এ ঝড় না থামার ও নীল টিপের গহীনে… মাহফুজুর রহমান লিংকন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ৮:৫৩ অপরাহ্ণ, | ৫৮০ বার পঠিত
এ ঝড় না থামার…
জানতে চাইলাম,
—ক্যামন রেখেছো?
উত্তরে না হেসে,
শুধু জানিয়ে দিলো— তোমার ভালবাসতেই বেঁচে উঠি নিরন্তর…!
শরীর বেঁয়ে বয়ে চলা নদী ছলছল শব্দে-ছন্দে আমাকে মাতিয়ে তুলেছিলো ক্ষণিকের মায়ায়। কামনা নিষ্প্রভ চোখ করুণার সুতোয় বুনে চলেছিলো তোমার শাড়ির আঁচল! এই প্রেম আমার ঢের চেনা আছে, শুধু চিনতে পারিনি সরিষা ঢাকা ভূমির ভাঁজে –ভাঁজে লুকিয়ে রাখা হাওয়াই মিঠাই প্রেম!
আরে ধুর, কবিতা লিখে জীবিকা চালাই না! দিন-মজুর বলা যেতে পারে, প্যান্ট-শার্ট পরা আপাদমস্তক বাবুর বেশে দিনমজুরি নেই। ভালো করেছ, ভালো না বেসেও, ভালোবেসেছ… এমন জাত মজুরের সাথে হৃদ্যতা থাকে ডান-বামী সুবিধাপন্থীদের! বলেছিলাম না, নিজেকে ভালো না বাসাতে পারাটাই কবির সবচেয়ে বড় সম্পদ! ডান-বামীদের সাথে মিশে যেতে যেতে আমি ভুলেই যেতে বসেছি, তোমার-আমার কথা শোনেনা কেউ, অথচ বুড়িগঙ্গা থেকে ধরলা অব্দি সমূহ জল জেনে গ্যাছে আমাদের অভিসার!
কবির ধর্মই এমন ভেসে যেতে-যেতেও কবি ভেস্তে দিতে পারে না কিছুই! কেননা কবি ভালোবাসেন কবিতা দিয়ে! যে কবিতা কবিকে বাচিয়ে রাখে পরম মমতায়। তাইতো নিঃসংকোচে বলি— ‘কবিতা ছাড়া মায়ের মত এমন মমতা দিয়ে আর কে আগলে রাখে কবিকে’।মাকে নিয়ে আমার কোন লেখা নেই! আশ্চর্য! তাই বলে কি মাকে আমি ভরিয়ে তুলিনি কিংবা মাকে বেঁধে রাখিনি আমার সংসারে! রেখেছি, অনেক আহ্লাদে, যতনে, কবিতার মতই। কবিতা আমার মায়ের মতোই, আমার মা কবিতার মতোই, আমার সুখদুঃখ গাঁথা শরীরের তীব্র দাহ আর শীতল টলটলে পুকুরের জল।আমি বিপ্লবী হয়ে উঠতে পারি না, শুধু হৃদপিণ্ডের দরজা খুলে, কখনো কবিতার, কখনো মায়ের আঁচলে মুখ লুকিয়েছি বারবার!
বলেছিলাম না, ভালো থেকো সবুজ টিপের আশ্রয়ে! ঘুমিয়েই থেকো… জেগে উঠে জেনে যাবে, আমার শব যাত্রার ধ্বনি যেখান থেকে শোনা যাবে স্পষ্ট… সেভাবেই থেকো… পুর্নিমার ঘোর কেটে গেলে, নদী য্যামন জেনে যায় এবার কবিতা হবে, তুমিও নিশ্চই জেনে যাবে, তোমার প্রতিটি উচ্চারন ক্যামনে নত করে রেখেছিল আমায়! জেগো না… ঘুমেই থেকো আজীবন!
এই শহরে নিত্যনতুন ইবাদতের হাট বসে! সে হাটে লেনিন থেকে হালনাগাদের সুফি বিক্রি চলে, চলে কেনাও… ভেবেছিলাম আমিও উঠে যাব নিলামে কিংবা হাটুরের কাঁধে চরে চলে যাব একদিন… দ্যাখব, বিক্রি হতে ক্যামন লাগে! হরেকমালের হাটুরে ভোরে ঘুম ভাঙ্গানো চিৎকার করে বলবে— বি…ক্রি… হ…বে… কবি! নেবেন কবি….! আমার বাজারমূল্য যাচাই করে দ্যাখবার বরই স্বাধ আমার! —এমন সাধের কথা জেনে স্বপ্নেও গালি দিতে লাগলো চারিদিকের সংসার! আরে-আরে করো কি? নিত্যদিন দ্যাখি কেনা-বেচা। নিজ বাজারমূল্য জানতে চাওয়া কি অপরাধ! অনেক সকাল ফুরিয়ে গ্যাছে এমন দ্বিধান্দ্বে… পেস্ট হাতে নিয়ে ভেবেছি এভাবেই খুবলে খাচ্ছে তোমাকে দাঁতবিহীন নিতম্ব নাচানো হায়েনার শিশু! বিশ্রী সে ভাবনা! আহা! অমন আদুরে শরীরে ক্যামনে রেখছ ধরে আজন্ম পাপকে! এর চেয়ে বরং বিক্রি হওয়া ভালো… তবুও সুরে-সুরে শোনা যাবে, কবি নিবেন! ক…বি…ইইইইইইইইইই!
হার্টে ঘুণপোকা ধরেছে ইদানিং! পথ্য-উপাত্ত ব্যথা নিবারণ করে ক্ষণিক ক্ষণের জন্য… মৃত্যু ভাবনার সাথে তোমার ভাবনায় মোহিত হয়ে যাই! কবিতার প্লট নিয়ে,মৃত্যু ভাবনা নিয়ে, হার্টের ঘুণপোকা নিয়ে পথ চলি অবিরাম! আমার কফিনের বুকে তোমার পদচারণা না হোক এ আমার চাওয়া! মায়ের আঁচলে মুখ লুকানো এই আত্নভোলার কফিনে সেদিন যেন মজুরের ধান বোঝা চেপে বসে, সেদিন যেন মগ্ন পাহাড়ের নিঝুম বসতি গড়ে ওঠে আমার কফিনে। সেদিন যেন সত্যিই আমি কাঁদতে শিখে যাই… কেঁদো না তুমি, কেঁদো না কেউ। কারণ কবিতায় বলেছি সেকথা-
“তোমাদের কান্না আছে
আমার রইলো সুগন্ধিভরা শ্বাস
সেখানেই গড়ে তোল
জলধোয়া কৃষ্ণচূড়াবাস!”
বলেছিলাম না, ভালো থেকো সবুজ টিপের আশ্রয়ে! ঘুমিয়েই থেকো… জেগে উঠে জেনে যাবে, আমার শবযাত্রার ধ্বনি যেখান থেকে শোনা যাবে স্পষ্ট… সেভাবেই থেকো… পূর্ণিমার ঘোর কেটে গেলে, নদী য্যামন জেনে যায় এবার কবিতা হবে, তুমিও নিশ্চই জেনে যাবে, তোমার প্রতিটি উচ্চারণ ক্যামনে নত করে রেখেছিল আমায়! জেগো না… ঘুমেই থেকো আজীবন!
জানতে চেয়েছিলাম
—ক্যামন রেখেছ?
না হেসে বুঝিয়ে দিলে,
—এ ঝড় না থামার!!!
নীল টিপের গহিনে…
ষ্টেশনে দাঁড়ালে আমার শরীর দোলে… কেমন যেন নেশা হয়ে যায়! তোমার শরীরের মাতাল করা সুগন্ধি সাথে দর্শনার খোলা মদ মেখে একাকার আমার অপূর্ণ শরীরে! কাঁপছিলাম সম্ভবত! ঝাঁকুনি চাচ্ছিলাম ভীষণ রকম! এমন এলোমেলো দিনেই আমায় কবিতায় ভাসতে ইচ্ছা করে… এইসব কবিতা ভাসা ক্ষণে খুব সংকোচে একদিন বলেছিলাম তোমায়—
সবুজ টিপের আশ্রয়ে আমাদের প্রথম চুমু- প্রথম প্রেম— প্রথম দেখার মতন তুচ্ছ ব্যাপারগুলো ঢেকে দিতে পেরেছ বলেই, কবিতার শব্দগুলো শরীরের বাঁকে-বাঁকে গেঁথে দিতে পেরেছি নিপুণভাবে। নিন্দুকেরা বলে আমি তোমার মানুষ! আমিতো জানি আমি কবিতার মানুষ! কোনদিনও বলা হয়নি— তোমার ভিতরের প্রতিটি অনু-পরমানু আমি হাতরিয়ে নিয়ে শব্দ ছেঁকে—ছেঁকে আগুন জ্বেলেছি!
‘নীল টিপেই তোমাকে সুন্দর লাগে বেশি…’
খুব হেসেছিলে, বাতাসে-হাসিতে মাখামাখি!
“কষ্টের রঙেই আমাকে সাজাবে” বলেই। কেঁদেছিলে কেন? জানিনা! আজো দুর্বার জলে নিজেকে ভেজাই, বাতাসের গন্ধে মাতি, শুধু হাসির রিনঝিন গান শুনতে পাই না। সত্যি বলছি, নীল চুড়ি-ফিতায় তোমাকে বাঁধতে চাইনি বলেই, কপাল জুড়ে নীল টিপের মাখামাখিতে সুন্দর খুঁজে ফিরেছিলাম তোমাতে…
সবুজ পাতাদের সঙ্গম দেখে বুঁদ হয়ে থাকা মদ্যপ আমি চারিদিকে ইচ্ছের ঘর তুলে আঁধার করে দেই! তুমি-আমি মিলে আমরা হয়ে অবিশ্বাসের বিন্দুকে বড় করে তুলেছি, এই যা!
সবুজ টিপের আশ্রয়ে আমাদের প্রথম চুমু— প্রথম প্রেম— প্রথম দেখার মতন তুচ্ছ ব্যাপারগুলো ঢেকে দিতে পেরেছ বলেই, কবিতার শব্দগুলো শরীরের বাঁকে-বাঁকে গেঁথে দিতে পেরেছি নিপুণভাবে। নিন্দুকেরা বলে আমি তোমার মানুষ! আমিতো জানি আমি কবিতার মানুষ! কোনদিনও বলা হয়নি— তোমার ভিতরের প্রতিটি অনু-পরমাণু আমি হাতরিয়ে নিয়ে শব্দ ছেঁকে-ছেঁকে আগুন জ্বেলেছি!
সেই আগুনের বিষণ্ণতার ধোঁয়ায় কেউ একজন ষ্টেশনে দেয়ালে এঁকেছিলো তোমার নীল টিপ রাঙ্গানো ছবি! রাঙানো ছবি থেকে দোসরা মার্চ ঊনিশশো আটানব্বই মুছে দিয়েছিলো, আঁকিয়ে অন্য কেউ; আল্পনা হাতড়াতে হাতড়াতে মুঠোয় বন্দি সিঁদুর সিঁথিতে লেগে গিয়ে উদ্যানে মানুষের কোলাহল-ফিসফাস! স্টেশনমাস্টার তখন অব্দি জাগেনি, সমুদ্রের বালির ওম নিয়ে ঘুমচ্ছেন, মহাকোলাহল… তুমি নিশ্চুপ! এ অধিকার আমার আজন্মের, জানিয়ে দিয়ে থামিয়ে দিতে পারতে… ট্রেনের হুইসেল, খাকির হুইসেল, মদের বোতলের তুমুল হাঁকডাক…
দূরে-অনেক…দূরে কেউ একজন ভোরের অপেক্ষায় থাকে, সে জানে- নীল টিপের গহীনে লুকিয়ে থাকে প্রাকৃতস্বজন!