সুমন সাজ্জাদ’র একগুচ্ছ বৃষ্টি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ জুলাই ২০১৫, ২:১৭ অপরাহ্ণ, | ৩১৭৩ বার পঠিত
তাকিয়ে আছে ফুলের দোকান
শরীর জুড়ে তরুণ ক্ষুধা বলগা হরিণ।
তুমি আমার হাতের ওপর ছড়িয়ে দিলে
এক মুঠো দিন — শস্যদানা।
এক মুঠো রাত লুকিয়ে নিলে আঁচল-পাড়ে।
নোংরা অটো। ব্যস্তগলি। চমকে তাকাও
রঙবাহারে। বিড়াল ছানা।
আগুনবোমা ঝলসে ওঠে। সূর্য অস্ত।
দোলনচাঁপায় ঝড় লেগেছে। সন্ধ্যা মাতাল,
আদরগ্রস্ত। সাদায় কালোয়
অন্ধকারে হাসবে যখন শরীর দু’খান
তখন কিন্তু দোষ দিওনা। শহর জুড়ে
ফুলের দোকান। নিওন আলোয়
দোষ দিওনা, তরুণ ক্ষুধা বলগা হরিণ
হাতের ওপর ছড়িয়ে দিলে এক মুঠো দিন,
একমুঠো রাত কাঁটায় কাঁটায় শরীর দু’খান,
শহর জুড়ে তাকিয়ে আছে ফুলের দোকান…
ত্রিস্রোতা
‘বৃষ্টিকে চেন? — মেঘেদের বান্ধবী।
শুনেছি শ্রাবণ প্রথম প্রেমিক তার।
বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল
বাতাসে ওড়ায় অস্ফুট হাহাকার।’
‘শ্রাবণকে চেন? — আকাশের সহচর।
শুনেছি শ্রাবণ বাদলের কথা জানে।
দূরদেশে ওড়ে বৃষ্টিমুখর মেয়ে।
থইথই স্মৃতি শ্রাবণের ঋতুগানে।
‘বাদলও পড়েছে টুপটাপ স্বরলিপি।
শুনেছে হাজার বর্ষারাতের তান।
অঝোর নদীর করতলে ভাটিয়ালি।
মেঘবন্ধুরা দেখেছিল অবসান।’
‘বৃষ্টিকে দ্যাখো? —উড়ন্ত ছায়াপথ—
কার্নিভালের রঙভরা ফালগুনে।
আসছে আষাঢ়—মন-ভাসানের দিন
জারুলপাখিরা বৃষ্টির কাল গোনে।
‘তবে কি এখন তিন দিকে গেছে স্রোত?
দেখে নি আকাশ একটি অন্ত্যমিলও।’
চুপিসারে কেন মেঘদল বলে যায়,
‘শোনো হে আকাশ, কেউ ছিল, কেউ ছিল!’
সহজ
সহজ খুব বৃষ্টি এসেছিল।
সন্ধ্যা ছিল বিষণ্ন এক টানেল।
রিকশা জুড়ে বজ্রপাতে ভেজা
দু’জন মানুষ দুঃখ টেনে আনে।
দু’জন মানুষ হাওয়ার ভেতর ভাসে।
ভাসতে ভাসতে বর্ষাকে দেয় ডাক।
রাতের গাড়ি হারায় ইস্টিশন।
রাস্তাগুলো ফাগুন হয়ে থাক।
ফাগুন তো নেই। ঝুম বৃষ্টি।
আগুনপথে ছলকে ওঠে জোয়ার।
সমুদ্র ওই উথালপাথাল, দূরে
দ্যাখো, আকাশ খোলা দুয়ার।
দুয়ারে কে? দুয়ারে কে? —ঢেউ।
বিজন মেঘে নৌকা তোলে পাল।
দু’জন মানুষ দুই দিকে যায় ছুটে
‘রেললাইন বহে সমান্তরাল।’
বইছে যদি বইছে, জানলা দিয়ে
দৃশ্য ফেলে যাওয়া। সহজ, তুমি বৃষ্টি হয়ে ওঠো…
পৌষালি
পৌষালি মেঘ। বৃষ্টিকণা।
একটু ধুলো। রাস্তা বাজে।
খাদের পরে খাদ পেরিয়ে
ভাসছো কে কে নীল জাহাজে?
মেঘের পরে মেঘ জমেছে।
ভাসতে ভাসতে যাচ্ছো কোথায়?
বরফ-জমা হাতের মুঠোয়
কেউ কি তোমার সূর্য ওঠায়?
সূর্য ওঠে। সূর্য ডোবে।
চোখের তারায় বরফ গলে?
—‘একলা জাহাজ নোঙর খোঁজে
পৌষে হঠাৎ বৃষ্টি হলে।’
# #