আক্ষেপ ও সূর্যকথা’র কবিতা । ফজলুররহমান বাবুল
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জুলাই ২০২২, ৮:৩৫ পূর্বাহ্ণ, | ৩৯৮ বার পঠিত
একটাই পৃথিবীতে
বলেছি, রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে এক-একটি সেতু পেরোতে পেরোতে তোমাকে মনে রাখি, এক-একটি দরজা খুলতে খুলতে তোমাকে দেখি। একটাই পৃথিবী তোমার এবং আমার, একটাই আকাশ, তার বেশি নয়। একটাই পৃথিবীতে ঝড় ওঠে, কুয়াশা-হিম কিংবা বরফের রাজ্যে হাঁটতে হয়, ঘুমাতে হয় ভ্যাপসা গরমে, সাঁতরেও পেরোতে হয় দুষিত নদী। একটাই পৃথিবীতে এসো আমরা সুখে থাকি—রাতভর দিনভর। একটাই পৃথিবীতে তোমাকে ভাবতে ভাবতে দিনকে আর দিন মনে হয় না, রাতকে আর মনে হয় না রাত। আর, এটা সত্যিই কিছু কঠিন। আমাদের স্বপ্নগুলো লুঠ হয় ধুলো-কাদায় অথবা ঘুমিয়ে পড়ে অজানা বৃক্ষের গোড়ায় আর আমরা হাসতে হাসতে হয়ে যাই বেদনার দিনরাত্রি, আমরা হয়ে যাই বিষণ্ন-সন্ধ্যা। আমরা রংধনুর রং থেকে বেদনা কুড়াই আর পৃথিবীতে ওঠে ঝড়, ত্রস্ত্র কপোতেরা উড়ে যায় অজানায়। এসো, আমরা লক্ষ বছর ঘুমাই, তারপর জেগে উঠে কোনও উষর শৃঙ্গে বুনোফুলের জলসায় কিংবা কোনও জলনম্র নদীতীর ধরে হাঁটতে হাঁটতে মগ্ন-সন্ধ্যায় পৃথিবীতে ফোটা সব ফুলের একটি করে নতুন নাম দিই আর বাড়ি এসে রাঁধি ঝাল চচ্চড়ি। এসো, আমরা বন্ধ জানালা খুলে দিই। একটাই পৃথিবীতে ভাবতে ভাবতে সময় পালায়, ধুলো জমে রাস্তায়, জং ধরে লোহায়। জীবন সুখের স্বপ্ন! এসো, বৃত্তের বাইরে বসে দেখি স্বপ্নের দুনিয়াদারি, দেখি পতঙ্গভুক পাখি আর রংবাহারি ফুল, দেখি আকাশ অরণ্য সাগর, দেখি পাহাড় এই একটাই পৃথিবীতে। একটাই পৃথিবী তোমার এবং আমার, একটাই আকাশ। এসো আমরা সুখী হই। একটাই পৃথিবীতে এসো আমরা সুখে থাকি রাতভর দিনভর।
সূর্যকথা
মনের ভিতরে একটা সূর্য থাকলে আমি কি বলতে পারি, ওই সূর্যের দিকে আর তাকাব না, যার নিত্যরূপ সর্বত্রই এক? না, আমি বলতে পারি না। সূর্যের মতো এত তাপ আমি তো বুকেও ধরি না। যদিও-বা থাকে কিছু সূর্যের মতো, আমি তাকে ছুঁতেও পারি না।
সূর্য ওঠে মনের ভিতর, সর্য ডুবে যায়; দূরবীক্ষণে তাকে দেখা যায় না। কে-বা আর এমন কুচকাওয়াজ করে লুকিয়ে থাকে সূর্যের মতো? আমার ভিতরে যদি কোনও সূর্য থাকে, আমি কি তবে বাইরের সূর্যকে আর দেখব না?
আক্ষেপ
রাস্তার পাশে দুটি সাদা গোলাপ
হেসে উঠলে রাস্তা শুনতে পায়—
রাস্তার কালো পিচ দেখতে পায়
গোলাপের মহিমা…কালো পিচের বুকে শক্ত পাথর—
পাথর গোলাপ হতে পারে না!মানুষ, আকাশ
আমরা যদিও মানুষ…
আকাশ বলছে—
যেন তাকে বুকে রাখি…
মানুষ কি এতটা উদার হতে পারে?
মানুষের বুকে কত পাহাড়
মরা নদী, খানাখন্দ…আর
আকাশ আছে
সাইবেরিয়া কিংবা কারাকোরামে
আছে আটলান্টিকের উপরে
আছে বাংলায়, বঙ্গোপসাগরে…মানুষ কি আকাশ থেকে বড়ো?
অন্ধকারে আমার ছায়া
কোনও-একরকম তাকাও আমার দিকে—
হয়ত দেখতে পারে পাথর
পথের ওপর পড়ে থাকা পালক
তোমার ছায়া দেখে নিরন্তরতাকাও তুমি আমার দিকে
তাকাও কোনও-একরকমঅন্ধকারে হারিয়ে-যাওয়া পথের ওপর
তাকাও তুমি তাকাও
তোমার ছায়ায় সাদা চোখেচেষ্টা করো দেখতে আমায়
অন্ধকারে আমার ছায়া
হারিয়ে যাওয়া পথের ওপর…তুমি হাসলে
তুমি হাসলে পাতাবাহারে বসে প্রজাপতি
গাছে গাছে ফোটে ফুল
তুমি হাসলে আকাশ তার সমূহ দরজা খুলে দেয়
আর সুখের তরণিতে ভাসে পাথরের দেয়াল
সুখে ভাসে হাওয়া মেঘ নদী পাখি
মেঘের আড়ালে চাঁদ হাসে সূর্য হাসেতুমি হাসলে তারায় তারায় বাজ গান
তুমি হাসলে আমি মহীয়ান!ওহো হৃদয়
হৃদয়, তোমার ছায়া হেঁটে যায়
আলো জ্বালাও, রাত্রি জাগুক
আমার ভিতর দেখি তোমায়তোমার ছায়ায় উলটো-পাহাড়
কেউ জানে না, জানি আমি
তোমার ভিতর জাগে অনেক পাথর
তোমার ভিতর কিছুকিছু সুখের জমিহৃদয়, তুমি আলো জ্বালাও
অন্ধকারের শেষ অক্ষরে স্বপ্নশিখায়তোমার ছায়ায় উলটো-পাহাড়
শিরায়-শিরায় ঝিঁঝিপোকা
আমার ভিতর আছি বসে
আলো জ্বালাও তোমার ছায়ায়।
…