একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা ও দু’টি প্রশ্ন- বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীরা হুশিয়ার! / বাকি বিল্লাহ্
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ডিসেম্বর ২০১৩, ২:৪৮ অপরাহ্ণ, | ২০৩০ বার পঠিত
- ওরা বলে ওই গাড়িতে আমাদের জন্য
খাদ্য ও পানীয় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে
কিন্তু বন্ধুগণ
ওই গাড়িতে কোনো খাদ্য ও পানীয় ছিল না
ছিল ৩০০টি লাশ
আর যখনই আমি সেকথা বলতে চাই
আমার দিকে এগিয়ে আসে রাইফেল
এগিয়ে আসে উদ্যত বেয়োনেট
খামোশ! বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীরা হুশিয়ার!
(সঞ্জীব চৌধুরি)
ত্রিশাল কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র সোহেল রানা রাজের বিরুদ্ধে রাষ্টদ্রোহ মামলা করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে দৃশ্যত এ ঘটনার সূত্রপাত। ১৬ মে সকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজকে পেটায় ছাত্রলীগ। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে রাজকে ধরে ত্রিশাল থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে রাজের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বাদী হন ডেপুটি রেজিস্টার হুমায়ুন কবির । ময়মনসিংহ আদালতে হাজির করে রাজের জামিন চাওয়া হলে জামিন না-মঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়। গত ২৮ মে রাজকে আবারো আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। এর প্রেক্ষিতে আদালত ৩দিনের রিমান্ড দেয়। পুলিশ দাবি করছে রাজ রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। এসব কিছুর প্রেক্ষিতে রাজের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে ছাত্রলীগের বেধড়ক পিটুনি, মামলা-রিমান্ড এবং সর্বশেষ রাষ্ট্রদ্রোহের মত গুরুতর মামলা। কি সেই ফেসবুক স্ট্যাটাস? ইলিয়াস আলীর গুমের ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ তার ওয়ালে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জংগলের বাঘের মত ক্ষুধার্ত ও হিংস্র ‘ বলে উল্লেখ করেন। এর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজ উদ্যোগী হয়ে তাদের একজন ছাত্রকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়ার ঘটনায় পূর্বাপর যেসব তথ্য জানা যায় তাতে দেখা যায়- প্রশাসনের রাগের পেছনে অন্যান্য কারণও আছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেমিস্টার ফি বর্ধিত করে ৪ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করলে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তুললে কর্তৃপক্ষ সেমিস্টার ফি ২ হাজার ১শ টাকা পুন:নির্ধারণ করতে বাধ্য হয়। সামনে থেকে ওই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সোহেল রানা রাজ। ওই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করায় রাজকে। গ্রেপ্তারের কারণ দেখানো হয় অন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্টাফ বাসের সাথে বিপরীতমুখী আরেকটি বাসের সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-কর্মচারীসহ ২৫জন আহত হলে শিক্ষার্থীরা ঢাকা ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ ও ভাংচুর করলে পুলিশ অজ্ঞাতনামা ৮০০জন ছাত্রকে দায়ী করে মামলা করে। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় রাজকে।
এসব বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাংলানিউজ ২৪ এর কাছে যে মন্তব্য করেন তা বেশ কৌতূহল উদ্দীপক। তিনি বলেন, রাজ সবসময় ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে রাখতো। আন্দোলন কে তিনি বিশৃঙ্খলা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আরো মজার যে এসব বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ হিসেবে প্রশাসনের পাশাপাশি ছাত্রলীগও শৃঙ্খলা রক্ষায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
এখন আমার প্রশ্ন ১. আমাদের দেশে একটি বহুল প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি হচ্ছে সরকারপ্রধানকে খুনি হিসেবে অভিহিত করা। খুনি হাসিনা, খুনি খালেদা বা খুনি এরশাদ শব্দগুলো আমাদের একরকম মুখস্থ হয়ে আছে। মিছিলে মিটিংয়েতো বটেই এমনকি প্রেস কনফারেন্সের বক্তব্যেও খুনি, ভারতে দালাল অথবা পাকিস্তানের দালাল হিসেবে সরকারপ্রধানকে উল্লেখ করার রেওয়াজ পুরনো। আমার মতে, ক্ষুধার্ত বাঘের ন্যায় হিংস্র বিশেষণটি খুনি বিশেষণের চেয়ে লঘুতর। তাহলে সোহেল রানা রাজ রাষ্ট্রদ্রোহী হলে অন্যরা নয় কেন?
সম্পূরক খুচরা প্রশ্ন : বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম একটি ধারাবাহিক আন্দোলন তীব্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। আমরা জানি, এর বিরোধীরা বাঙালির মুক্তি সংগ্রামকে গণ্ডগোল ও বিশৃঙ্খলা হিসেবে অভিহিত করেছে। সোহেল রানা রাজ যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী হয়, তাহলে বাংলাদেশ-বিরোধীদের যুক্তিই প্রকারান্তরে বৈধতা পায় কি না?
প্রশ্ন ২. দূর্বৃত্ত রাজনীতি, ধারাবাহিকভাবে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম-খুন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারী ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাস, জাতীয় সম্পদ নিয়ে রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ে দুর্নীতি- এসব কিছু মিলিয়ে সরকার, সরকারপ্রধান এমনকি স্বয়ং রাষ্ট্রই আমার কাছে খুনি। সোহেল রানা রাজের ভাষায়ও বলতে পারি, রাষ্ট্র ক্ষুধার্ত বাঘের ন্যায় হিংস্র। এই ভাষায় কথা আমি প্রকাশ্য সভায় বলেছি, এখন আবারো বলছি। তাহলে আমি রাষ্ট্রদ্রোহী কি না?
গত কয়েকদিন রাষ্ট্রদ্রোহ কথাটি বহুল আলোচিত। জ্বালানী উপদেষ্টা তৌফিক এলাহি বলেছেন, যারা কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধিতা করছেন তারা রাষ্ট্রদ্রোহী। কিন্তু কুইক রেন্টাল নিয়ে সরকারী আনুকূল্যে কয়েকশ কোটি টাকার তেল চুরি নিয়ে তথ্য প্রমাণ সহ যে অভিযোগ এসেছে তার কোনো জবাব দেননি। বিচার বিভাগ ও সংসদ পরস্পরকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলে বেশ মাঠ গরম রেখেছেন। রাষ্ট্রদ্রোহিতা নিয়ে এসব আবালদের আবলামি এখনই বন্ধ করার এবং অনতিবিলম্বে সোহেল রানা রাজের মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।