কাব্যগ্রন্থ থেকে পাঁচটি কবিতা । শিবলী মোকতাদির
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ৮:৫৫ অপরাহ্ণ, | ১৮৫০ বার পঠিত
কবিতা লেখতে নেশা করতে হয়, নেশা না করিলে ওরা এমন মাথা আউলা করা লাইন কেমনে নামাবে? কথা টুকো আমার না; না, অনেক বড় কোনো পণ্ডিতেরও না। কথা খান এক নেশাখোর পাঠকের। সে ভাবতেই পারে না যে কবিরা খায় না! গুরিয়ে-ফিরিয়ে তার কথা একটাই— না খেয়ে ট্রাকে যেমনি ড্রাইভার ওঠে না, কবিতা ও নামবে না হাওয়ায় ওড়াল না দিলে। আমরা জানি না আমাদের কবি শিবলী মোকতাদির হাওয়ায় ওড়াল দিতে জানেন কী না। রাগে রাগে রাগান্বিত— ঠিক তখনই চাও/ শীতল মদে শান্ত নারীর উষ্ণ ঠোঁটের চাপ/ পেগের হিসাব পয়সা দিয়ে, মাতলামিটা ফাও!’ আমরা তার ফাও মাতলামি দিয়েই নেশা করি, পাঠকেরও নেশা ধরাই। —রাশপ্রিন্ট
ব্যবহারিক বিস্ময়
মেঝেতে বসন্ত, ছাদে রাখো শীতকাল
দরজায় দরবার, ঘর তথা ঘরণীর
দেয়ালের কান থাকে, জানালাতে জার্নাল!
০২
গ্রাম বলতেই গরিব এবং গাবগাছটি চেনা
ফাঁকফোকরে মধ্যবিত্ত থাকে, হঠাৎ দেখি ফলকমারা
প্রেমবৃত্তে ভিলার নামটি ‘হেনা’!
০৩
আতর নিয়া রওনা দিছি রৌদ্রে-ধরা ছাতা
জোহর গেল আছর আসে, ভুল রুমালে বাঁধা
আমার হাতে চাইছো দিতে মেহেদিপাতা মেহেদিপাতা!
০৪
রাগে রাগে রাগান্বিত— ঠিক তখনই চাও
শীতল মদে শান্ত নারীর উষ্ণ ঠোঁটের চাপ
পেগের হিসাব পয়সা দিয়ে, মাতলামিটা ফাও!
০৫
আধেক কাঁচা, আধেক পাকা নোনায় ধরা চুন
তোমার বাড়ির বনজপথ প্রাপ্ত হতে হতে
সুরে আমার সর পড়েছে বাঁশিতে হায় ঘুণ!
গান্ধর্ব
বিবাহবিশেষে আজ নেমেছে ঘোরতর ঘনঘটা
মৃদুমন্দ আশ্বিনে তাই;
রাশি-রাশি ভিড় ঠেলে প্রকাশ্যে পাত্রী নিয়েছে
গোপনে আত্মসাতে ঠাঁই।
মাছির উপরে মাছ, মাংসও হাঁড়ি-হাঁড়ি
দধিতে লেগেছে তাপ, পোড়া-পোড়া মিষ্টিতে
মাতোয়ারা বিয়েবাড়ি।
বরের বেদনা—এইখানে গাফলতি, অনবধানতা
ত্রুটি আর বিচ্যুতি
লোক আসে গলি-গলি ভরিয়া প্রচুর
মরদ, মাতা আর ঝিয়ে
হাসে তারা অগভীর মনোযোগ দিয়ে।
ওদিকে পিতামহ গুলিতে বারুদ ঠেসে
পানে-পানে চাপাচাপি ঠোঁটেভরা রক্তরসে
গাধায় চড়িয়া বসে—মারিবে মারার মতো ঠাসাঠাস
শেষ দৃশ্যে কী জানি কী হবে! কেউ কি বলিতে পারে
এ-গাধার মালিক চলতি ও অতীতে
কতটা গর্ধভ ছিল এ-হেন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে!
বিসমিল্লাহ খান
বিদেশি বইপত্রে ঠাসা বিপুল এক ব্যাগ নিয়া
বহুত গ্যানজামে পড়ে আছি।
উড়াল-পুলিশ আমারে বলে,
আপনি কী কাব্য পাচারকারী!
আমি বলি, এসব তো দেশীয় কবি ও ছবির…
সে তখন চূড়ান্ত চামারের মতো হাসে
তাতে আমি স্বপ্নে দেখা অযাচিত ভয় পেয়ে বলি,
উচ্চতায় এলোমেলো হই,
আমি তো বিদেশ যাই না কাকু
সে তখন ততোধিক আশকারা পেয়ে যায়।
বলে, কেন—আপনি কী বেনুবংশীয়!
আপনি কী বিসমিল্লাহ খান!
প্লেন দেখলেই খালি জল চান, পানি খান!
কানকথা
নেমে আসছে চাঁদ, হরণ করতে জ্যোৎস্নাকে
আমি বলছি, তুমি বলছো তাকে।
আমাদের কিছু বাতিক আছে ব্যাধির সমরূপে
আমি মানছি, তুমি ঢাকছো চুপে।
দেশের মধ্যে মহাদেশ আছে এই নিয়া হুলুস্থূল
আমি কাটছি, তুমি ছিঁড়ছো চুল।
বলে প্রতি মাসের মধ্যে ঋতুরে দাও ভাগ
আমি টানছি, তোমার দড়িতে ছাগ।
পালাচ্ছে আজ যারা
আমরা পানপাতা বরজের, পাশ ঘেঁষে হেঁটে যাই
বাকি পথ খরচের।
ও ব্যথা কান্না কীসের? নদী যদি ডুবে যায়
নাব্যতায় ঘটে হেরফের।
তোমারই কল্পে কাঁপিতেছে তীর, ছায়া-ঢাকা মেঘ
হোস না এতটা অস্থির।
আগে যাবে আগন্তুক, তার পিছে দিকচক্রবাল
এখনই ফায়ার হবে চুপ।
আমার সীমানায় আস্ত আসমান, পাখিও তথাস্তু ওড়ে
বধিরের সমবেত গান।
গানের মধ্যে ধানের গন্ধ পাই, মনের মধ্যে আজি
জোর ঢুকিয়ে দাও সাঁই।