এলিস মানরোর সাক্ষাৎকার । আলম খোরশেদ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুন ২০১৯, ২:৩৫ পূর্বাহ্ণ, | ১৬৩৬ বার পঠিত
নোবেল-বিজয়ী এলিস মানরোর একটি দূরভাষ-সাক্ষাৎকার
অ্যাডাম স্মিথ: হ্যালো, অ্যাডাম স্মিথ বলছি।
এলিস মানরো: হ্যালো, অ্যাডাম।
অ্যাডাম: হ্যালো, এলিস মানরো বলছেন?
এলিস: হ্যাঁ, আমিই এলিস মানরো। আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, অসংখ্য ধন্যবাদ। এটি আমার জন্য একটি দারুণ ব্যাপার। এটি ছোটগল্পের জন্যও দারুণ ব্যাপার।
অ্যাডাম: আসলেই, আমরা আপনাকে অভিনন্দিত করছি এজন্য। আজকে সত্যিই একটি দারুণ দিন।
এলিস: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
অ্যাডাম: আপনি খবরটি পেলেন কীভাবে?
এলিস: উ, মনে করার চেষ্টা করি, আমি খুব ভোরে পায়চারি করছিলাম। আমি খবরটা প্রথম কার কাছ থেকে পাই? (একই ঘরে উপস্থিত কন্যা জেনির কাছে জানতে চান তিনি) ও হ্যাঁ, পত্রিকা থেকে ফোন করেছিল।
অ্যাডাম: আপনার প্রথম প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিল? মনে আছে?
এলিস: অবিশ্বাস। (হাসেন) আমি সত্যি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, আমি এত খুশি হয়েছিলাম, এখনো এই আনন্দের রেশ কাটেনি আমার।
অ্যাডাম: আপনি গত চার দশক ধরে বিপুল কাজ করছেন….
এলিস: হ্যাঁ তা করছি বটে। কিন্তু আপনি জানেন আমি সাধারণত ছোট গল্পের আঙ্গিকেই কাজ করি। এজন্য এই স্বীকৃতিটুকু আসলেই একটি বিশেষ ব্যাপার।
আমি এমনটিই আশা করবো, এবং আমি চাইবো এটি কেবল আমার জন্য নয়, সাধারণভাবেই ছোটগল্পের ক্ষেত্রে সত্য হবে। কারণ আপনি জানেন এটিকে প্রায়শই তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া হয় এই বলে যে, প্রথম উপন্যাস লেখার আগে লেখকেরা এরকম দুচারটা গল্প লিখেই থাকেন। আমি চাইবো গল্প যেন তার নিজের জোরেই প্রথম সারির আসন নিতে পারে, যেন তার জন্য কোন উপন্যাস লেখার দরকার না পড়ে।
অ্যাডাম: তা তো বটেই, তা তো বটেই। আপনি কি প্রথম থেকে শেষ অব্দি এক ধরনের লেখকই থেকে গেছেন? আপনার কি মনে হয় আপনি পাল্টেছেন?
এলিস: আমি যদ্দূর বলতে পারি, আমি খুব একটা পাল্টাইনি। তবে আমার মনে হয় অন্য কেউ আমার চেয়ে ভালো জবাব দিতে পারবে এই প্রশ্নের।
অ্যাডাম: এবং এই পুরস্কার আপনার পাঠক বাড়াবে নিশ্চই প্রচুর..
এলিস: আমি এমনটিই আশা করবো, এবং আমি চাইবো এটি কেবল আমার জন্য নয়, সাধারণভাবেই ছোটগল্পের ক্ষেত্রে সত্য হবে। কারণ আপনি জানেন এটিকে প্রায়শই তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া হয় এই বলে যে, প্রথম উপন্যাস লেখার আগে লেখকেরা এরকম দুচারটা গল্প লিখেই থাকেন। আমি চাইবো গল্প যেন তার নিজের জোরেই প্রথম সারির আসন নিতে পারে, যেন তার জন্য কোন উপন্যাস লেখার দরকার না পড়ে।
অ্যাডাম: যাঁরা আপনার কাজ সম্পর্কে জানেন না, তাঁদের জন্য, কোত্থেকে শুরু করতে হবে এ-বিষয়ে কোন পরামর্শ আছে আপনার?
এলিস: এই সেরেছে! আমি জানি না, আমি এটা পারবো না… সবাই ভাবেন যে তাঁদের শেষ লেখাটাই সেরা লেখা, আমি অন্তত সেরকমই ভাবি। আমি তাই চাইবো তাঁরা আমার সর্বশেষ বইটা দিয়ে শুরু করুন।
অ্যাডাম: তাহলে উবধৎ খরভব দিয়েই শুরু করা উচিৎ তাঁদের, নয় কি?
এলিস: তা করতে পারেন, তবে আমি আশা করবো তাঁরা আমার অপর বইগুলোও পড়ে দেখবেন।
অ্যাডাম: আবার এটাও সত্যি যে সবাই এ-বছরের গোড়ার দিকে, আপনি আর লিখবেন না বলে যে-ঘোষণাটি দিয়েছিলেন, সেটি নিয়ে আলোচনা করছেন এবং বলছেন যে, ”হয়তো এটি তাঁকে আবার লিখতে উদ্বুদ্ধ করবে”।
এলিস: হ্যাঁ, আপনি জানেন যে, এই কাজটি আমি বহু বছর ধরে করছি। আমি লিখছি আর প্রকাশ করছি, আমার মনে হয় আমার কুড়ি বছর বয়স থেকেই, সবসময়ই আমার কোন না কোন লেখা প্রকাশিত হয়েছে, এবং এটি বড্ড লম্বা সময় ধরে করছি, তাই আমার মনে হয়েছিল বোধ হয় এবার জিরোনোর সময় হয়েছে। কিন্তু এখন হয়তো আমার মত পাল্টাতে পারে। (হাসি)
অ্যাডাম: এটি যাকে বলে একটি উত্তেজক বাক্য! একথা শোনার পর সবার মুখেই আবার খই ফুটবে।
(দু’জনেই হাসেন)
অ্যাডাম: কী চমৎকার! সে যাক, আমি জানি যে, প্রচুর লোকজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলে আপনি নিঃসন্দেহে ক্লান্ত, আমরা তাই অপনার সঙ্গে পরে কোন একসময় আবারও কথা বলবো না হয় ……..
এলিস: সেটা দারুণ হবে, আর আসলেই আমি এখন কিছুটা পরিশ্রান্ত ও বিভ্রান্ত, আর ঈশ্বর জানেন এই অবস্থায় আমি কী বলতে কী বলে ফেলি!
অ্যাডাম: ঠিক আছে, আমরা এই হৈচৈ একটু থিতিয়ে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবো, তারপর না হয় ….
এলিস: ঠিক আছে।
অ্যাডাম: আপনার সঙ্গে কথা বলে খুব ভালো লেগেছে, আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
এলিস: আপনাকেও ধন্যবাদ, বিদায়।
অ্যাডাম: বিদায়।
(১০ অক্টোবর ২০১৩, সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার ঘোষণার পর দূরভাষে নেওয়া সাক্ষাৎকার। নিয়েছেন Nobelprize.org’s এর অ্যাডাম স্মিথ।)