নুসরাত জান্নাহ স্নিগ্ধা’র গদ্য
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ নভেম্বর ২০১৩, ৭:০৮ অপরাহ্ণ, | ২৫৪৭ বার পঠিত
অনুভূতির চার রঙ
SUBLIME
৩জুলাই, ২০০৪। শনিবার। আমি আমার এক বান্ধবীর বাসায় বসে গল্প করছিলাম। হঠাৎ আমার মোবাইল রিংটোন বেজে উঠলো, দেখলাম আম্মার কল। ধরলাম। আম্মা জানালেন, আমার বোনের ছেলে হয়েছে। অতিরিক্ত খুশিতে কোনও ভাবানুভুতি প্রকাশ করতে পারছিলাম না। তাড়াতাড়ি একটা রিকশা নিয়ে হাসপাতাল গেলাম। আম্মা আমার হাতে ছোট্ট একটা পিচ্চি বাচ্চা ধরায় দিলেন। বললেন, এটা তোর বাবা। আমি বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম আর সেও আমার দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে ছিল। একটু একটু করে হাসছিল, যেন আমি তার খুব পরিচিত। তখন আমার ভিতরে যে ভালোলাগার অনুভূতি কাজ করেছিল তা আসলে অন্য আর কিছুর সাথেই মেলানো যায় না।
COMIC
আমি আর আমার এক খালাতো ভাই সমবয়সী ছিলাম। তো সে যখনই আমাদের বাসায় আসতো আমার জামা পরে ঘুরতো। একদিন এমন সময় বাবার এক বন্ধু আমাদের বাসায় বেড়াতে আসলেন আর আমার খালাতো ভাইকে দেখে বললেন— ” বাহ! আপনার মেয়েটি তো দারুণ মিষ্টি। ও বড় হলে আমার ছেলের বউ বানাবো।” উনার এই কথায় পুরা বাসায় সবার মধ্যে হাসির রোল পড়ে গেল। আর আমার খালাতো ভাই এত বেশি লজ্জা পেয়েছিল যে সে আমার জামা পরার খেলা ছেড়ে দেয়। এখনও এত বছর পর যখন আমার ভাইটি বিয়ের যোগ্য আমরা তাকে সেই ঘটনা দিয়ে জ্বালাই আর সে লজ্জা পায়। আর তাকে লজ্জা দিয়ে আমরা মজা পাই।
BASE
আমার এক বন্ধু, নাম অমিত। চেহারায়, চিন্তাভাবনায়, চালচলনে সবকিছুতেই সে ছিল সবার থেকে একটু আলাদা আর আকর্ষণীয়। তার স্বপ্নই ছিল জাহাজের ক্যাপ্টেন হয়ে দূরদুরান্তের পথ পাড়ি দেয়া আর মাঝসমুদ্রে জাহাজের ডেকে বসে জোছনা দেখার। স্বপ্নঘেরা কল্পনার জগতেই সে থাকত সবসময়। প্রচুর বই পড়ত, গান শুনত। তো আমাদের ইউনিভার্সিটি ভর্তির সময় মেরিন এ চান্স না পেয়ে ওর বাবার পরিচিত একটা লিঙ্ক এ সরাসরি জাহাজে উঠে সে। সে–সময়টা তার জীবনের সবচেয়ে সুখের ছিল। ঘোরের মাঝে ছিল সে। কিন্তু প্রকৃতি মানুষের আতিরিক্ত সুখ সহ্য করতে পারে না। জাহাজ ঘুরানোর সময় জাহাজের ডেক থেকে পানিতে পড়ে যায় সে। সমুদ্রের অতল গহীনে হারিয়ে যায় আমার বন্ধুটি। চারদিন পর তার লাশ পাওয়া যায় সেই সমুদ্রে যে–সমুদ্রের টানে সে ঘর ছেড়েছিল। দূরদূরান্তের পথ পাড়ি দেয়ার স্বপ্নে হারিয়ে গিয়েছিল অন্ধকারে। আমি আজও সমুদ্র ঘৃণা করি। আমি আজও অমিতকে ভুলতে পারিনি।
HORRIBLE
ঘটনাটা আমি যখন স্কুলে পড়ি তখনকার। একদিন দুপুরে স্কুল থেকে এসে শুয়েছিলাম। হঠাৎ চিৎকার শুনে বারান্দায় গিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি আমাদের পাশের বাসা থেকে চিৎকার করতে করতে একজন মহিলা ছুটে বেরিয়ে আসছেন। উনার শাড়িতে আগুন। ক্রমশ আগুন তাকে গ্রাস করছিল। সেই দৃশ্য এতটা ভয়ংকর যে আমার পক্ষে ভাষায় ফোটানো সম্ভব নয়। মহিলার চিৎকারে আশেপাশের মানুষ জড়ো হয়ে উনার গায়ের আগুন নিভিয়ে উনাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। মহিলাটি সুস্থ হয়ে ওঠেন কিন্তু তারপর যখনই সেই মহিলাকে আমি দেখতাম সেই দৃশ্য আর চিৎকার আমাকে অসাড় করে দিত। অসহ্য এই পীড়া থেকে বের হতে অনেকদিন সময় লেগেছিল আমার।