জলবিসর্গের ধুলোঢেউ । ফকির ইলিয়াস
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জানুয়ারি ২০১৬, ৫:২৩ অপরাহ্ণ, | ২৩৩৩ বার পঠিত
*
কপালে তিলক নেই, তবু দেখে হাসে রাত। সাক্ষাত পেলে অন্য কেউ নিয়ে যেতে পারে
ভিন্ন পথে।দিতে স্মৃতির আয়না।বায়না ধরেছে যারা নদীপাড়ে যাবে— তাদের প্রত্যেকের
হাতে তুলে দেয়া আছে একটি করে মার্বেল। খেল্ শেষ হলেই তারা মার্বেলগুলো ছুঁড়ে দেবে জলে।
ফলে ভোরের সূর্যও দেখাবে তার ভালোবাসার মুখ।অসুখ সেরে গেছে নক্ষত্র—
বিসর্গের। ছায়াগুলো কাছে রেখে গেছে সনদ, জলের।
*
প্রশ্নটি ছিল অস্তিত্ব বিষয়ক। একক শক্তি নিয়ে যে চাঁদ ছড়িয়ে যায় রাতের ফোয়ারা—
সেখানে পড়ে থাকে বিবর্ণ পাখির ডানা।অজানা যুদ্ধের সাথে মাটিভাঙা খেলা করে
বধির বালক।পৃথক পরতে লেখা ভাগ্য তার— গড়া আছে ভিন্ন দিবালোকে।যাকে কেউ
সম্রাট ভাবে, আসলে সে ন্যাড়া-সহোদর। প্রতারক রাত এসে নিয়েছে দখল এই যৌথ
জনপদের— কেঁপে উঠছে জলের শহর।
*
কেউ কি সংরক্ষণ করে লুপ্ত এই আলোর ফেনা। দেনা-ধার সবকিছু শোধ করে আবার ফিরে কি ঘাটে নিতে জল, স্বরের অমল।সকল মানুষই মানে জগত এক অভিন্ন শিকল। পরিমণ্ডল ছেড়ে এলে মায়াগুলো হয়ে যায় কেনা।বেগানা বালির বাধে তবে কে গো, গেড়ে যায় গোলাপ। পাপ যারা করেছে এর আগে— তারা কি প্রার্থনা সারে, সেই পাপ চির-মোচনের।রূপের রহস্য খুঁজে নাকি কেউ একাকী নগরে। নাম লিখে রাধিকার— নবীনা মাঘের পাতা ধরে।
*
তবে কি ঈশান থেকে উড়ে আসে আলোর কাগজ। সহজ সরলরেখায় আঁকে কেউ
চলন্ত বিষাদ। সাধ থাকে সুখী হতে— তবুও তো চোখ ভেসে যায়। কোথায় জলের
নৌকো, কোথায় ধুলোঢেউ জাগে।আগে কি এ শহরে এভাবেই দুঃখবৃষ্টি হতো।অবিরত
অনুধ্যানে মানুষেরা খুঁজে নিতো সিঁড়ি। পিঁড়ি কিংবা পাটাতনে লুকিয়ে থাকতো চাঁদমাখা রাত।
প্রভাত হবার আগে হারিয়ে যেতো সবগুলো ছবি— বুকে রেখে জলের
করাত।
*
এই স্মৃতি জেগে আছে পাতাদের সংযুক্তি সাধনে।প্রাণে যে কথার মালা, তাকে নিয়ে
কে লিখিবে যৌথ বিজ্ঞাপন। বিপণন খণ্ডগুলো কে তুলিবে কালের খাতায়।যায় যারা
সাধনপুরে— তারা কি আর কভু আসে ফিরে। ঘিরে যে রচিত ভোর— তার হাতে
কে দেয় ফুল। ভুল করে কোন নারী ভুল ঘাটে ভাসায় কলসী।বাঁশি যে বিরহ চিনে—
সেই কথা জানে কি বাদক। শোধক সমুদ্র জানে কত জলে প্রেমের প্রতীক। দিক থেকে
দিগন্তে ছুটে যায় ঢেউ— তাকিয়ে থাকে একাকী নাবিক।
*
মূলত বৃক্ষই বুঝে প্রকৃতির রূপ-ঋতুকলা।খেলা শেষে ভাটি পথে চলে যায় যে বর্ষার
জল। সফল সে ও’তো হয় ভাসিয়ে নিয়ে দুঃখীর সংসার। যার কোনো পথ নেই, সে
কি চিনে গন্তব্যের দ্বার। সবার নিয়তি এসে মিশে তবে নীল যমুনায়!হায়, পাখি-হায়
ভোর সূর্যের লালিমা রাখো লিখে। এঁকে এই ছবিবৃক্ষ— ছায়ামূর্তি হও, তারপর বিসর্গের
হাতে স্বপ্নগুলো তুলে দাও ঢেকে।