গতকাল আমি ছিলাম চাঁদ । ঋতো আহমেদ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ অক্টোবর ২০২২, ২:৪১ পূর্বাহ্ণ, | ৪৮৩ বার পঠিত
নূর উন্নাহার
নূর উন্নাহার একজন কবি ও ভিজুয়াল আর্টিস্ট। তাঁর জন্ম এবং বেড়ে ওঠা পাকিস্তানে। বর্তমানে করাচীর আর্ট স্কুল Indus Valley School of Art and Architecture থেকে শিল্পকলায় ব্যাচেলর ডিগ্রিতে পড়ছেন। তিনি photography, illustrations, journaling, collages সহ বেশ কিছু মাধ্যমে কাজ করেন। তাঁর কবিতা আর আর্ট একে অপরের সাথে মিশে থাকে। ইতোমধ্যেই তাঁর কাজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তাঁর কবিতার ভাষা ইংরেজি। এ পর্যন্ত দুটি কবিতাবই প্রকাশিত হয়েছে। ‘গতকাল আমি ছিলাম চাঁদ’(yesterday I was the moon, 2018) আর ‘হারানো জিনিসের নূতন নাম’ (new names for lost things, 2021)। এর মধ্যে প্রথম বইটি ডাচ আর চাইনিজ ভাষায়ও অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৮ সালে তাঁর একটি কবিতা-জার্নাল প্রকাশিত হয়— ‘খুঁজে নাও তোমার ভাষা’ (find your voice, 2018)।
আজ আমরা এই কবির প্রথম কবিতাবই yesterday I was the moon থেকে কিছু কবিতার বাংলা অনুবাদ পড়ব।
১.
সেই ব্যক্তিটিকে বলছি
যিনি আমার প্রেমে পড়তে চান
সারাজীবন আমি একটা আকাশ নিয়ে আছি
জীবন, আলো আর ক্রোধে পরিপূর্ণ
যদি আপনি বজ্র-বিদ্যূৎ সহ
আসতে না-পারেন; তাহলে আর আসবেন না
একেবারে
২.
আমার প্রয়োজন নক্ষত্র, শক্তিমত্তা, আর আমার হৃদয়ের ভারসাম্য
বেশ কিছুদিন হয়ে গেল শেষ যেদিন এগুলো সব
একত্রে আমার মধ্যে ছিল
৩.
হারতে শেখো আগে
আর
এটাই তোমাকে শিখিয়ে দেবে
কীভাবে জিততে হয়
৪.
এই মনুষ্য-ত্বকে আবৃত আমি
অর্ধেকটা যুদ্ধ আর
অর্ধেক শান্তি
৫.
মানুষ চলে যায়
কারণ
বস্তুর যেমন
দৃঢ়, কঠিন, শক্ত
অণু রয়েছে
তেমনি মানুষও তৈরি হয়েছে
বায়ু, অগ্নি, মৃত্তিকা আর জল দিয়ে
যারা আকৃতি বদলাতে পারে
চলাচল করে
থেমে থাকে না
তাই তাদের যেতে দাও
আর তাদের হতে দাও
যা তারা হতে চায়
যে আকৃতি তাদের পছন্দ
কারণ
শেষ পর্যন্ত
তুমিও গড়ে উঠবে
এমন একটা কিছু
যা একবারে নতুন
অতএব যেতে দাও ওদের
৬.
চাওয়ার তালিকা:
১. প্রচণ্ড সাহস
২. ক্ষমা শক্তি
৩. প্রাচুর্য শক্তি
৪. সীমাহীন দয়ার সরবরাহ
৭.
যখন তুমি পড়ো
পড়ে যাও জাঁকালোভাবে
ধসে-পড়ো কাচের দালানের মতো
ডুবে যাও প্রকাণ্ড জাহাজের মতো
যখন তোমার
ডোবা আর এই ধসে-পড়া শেষ হবে একবার
তখন ধ্বংসাবশেষ থেকে
এই ডোবা আর ধসে-পড়াই তোমাকে
গড়ে তুলবে আবার
৮.
এখানে জিততে হলে তোমকে
হেরে যাওয়া, বেছে নেয়া, আর ফিরিয়ে দেয়ার শিল্প আয়ত্ত করতে হবে
যাকে আমরা বলি
জীবনের খেলা
৯.
আগুনের ত্যেজ যেমন
ধাতুকে গলিয়ে আকৃতি দেয়
কবির বিষাদ যেমন
জন্ম দেয় কবিতার
তেমনি পৃথিবীর তাবৎ সুন্দরের শুরু-যে
সুন্দর হবে
তা কিন্তু নয়
১০.
বেড়ে ওঠো
বুনো-ফুলের মতোই
যেন কেউ খেয়াল না করে
কারণ ওরা সুক্ষ্ণভাবে শুঁকতে পারে না
আর যখন তা বুঝতে পারবে তুমি
লক্ষণীয় সুক্ষ্ণতায়
কিছু একটা হয়ে উঠেছ
তখন সাহায্য কোরো ওদের
যারা বুনো-ফুলের মতোই
সুক্ষ্ণতা ছাড়া তেমন কোনো
গন্ধ ছড়ায় না
১১.
বহু বছর আগেই
মরে যাওয়া বিস্মৃতির
অতল থেকে
এই-যে শিখেছ
ফুল ফোটানোর কৌশল
এটা-কি সুন্দর নয়
বিস্ময়কর নয়
১২.
মাঝেমধ্যে আমার শব্দগুলো
গ্লাসের ভাঙা টুকরো হয়ে যায়
কষ্ট না-দিয়ে; রক্তাক্ত না-করে
বেরুতে পারে না
তখন কথা বলতে ভুলে যাই আমি
১৩.
ইতিহাস
আমি চাই সে আমার চোখে প্রতিবিম্বিত হোক
প্রতিধ্বনিত হোক আমার শব্দগুলোয়
আমার ত্বকের সাথে বেড়ে উঠুক
আমার আয়নার জন্য আমাকে জানতে হবে
কোত্থেকে এসছি আমি
কোথায় ছিলাম
আর কোথায়-ই-বা যাচ্ছি
১৪.
তুমি চাঁদ
আর পৃথিবীটা এক
নিঃসঙ্গ নেকড়ে; কেঁদে ওঠে
তোমাকে দেখেই
কারণ তুমি গৌরবময়
আর পুরোপুরি নাগালের বাইরে
১৫.
ঠিক আছে
তুমি যদি পুড়তে থাকো
ক্রোধে
কিংবা বিষণ্ণতায়
অথবা দু’টোতেই
তবে দ্রুতই ধসে-পড়া
প্রয়োজন তোমার
যাতে শিখতে পারো
কীভাবে ফিনিক্সেরা
পুনর্জন্ম নেয়
পুড়ে গিয়ে
তাদের অস্তিত্বের
ছাই-ভস্ম থেকে
যখন জেগে ওঠে আবার
১৬.
একই সাথে নৈঃশব্দ্য আর কোলাহল
বিরাজ করে আমার অস্থিমজ্জায়
প্রতিটি যুদ্ধের আগে; শান্তির
আওয়াজ তুলি
প্রতিটি হারের পর; জেগে উঠি
ঝড়োয়া-আকৃতির সেরা একজন হয়ে
১৭.
আলো ঝলমলে ব্যস্ত রাস্তার
একটা শহর হওয়ার কথা ছিল আমার
আমি চেয়েছিলাম রোদে উষ্ণ
একটা ঘর হতে, যেখানে
ফুলদানি ভরে থাকবে শুকনো ফুলে
কিন্তু আমি আজ কেবল এক
উন্নতির ফাঁপা কঙ্কাল ছাড়া কিছুই নই
যেখানে প্রতিদিন কিছু-না-কিছু
গড়ে আর ভেঙে পড়ে
এতেই যেন খুশি আমি
১৮.
তোমার হৃদয়কে শেখাও যেন সে
কাচের মতো গড়ে না-ওঠে
কারণ তা ভেঙে যায; নাজুকভাবে
সুন্দর এক ট্র্যাজেডির মতো
অতএব শক্তি এবং সাহসিকতার আগুনে
এটিকে শক্ত করে তোলো
যেন ভাঙতে না-পারে
সহজে
১৯.
শিল্পকে যথাযথ
কাব্যিক আর
নির্ভুল হতে
বলে না কেউ
বলে অবস্থান নিতে
শ্বাস নিতে আর
হয়ে উঠতে
এইতো ব্যাপারটা, সব সময় এমনই ছিল
২০.
অতীতকে গ্রহণ করো অনুগ্রহে
বর্তমানকে যত্নে
আর ভবিষ্যতকে ঔজ্জ্বল্যে
এর চেয়ে দীপ্তিমান কিছুই হতে পারে না
যখন যত্নের সাথে
এই তিনটিকে একসূত্রে বাঁধা যায়
২১.
তুমি জানতে চেয়েছিলে
আমি কীভাবে শিল্প সৃষ্টি করি
আর আমি
দীর্ঘ, ঝলমলে, দাম্তিকতাপূর্ণ
বক্তব্য দিয়েছিলাম তোমাকে
কিন্তু সত্য আসলে
অন্যরকম
আমি কখনো শিল্প সৃষ্টি করিইনি
ধবধবে সাদা ওই কাগজে
কেবল কান্নার, প্রতিশোধের আর গল্পের
ঝড় তুলেছি
ওটাই অনেকটা
শিল্পের মতো
দেখাচ্ছিল
বাংলা ভাষান্তর : ঋতো আহমেদ। কবি, অনুবাদক, গদ্যকার।