পাঁচটি কবিতা । নির্ঝর নৈঃশব্দ্য
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জুলাই ২০২২, ৮:২৫ পূর্বাহ্ণ, | ৫৮৭ বার পঠিত
খুলে নিই
খুলে নিই চলো ধূলিঝড়। মেঘেদের ফাঁকে বুনে দিই রোদের উৎসব। বিহ্বল হাওয়ার পিঠে চড়ে ছুঁয়ে দেবো উত্তরের যতো আছে পাহাড় শীতের বিপরীতে। চৈত্র এলে ঝরাপাতার গন্ধে জেগে থাকবো বাদাম-বিকেল।
চলো, দুজনে মিলে শীতল কালো জলের চোখে দেখে ফেলি রাত্রির নিশ্বাস। দীর্ঘশ্বাসে বেঁধে ফেলি আমাদের যাতনার দিন। রাত্রি ক্ষয় হলে ঘুম পাড়াই যতো আছে মানবিক যন্ত্রণা। কাশফুল দুলে উঠবে ঝিরিঝির আনন্দে।
আমরা দাঁড়িয়ে থাকি ধূসর খালপাড়ে। আমাদের ছায়া শরীর হয়ে থাকে একটু উত্তরে, রোদের আড়ালে।
অচেনা অসুখ
অচেনা অসুখে শিরদাঁড়া কেঁপে ওঠে ভোরে। যাই গোপন গহ্বর ধরে একা। হাওয়ার আকার এঁকে ফেলি সহসা। গানগুলি স্তব্ধ হয়ে আসে। গানগুলি চিল হয়ে ছেয়ে থাকে আকাশ।
যাই গতজন্মের স্মৃতি ধরে। যাই শিথিল বসন আঁকড়ে ধরে। গহ্বর আর শেষ হয় না।
স্তব্ধদুপুর উঠে আসে পুনর্বার। এই ক্ষয় বিপুল আহ্লাদের পর। স্রস্ত স্মৃতির ক্লান্তিকে ডাকে। আনন্দ জেগে গিয়ে ঘুমোবে আবার। দেবারতি বিষে সকল পদ্ম কাদাহীন। কাদাগন্ধে সুন্দর উৎসুক। এই সুখে কাগজের বিন্যাস ঘটে। বাহিরের পটে কাঁচারঙে আঁকা তৃণ। ঘটমান সহবাসে থকথকে কাদার রাত তির তির করে কাঁপে। স্তব্ধ দুপুরের ঘুম কেবল শুরু হয়।
কৌম মধুকর
নদী একা ফিরবে না পাহাড়ে। নদী একা রূপ বদলে ফেলেছে। নদী একা পুড়ে গেছে স্রোতে।
এমনই চিরদিন রক্তলগ্ন ভোর। ক্লান্ত চোখ ঘুমাতে পারে না। ক্লান্ত চোখ অনেক গোপন ধরে অস্থির। ক্লান্ত চোখ আর কাঁদতে পারে না। ক্লান্ত চোখ বুজে আসে বুজে আসে। নিজেকে ডাকো ভোরের প্রান্তে। নিজেকে ভাবো আলোহীন জোনাক। তুমি একদিন ধীরে পুড়েছিলে। তুমি একদিন আলো করেছিলে।
কোথাও যেতে পারি না আর। শীতের আঁচে শীত পুড়ে যায় আবার। এখানে কেবল শিশির নামাই। এখানে জমে শুধু শিশিরের ছাই। প্রতিদিন কেটে চলে শুষ্ক খেচর। প্রতিরাতে হাত বাঁধে কৌম মধুকর।
কামনার কাঁটা
কামনার কাঁটায় বিঁধে আছে দুপুর, ছায়াচুর রোদের রূপ। আমি নিরন্তর অ›ধ হয়ে গেলাম। একটি জংলিগুল্মের কথা মনে হলো শুধু।
তার কথা মনে হলো। স্তনের নীলাভ শিরা তার ছুঁয়ে গেছে পূর্বের সকল জনপদ। যে কখনো এই হাতের ভাঁজে দিয়েছিলো হিম, যে আমাকে হেমরাত্রির তীরে বানালো ঠান্ডা বনরেখা, যে তবে চুলের আড়ে লুকোতে দিয়েছিলো মুখ—সেও নেই।
কে কবে হয়ে গেলো হাওয়া আর বাতাস? যে সকল বাতাস আমার কুড়ানো—ঝরে গেছে ভোরের কাঁকালে। কেনো যে কুড়াই, কেনো যে কুড়াই, কেনো যে কুড়াই? আমি আর সে মূলত অভিযোজন জানি না।
বিশুষ্ক পদ্মপাতা
বিশুষ্ক পদ্মপাতার স্মৃতি পানির শরীরে নেই, বাতাসে আছে। বাতাস স্রোতের মুখে গান হলে পদ্ম ফোটে অনির্বাণ। এই পদ্ম ভেসে ভেসে পৃথক করে কালের বিভা।
একদিন সে ফুরিয়ে যাবে। বাতাস আর বাষ্প দায়ী থাকবে। পদ্মপাতায় লেখা থাকবে তার কান্নার স্বরলিপি। স্বরলিপি কখনো গান হবে কারো কণ্ঠের। সে জানবে না পানি, হাওয়া, ধূলি, কাদা আর পদ্মপাতার আখ্যান। বিশুষ্ক পদ্মপাতার স্মৃতি দিঘির দেহে থাকে না।
মধ্যবেলার ঘর প্রথমা রূপ পরিগ্রহ করে। বিরান ভাগাড়ের গহ্বর অতিক্রম করে পূর্ণতিথি চাঁদের। কলা ও ফুলের পাশে বিষ্ণুর বাগান। ওধারে কোনো বেড়াজালে চুল ওড়ে বৃক্ষ, গাছ, লতা, গুল্মে। সে যখন জানতে পারে এইসব—সূর্য তার মাথার উপর পুড়ে কালীমেঘ হয়ে গেছে। এখন বিষ্ণুর বাগানে ফোটে ঈর্ষার নীল পারিজাত।