দালিলার অন্ধকার ও অন্যান্য কবিতা । হাসান শাহরিয়ার
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জুন ২০১৪, ২:১৭ পূর্বাহ্ণ, | ৩০২৮ বার পঠিত
অভিমান
এরপর আমার বৈশাখ মোড়ানো রৌদ্র ছাদ; ভাতের মত মেঘেরা
অচন্দ্রচেতন ঝোপ বুকে নিয়ে হাঁটতে থাকে পৃথিবীরে চেয়ে;
আর ভাসতে থাকে সমুদ্রের বেলোয়ারি জলে।
তুমি কখনো তাকে শরীরের বিকিরিত তাপে নাও নি আঙ্গুলের কড়ে
অথচ রোজ রোজ চোখে গিলে নাও বিরান দেহ বিগলিত চর;
আর তাঁবু গাড়ায়ে ঘুম-সুখ জাগ-সুখ খেলো।
আর শুনতে থাকো ঠিক লাউয়ের পাতার নিচে একা চড়ুইয়ের জিকির
মেঘ-বিলের ঝোপে সে কোনদিন উড়তে পারে নি!
আর যদি পারত-
তবে তার ডানা ভিজে যেত;
ডানা ভিজে যেত আর তব ছায়া ছেড়ে যেত!
এ অভিমান কোনদিন দায় বোঝে নি।
(এপ্রিল ২০১৩)
কাঠের ঘর
কাঠের ঘর, ঘুমের ঘর
তোমারে নিয়া আগাইতেছে
বৃষ্টির ভিতর।
পেন্সিল খসে খসে আঁকিয়ের ক্যানভাসে
ভিজা রাস্তা যাইতেছে কবরের কাছে।
কাঠের ঘর, ঘুমের ঘর
তোমারে নিয়া আগাইতেছে
আমার ভিতর।
(জুন ২০১৪)
স্কেচ
ফিরার সময় আমি বলছিলাম- বিদায়। তুমি যখন
একমনে একটা সাঁকো আঁকতেছিলা। অর্থবহ।
আমার তখন লোকশিল্পের দলিলগুলার কথা মনে
পড়তেছিল; যেইখানে বৃষ্টির দিনে ঘরের
ভিতর বইসা গ্রামের সহজ মেয়েরা কাপড় বুনত।
তুমি কি কোনদিন বলবা আমারে- এই সাঁকোটা
ধইরা তোমার কাছ থেইকা অনেক দূরে
যাইতে অথবা কোন একদিন দূর থেইকা
আবারো তোমার কাছে ফিইরা আসতে?
সাঁকোর নিচে যেই উদাম নদী তিরতির করতেছে;
তার নাম কি ইছামতি?
যখন জেটপ্লেন উইড়া যায়, তার শব্দের নিচে আমি
দেখি- কেমন করে রেললাইনগুলা ছোট হইয়া আসে
আর ফ্লাইওভারের নিচে একটু একটু ভাইঙ্গা যায়
মফস্বলের স্বপ্নবাজ। তখনও- তবু- একটা নিঃসঙ্গ
চারাগাছ বড় হইতে চায় তোমার ভিতরে কোথাও।
আমি তোমার ইশারা পাইয়া সেই চারাগাছের
একটা স্কেচ করতেছি। সাঁকোর অন্যপাশে বসে
যেইখানে আমার ঘর, তার ছায়া যখন নদীর
মরায় ডুইবা যাইতেছে।
(এপ্রিল ২০১৪)
দালিলার অন্ধকার
‘Then she called, “Samson, the Philistines are upon you!’’ He awoke from his sleep and thought, “I’ll go out as before and shake myself free.’’ But he did not know that the LORD had left him.’ [Judges 16:20]
আমি একজন নিঃসঙ্গ মানুষ। অনেকটা-
আমার ঘরের একলা জানালাটার মত।
আবার আমি তার চেয়েও দুঃখী। কারণ-
জানালার মতন আমি চাইলে তোমাকে
দেখতে পারি না। এই না দেখার ভিতর
যেই অন্ধকার- পুরান সমরের নিনাদ-
নন্দনে ভাসে, তার নাম দালিলা। তারে
আমি প্রেমিকা জ্ঞান করি। খুঁজি আমি
তারেই- ঠিক যোআ আর এস্তাওলের
মাঝখানে। ধর্মআলারা কোনদিন যার
আর খোঁজ রাখে নাই; নবী আব্রাহামের
নদীগুলাতে। যদিও তারা বইয়া
যাইতেছে আজকেও- গোলকের
খন্ড খন্ড ভাগে, কোণে, অবিরত
সংহারে- তবু একজন সতী নহে ত
একজন মাগির মূর্তি ছাড়া– যেন তারা
দালিলার আন্ধারে আর কোন নাব্যতা
খুঁইজা পায় না আজও। তারাও অন্ধ?
আমার মত? তারাও কি নিঃসঙ্গ? আমার
জানালার মত? দালিলা! সে প্রেমিকা
আমার। তার অন্ধকারেই আমার পথ!
(জুন ২০১৪)