একগুচ্ছ কবিতা । মৃন্ময় চক্রবর্তী
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জুলাই ২০২২, ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ, | ৩৮৩ বার পঠিত
![](https://raashprint.net/files/uploads/2022/07/মৃন্ময়-চক্রবর্তীর-কবিতা.jpg)
১৯৮৫-র কোনো এক বিকেলের স্মৃতি
‘You can call me one sided, but that’s okey, that’s your opinion.
I merely show the one side that you always censor.’
Michael Moore
সেদিন আফ্রিকায় একজন কবির ফাঁসির আয়োজন হচ্ছিল,
তাকে না-বলা দশদিগন্তের পাশে দাঁড়িয়েছিল বাংলার এক অখ্যাত শহরতলি।
একটি কিশোর বাবার হাত ধরে দাঁড়িয়ে শুনেছিল মেঠোসভায় দক্ষিণ হাওয়ার ডাক—
বেঞ্জামিন বেঞ্জামিন !
তারপর নিহত মোলায়েজের গান দুরের পৃথিবীতে ডুবে গেছে,
কিশোরটি হারিয়েছে ফেলে আসা পুরোনো রাস্তায়।
আজ বিকেলের ডালে ঝেঁপে আসা সন্ধ্যামণি ফুল ১৯৮৫-র কোনো এক সকালের স্মৃতি এনে দিল।
অথচ তাকে পেয়ে কোনো শাশ্বত পঙক্তি নয়, মনে এল নিঃসঙ্গ মোসাদ্দেকের মুখ,
বিষণ্ণ আইয়েন্দের চোখ, কঙ্গোর কুয়াশায় ঝাপসা লুমুম্বার দুরগামী কথা;
তারপর ক্রমশ সময় ধীরে ধীরে ভারী হয়ে এল নিভন্ত লন্ঠনের মতো।
মনে হল এ পৃথিবী নক্ষত্র খেয়ে ফেলা কালোতারা আকাশের নীচে
আলোকলতার উজ্জ্বল শিকলে মোড়া দখলদারির হস্তান্তর,
ধুতরো ফলের মতো বিষকাঁটাময়, শীত-যুদ্ধে ক্রমউপদ্রুত।
কিশোরটি বোঝেনি সেদিন কার্তিকের নয়নাভিরাম পায়রারা মাঠের আকাশে কেন স্থির হয়ে আছে,
হয়তো সে ঝাঁক ঝাঁক পাখি নীল নখে ঝুলে জেনেছিল
নিহত সত্যের মাংসে নরকের দেবতার ভোগের অভ্যেস এ গ্রহের রীতি !
স্মৃতির পালক খসে সন্ধ্যা এল, যেন প্লেটোর কবরে শান্তি, অমৃতপুঁজির কালো ফুল।
এখানে কবিতা নেই, অথবা অনেক আগে উড়ে গেছে দুরের জগতে।
তারস্বরে নেচে ওঠা ফারাওয়ের ডিম নিয়ে পিঁপড়ের গান শোনা গেল,
রোবোটের ক্লোনে ক্লোনে অস্থায়ী ক্রান্তি ভেঙেচুরে ক্রমরিক্ত হল এই রাত।
মুনাফার মাছি ওড়ে
বামনের লম্বা ছায়া চেপে বসে রয়েছে মাটিতে
তাদের ত্রিলোক তুলে দিয়ে
বলির পৃথিবী দেশছাড়া।
দেবতার হাঁড়িতে বাড়ে মারী, ছানা পাড়ে শীতলপাটিতে,
রক্তের কোষে কোষে সোনা খোঁজে মুনাফার মাছি।
প্রলয়ের ঘন দিনে
বেড়ে ওঠে ছায়ার পাহারা;
মড়কের ফুল থেকে আণবিক রেণু উড়ে করে নাচানাচি।
কিরি গাছ*
আকাশে সমিধ কিরি গাছ
ডালপালা হাহাকার দু-পাশে ছড়া্নো।
নক্ষত্র-আলাপী পাতা খসে গেছে কবেই তো তার
গভীর শিকড় ছুঁয়ে একতিল সোনা আর নেই!
বাতাস ভরসা করে ভয়ে
বিশ্বাস পিছনে রেখে যুযুধান সামুরাই ফুল;
কে বাজাবে কে বাজাবে তাকে !
*তাও-কাহিনির গাছ
কাল আরও পূর্ণিমা হবে
ও কুড়ি পয়সা ছুড়ে আকাশ কিনেছি
কাল আরও পূর্ণিমা হবে।
রুপোয় বাঁধিয়ে দেব পুকুরের মরা জল
মাকড়লিলির ফুল, পাতা।
রাস্তার আলোকে থামিয়ে ঘুমিয়ে পড়বে সব পাখি
ইটের বাক্স মুছে জেগে যাবে সহোদর মাঠ।
ধানের ভেতরে পাবে লুকোচুরি সবুজ জোনাকি
জ্যোৎস্নাহাওয়ার গাছে ঘুড়িটা উড়বে সারারাত।
হারানো পয়সা ছুড়ে আকাশ কিনেছি,
কাল আরও পুর্ণিমা হবে।
যদি পারো হাওয়াবাতাসের মতো
হু হু এইসব মানুষের পাশে বসো
যদিও প্রবাদ ধু ধু আশাদের চেনে
কিছু নয়, দিও অহেতুক গাছে গাছে
ফুটিফাটা মুখে জলজবিন্দু ভাষা।
ভিটে চষে দেওয়া ক্ষমতার ক্ষুর চেনো,
বাঘ কুমিরের মাঝামাঝি চলাফেরা?
সে-ফাঁকে শিকড় ধরে দাঁড়াবার মাটি
হয়ত এখনো ভালোবাসা দিয়ে ঘেরা।
কাগুজে খোয়াব না-ই দিতে পারো যদি
হাওয়াবাতাসের মতোই ছড়িয়ে রেখো
দুমুঠো আখর, পলির নরম কাঁধে
সংঘহীনের সামান্য হাতটুকু।