যৌনতা বিষয়ে একচ্যাপ্টার । জাকির জাফরান
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ২:৫২ অপরাহ্ণ, | ২১১৭ বার পঠিত
এইটা ‘ম্যানাস্ক্রিপ্ট ফাউন্ড ইন্ অ্যাক্রা’ — পাওলো কোয়েলহো প্রণীত অনবদ্য গদ্যকাজের আরেকটি নিদর্শন — বাংলায় একই শীর্ষনামে এই গোটা বইটারই স্বচ্ছতোয়া ভাষাবুনুনি দিয়েছেন কবি জাকির জাফরান; — সেই বইয়েরই কিয়দংশ তুলে এনে একচ্যাপ্টারে এইখানে এই গদ্য। অনুরূপে এই বইয়ের ভিতরে একের পর এক প্রসঙ্গ ধরে — প্রেম বিষয়ে, একাকিতা বিষয়ে, বন্ধুতা বিষয়ে, বিয়াশাদি বিষয়ে, সন্তানসন্ততি বিষয়ে, পরিবার ও স্বজন-দুর্জন বিষয়ে, যুদ্ধ ও যন্ত্রণা বিষয়ে, লড়াই ও পলায়ন বিষয়ে — একটা দার্শনিক ধ্যানসৌন্দর্য উপহার দেয়া হয়েছে টেক্সট জুড়ে; এর বাংলা অনুবাদের টেক্সট কোয়েলহোপ্রোজস্থ সৌন্দর্যের সেই বিস্ময় ঠিকঠাক পাঠকবোধে সঞ্চার করতে সক্ষম হয়েছে কি না তা বাংলায় এর খানিকটা হাতে নিয়া অনুধাবন করা যাবে হয়তো। বইটি যন্ত্রস্থ, ‘চৈতন্য প্রকাশনী’ থেকে এবারকার বইমেলায় এই ফিকশন্যাল্ ননফিকশন্ অথবা, ভাইস্ ভ্যার্সা, ননফিকশনধর্মী ফিকশনের ম্যাজিকপালকগুলো ছড়িয়ে পড়বার কথা পাঠকের পরিব্যপ্ত চরাচরে। ‘ম্যানাস্ক্রিপ্ট ফাউন্ড ইন্ অ্যাক্রা’, জাকির জাফরান অনূদিত কোয়েলহোম্যাজিক, বাংলাদেশে একুশে বইমেলায় ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে, এই তথ্য বইটির বঙ্গানুবাদকসূত্রে জানা গিয়েছে। এইখানে, ‘রাশপ্রিন্ট’ ওয়েবম্যাগে, আশু প্রকাশিতব্য বইয়ের একটি ক্ষীণাংশ মুদ্রণের ব্যাপারে সম্মতি দিয়ে এর বঙ্গানুবাদক জাকির জাফরান সতৃষ্ণ পড়ুয়ার ধন্যবাদার্হ হয়ে রইলেন। বইটির বাংলা ভার্শনের প্রচ্ছদ করেছেন শিবু কুমার শীল। ‘ম্যানাস্ক্রিপ্ট ফাউন্ড ইন্ অ্যাক্রা’ পাওয়া যাবে মেলাকালীন চৈতন্য প্রকাশনীর মণ্ডপে। — রাশপ্রিন্ট
যৌনতা বিষয়ে একচ্যাপ্টার । মূল রচনা : পাওলো কোয়েলহো । অনুবাদ : জাকির জাফরান
নারী ও পুরুষ একে অন্যের সঙ্গে ফিসফিস করে কথা বলে কারণ তারা একটি পবিত্র কাজকে অনাচারী কাজে পরিণত করেছে।
এই পৃথিবীতেই আমরা বাস করি। আর বর্তমান মুহূর্ত থেকে এর বাস্তবতাকে হরণ করা যখন বিপজ্জনক হতে পারে, তবে অবাধ্যতাও হতে পারে একটি গুণ, যদি আমরা তা ব্যবহার করতে জানি।
দুটি দেহ যদি কেবলই মিলিত হয়, এটা যৌনতা নয়। এটা শুধুই আমোদ। যৌনতা ভোগসুখের অতীত।
যৌনতায় প্রশান্তি ও দুশ্চিন্তা হাত ধরাধরি করে চলে, যেমন ব্যথা ও আনন্দ এবং লজ্জা ও সাহস একজন মানুষের শেষ সীমা পর্যন্ত পাশাপাশি থাকে।
এ-ধরনের পরষ্পরবিরোধী অবস্থা কীভাবে একত্রে মিলেমিশে থাকে? একটিমাত্র উপায়ে : নিজেকে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে।
কারণ আত্মসমর্পণের কাজটির মানে হলো : ‘আমি তোমাকে বিশ্বাস করি।’
কী ঘটতে পারে তার সবকিছু কল্পনা করা যথেষ্ট নয় যদি আমরা শুধু দেহ নয় আত্মার দিক দিয়েও মিলিত হই।
আমরা চলো একত্রে জড়াজড়ি করে থাকি, তারপর সমর্পণের বিপজ্জনক পথ দিয়ে নিচে নামি। হতে পারে এ-পথ বিপজ্জনক, তবে এটাই অনুসরণ করার মতো একমাত্র পথ।
আর এমনকি এটা যদি আমাদের পৃথিবীতে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসে, আমাদের হারানোর কিছুই থাকবে না, কারণ শরীর ও আত্মার মেলবন্ধনকারী দরোজাটি খোলার মধ্য দিয়ে আমরা যা অর্জন করি তা হলো পরিপূর্ণ প্রেম।
আমরা চলো ভুলে যাই সেসব বিষয় যা আমাদেরকে শেখানো হয়েছে : কিছু দেয়া কীভাবে মহৎ আর কিছু গ্রহণ করা কীভাবে অবমাননাকর হয়। অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে শুধু দেয়াতেই উদারতা নিহিত থাকে, তথাপি গ্রহণ করাও একটি প্রেমের কাজ। অন্য কাউকে আমাদেরকে সুখী করার সুযোগ দেয়াটা তাদেরকেও সুখী করবে।
***
আমরা যখন যৌনক্রিয়ায় খুব উদার হই এবং আমাদের প্রধান ভাবনা থাকে আমাদের যৌনসঙ্গীর আনন্দ, তখন আমাদের নিজস্ব আনন্দ কমে যেতে পারে কিংবা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
আমরা যখন সমান তীব্রতা নিয়ে দেয়া-ও-নেয়াতে সক্ষম হই, আমাদের শরীর তখন ধনুকের ছিলার মতো টানটান হয়ে যায়, কিন্তু আমাদের মন ছুটে-যাওয়া তিরের মতো শিথিল হয়ে যায়। আমাদের মস্তিষ্কের আর দায়িত্ব থাকে না; নৈসর্গিক বুদ্ধিই হয় আমাদের একমাত্র পথপ্রদর্শক।
যখন শরীর ও আত্মা মিলিত হয় এবং স্বর্গীয় শক্তি শুধু সেই অংশগুলোকেই পূর্ণ করে তোলে না অধিকাংশ মানুষ যেটাকে যৌনকামনা-উদ্রেককারী বলে ভাবে, প্রতিটি চুল ও ত্বকের প্রতিটি ইঞ্চি বিচিত্র রঙের আলোর উৎসারণও ঘটায়। দুটি নদী মিলিত হয় আরও বেশি সুন্দরী হতে, আরও বেশি ক্ষমতাবান হতে।
যা-কিছু আধ্যাত্মিক, নিজেকে দৃশ্যমান আকারে প্রকাশিত করে, আর যা-কিছু দৃশ্যমান তার সবটাই অন্তর্জাগতিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
সবকিছুই অনুমোদিত হয়, যদি সবকিছু হয় গৃহীত।
মাঝে মাঝে প্রেম কোমল কথা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সুতরাং প্রেম তার সমস্ত মহিমা নিয়ে প্রকাশিত হোক, সূর্যের মতো জ্বলন্ত আর দমকা বাতাসের পুরোটা বনাঞ্চল ধ্বংসকারী।
যদি একজন প্রেমিক সম্পূর্ণরূপে নিজেকে নিবেদন করে, তখন অন্যজনও ঠিক একই কাজই করবে, কারণ অস্বস্তি ঔৎসুক্যে পরিণত হবে, এবং কৌতূহল আমাদেরকে সে-সমস্ত জিনিশ আবিষ্কারের দিকে নিয়ে যায় যেগুলো আমরা আমাদের সম্পর্কে জানতাম না।
যৌনতাকে উপহার হিশেবে দেখো, একে দেখো রূপান্তরের ধর্মীয় প্রথা হিশেবে। এবং যে-কোনো আচার-অনুষ্ঠানে যেমন শেষটাকে গৌরবমণ্ডিত করার জন্য পরমানন্দ উপস্থিত থাকে, কিন্তু এটাই একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। আসল কথা হলো আমরা আমাদের সঙ্গীদের সঙ্গে একটা রাস্তা ভ্রমণ করেছি, যেটা আমাদেরকে এক অজানা ভূখণ্ডের দিকে নিয়ে গেছে, যেখানে আমরা সোনা, ধুপ ও সুগন্ধ পথে পথে কুড়িয়ে পেতাম।
পবিত্র বস্তুকে এর পরিপূর্ণ পবিত্র অর্থ দাও। আর যদি সন্দেহের মুহূর্ত জাগ্রত হয়, সর্বক্ষণ মনে রেখো : আমরা সে-রকম মুহূর্তেও নিঃসঙ্গ নই; আমরা উভয়েই একই জিনিশ অনুভব করছি।
নির্ভয়ে তোমার কল্পনার গোপন বাকশোটি খুলে ফ্যালো। একজনের সাহস অন্যজনকে সমভাবে সাহসী হতে সাহায্য করবে।
প্রকৃত প্রেমিকেরা মূল্যায়িত হওয়ার ভয় ছাড়াই সৌন্দর্যের বাগানে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে। তারা আর মিলনরত দুটি শরীর বা দুটি আত্মা থাকবে না, তারা হবে একটি একক ঝর্ণা যার মধ্য থেকে জীবনের প্রকৃত জল প্রবাহিত হবে।
নক্ষত্ররা প্রেমিক-প্রেমিকাদের নগ্ন দেহের প্রতি ধ্যানমগ্ন হবে, আর প্রেমিক-প্রেমিকারা তাতে একটুও লজ্জাবোধ করবে না। পাখিরা কাছ দিয়ে উড়ে যাবে, আর প্রেমিকযুগল পাখিদের গান অনুকরণ করবে। বন্য প্রাণিরা সতর্কভাবে কাছে আসবে, কারণ তারা যা দেখছে তা তাদের চেয়েও অনেক বেশি বন্য। এবং শ্রদ্ধা ও আনুগত্যের নিদর্শন হিশেবে তারা তাদের মাথা অবনত করবে।
এদিকে সময় থমকে দাঁড়াবে, কারণ প্রকৃত প্রেম থেকে জন্ম-নেয়া আনন্দের দেশে সমস্তকিছুই অসীম।