কুসুমকোরক ও অন্যান্য কবিতা । হাসান রনি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জুলাই ২০২২, ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ, | ৫৯০ বার পঠিত
কোনো এক বই বিক্রেতার কাছে
কোনো এক বই বিক্রেতার কাছে আমি তোমাদের আটকে
রেখে যেতে পারি
চোখের মতো গম্বুজে মিনারের পাশে
আমি খুঁজেছি
পুরাতন স্যাঁতসেঁতে ঘরগুলো
ভিন্ন চরিত্রের ঘোড়া লম্বমান শরীর নিয়ে
জলের ছায়া থেকে উঁকি মারে
এ বিকেলে আমি জলের সমান ছড়িয়ে দিয়েছি ভাবনা
দ্যুতি ছড়ানো বহুকাল ডুবে থাকা আমার ঘরে
এ ভ্রমণে যারা ভেদ করে প্রতীত স্থির
নিজেদের সংহারে ঝুলে থাকা গাভির ওলান, চারপাশে মাছিদের ভন ভন,
কুলোর মতো পিঠ নিয়ে যে জীবন ছেঁকে গেছে
তবু
দাম্ভিক পুত্র আমার মাথায় ঘোরে
এ কম্পমান হৃদয়ের আশেপাশে
স্থিরচিত্রের মতোই যারা আধটুকু দেখিয়ে চলে গেছে
জোয়াল দেয়া গরুর ঘাড়ের জখমে আলাদা আলাদা চামড়ায়
এ শহর, যেখানে একজন বই বিক্রেতা চলে আসে।
ঘোটক
এ চক্ষুষ্মান ঘোটকের পিঠে
আমরা চেয়ে নিয়েছি যুদ্ধ
এক একটা নগর গলে যায়
আয়ুহারা জনপথে ক্ষীণ হ্রেষা
দূর থেকে যে অজবীথি আমাকে দেখে
বুড়ো ভীষ্মের মতো তাকিয়ে
সমরে আমি কি জেনেছি কাল ঘোটকের খুরে?
দৌড়ানো যার ভঙ্গি, হাঁটুভেঙে পড়ে থাকে বধের রথে
বর্মহীন চামড়ার তলে অনঘ মেঘ,
যেখানে সে দু’ পা উঁচু করে আমার সম্মুখে
নিজের বাইরে থেকে দাঁড়ানো রক্তফিনকির দূরে
পড়ে থাকা লাশের হৃদয়ে হতান্তরক সন্ধ্যা।
বাড়ি
বড়সড়ো জানলার পাশে কবরের ওপর ছোট ছোট ঘরগুলো
ভেবেছি শীত নেমে এলে
কুঁকড়ে যাওয়া বাড়িগুলো ছোট হয়ে আসে
পোকামাকড় যেখানে বাসা বদলায়
স্থির হয়ে থাকে যে ঘরগুলো
হুলো বেড়ালের কান্না শোনা এ রাতে
সে রাজা আর খুঁজে যায় মাদি বেড়াল
মুহূর্ত বেদনায় জ্বলা এ বাষ্প
আমায় আলাদা করে যেন আমি দেখে আসি কিছুদিন
মৃত্যুর পরে আমাকে নিয়ে ভাবা দুর্ভোগ
যেখানে একলব্যীয় কাটা আঙুল
তার জীবনের শেষ তীরটি ছুড়ে মারছে
কোথাও না লাগা একটা লম্বমান শরীর ফিরিয়ে দেয় আর হাসে।
এমন ফিরে আসা সবকিছুতে
আমার মনে পড়ে ডাকবাক্সের সামনে দুই অপরিচয়ের কথোপকথন
যারা কুশলাদি জেনে নিয়ে জানতে চেয়েছিল যাবার রাস্তা
বাতাসের মাঝে হাতেগোনা কয়টা শব্দই যেতে পারে দূর।
আমি জানতাম পাখিরা রাস্তার উপর নিচু হয়ে ওড়ে
উঁচু-নিচু যাবার রাস্তায় আমাদের সামনে
এক দানব দুন্দুভি অপেক্ষা করে ।
কুসুমকোরক
বিকেলের ভেতর পাখিরা এলে পরে কী খোঁজে?
জরাজীর্ণ পেতনির মতো ডালে
সবল ধূসর গাছেরা শাড়ির কুঁচির মতো ছায়া ছড়ায়
এ ভেবে ডোবে পাখিরা
ফুল হয়ে ফোটার আগে আনত স্বর
আমাদের চারপাশে আলো ফেলে
শব্দের গরাদে এতদিন কুসুমকোরক চুপি চুপি দেখে
কতটুকু আয়ু যতদিন থাকা যায় উষ্ণ, ওই নিয়ামক আধারে
এতদিন শহরে সন্তর্পণে বেড়ে ওঠা
সহস্র পাতার বিষে দাঁড়ানো বৃক্ষ
নীলরক্ত তার শরীরে ছড়িয়েছে
নিচে তাকিয়ে থাকার মতো পড়ে আছে এখানে
পাতাদের শৃঙ্খল ভেঙে।