একগুচ্ছ কবিতা । রাদ আহমদ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জুলাই ২০২২, ১০:২০ পূর্বাহ্ণ, | ৩৬৭ বার পঠিত
তৌবা ফুল
‘তৌবা’ একটা ফুলের নাম। তৌবা ফুল।
বহু কষ্টে যা কাদা এবং যাবতীয় পঁচে যাওয়ার ভিতরে জন্মা নেয়।
শিরশিরে অবস্থানটা টের পাচ্ছি না, কিন্তু এই প্রায়ান্ধকার ঘিঞ্জি বাড়ির
রান্নাঘরে বহু কষ্টে এসে ঢোকা বিকালের আলো
স্টিলের রুপালি গ্লাসে, প্লেটে, কাপে
পিরিচের গায়ে জন্ম নেওয়া
‘তৌবা’ হল সেইরকমের এক
হুলুস্থুল উদ্দাম নৃত্যের মধ্যে
জীর্ণ কাপড়ে সামান্য আলো প্রচণ্ড
অবাক বিস্ময়ের মধ্যে মৃদু হাসতে থাকা
স্থির সুনিশ্চিত এক বৃদ্ধার চোখ
জাফলঙে প্রশ্ন করা নীল ধ্রুবতারা
ভালোবেসে আলো জ্বলা আলো টিলা পাহাড়ের
পাদদেশ থেকে বিস্তৃত ক্ষেত ধান
যে ব্যক্তি প্রধান তাকে নিচে নামানো হল
তারাগুলা তারা তারা ভরা ক্ষেত ধান
মাটির রঙ কি লাল যার রাস্তাগুলা
গ্রামের বাড়ির সামনে দিয়ে সামাজিক
ঝাঁটাগুলা একত্রিত হওয়া মুহূর্তগুলা
ফিরত আসতেছে না
রাশি রাশি ঝরে পড়া খোসামুক্ত
বীজ আর খোসা রঙের সাথে
মিল করে আঁকাবাকা ঘরগুলা অপেক্ষাকৃত
স্থায়ী যে ব্যক্তি প্রধান তাকে
তারাদের সাথে পিছে ফেলে রেখে আসা হলো জাফলঙে
এমনভাবে উচ্চারণ করো বৃষ্টি
সু মলিন ভাবে উচ্চারণ করো বৃষ্টি— এমনভাবে
যেন হারাবার কিছু নাই যেন পুরনো ঢাকার
আইজুদ্দিন এলাকার লোকটাকে তুমি গিলে ফেলেছ— হজম করতে
পারছো না আর
তার বোনের ছেলেরা অথবা ভায়ের পুত্র কন্যাগণ
তোমারই ভক্ত যেমন তুমি সুবিখ্যাত এক
ক্রিসমাস ক্যারলের রচয়িতা সেই দরিদ্র আন-ইমপ্রেসিভ
শিক্ষকের মতো দিনে এনে দিনে খেয়ে বেঁচে বর্তে থাকা
গরীব চেহারা বডি-ওয়ালা একখানা গাড়িওয়ালা তুমি
অল্প কিছু যাদুবিদ্যা ব্যতিরেকে আর কিছু শেখা নাই
যেন তুমি ক্লান্ত নিরীহ নিঃস্পৃহ এক
মলিন এন্টারটেইনার
কক্সোবাজার তিরিশ পাঁচে
মধ্যবিত্তের জামা পরে ইনানি সৈকতে
সূর্য তেরছা আলো ছড়াবে পানিতে ও বালুতে যত
গোড়ালির ছাপ গর্ত করে গভীরে তত গ্রথিত হবে
স্মৃতিতে গোসল করা এর চেয়ে সহজতর মাঝেমধ্যে
ক্লিষ্টতার রঙ ছুঁয়ে ছেনে হলুদ রঙ—
জামা থেকে সাঁতরে ওঠা কিচকিচে বালু তাকে
নাম দিয়েছি ‘সিলিকা’ আমি তিরিশ টাকায় মৃত তারামাছ
শোভাবর্ধন বাদে যার অন্য কোনও
সফলতা নাই পাহাড় থেকে নেমে আসা
স্মৃতিরা ভাল্লুক
ঐতিহাসিক ঐতিহাসিক একশ ফুটের বৌদ্ধমূর্তি
চিন্তাভাবনা করেছ কি? আমার তো আর
চিন্তাভাবনা এলো না লাল কাগজের কাপে
কফি খাওয়া হলো বরং নাম করা বিচ গুলা সব
একটা একটা পেরিয়ে গেল নিজেকেই
স্মৃতিতে গোসল করতে থাকা কৃষ্ণচূড়া আমাকে শেষে আশ্রয় দিলে
অটো ভাড়া টেনে টুনে তিনশ টাকা তার মধ্যে
পুঁজিতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এই সবকিছুগুলা
চিন্তা করতে করতে হাস্যোজ্জ্বল তারামাছগুলা মৃত
এবং গহীন রৌদ্রগুলা, পাহাড়ের গায়ে আছড়ে
এবং হঠাৎ সামলে ওঠা সোমত্ত রমণী তারা
যেমনভাবে ঠিকঠাক করে নেয় তাদের উজ্জ্বল নীল
জামাগুলা
দেখি, যেখানে কালো পাহাড় ছিল এবং
গরু চরত বৃহৎ বৌদ্ধ মঠের থেকে একটু নিচে
সেখানে সব কুকুর কুকুর এমনকি পুরা
পাহাড়টারই নিরস্তিত্ব কেবল অটো
ভাড়া তাদের তিনশ কিংবা তিরিশ পাঁচে
রাস্তাঘাটের জীর্ণ পাগল বৃদ্ধা তিনি শান্তিতে নাই
শুধু উজ্জ্বলতা আছে এবং প্রাক বসন্তে
বাতাসের ঘ্রাণ জখম-আক্রান্ত হয়ে পড়লে
খুব মনোযোগে হোটেল রুমে ভিডিও গেম খেলার মতন স্মৃতিদের খুঁজি
তিরিশ পাঁচে আক্রান্ত সব জখমগ্রস্থ স্মৃতিরা আমার
পুনঃ তাদের ডুবিয়ে দেই, হলদে জামা তুমি বরং
প্রাক ইতিহাসে চলে যাবার কালে এখানে
কফি খেয়ে যাও না একটু লাল রঙের কাপে
সাগর থেকে উঠে আমরা কফি খেয়ে নিয়ে একটু সাগরেই ফিরে যাই?
খাদ্য অর্থ কী
আমরা খাবারের আত্মাগুলি গ্রহণ করি ও শরীরের মধ্যে রেখে দেই
চিটাগাঙে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের নিচে বসে আমি এটা ভাবি
রাত্রি যে মুহূর্তে ঠিক তিন ঘটিকা পেরিয়ে গেছে
সে মুহূর্তে মনে হলো ‘খাদ্য’ হলো সন্দেশের মতো, বা শনপাপড়ি
খুব ভঙ্গুর, এমনকি এদের ডানাও থাকতে পারে
হাস্যোজ্জ্বল ফেরেশতার মতো ওরা হাসতে হাসতে কক্সবাজারের
নীরব উজ্জ্বল নীলচে সাদা বাড়িগুলার সামনে দিয়ে হেঁটে যায়
আমরা ধরে রাখি ঠিক যেটুকু দরকার
ডানা ভেঙ্গে রেখে দেই ওদেরকে আমাদের শরীরের ভিতরে