতেই হবে যে এহেন অভিনব দৈনিকীর মুদ্রণ ও প্রকাশ সম্ভবত ভূভারতে, ভূবঙ্গে তো বটেই, এই প্রথম! গত বছরের অভিজ্ঞতার প্রতি বিশ্বস্ত থেকে বলতে হবে, ব্যাপারটা প্রথম নয়, এইটা ঘটনা হিশেবে দ্বিতীয়। সম্পাদক ও সম্পাদনাপারিষদ সবাই বিষয়টা আমলে নেবেন, ভেবে দেখবেন ভবিষ্যতে, এমনকি গর্বও করতে পারেন যদি ভাবতে না চান।