চক্রলীনশিখা ও অনান্য কবিতা । মৃন্ময় চক্রবর্তী
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:৪৯ অপরাহ্ণ, | ৫১৩ বার পঠিত

কাউন ভিক্ষা চেয়ে
আরও বাংলার দিকে চলে যাব
পাথরের চেঁচামেচি ফেলে
আরও আরও বাংলার দিকে।
বাঁশের কাঁচুলি খসে পথের নিশানা পড়ে আছে
ছেলেমানুষের মতো ছুটে চলে গেল ডাকপাখি
কচুরিপানার শিখিপাখা নড়ছে মোহন্ত বাতাসে আনমনে,
লোহার জগৎ ফেলে বহুদূরে ডোমকাক উড়িয়েছে খড়ের নিশানা।
কোথাও কি নেই আর বিবর্ণ চিঠি জোনাকির?
কানাকড়ি হৃদয়ের পাপ তবু যেন দামি মনে হয়!
চলে যাব ঠিক কাছাকাছি
মঠ ও চিতার পাশে কেশুত ফুলের চোখে তারা খসে পড়েছে যেখানে;
কাউন ভিক্ষা চেয়ে শিবহস্ত উঠোনে দাঁড়াবো জাতিস্মর।
মাঠের ব্রাহ্মণ
অনন্ত খড়ের মঠ চারিদিকে, অথচ এমন নিঃসঙ্গতা
ডোমকাক এই খড়ে, এই খাঁ খাঁ মাঠের কুহকে
দাঁড় দাঁড় ডেকে উড়ে গেছে বোকাপাখি।
জলপায়রার মতো হলুদ জলের ঢেউ তার কালো বুক
জয়ন্তের চোখে সীতার সোনার স্তন দেখিয়েছে।
বুঝেছি আমিও তাকে ফসলের মাঠে আগন্তক,মাঠের ব্রাহ্মণ
আমারই মতো, অথচ কীসের খোঁজে একা একা একা।
চক্রলীনশিখা
গতরাতে প্রান্তরের হিমে কিছু লোক
নাড়ার আগুন জ্বেলে জড়ো হয়ে ছিল।
আজ তারা নেই,
ভেঙেচুরে গেছে সব রোদের কৌশলে।
তবু তো চক্রশীত আগুনের আশা ঠেলে দিলে
আবার জুটবে এসে চিরকেলে ভাঙাচোরা লোক।
তারপর পুনরায় তাপযূথ ছিঁড়ে চলে যাবে,
যে সকাল সুরাহা দেবে না সেই রোদে।
তবু এই জড়োটুকু ভালো
লীনশিখাতাপে বরফশতক পুড়ে পুড়ে
খিদের দিগন্তজুড়ে ধানের খোয়াব ফিরে আসে।
হাড়ের খাঁচায় তবু দুরুদুরু থাকো
মনকে দেখা যায় না, কিন্তু সে তো
আকাশেরই মতো কীর্ণ ছিল এতদিন।
সময়ের ছিন্ন নীলিমায় ছোটো হতে হতে সেও খঞ্জ হয়ে গেল!
এখন তো মাঠেরা নেই, প্রান্তর নেই হাওয়াবাতাসের,
ফসল দোলে না নক্ষত্রের একান্নবর্তিকায়।
এখানে পায়ের ওপর পা, দেয়ালে দেয়াল,
কলহতাড়িত পড়শির মতো কর্কশ জানালা।
এই রাক্ষসের কালে নিরস্ত্র মনের ডালে শুধু অস্থির পক্ষ-বিধূনন …
তবু রোদ খুঁজি। একফালি দৃশ্যের বারান্দায় বনসাই ইচ্ছে পুঁতি জলে,
টেনে তুলি ঈর্ষাঘৃণাদ্বেষের অলিন্দ থেকে তাকে
বলি, হাড়ের খাঁচায় দুরুদুরু থাকো হে হৃদয়।
রাত্রির ঘোলাটে আকাশ উল্কা ফেলে দিলে
কেঁপে ওঠে সহসা পাখিটি;
বলি, দিগন্তের তারবার্তা তোমাকে শোনাব একদিন!
ডাইনিসন্ধ্যা জ্বলে
ঘুমের ভেতর যেন কোথাকার কোন গ্রাম আচমকা আজ জেগে গেল
ন্যাড়া প্রান্তর দেখি কুয়াশার চুল ফেলে শিকার করছে খুলিচাঁদ।
ডাইনিসন্ধ্যা জ্বলে খ্যাপাটে শিয়ালচোখ, শাততির বনে ঘুরে ঘুরে
ভিটেঘর চেটেপুটে ঘুঘুসব রব করে রব, পেতে রাখে মাটি ধরা ফাঁদ।
মেঘনার কালো জল অগণিত মৃতমুখ-পলি দিয়ে তোলে নয়াচর
সিরিলের ছুরি হা হা নলিটি ছুঁয়েছে কবে, দেশ জনপদ গাঁথা দাগে।
প্রমদাসুন্দরী স্তনের জরাটি খুলে তালি দেন : কে জাগে প্রহর?
পিতামহী ডাকে শুনে জেগে উঠি, তবু রাত নখে গাঁথে চোখ আর হাসে
রূপোসোনা কাঠি নেই শুক নেই সারি নেই, মৃত গাছ ডালিমকুমার
ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমী পরনকথাটি নিয়ে উড়ে গেছে ফিরবে কি আর!
মাকড়ের সুতো শুধু ডাইনির সাদা চুল উড়ে উড়ে ঘোরে চারপাশে।