শীতকাল । স্নিগ্ধা বাউল
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩৫ অপরাহ্ণ, | ২০৪ বার পঠিত
পুরো আট ঘণ্টা তারা এক ঘরে ছিলো, সকাল থেকে বিকেল পেরিয়ে তখন সন্ধ্যা। পুষ্পিতা আজ পরেছে হালকা সবুজের একটা কামিজ আর শীতের শেষ সময়ে এসে আড়ং থেকে কেনা পাতলা একটা চাদর। সারাদিনে একটুও সরে যায়নি চাদরটি। শেষ চা খাবার সময়ে ‘পুষ্প’ বলে আচমকা ডাকে সৌম্য। পুষ্পিতা অবাক হয়; এই নামে ওকে একমাত্র বাবাই ডাকতেন কিন্তু সৌম্যকে কখনো তা বলা হয়নি তো।
আজ ওদের প্রথম দেখা। বলা যায় তিন বছর ফোনে যোগ ওদের, কখনো অযোগ হয়নি। হিন্দু শাস্ত্রের বাণপ্রস্থ কাল নয় বরং গার্হস্থ্যকালের টুইটুম্বর সময়ে চাকরি আর কর্মজীবনের বাইরে ব্যস্ততাহীন দুটো মানুষ। পুষ্পিতার এক রাতজাগা রাতে সৌম্যর তাকে খুঁজে পাওয়া ।
—এখনো ঘুমান নি?
—না।
—কেমন আছেন? আমি সৌম্য চ্যাটার্জি। কলকাতা থেকে বলছি। কোন বাহানা ছাড়া বলছি, ছবিতে বেশ সুন্দর লাগছে আপনাকে।
অনেক্ষণ পর আবার সৌম্য লিখলো,
—কী হলো! আমি কী বিব্রত করলাম আপনাকে? সরি বলবো না, তবে এটুকু বলতে চাই প্রশংসা করেছি আপনার, অন্য কিছু নয়।
—আমি পুষ্পিতা। আর হ্যাংলামো আমার একদম পছন্দ না।
—আমি হ্যাংলা নই। স্বাস্থ্য বেশ ভালো । তবে অম্ল আছে। আর মাঝে মাঝে একটু দুর্বল লাগে। কিছুদিনের মধ্যেই দিল্লি যাবো। আপনার কিছু লাগলে বলুন।
—হাহাহা। আমি লাড্ডু খাই না!
এরপর বছর তিনেক চলে এভাবেই । আজ তাদের প্রথম দেখা হলো। সৌম্যর অসাধারণ কন্ঠ আর ছবি আঁকার মুগ্ধতা ছুঁয়ে গিয়েছিলো পুষ্পিতাকে। কখনো খুঁটিয়ে জানা হয়নি এমন একটি মানুষ কেন সবাইকে ছেড়ে একা থাকে। সৌম্যও জানতে চায়নি পুষ্পিতা কেন নিজের গল্প করে না। তবু তিনবছর থকথকে পারদের মতো জমে ছিল তাদের প্রতি প্রহরের গল্প। কখনো গান, কখনো ছবি, কখনো নদী, কখনো দুই বাংলার রাজনীতি; কখনো রান্না পুড়ে ছাই হয়েছে, কখনো সৌম্য হঠাৎই ফোন রেখে দিয়েছে।
টানা চারদিন ওদিকে কোন খবর নেই। না ফোন, না ভাইবার, না মেইল। কোন কাজ করা হচ্ছে না। হঠাৎই দুপুর কাঁপিয়ে ডেকে যায় ঢাকার আকাশে একটা চিল। পাখির সৌন্দর্য উপভোগ যতোটা হবার কথা আজ আর হচ্ছে না পুষ্পর। এক চিলতে আকাশ জানালার কাছে ডেকে যায় মেঘদূতের বাহানায়, বহুদিন পর এমন লাগে যেন বৃষ্টি হবে সব কাঁপিয়ে।
—আচ্ছা তুমি পুষ্প বলে কেন ডাকলে, সৌম্য। এটা তো বাবা আমাকে ডাকতেন।
—শোন, আমার মনে হয় তোমার আমাকে ফোনেই বেশি আপন মনে হয়। এড়িয়ে গিয়ে সৌম্য বললো, আর তোমাকে এখন ফুলের মতোই সুন্দর লাগছে!
—বাহ। সকালের ফুল বিকেলে ঝড়ে পড়ার আগে তোমার মনে হলো। এজন্য বলি তোমার কাছে মেয়েরা কেন ঘেঁষে না!
—হয়তো।
—সারাদিনে একবারও ফুল ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করলো না!
—কিছুটা তাকিয়ে সৌম্যর নির্মোহ অথচ অবাক চাহনি, বলে, চলো যাই। ট্রেন ধরতে হবে ।
পুষ্পিতা চেনে, শরীর ঘেঁষা পুরুষের চোখ। সৌম্য তাকে ভালোবাসে। আর পুষ্পিতা ভরসা করে সৌম্যকে। ততটা ভরসা যতোটা করলে নিজেকে অর্পণ করা যায়।
আবার কর্মব্যস্ত জীবন। কলকাতা থেকে চলে এসেছে আজ দেড় বছর। সৌম্য এরমধ্যে দিল্লি গেছে আরো তিনবার। পুষ্পিতাকে বলে লাড্ডু আনতে যাই।
টানা চারদিন ওদিকে কোন খবর নেই। না ফোন, না ভাইবার, না মেইল। কোন কাজ করা হচ্ছে না। হঠাৎই দুপুর কাঁপিয়ে ডেকে যায় ঢাকার আকাশে একটা চিল। পাখির সৌন্দর্য উপভোগ যতোটা হবার কথা আজ আর হচ্ছে না পুষ্পর। এক চিলতে আকাশ জানালার কাছে ডেকে যায় মেঘদূতের বাহানায়, বহুদিন পর এমন লাগে যেন বৃষ্টি হবে সব কাঁপিয়ে।
সন্ধ্যার পর পর খবরটা আসে। দিল্লিতে ডেডবডি। লিভার ক্যান্সার ছিলো বহুদিন।
আগামী ডিসেম্বরে আবার যাবার কথা ছিলো। চায়ের জল বসিয়ে পুষ্প ভাবে এখনই শীত-শীত লাগছে। ডিসেম্বর কী তবে চলে এসেছে হঠাৎ!