মুহম্ । মুহম্মদ ইমদাদ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ অক্টোবর ২০১২, ২:১৫ অপরাহ্ণ, | ১৮২৫ বার পঠিত
সময়
পাবো পায়ের ওপর পা ভিড়ে।
নিজের বয়স,
অনেক বড়ো বিরক্তিকর।
ছেলেবেলা পাবো বহুরকম
মেয়েবেলার রঙিন চলাচল পাবো
নিজের কন্যার আর বিস্মৃত, স্মৃতিহীন
না-হতে পেরে অপার স্নেহ চাবো
তোর, সাধ্যাতীত।
এর নাম সময়।
যে গান গেয়েছিল
যে গান শুনেছিল
দুজনই অতীত মাঝরাতে
দূর কোনও দূরে চিৎকার থেমে যায়
ঘুম থেকে জেগে উঠে সূর্যের মুখ
স্নান আর স্নান আজীবন, ধূলি জমে ধূলি ঝরে পড়ে
একবার এসেছিল কেউ
আর যে আসেনি সেটাই সময়।
পেয়ারা যে পেকেছিল, মানুষ ব্যক্ত করেছিল তার আয়ু
তারপর করেনি আর।
নির্জীবনের কাল
কবরের রাতে রেখে কারও ইতিহাস
চলে গেছে সূর্যভরা দিনের দুপুরে, উঠোনে
ঘাস জেগে আছো মাটির
পোশাকে হরিৎ
চোর ও প্রেমিক হেঁটে ভাঙে পথ
রাতে কথা হবে
কার স্নিগ্ধ কানে; তোর
ঝরে পড়ে দূরে শিশির
শীত থেকে পালিয়ে এসে
ওম নাও
শান্তি নাও
ওম এবং শান্তি
বুনোসমুদ্রে ক’জন বন্দী নাবিক
জলরাশি হাসে; তার অনিঃশেষতা ছড়িয়ে দেয় আর বলে
মেনে নাও আমাকে আরেকবার, নোনা জলমন্দির ছেয়ে
প্রার্থনা-চিৎকার ধাক্কা খায় ঢেউ-এ, আকাশে ঘনিয়ে আসে মেঘ
জল বেড়ে যায়; ভাসানের সীমান্তে আরেক ভাসান আশরীর দিগন্ত মাখে
মানুষের ভূমিজ্ঞান বৃথা স্মৃতিতে নড়ে, নড়ে-নড়ে মরে যায়? দেশে যে-কাল
মৃত্যু যেত ছেনে; তোর শিল্পিত আত্মদান মাটির কবরে—
ভিনদেশ-জলে ভেসে যায়, পৃথিবী ঠুকরে খায় বীর্যবন্ত হয়, হয়ে ওঠে।
জন্মবারে লেখা শোকগাথা
অচেতন তিনি ওটি’র শাদাশয্যায়, সার্জন আনন্দের সঙ্গে কাটছেন শরীর, মৃত্যুর!
ওনার দুই সন্তানের মা কাঁদবে না কাঁদবে না বলে কেঁদে ফেলেছেন, কেঁদে চলেছেন…
ক্লিনিক-করিডোরে দূরসম্পর্কের কেউ, যার শরীর মনে হচ্ছে ভালো; সে চিন্তাচ্ছন্ন—কী হবে যদি মৃত্যুই, মৃত্যুই এসে যায় আমাদের প্রাণগ্রস্থ কান্নার রাত্রি একায়!
কেউ সেই ভাবনা-মাঝে ফোনে বলতে চায় ‘আনন্দময় জন্মদিন’ (তখন অবশ্য রাত্তির)
আজকে নাকি আমার জন্মদিন?
মহাজ্ঞানী বানাবার ইন্ডাস্ট্রি; পাঠশালা সনদে লিখেছে ৬ জানুয়ারী নাকি আমার জন্মতারিখ; আমি সত্যি জানি না কবে কোন মুহূর্তে এসেছি বিরাট বিশ্বে ক্ষুদ্র মানুষের এই বাচ্ছা,
ভোরে হাসপাতাল ছেড়ে এসে, মৃত্যুকে যখন মেনে নিচ্ছি প্রায়,
দেখি ফুলের দোকানে সজীব ছেঁড়া ফুল গোলাপের লাল লাল
যেন তারা নিজেদের হৃদিরক্তের মাঝে লাল হয়ে আছে ক্রিমজন।
১০ টাকায় ১টা লাল ফুলশব কিনে গোপন আমার মৃত্যুর শীতে লুকিয়ে রাখি
নিজেকে গিফ্ট করা হল তবে জন্মদিনের ফুল!
নিজেকে নিয়ে ইয়ার্কি করা হল তবে?
মানুষের জন্মকাজকে ভেংচি কাটা হল?
না না
আমার ৩০তম মরণদিনে আমি মুক্তি পেয়েছি
সরকারি সভ্য চাকরের সম্মান থেকে
অবচেতনের আবডালে
যে-ক্ষমতাবান গর্দভ জান্তব হুংকার করে হেঁটে বেড়াত
তার মৃত্যুর ওপর আরও ১টি ১০ টাকার নোট উৎসর্গ
করা হোক তবে?
নিজের সঙ্গে আমি
অনেকবার বেঈমানি করেছি;
যেমন ধরুন, জ্বর হয়েছে ১০দিনের জন্য, আমি কী করলাম,
শরীরকে বুঝালাম ওষুধ খাবো, মাপ করে দাও
শরীর আমায় বিশ্বাস করে ভালো হতে থাকলো প্রাণময়
আর আমি ৩দিন পরেই ওষুধপত্র ভুলে
চম্পট
কিন্তু শরীর আমায় ক্ষমাই করে
আর আমি সারা জীবন করে যাই
এমনতর নিখাদ বেঈমানি।
বাবার ময়লা রুমাল একবার
আমার চাকরজীবনে ফেলে গিয়েছিলেন
আমি ঘর গোছাতে পেয়ে
থমকে গিয়েছিলাম, ‘আমার বাবার রুমাল! এত গরিব!’
কাজের তাড়ায় তেমন আর ভাবতে পারিনি
মনে করেছিলাম একদিন খুব করে দুঃখ পাবো
চোখ থেকে জল ফেলবো একা, কেউ দেখবে-জানবে না
হয়ত কবিতা লেখবার কার্যকর আবেগ জাগাবো নিজের মাঝে
কিন্তু সে অবসর কোথায়; এত ব্যস্ত…
কবি করে জন্ম না দিলে
পিতা, এমনই গোপন থাকে তোমাদের স্বেচ্ছাচারিতা!