জীবন । মহ্সীন চৌধুরী জয়
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুন ২০১৯, ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ, | ৯৫১ বার পঠিত
জীবন
সেলাই শিখি নি। নয়তো সকাল আর সন্ধ্যাকে একই আলোতে সেলাই করতাম।
পাখিরা উড়তে পারে এ বিস্ময় নিয়ে হাতকে ভালোবেসেছি। অথচ হাতই মাটি আঁকড়ে ধরে প্রথমে।
নদীর সামনে গিয়ে আমি ঢেউ গুনি। নদী অঙ্ক বোঝে না, জীবন বোঝে।
প্রিয়জন সবসময় প্রেম বাঁচাতে চায়। প্রিয়জনের মৃত্যুতেই প্রেম বাঁচে আজীবন।
আযৌবন মায়ের মুখে শুনে এসেছি তোমাকে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে—
এখন বুঝতে পারি, লাশ না হলে মানুষ হওয়া যায় না।
এবাদত
[প্রিয় কবি আল মাহমুদ স্মরণে]
আমি ঘুমঘোরে প্রতিদিন কোরআন তেলোয়াত শুনতাম। আর ভাবতাম, বাবা এক চিঠি প্রতিদিন কত দরদ নিয়ে পড়ে।
মা তসবি নিয়ে অনু্চ্চ স্বরে আল্লাহকে নাম ধরে ডাকত। আমি তখন মা মা বলে চ্যাঁচালেও মা নিশ্চুপ থাকতেন মিষ্টি হেসে।
মক্তবে যেতাম। ইমাম সাহেব বলতেন, এ আল্লাহর ঘর, মন দিয়ে পড়ো। তখন বাবাকে দেওয়া চিঠি আমাকেও পড়তে হতো।আমি নামাজে দাঁড়িয়ে ধ্যানমগ্ন হয়ে যেতাম। একই চিঠি, অথচ কত সুরের খেলা।
‘আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম’ শুনে সকাল জেগে উঠত। দেখি, সকালও চিঠি পড়ার জন্য উজ্জ্বল আলো নিয়ে বসত।
অপেক্ষা
আমি শুধু অপেক্ষায় থাকি—
জানি প্রেম বিষাক্ত, ভালোবাসা অপরিণত বোধের ফল। জীবন বিপরীত পথে হাঁটে প্রতিনিয়ত—বিলীয়মান। ব্যঞ্জনা নেই, অ-রূপের রূপ। শরীর এক রহস্যময় দ্বীপ, অথচ পাঁজর ভেঙে যাবে বিচূর্ণ আয়নার মতো। মৃত্যুর ঘ্রাণও নিকটবর্তী, কেঁপে ওঠে পশমের ধ্যান।
আয়নাকে কাছ থেকে দেখলে কাচ বিভ্রান্ত করে। ডুবে যাই যাবতীয় মোহ নিয়ে। অরূপকে অস্বীকার করতে পারি না—মনের রূপ ফুটে ওঠে। কল্পনা আর কামনার মিলিত অহং কেড়ে নেয় আত্মার ঘুম। তবুও শুধুমাত্র ঘুমকেই স্বপ্ন বলে জানি।
রাত জন্মান্ধ—সকাল রাতের শরীরে ছুটে আলোর শরীর নিয়ে। একটি ট্রেন নৈঃশব্দ্য ভেঙে নিকটে আসতে আসতে চলে যায় নিকট পেরিয়ে। আবারও বলি, বারবার বলি, ভালোবাসা এক বিভ্রান্ত বোধ, বিষণ্ণ তার রূপ, নির্গ্রন্থ, নির্জলা।
আমার অপেক্ষার শেষ পরিণতি কী? শূন্যতা জীবনকে দখল করে সবচেয়ে বেশি।