অনুদ্ভিন্ন ধ্বনি । হাসান শাহরিয়ার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জুলাই ২০১৪, ৯:৪৮ পূর্বাহ্ণ, | ১৯৯২ বার পঠিত
অপারেটরের হাতে সবগুলা সুইচ। রেড সুইচ, গ্রীন সুইচ, ইয়েলো সুইচ। ফটো-পাজল ম্যাচ করার মত সে সুইচগুলা ডানে নিতেছে, বামে নিতেছে, উপরে নিতেছে, নিচে টানতেছে। বাকি কাজগুলা করতেছে সভ্যতার মেশিন। ইলাস্টিক প্যাডে টাইনা নিয়া আসতেছে লোড হওয়া সারের বস্তাগুলা। ফ্যাক্টরির শেষ প্রান্তে নদীর উপর খালি পেটে জাহাজগুলা হা কইরা আছে। টপ কইরা বস্তাগুলা মেশিন থেইকা পড়ে। আর জাহাজগুলা ভর্তি হইতে থাকে। মেঘনা হইয়া এই ভরা জাহাজগুলা সার নিয়া চইলা যাইবো নিজের নিজের গন্তব্যে; তারপর। যদিও নদীপথের এই চালানের দায়িত্ব আমার না। আমি দেখি স্থলপথের চালান। এইমাত্র হিসাব নিকাশ শেষ করলাম। দুইশ ট্রাকের চালান বসরে বুঝাইয়া দিয়া গোডাউনে বইসা আছি। ক্লান্ত লাগতেছে খুব। দ্রুত বাসায় যাওয়া দরকার। এমনিতেই একঘন্টা বেশি ডিউটি দিছি আজকে।
বেলা তিনটার মত বাজে। কো-অপারেটিভ বাসগুলা ইভনিং শিফটের লোকজন নিয়া আসছে কোয়ার্টার থেইকা। এখন বাস-পার্কিং-এ লাইন ধইরা ঝিমাইতেছে। ড্রাইভার ইরফান ভাইরে দেখলাম। অল্প আগে ভাত খাইছে বোধহয়। চোখ বন্ধ কইরা সিগারেট টানতেছে; তিন নাম্বার গেইটের মসজিদের পাশে। আমিও গেইট ছাইড়া বাইর হইলাম। একটা রিকশা খুঁজতেছি। সামনেই লঞ্চ-ঘাট। পাড়ে লঞ্চ ভিড়লে ভৈরব থেইকা নাইলে লালপুর, যাত্রাবাড়ী থেইকা যাত্রীরা আসে; নামে। তাদের রিকশার দরকার হয় নিজের নিজের বাড়ি ফিরতে; নাইলে ফ্যাক্টরি কোয়ার্টারে যাইতে। কিন্তু এখনো কোন লঞ্চ ভিড়ে নাই এই ঘাটে; রিকশাও নাই। আমি আর অপেক্ষা করলাম না। সিগারেট ধরাইলাম একটা। তারপর ফ্যাক্টরি ওয়ালের পাশে সরু রাস্তাটা ধইরা হাঁটা শুরু করলাম। মেইন রোডে উইঠা গেলে কোয়ার্টার খুব বেশি দূরে না।
বাসায় ফিরতে ফিরতে সাড়ে তিনটার মত বাজলো। দরজা খুইলাই নওরিন জিজ্ঞাস্ করলো- এত দেরি হইলো কেন? আমি উত্তরে শুধু বললাম- হুম। নওরিন আমার বউ। নওরিনরে খুব ভালবাসি আমি। দেখলাম, গেস্ট রুমে আব্বা শুইয়া আছেন আর টিভির দিকে মুখ কইরা আম্মা পান খাইতেছেন। বুঝলাম, তাদের খাওয়া দাওয়া হইছে। যদিও আম্মা খান নাই; এইটা আমি নিশ্চিত। আমারে দেইখা তিনি বললেন- আব্বা আসছো নাকি? আমি এইবারও বললাম- হুম। আব্বা যেন আম্মারে বিড়বিড় কইরা কি বললেন। আমি শুনলাম না। আমি মনোযোগ দিলাম না। সোজা হাঁটা দিলাম বেডরুমের দিকে। সেইখানে আমার জন্য অপেক্ষা করতেছিল আমার মেয়ে। আমার মেয়েটার নাম আঁচল।
আঁচলের বয়স দুই বছর হইবো। আব্বু, আম্মু, দাদু, নানু- এই শব্দগুলা বলতে পারে সে। খাবো, হুম, নাহ্, যাহ্- এই শব্দগুলাও বলতে পারে সে। সাধারণত যেইটা হয়, আমারে দেখলেই তার অস্থিরতা বাইড়া যায়। আব-বু আব-বু কইরা কাছে আসতে চায়। যদিও পায়ের দূর্বল হাড় তারে বাধা দেয় খুব। দূর্বল হাত তারে বাধা দেয় খুব। তবু তার উৎসাহ কমে না। তার অস্থিরতা কমে না। আমি প্রতিদিনই এইসব দেখি। দেখি, একটু একটু কইরা সে বড় হইতেছে। যেমন বড় হয় অন্য শিশুরা। কিন্তু আমি সাড়া দেই না। আমি তারে কোলে নেই না। তারে আদর করি না। তার ভালবাসার অর্থ আমি বুঝি না। তার উৎসাহ বাইড়া গেলে সে কাঁদতে থাকে। আমি তখন অন্য দিকে ফিইরা থাকি। আমি তখন নওরিনরে ডাকি। নওরিন আইসা তারে কোলে নেয়। তারে আদর করে। নওরিন আঁচলের আব্বারে তখন তিরস্কার করে।
দুইঃ
আমার বউ নওরিন একজন কবি। সে বিষণ্ণতার কবিতা লেখে। সে নিঃসঙ্গতার কবিতা লেখে। সে বিচ্ছিন্নতার কবিতা লেখে। সে নিস্পৃহতার কবিতা লেখে। আমি তার কবিতার খুব মনোযোগী পাঠক। একাগ্র পাঠক। একটা কবিতা পাঠের পর আমি তারে বলি- নওরিন, এই কবিতায় এত বিষণ্ণতা কেন? তুমি কি বিষণ্ণ? নওরিন হাসে। আমারে বলে- এইটা ত আমার বিষণ্ণতা না। এইটা মানুষের। চারপাশের। তাই লিখছি। আমি বলি- মানুষরে ত আমার বিষণ্ণ মনে হয় না।
– কি মনে হয়? নওরিন জিজ্ঞাস্ করে।
– মানুষ ধূর্ত। মানুষ অসহায়। মানুষ স্বার্থপর। মানুষ খুনি।
– মানুষ বিষণ্ণও।
– মানুষ ঘৃণা করে। মানুষ ক্ষতি করে। মানুষ হত্যা করে।
– মানুষ তবু বিষণ্ণ।
আমি তার কবিতায় বিচ্ছিন্নতা দেখি। যদিও আমার কোনদিন মনে হয় নাই, মানুষ বিচ্ছিন্ন। মানুষ খুব সংঘবদ্ধ। মানুষ সংঘবদ্ধভাবে খুন করে। আমি তখন ব্যপারটা আরো সংকীর্ণ কইরা দেখার চেষ্টা করি। নওরিন কি বিষণ্ণ? নওরিন কি বিচ্ছিন্ন? নওরিন কি নিঃসঙ্গ? আমি তার দিকে তাকাই। সে-ও। মহাবিশ্বের সবচেয়ে ঘন নক্ষত্র নওরিন। মনে হয়, এই নক্ষত্র-ক্রুশে আমি বিদ্ধ ক্রাইস্টের শরীর। আমার কোথাও ছিটকে পড়ার নাই। যেইটা ছিল তাঁর যন্ত্রণা, সেইটা আমার ভালবাসা। নওরিন।
ঘরের কাজগুলা আম্মা আর নওরিন মিইলাই করে। আম্মা আবার সাংঘাতিক বউ-ভক্ত। পারলে তারে কোন কাজই করতে দেয় না। এমনকি আমার মেয়ে আঁচলের দেখাশোনার প্রায় পুরা ব্যপারটা আম্মাই করেন। কাজেই নওরিন অনেক সময় পায়। আর এই সময়ে সে ব্যস্ত থাকে তার কবিতা নিয়া। তার পড়াশোনা নিয়া। আমি অবশ্য নিশ্চিত না- সে তার কবিতা আম্মা আব্বার সাথে শেয়ার করে কি না। তার ইচ্ছা এইবার একটা বই বের করা। তার থেইকাই জানলাম, তার কবিতার পাঠকরা নাকি বলছে আসছে মেলায় একটা বই বের করতে। আমি তার ব্যস্ততা উপভোগ করি। আমি তার সৃষ্টিশীলতা উপভোগ করি। আমি তার বিচ্ছিন্নতার বিষন্নতার কবিতার একাগ্র পাঠক।
নওরিনের ব্যপারে আমি যে ভালবাসাটা অনুভব করি, সেইটা আঁচলের ব্যপারে করতে পারি না। ব্যপারটা এইরকম না যে, আঁচল আমার প্রথম কন্যাসন্তান। বরং আমি মনে করতে পারি, আরো অনেক বছর আগে স্কুলের দিনগুলাতে, কলেজের দিনগুলাতে, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলাতে যখন স্বপ্নদোষ হইত, যখন হস্তমৈথুন করতাম, করতাম স্বমেহন – তখন থেইকাই আমার মনে হইত- মানে আমি ভাবতাম- আমার একটা মেয়ে থাকবে; টুকটুকে লাল। সারাদিন আমি যার সাথে খেলব। শুধু তাই-ই না; প্রায়ই টুকটুকে একটা মেয়ে আমার স্বপ্নে আসত। আমার চিন্তায় আসত। আর দখল কইরা রাখত আমার স্বপ্ন; দখল কইরা রাখত আমার চিন্তা। অনেক সময়, আমি তার সাথে খেলতে খেলতে একা একাই হাইসা উঠতাম; যেইটা ছিল খুব বিপদজনক। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার একতরফা প্রেমের প্রেমিকারেও একদিন ইশারা কইরা এইরকম মনে হওয়া ব্যপারটা বলছিলাম আমি। সে বুঝে নাই।
তিনঃ
আমার একটাই মেয়ে। আঁচল। বয়স দুই। যারে আমি ভালবাসতে পারি না। যারে আমি আদর করতে পারি না। যার প্রতি আমার কোন অনুভূতি নাই। আগ্রহ নাই। যার চোখের দিকে তাকাইলে আমার কোনদিন মনে হয় না, আমি একজন পিতা! এইটা ঠিক, দুই বছর একটা দীর্ঘ সময়। এবং এই সময়টাতে পরিবারের সবাই আমার এ প্রতিক্রিয়ার ব্যপারে ভীষণভাবে পরিচিত এবং বিরক্ত। অসহায়। অনেকদিন আব্বা আম্মা দুইজনই আমার সাথে এইটা নিয়া কথা বলতে চাইছিলেন। আমি আগ্রহ দেখাই নাই। নওরিনের পরিবার থেইকাও বারবার চেষ্টা করা হইছে। আমি আগ্রহ দেখাই নাই। নওরিন, যারে আমি পাগলের মত ভালবাসি- সে-ও কম চেষ্টা করে নাই। আমারে বলত- এত সুন্দর একটা মেয়ে তোমার। তোমার ইচ্ছা করে না- ওরে একটু কোলে নিতে, আদর করতে? আমি কোন উত্তর দেই না। আমি উত্তর দেই –হুম। তারপর নওরিন কাঁদত। অনেক কাঁদত। আমি তার পাশে বসতাম। তার মাথায় হাত রাখতাম। আমি মাথা নিচু কইরা বইসা থাকতাম।
এইভাবেই দিন যাইতেছে আমাদের। যদিও এখন পরিবার থেইকা আমার আচরণ নিয়া আর কোন প্রশ্ন করে না কেউ। সন্তানের ব্যপারে আগ্রহহীন পিতার কাছে কারো কোন অভিযোগ এখন আর নাই। আঁচল একদিন বড় হইবো। যেমন হইতেছে সে একটু একটু কইরা। তাদের মত একদিন তার নিজেরও আর কোন প্রশ্ন থাকবো না। অভিযোগ থাকবো না। আমি এইসব ভাবি। যখন আমার সামনে আঁচল কাঁদে। যখন সে তার দুইটা তুলতুলে হাত আমার দিকে বাড়াইয়া দেয়। যখন সে আমার কোলে উঠার দাবি করে। যখন সে আমারে আব-বু বইলা ডাকে। যখন কোনদিন সে খুব অবাক হইয়া আমার দিকে তাকায়। হয়ত ভাবে এই লোকটা কে – যে আমারে ভালবাসে না। একটুও। আমি তখন ঘর থেইকা বের হইয়া আসি। এমপ্লয়ীজ ক্লাবে বইসা সিগারেট টানি। তাস খেলি। অফিস থাকলে আটঘন্টা খুব মনোযোগ দিয়া অফিস করি। হিসাব করি। চালান দেই।
চারঃ
আজ থেইকা বছর দশেক আগের কথা। আমি তখন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি; পদার্থ বিজ্ঞানে। এমন হইত, মাসে অন্তত একবার আমি সিলেট থেইকা বাসায় যাইতাম। বাসাটা ছিল আশুগঞ্জ বাজারে। আব্বা বাজারে একটা ফার্মেসি চালাইতেন। আমি বিশ্ববিদ্যালয় হল থেইকা সিএনজি নিয়া কদমতলি আসতাম। সেখান থেইকা হাইওয়ে বাসে আশুগঞ্জ উজানভাটি নাইমা যাইতাম। আপনি যখন বাসস্ট্যান্ডে আসবেন, সাথে সাথেই ত আর বাস ছাইড়া দেয় না। আপনারে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। আমিও করতাম। একদিন হইছে কি, আমি বাসস্ট্যান্ডে বাস ছাড়ার অপেক্ষা করতেছি; কাউন্টারের বাইরে দাঁড়াইয়া। কি একটা কারণে বেশ বিরক্ত ছিলাম সেদিন; মনে আছে। এমন সময় আনুমানিক চার বছরের একটা মেয়ে আমার শার্ট ধইরা টানা শুরু করল। আমি ফিইরা চাইতেই স্পষ্ট কইরা বলল- কয়টা টাকা দিবেন?
আমি দেখলাম, অসম্ভব সুন্দর একটা মেয়ে। আমার শার্ট টানতেছে। তার মাথা ভর্তি চুল। চুলগুলা বাতাসে তার মুখ ঢাইকা দিতেছে। বেশ বড় একটা জামা পইড়া আছে সে। অনেকটা হিজাব ছাড়া বোরখার মত লাগতেছিল। তার মুখ খসখসে। কিন্তু এত মায়া চোখ দুইটাতে। আমার মনটাই ভাল হইয়া গেল। আমি হাইসা বললাম- কত? উত্তরে সে অবাক হইল। আমি তার দিকে তাকাইয়া থাকলাম। আবারো বললাম- কত দিবো? সে এইবারও কোন কথা বলল না। কিন্তু আমার শার্টটা ছাইড়া দিল। তারপর গাল-ফুলা কইরা অন্যদিকে তাকাইলো। হাত দিয়া চুলগুলা সরাইলো। আমি তারে কাউন্টারের ভিতরে নিয়া গেলাম। বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশনগুলাতে যেইটা হয়, আপনি একজনরে দয়া দেখাইবেন- সাথে সাথে একপাল আপনার ভদ্রলোকি দয়ার ভাগ নিতে হাজির হইয়া যাইবো। স্যার দেন না, স্যার দেন না, আমারে দেন না, স্যার………
আশেপাশে তাকাইয়া দেখছিলাম বেশ বড় একটা দল। অনুমান করলাম, সারাদিন তারা যা পায়, সেইটা ভাগ হয় বা অন্য কেউ ভাগ কইরা দেয়। আমি চাইলাম না, আমার দেয়া টাকাটা অন্য কারো ভাগে পড়ুক। আমি শুধু মেয়েটারেই দয়া করতে চাইছিলাম! এইটা আমার সচেতন পক্ষপাতিত্ব। কাউন্টারে নিয়া তারে কিছু টাকা দিলাম। বললাম- কাওরে দিবা না। সে অবাক হইয়া তাকাইলো। তারপর আস্তে আস্তে কোথায় যেন মিইলা গেল। এরপর থেইকা প্রায়ই তার সাথে দেখা হইত। মানে যখন আমি বাসস্ট্যান্ড যাইতাম। আর এইভাবে আমার পড়া শেষ হইতে লাগল। এইভাবে সে-ও একটু একটু বড় হইতে লাগল। আমাদের মধ্যে একটা ভাষাহীন লেনদেন তৈরি হইল। আমারে দেখলেই সে কাছে আসত। চোখ দুইটা খুব গাঢ় কইরা তাকাইত। আমি তারে একটু আড়াল কইরা টাকা দিতাম। তারপর সে চইলা যাইত।
পাঁচঃ
মেয়েটার নাম কোনদিন আমি জানি নাই। যেমন এইভাবে একদিন আমি সিলেট ছাইড়া দিলাম। এইভাবে তার সাথে কোনদিন আর দেখা হইল না। কিন্তু অনেকবার তার কথা মনে হইছে আমার। মনে হইছে সেই সময়গুলার কথা যখন আমাদের মধ্যে হইত ভাষাহীন লেনদেন। এইরকম একটা চিন্তা নিয়া আমি প্রায়ই কাতর থাকতাম যেমন এরপর কি হইতে পারে মেয়েটার? সে ত সারাজীবন ভিক্ষা করবো না। টাকা চাইয়া ঘুইরা বেড়াইতে পারবো না কদমতলি বাসস্ট্যান্ডে। তারপর কি হইতে পারে? আমি অধিকার নিয়া ভাবলাম। আমি যখন একজন পিতা তখন সন্তানের উপর আমার অধিকার কিসের? নিজের সন্তানরে ভালবাইসা আমি কি করি আসলে? পিতৃত্ব পালন? নাকি এইরকম যে, প্রতিনিয়ত আমি তারে শিখাই – তুমি আমার? নাকি আমার এই অন্ধ ভালবাসাটা তার উপর এইরকম এক অধিকার চাপাইয়া দিতেছে? প্রশ্ন হইল, কেন? তাইলে অন্যদের সাথে এই অধিকারের সম্পর্ক, এই ভালবাসার সম্পর্ক কি পরিবার থেইকাই একটা রেজিস্ট্যান্স খাড়া কইরা দিতেছে না? একটা পার্থক্য? একটা পক্ষপাতিত্ব? মেয়েটার নাম আমি জিজ্ঞাস্ করি নাই। কোনদিন।
দুপুরে গোসলের পর, ভাত খাওয়ার পর দুইচোখ জুইড়া ঘুম আসতেছিল। আঁচল কাঁদতে কাঁদতে ঘুম দিছে। দাদি আইসা তারে নিয়া গেছে তাঁর রুমে। আমি আমার রুমের দরজা বন্ধ কইরা দিলাম। তারপর নওরিনরে কাছে আইনা বসাইলাম। দুইজনে দুইটা সিগারেট ধরাইলাম। বললাম- নওরিন, নতুন কবিতাটা ত শুনাও নাই আমারে।
. — শুনবা?
. — হুম।
নওরিন একমনে কবিতা পাঠ করতে লাগল। তার বিষণ্ণতার কবিতা। মনে হইল, সে এইখানে একটা শিশুর কথা বলতেছে। একটা বিষণ্ণ শিশুর কথা। আমি তার বিষণ্ণতার কোন অর্থ খুঁইজা পাইলাম না। তবু শুনতেছিলাম। একমনে। আমি তার কবিতার একাগ্র পাঠক। সে কবিতা পাঠ করতেছে। সে কাঁপতেছে। আমি তার আধো নিমীলিত চোখের দিকে তাকাইলাম। তার গাঢ় মুখের দিকে তাকাইলাম। আমি তার হাত ধরলাম। আমার আবারো মনে হইল- নওরিন এই মহাবিশ্বের সবচেয়ে ঘন নক্ষত্র। এই ক্ষেত্র থেইকা আমি ছুটতে পারবো না কোথাও; কোনদিন।